কবিতা: অক্টোবর, ২০২০

তুমিও

কি যে ফ্রেজাইল হয়া থাকো!
একটা ছোট্ট কালো মেঘ উইড়া গেলো,
সে কি বৃষ্টি হইতে পারবে?
নাকি পারবে না? বোঝা গেল না…
এইরকম ডাউটফুল ভাবনার মতন,
একটা পানি ভরা কাচের গ্লাস হাতে নিলে
ছলকায়া উঠতে পারে যেমন,
যেমন এই দুনিয়া ধ্বংস হয়া যাইতে পারে,
অথবা আমরাই মারা যাইতে পারি, যে কোন সময়
‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’…
এইরকম কতো কতো চিন্তার ভিতর
তুমিও
কি যে ফ্রেজাইল হয়া থাকো
যে ন এ ক টা জী ব ন

 

না-থাকা…
আমি নাই তোমার শহরে
তোমার শহরে থাকে
আমার একটা না-থাকা

 

কুয়ার ব্যাঙ

কুয়াটা যে কতোটা ডিপ –
ব্যাঙ’টা কি জানে?

 

সকাল হইতেছে

কল পাড়ে,
পেঁপে গাছটার নিচে
হাত-মুখ ধুইতে গিয়া
পিছালায়া পইড়া যাওয়ার মতন
সুন্দর একটা সকালবেলা

সূর্য হাইসা দিতেছে
কয়লা-মাখা ডেক-ডেকচিগুলাতে
মুছে যাইতেছে গতরাতের নিরবতা,
কুত্তাটা ঘুমাইতেছে উঠানে
দুইটা বিলাই রাজ্যহারা রাজার মতন ভঙ্গিতে হাঁটতেছে,
কিছুটা বিরক্ত হয়া খুঁজতেছে বাসি মাছের কাঁটা

সকাল হইতেছে,
চারপাশের শব্দ ও কথাগুলি
জেগে উঠতেছে, কল পাড়ে
পেঁপে গাছটার নিচে…

 

গাব্বার সিং গান গাইতেছে…

দুখিনী মায়ের হেমামালিনী
বড় হয়া শে কি হবে ধর্মেন্দ্রের বউ?
তার আগে চালাবে ঘোড়ার গাড়ি?

দুখিনী মায়ের হেমামালিনী
ভাবতেছে আজ শুয়ে শুয়ে এই কথা খালি?

আমি দেখতেছি তারে টিভি’তে
আর ডিকন্সট্রাক্ট করতে গিয়া
আটকায়া যাইতেছি, ভাবতেছি
হেমামালিনী-ই তো, মা-মরা, দুখিনী মায়ের

মেরিলিন মনরো’র মতন হেমামালিনী

 

রেনে দেকার্ত

আমি তর্ক করতে পারি, এই কারণে আমি ইন্টেলেকচুয়াল

 

সিসিফাস

একটা পাত্থর
বাইন্ধা দিলো শে
পিঠে আমার

কইলো, যাও
এরে রাইখা আসো
পাহাড়ের উপর

তোমার মুখের দিকে তাকায়া
আমি পাহাড়টারেই তুইলা নিয়া আসলাম
এখন তারে কই যে রাখি…

 

গরু ও বাছুর

বাছুর’টা একটু বড় হওয়ার পরে
তার মা’রে কইলো,
“আমি এতোটা গরু না, বুঝছো?”

 

আমি টের পাই… আমি জানি…

স্বপ্নেও তুমি একই দূরত্বে আছো

র আর ব আসছে তোমাদের বাড়িতে
সিনেমা দেখাইতেছে, ক্রিয়েটিভ মানুশ অরা
কই থিকা জানি আসছে আর কই কই জানি চইলা যাবে
তুমিও যাইতে চাইতেছো; কিন্তু যেহেতু আমি আছি
থাকতে হইতেছে তোমার, তো, আমি চইলা যাবো
যাওয়ার আগে আমি গল্পটার কথা বলতেছি, যেইটা আমি
লিখছি আরো আগেই, কিন্তু এখন বলতেছি
অইটা সৈয়দ শামসুল হকের গল্প, হাসান আজিজুল হক ছিল গল্পে
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহীদুল জহির, মানিক বন্দোপাধ্যায়ও…
মানে, আমিও যে ক্রিয়েটিভ, এইটা তো নিজে নিজে বলতে পারতেছি না,
গল্প-লেখক হয়া বলা লাগতেছে

গলিতে মানুশ-জন,
তাদের পাশ দিয়া হেঁটে হেঁটে যাইতেছি
কোরবানির ঈদের পরে গরুর চামড়া নিয়া ক্লাবঘরে হাউকাউ চলতেছে,
অরা কেউ আমাদেরকে দেখতেছে না,
তোমার অস্বস্তি আর আমার না-যাইতে-চাওয়া

তুমি ফিরা যাওয়ার পর,
একজন বযস্ক মহিলা দেখাইতেছে আমারে
একটা বাচ্চা-মেয়ের ছবি, দেখেন অরে ফ্যামিলির মতো কইরা আমরা পালতাম
একদিন পিকনিকে ঘুরতে নিয়া গেছি পরে মারা গেছিল,
অর বাপ-মা কোনদিনই আমাদেরকে মাফ করে নাই

আমি টের পাই
একটা বাস একসিডেন্টে মারা যাওয়ার ইশারা এইগুলা
কিন্তু অই একসিডেন্ট পর্যন্ত আমি যাইতেছি না

যেই ফিউচার প্রেডিক্ট করতেছি, সেই ফিউচারটাও
স্বপ্নে ফিউচার হিসাবেই থাকতেছে, একটু দূরে
যেইটা ঘটবে, আমি জানি, কিন্তু ঘটতেছে না

 

স্লাভো জিজেক

আলু-সিঙ্গারা উইথ-আউট আলু

 

হঠাৎ-সন্ধ্যা

ঘুমের ভিতরে চিল্লায়া না উঠতে পাইরা দমবন্ধ হয়া মারা যাইতেছে যেন একজন মানুশ

 

নীল

আকাশ নীল। নীলের ভিতর হলুদ, কমলা আর লাল
রং লুকায়া আছে। অরা ধীরে ধীরে জাইগা উঠবে।
তারপরে গ্রে। ছোট ছোট শাদা রং তারা দেখা যাবে।
আকাশ নীল। নীল রং বইলা ভুল হইতেছে আসলে।
যেমন, এই সময়, একটা সময়েরই ভিতর হারায়া যাই
তেছে। বলতেছে, আকাশ নীল। আকাশ ভাবতেছে,
ওকে, নীল তাইলে। ঠিকাছে। লাইনটা লেখি এখন:
নীলাকাশ নীল হইতে গিয়া একটা কিছুরে নীল বইলা
ভাইবা নিতেছে…

 

জীবনানন্দ দাশ

আমারে দুই-চাইর বছর ব্লেইম দিয়েছিল, নাটোরের বনলতা সেন

 

সন্ধ্যাবেলায়

এখন আমরা বুঝি যে,
অই দিনগুলা আর নাই

শীত আসার আগেই ফুটপাতগুলা
আরো একলা হইতে থাকে,
ছায়ার মতন একটা রাত আইসা থামে
সন্ধ্যাবেলায়, লা ফ্লোরেন্টাইন লাইট জ্বালায়া
বইসা থাকে, কোন কাস্টমার নাই…

খালি চেয়ারগুলা ডাকে আবছা অন্ধকার’রে,
আর অন্ধকার ঘন হয়া আসে আমাদের মনের ভিতরে

 

মনেহয়

আমি
আমার
কাহিনিটা
লিখতেছি

আমার
কাহিনিটা
লিখতেছে
আমারে

মাঝখানে
কোথাও
আমাদের
দেখা হইছিল
মনেহয়

 

হেমন্ত, জীবনানন্দ

আমাদের ছায়াগুলা
নিজেরা নিজেরা
ফাইট করে, কয়,
‘আমি-ই আসল!’

রইদ নিয়া মাথায়
গাছের পাতাগুলা
হাসে, বাতাসে

এইসব আলো আর ছায়া
জীবনানন্দের মুচকি হাসির মতন
থেকে যাইতেছিল, আমাদের জীবনে…

বিমান থিকা নামার পরে
বাসে, বলতেছিলা তুমি, জীবনানন্দ আমার
কোনদিনই ভালো লাগলো না

আমি বুঝি, আসলে সে জীবনানন্দ না
পুরান কোন প্রেমিকের স্মৃতি
রবিগানের মতো
বাজতে শুরু করছে ব্রাকগ্রাউন্ডে…

আমি ভাবি, ‘এতো সুর আর এতো গান…’
আর ইমেজ, এদের লগে ফাইট দিয়া
আমার সাইলেন্স আর কতোদিন
এলাইভ থাকতে পারবে!
নিরবতা হয়া ঝইরা পড়বে কোনদিন
চাইনিজ বা ম্যান্ডারিন কোন শব্দের ভিতরে…

 

৫৭ ধারা

“ব্যক্তি-স্বাধীনতা, আপনি আসেন
আমি গাল্লাইবাম!”

ব্যক্তি-স্বাধীনতা কয়, শোনেন
ব্যাপারটা এতোটা পারসোনাল না,
৫৭-ধারায় মামলা খাইয়েন না আবার!

 

না-বলা প্রেম

একটা কুত্তার মতন
তোমার পায়ের কাছে
সারাক্ষণ
ঘুর ঘুর করতেছে
আমার না-বলা প্রেম

 

রেফারেন্স সিস্টেম

নোবডি: হু আর ইউ?
আমি: আমি একটা নোবডি।
নোবডি: তাইলে আমি কি!…

 

গ্লাসের পানি

গ্লাসটা হাফ-ফুল দেখার মানে হইতেছে
গ্লাসটা একই সাথে হাফ-এম্পটি

অথবা গ্লাসটাই নাই,
হাফ-এম্পটি আর হাফ-ফুল ধারণা দুইটা
গ্লাসটারে বানায়া তুলতেছে

গ্লাসের ভিতর দিয়া তুমি দেখতেছো
দুইটা ইনকমপ্লিট ধারণার মতন
আমি তাকায়া আছি, দেখতেছি আর
দেখার মিনিংয়ের ভিতরই যেন আমি আছি, থাকতেছি…

 

আমি, তুমি ও আমাদের বাংলা-ভাষা

আমি তো ততটুকই খারাপ, যতটুক তুমি ভালো
আমি কইলাম, পূজা; তুমি কইলা, না, না… পূজো

যেন আমি ততটুকই মুসলমান, যতটুক তুমি হিন্দু
বাংলা-ভাষা আইসা হাইসা ফেলে, কয়, হইছে তো,
থামো!

 

খাঁটি ও অরিজিনাল

“আমি মাছ পছন্দ করি বইলাই তো
আমি বিলাই না!” – কাঁটা চাবাইতে চাবাইতে
বিলাইটা কইলো।

“অথচ দেখো, আমি হাড্ডি
খাইতে পাই না, তারপরও
আমারে কয় কুত্তা” – জিব্বা বাইর কইরা
কুত্তাটা কইলো।

মানুশগুলা কথা কইতেছিল,
বলতেছিল, “মানুশগুলা আর মানুশ নাই এখন,
কুত্তা-বিলাই হয়া গেছে সব!”

 

আমি

আমি হইতেছি সে, যার
সবসময় কিছু না কিছু বলার আছে
আর নিরব থাকার ভিতর দিয়া
আমি তোমার সাথে কথা বলি

 

এই দুনিয়া

শে আমারে খুন কইরা ফেলতে চায়,
অথবা চায় নিজেই মইরা যাইতে

এই দুনিয়া তো খুবই ছোট্ট একটা জায়গা
দুইজন মানুশের লাইগা

যারা এক সময় ভালোবাসতো
আর এখন ভালোবাসে
না – না, ভালোবাসতে গিয়া যারা
নিজেদেরকে হারায়া ফেলছে আর খুঁইজা পায়
না

 

π

পাই যেন একটা পাইয়ের জীবন

পাই পাই করে যেন বুঝে নিতে পারি
পাইয়ের ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে থাকার যন্ত্রণা
বৃত্তের ভিতর,
আর তখন কই থিকা যেন তুমি আওয়াজ দিলা
মিসোজনিস্ট শালা!

ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষায়, আমি
ভুল কইরা লিখলাম, পাইয়ের মান
জানা নাই; পাইটা হাইসা কইলো,
‘নাকি তুমি জানো না?’ 🙂
সেই হাসি লাস্ট বৃষ্টির দিনে হারায়া যাওয়া ছাতিটার মতো
শীতের দিনে মিনিংলেস হয়া পড়া একটা ঘটনা যেন
হাতির পিঠে চইড়া থপ থপ কইরা হাঁটতেছে রোডে
চাঁদাবাজি করতে করতে ক্লান্ত হয়া বইসা পড়ে, রোডেরই ধারে
‘মাহুত, তুমি আইলা নাই…’

হায় হায় পাই,
তুমি এখন কোথাই?
য় আর ই ডিফরেন্স নিয়া কই যে চইলা গেলায়
আঞ্চলিক-ভাষার শব্দের মতন
ইন্টারন্যাশনাল এরিনায়

পাই পাই কইরা বুইঝা নিতে থাকলা
তোমারই পাইয়ের জীবন, আমি পাই নাই

‘পা মচকাইলে মা গো এমনই হয়…’
বললো পাই, পাগল হয়া
পেঁচানো পেঁচানো সিড়ির মতন
যেইখান থিকা পড়লে জীবন
পগাড় পার
অহেতুক শব্দের বাধ্যবাধকতা
আর নাই, আর তারপরে
হাসি-খুশি জীবন, দাবা
খেলার মতন, কয়েকটা চালের শেষে
আটকায়া যাওয়া…

‘হুহ… বলছিলাম না আমি!’

বলদের মতো স্তম্ভিত পাই যেন আমি
দুই পায়ে দাঁড়ায়া আছি
সবকিছু পাইতে পাইতে হারায়া ফেলি

তোমার দেখা পাই না

 

কাক ও কুকিল

কয়েকটা কাক, কালা তারের উপর বইসা
ক্রিটিক করতেছিল,
“দেখছো, কুকিল’টা কিন্তু এতোটা কালো না…”

 

আবদুল মান্নান সৈয়দ

সেক্যুলারদের মতো বদমাইশ

 

সন্ধ্যা

সারাটা দিনের পিছনে
একটা ইন্দুরের মতো দৌড়াইতে দৌড়াইতে
সন্ধ্যা আসলো শে ষে

 

টয় স্টোরি

“তোমারে ছাইড়া থাকতে আমার অনেক খারাপ লাগে তো…”
একটা স্ক্রীণ-ফাটা, কি-বোর্ডের কয়েকটা ব্লক না থাকা,
মাউস-প্যাড ঠিকমতো কাজ না করা
সিলভার কালারের একটা DELL’র ল্যাপটপ কইলো আমারে

আর আমি, যে কিনা মারা যাবো কয়দিন পরে
ভাবতেছিলাম, এইসব মেমোরি কই যাবে?
আমরা মারা যাওয়ার পরে…

Leave a Reply