ঋতুচিহ্নগুলি

প্রচ্ছদ

প্রচ্ছদ

[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

শেষ পৃষ্টা

শেষ পৃষ্টা

 

একজন কবি বিশেষ একজন, এই কারণে না যে, তার গোপন একটা কিছু আছে, যা অন্য মানুষের নাই। প্রত্যেক মানুষেরই থাকে গোপন, গভীর কিছু অনুভূতি। একটা কবিতা বা একজন কবিরে এই কারণেই নেয়া যায়, কারণ সে জানে এই বলবার পদ্ধতিটি; আর অন্য কেউ যখন তা পড়ে, উপলদ্ধি করতে পারে তার অনুভূতির অংশকে; ভাবে, এ ও এক মহৎ সৃষ্টি। এই পৃথিবী, যেমন আমরা জানি, অথচ বলতে পারছি না। ভাবতেছি; ঈশ্বর, তুমি ত জানো।

একজন কবি আবিষ্কার করেন অস্তিত্ব আর অনস্তিত্বের সত্তাটিকে।

মানুষের ডানা আর দেবতার হাত দুইটাকে।

ভূমিকা

ভূমিকা

 

মনে হয় বহুদনি পর, জেগে ওঠতে চেয়েছি আজ, চারপাশ বৃত্তের মতো র্ঘূণায়মান ভেবে

ভয় হয়, ক্লান্তির কতো কি, ঘুমের মতো তবু ভয় হয়, মৃত্যুর মতো আনন্দ হয় অথবা

না-জানা কেবলই ইচ্ছা হয় চুপচাপ বসে থাকবার; বহুদনি পর তোমাকে কেমন দেখায়

দেখবার মতো করে এতসব সময় এসেছে আর যাচ্ছে চলে, কোনদিন হয়তো তা-ই রয়ে যাবে

ফুল আর চাঁদ, বৃক্ষের স্বাভাবকি ফল, ঋতুনির্ভর সবকছিুতে, হয়তো পরিবর্তন এসে যাবে।

 

writuchinnoguli printers line

 

ঋতুচহ্নিগুলি

ইমরুল হাসান

 

প্রকাশকাল: পৌষ, ১৪০৪; জানুয়ারি, ১৯৯৮।

লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

গ্রন্থ পরিকল্পনা: সাজেদুর রহমান।

মুদ্রণ: গুডলাক প্রিণ্টার্স, ১৩, নয়া পল্টন, ঢাকা।

দাম: দশ টাকা।

 

উৎসর্গ

উৎসর্গ

জীবনানন্দ দাশকে

১ম কবিতা

পৃষ্টা ৫

 

এই শেষ আনন্দ

 

এই শেষ আনন্দ রেখে দিই আগামী সকালের জন্য।

তখন সময় মৃদুমন্দ হাওয়ার সুরে আর ভালো লাগবে শেষ হওয়া।

এই রাত্রি কেবল শুরু, তাই গান মনে করে ঘুমের কাছে প্রকৃত নির্বাসন এই,

মেলে দিই অসংখ্য প্রভাত, কেমন এই শেষ আর আলোময় দিন,

হয়তো প্রতদিনি জেগে ওঠে সময়, তোমার সীমানা ঘিরে, প্রতিটি নতুন চমকিত

হয়ে আছে চোখের গোলকে, জানালায় কত কত শান্তমিয় খলো ফুটে আছে,

তোমার অগোচরে যা পাতারা দেখে, বলে যায় আর তুমি না-শোনা নিজের ভিতর কি এক অদ্ভুত গান শোন

প্রতিদিন এমন জেগে ওঠা তুমি কি কামনা কর, প্রতিদিন এমন সৌরভ, ভাবো না;

ভাবনাহীন ডুবে যেতে যেতে আকাশ দেখো, মেঘগুলিকে বাতাসে নদী; তুমি একবার

এভাবে শুয়ে পড়লে আর ওঠবে না, ভাবো, কি এতো রোমাঞ্চ, সত্য আনাগোনা তোমার ঘরে

বাতি নিভিয়ে চলাফরো করে, তাদের স্বরে, স্বপ্নে, আমাকে তুমি দেখো, শেষ হওয়া, প্রভাতে।

 

পৃষ্টা ৬

পৃষ্টা ৬

 

কথাগুলি

 

কথাগুলি হলো পাখি, ডানায় আরো কোমল হতে গিয়ে তোমার কাছে তারা

ফিরে এসেছে আবার। বুদ্ধমিতী কথায় কথায় কত গল্প বলে যাবে সারা সময়।

তোমার কাছে যাবো, আকাশে স্বপ্নের মতো। শব্দহীন বৃষ্টিতে অথবা জোছনায়

যেমন ঝরে কবিতাগুলি, নিভৃতে, জবাফুল দেখে, রাশি রাশি কথার মতো

ফুটছে আজও তারা, এই দৃষ্টগিোচরে তুমি দখেছো, হাসিতে বলিীন, ডুবে যাওয়া।

পৃষ্টা ৭

পৃষ্টা ৭

 

হৃদয় আমাকে

 

হৃদয় আমাকে কাঁদায়, তোমার শহর ছেড়ে যেতে মনে হয় শৈশবকাল, তোমার উড়ন্ত দিনগুলি।

এতো শান্তি বহুদনি পর আজ, মনে এলো হৃদয়রে কথা, তোমাকে সাথী করে মঘেদেরে মতো

দেখেছি ভেসে যেতে যেতে একটি গান তার পথ রুদ্ধ করে আরকেটি গানের, কী কী ভেবে

কণ্ঠে বাষ্প আসে, তোমাকে বলিনি, হৃদয় আমার, তোমার নতমুখ, নশ্চিল ঐ আকাশে, উড়ে গেছে।

 

পৃষ্টা ৮

পৃষ্টা ৮

 

তোমাকে বলবো ভেবে

 

তোমাকে বলবো ভেবে, কত কথা স্মৃতির মতো এই রাতে আকাশে ফুটে আছে।

এই যে এখন তোমাকে মনে পড়ে, না-দেখার মতো বিচ্ছেদগুলি, ম্লান মুখের মতো তোমার

আমি দেখেছি; কোন বৃক্ষ নেই এই বেদনায়, রাশি রাশি মেঘের মতো, তোমার বিকেলে আমি

চোখগুলির মতো শান্ত হয়ে আছি; ভাবনায়, তোমাকে এতো কাছে পেয়েছি যেন, বলবার মতো।

 

পৃষ্টা ৯

পৃষ্টা ৯

 

একজন অন্ধ বালক গান গাইছে

 

মুহূর্ত এবং স্মৃতিগুলি

 

রং খুব সহজে বদলায়। আর ঘন হয় নিরবতা। আকাশ। মেঘ। ঘুড়ি উড়া। উজানে বাতাস। ঠোঁট। চোখ। আর আর। দৃষ্টি নয়। কেননা বদলে যায়। ঘর ও বাহির। একটি জানালা।

তুমি বলছিলে, মেঘগুলি। কখনো আমার নয়। হাসি, হাসিগুলি। এর চেয়ে ভালো ডুবে যাওয়া। মৎস্য শিকার। কখনো আমার নয়। তুমি বলছিলে, এইসব শব্দ ও কথারা আমাদরে সেতু নয়, আমাদের পরিখা খননের নিজস্ব মন্ত্র আর হু হু কাঁদছিল হঠাৎ পোশাকগুলি, না-বোঝা জড়েরা!

বধির একটি মৃত্যু উন্মোচিত হলে চোখ বুঁজে তার ঘ্রাণ নিয়ে সকাল আলোকিত হয়। তুমি জানো, এইসব কতটা নিকট। আর আমি ভাবি; ভাবনা, সে কি অদ্ভুত ট্রান্সপারেন্সি!

 

উৎসব

 

সবকছিু হারিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধতায়। একা ঘুড়ির ক্লান্ত পথে চক্রাকার। ভেসে ভেসে প্রাসাদ এলো তার, দীর্ঘ চূড়া। বিকেলে সবার একই গান হয়। ডুবে যাওয়া র্সূযে হয়তো সমান স্তব্ধতা, যেমন এই চূড়া আর হঠাৎ-ই কাকের মতো দেখা দূরে নব-দম্পতি। এই কথা আর বলবো না। পাখি, তোমার ডানা মুড়ে মেঘ দেখো আজ; নিচে, মাটিতে মানুষগুলি। গলিতে অনেকগুলি ভেড়া, তাদের র্পযটন অবশেষে এই মৃত বন্দরে। আকাশে বিমান, অনেকক্ষণ, দৃষ্টিসীমায়। দৃশ্য।

সম্ভাবনা পথ খুলে হেঁটে গেছে। দুইপাশে দীর্ঘ গাছ। আশপাশ ভরে আছে চেনা ও অচেনা। নরোম ঢেউয়ে বাতাস যে নদী তার পাল তোলা বাণিজ্যের নৌকা কত কী নিয়ে চলে যায়, আস। চলাচলও হতে পারে গভীর মৌনতা। কিছুই ভাঙছে না। শুশুকের মতো ভেসে ওঠা মাঝদিরে নিস্পৃহতায় যাচ্ছে এড়িয়ে ক্রমশ। দিগন্ত ক্রমেই ঝাপসা। এখন আর বাতি-জ্বলা ত্রস্ততায় কেঁপে কেঁপে ওঠবে না তুমি।

ঘরগুলি বন্দিুর মতো ফুটে কখনও। রাত-বরিাতে আকাশে তারাগুলি; মাঠের ওপর, রেলপথ জুড়ে অন্ধকার, গাছ, হবিজিবি… আজকেই মনে আর কোনদিন না। অথবা কে জানে হয়তো এমন বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, পেঁচার স্পষ্ট চোখে জমে আছে অনেক নিদ্রা। আর এই ভেবে ভেবে সবকছিু যাবে, যাচ্ছে; হারিয়ে।

‘একদনি আমওি মরে যাবো’- এই সত্যে তবু আমারও বিশ্বাস নাই। তোমার জানালায় উঁকি দিয়ে পাতাগুলি তোমাকে দেখেছ। তুমি আজ ভীষণ হাসছো; হাসতে হাসতে একেবারে চাঁদের মতো, লুকাতইে পারছো না। এই আনন্দ, কতদনি পর!

 

 

পৃষ্টা ১০

পৃষ্টা ১০

 

 

ভ্রমণ

 

কৃষ্ণনগরে যে থাকতো তার নাম রাধা। এই এক পালের নৌকা। আমরা যে যাচ্ছিলাম তার প্রমাণ ছিল বাতাস। শোঁ শোঁ আর্তচিৎকারের মতো, উৎসবের মতো, একান্ত-ই বিরহের। ছিলো শাপলা-শালুক বিল। ত্রস্ত হাত। সে কী আনন্দ! বুঝি ঝর্ণা, প্রথম দেখি, এমন-ই উদ্দামতা। সময়গুলি ঘাটে এসে থেমেছিলো। লেবু ঝোপের পাশে চাঁদ, উড়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো, আমাকে দেখে; আমি তো নিরব, তার চোখের মতো ভাবতে গিয়ে, নিমেষেই উধাও।

তখন আকাশে অস্তগামী সূর্য, নদী শান্ত, অদূরে দ্বীপের মতো কৃষ্ণনগর। আরে ইচ্ছেগুলি যেন তার ঘর, আমাকে সময় ভাবে; দাঁটানা, পৌঁছে যাওয়া গন্তব্যের মতো।

পৃষ্টা ১১

পৃষ্টা ১১

 

ঘুম

 

ঘুম মানে ক্লান্তিঘর। সেখানে আমরা আসবাব সাজাই আসো।

 

ঘুম আজ ক্লান্তির ঘর, মনোরম পথের ওপর, দীর্ঘ বৃক্ষের ছায়া, কাছে টানে আর হাসে, বলে

এইসব কবিতা আর কোনদিন লিখবে না, ক্লান্ত;’ শুয়ে শুয়ে আলোকের খেলা দেখি

ভালো লাগে নরোম শান্তির দিন; অপারগতা, ফিরে পাবার মতো বারবার হাসি-মৃত্যু;

তোমার কাহিনিগুলি যদি হতো এর ব্যতিক্রম, তোমাকে নিয়ে ঘুম যেতো প্রতিদিন;

ঘুমের দেশের বৃক্ষরো বলেছে, আমাকে কথা, তোমার নাম নিয়ে তারাও ভেসে গেছে,

বারবার এইসব প্রতধ্বিনি আমি বলতে চেয়েছি তোমাকে, তোমার শহর ঘিরেই ঘুমের প্রতিপত্তি

তুমি শুনে গেছো, অথবা না-শোনেই আমাকে দেখেছো, দণ্ডায়মান বৃক্ষটির মতো।

 

পৃষ্টা ১২

পৃষ্টা ১২

 

ফিরে এসো

 

ফিরে এসো রাজহাঁস, সমাপ্তি-দিন

ঝুল-বৃক্ষ, ধূলি-মাঠ, রৌদ্র

জানালায় বসন্ত-আলো

গ্লানমিয় চোখ, ফিরে এসো

 

সমস্ত সকাল যেন শান্ত

ধীর বরফের মতো নদীটি

তার এক তীর

 

বিভ্রম, কালো মেঘ, ফিরে এসো

সবুজ-গন্ধ, করুণ প্রত্যালীঢ়

 

পৃষ্টা ১৩

পৃষ্টা ১৩

 

প্রতিকল্প তোমার

 

 

কেমন প্রতিকল্প তুমি, আকাশেও আছো।

বাতাসে বাক্সটি ভাসে

দূরে, দরজা বন্ধ হয়ে গেলো, তরুণী মেয়েটি চলে যায়।

লাল আলোটির গান আরো ঘনিষ্ঠ; পোশাকের ছায়া;

আরো আছে বিভিন্ন বাতি, নগর-আইল্যান্ড।

দেখো, মেয়েটির ঘরেও একটি বাতি

নিভে গেলো,

ঘুম,

বাতাসে গড়িয়ে গড়িয়ে অনেক নিচুতে…

 

সুদূরের ব্যালকনি, বৃষ্টিতে বিলীন

ধূসর, একটি অন্ধকারে

আকাশে কেমন প্রতিকল্প তোমার।

 

 

পৃষ্টা ১৪

পৃষ্টা ১৪

 

গান

 

আকাশের ক্লান্তিময়তা, অফুরন্ত নীল

মায়াবী সাদা ফুলগুলো; টবে রাখা ফুল ও ঘুড়ি

উদ্বেগপ্রবণ; কখনো উড়ে যায় না

কান্নায় মলিন, ভাসে বাতাসে;

জাগরিত ও স্বপ্নময়,

একটি বেদনা গানের সুর দূরের ব্যালকনি ছাড়িয়ে আরো দূরে…

 

সন্ধ্যা মুছে যেতে

ঢেউয়ে ঢেউয়ে ফুঁসে উঠছে মেঘ

দিনান্তে প্রকৃতি কাঁদে;

গান যাবে তার সাথে ফুলেদের নিয়ে।

 

 

পৃষ্টা ১৫

পৃষ্টা ১৫

 

স্নান

 

আলগোছে

দু’পাশ দেখে নিয়ে

ঘাটের সিঁড়ি ধরে নামতে গিয়ে

শ্যাওলা পিছলেই –

ধপাস!

তাই দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো সব পাখিরা

আর লজ্জায় মেয়েটি

অতলে দিলো ডুব।

 

 

বর্ষা

 

মৌন রাস্তা, কাদামাখা চোখ

তোমাকে দেখে আসন্ন সকাল;

বৃষ্টির ভিতর তিল তিল ফাঁক,

ক্যারাম খেলছে মানুষ,

স্বল্প আলো,

দীর্ঘ, বিশাল ছায়া, নিভে যাচ্ছে…

 

পৃষ্টা ১৬

পৃষ্টা ১৬

 

ছবিওলা

 

যে ছবি উঠে আসে, তার নতুন গন্তব্য;

দেখতে পাওয়া দৃশ্যগুলো, ভাগ্যবান ওরা

দূর থেকে, আবছা প্রতিকৃতি

নিঃসাড় আর অভিব্যক্তিময়;

 

ছায়ায় ভেসে যায়

যাত্রাপথে দিগন্ত সৌন্দর্য্য, ব্যাপ্ত গোলকে;

নরোমা, শুষ্ক অভিঘাতগুলো,

ঘুরে ঘুরে দেখে চোখ, বিস্তৃত

আর ফিরে যায়, কান্নাহীন;

পাতারা দোলে বাতাসে

শান্তিময় পাতাগুলো, সবুজ, লাল, হলুদে

ফুটে আছে;

ঝরে যাবো কোনদিন রংসহ, অদ্ভুত বর্ণালী হয়ে

তাকে নিয়ে যাবে ছবি, ছবির নতুন গন্তব্যে।

Leave a Reply