এ-কার আর আ-কার

ছোট একটা টেকনিকের জিনিস এইটা, অনেকেই খেয়াল করার কথা, কিন্তু খোলাখুলিভাবে খুব কম কথা-ই হইছে মনেহয়, এই এ-কার আর আ-কার নিয়া।

বাংলায় কাজ-কাম বুঝাইতে যেই ওয়ার্ডগুলা আছে, সেইগুলা খেয়াল করলে দেখবেন এ-কার দিয়া লেখলে একরকম লাগে, আর আ-কার দিয়া লেখলে পুরা অন্যরকম লাগে; মনে হবে যেন আরেকটা দুনিয়াই ক্রিয়েট কইরা ফেলছেন! যেমন, বললে/বললা, দেখলে/দেখলা, বলবে/বলবা, শেখালে/শিখাইলা… এইরকম শ’য়ে শ’য়ে পাইবেন। লেখার টোন’টাই পুরা চেইঞ্জ হয়া যায়।

তো, ব্যাপার’টা মোর বাংলা হয়া উঠবো – তা না, কিন্তু আমরা বাংলাদেশে বলার সময় তো আ-কার’টাই বেশি ইউজ করি। কিন্তু বাংলা লেখা ব্যাপারটা যেহেতু কলকাতা-সেন্ট্রিক ছিল, এই কারণে অইখানের ডায়ালেক্টে যেহেতু ‘এ-কার’ এর চল’টা বেশি, অইটারে বেশি ‘কারেক্ট’ মনে করার মতো একটা ভুল ধারণা এখনো আছে। ভাষা থিকা ডায়ালেক্টগুলারে মুইছা ফেলতে হবে বা ‘আঞ্চলিক ভাষা’ হিসাবে বাঁচায়া রাখতে হবে – এইটা খুবই ভুল একটা প্রিমাইজ, আলাপ করার। মানে, ‘বললে’ লিখলেই জিনিসটা ‘শুদ্ধ’ – তা না, কিন্তু ‘বললা’ ইউজ করলে দেখবেন বাংলাদেশের অডিয়েন্সরে বেশি কানেক্ট করতে পারার কথা।

কয়েকটা লাইন বলি বাংলা সিনেমার গান থিকা, তাইলে হয়তো ঘটনাটা আরো ক্লিয়ারলি খেয়াল করতে পারবেন-

১. অন্তর জ্বালাইলা, পিরিতি শিখাইলা…
/জানি না কেন যে প্রেমের রইদে পুড়াইলা
(অন্তর জ্বালালে, পিরিতি শেখালে…/জানি না কেন যে প্রেমের রইদে পুড়ালে)

২. ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া/বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি, হায়রে কান্দে রইয়া রইয়া।
(ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছেড়ে/বন্দী হয়ে মনোয়া পাখি, হায়রে কান্দে রয়ে রয়ে)

৩. তেল গেলে ফুরাইয়া/বাত্তি যায় নিভিয়া/কি হবে আর কান্দিয়া?
(তেল গেলে ফুরিয়ে/বাত্তি যায় নিভে/কি হবে আর কেঁদে)

মানে, ভালো/খারাপ, শুনতে ভাল্লাগে/অস্বত্বি লাগে, ‘হাইস্যকর’ এইসব অ্যাডজেক্টিভের জায়গাতে না গিয়া দেখেন, দুইটা যে খুবই আলাদা টোন, সেইটা রিকগনাইজ করতে কোন ঝামেলা হওয়ার কথা না মনেহয়।

কিন্তু এই এ-কার এখনো এলিট না থাকলেও জমিদারি বাংলা তো অবশ্যই। এমনকি সংশপ্তক নাটকেও মনেহয় জমিদার খলিলের টোনে ‘এ-কার’ থাকার কথা, যেইখানে রমজান হুমায়ূন ফরিদী’র টোনে থাকার কথা ‘আ-কার’। মানে, আমি আন্দাজ কইরাই বললাম, কিন্তু উদাহারণটা ভুল হইলেও আমার কথাটা মনেহয় বাতিল হয়া (হয়ে) যাবে না।

Leave a Reply