কবিতা: এপ্রিল, ২০১৯

সিনেমাহলে

তফাতে যেন কেউ নাই
যেন কেউ একটু দূরে সইরা গিয়া বাঁইচা থাকতেছে না;
আছে তো, থাকেও

তাদের কথা যখন মনেহয়,
মনেহয় মেমোরি’র মতোন, ছায়া’র মতোন

ছুঁইয়া দেখা যায়, অথচ
তারা নাই আর কাছে, আছে
দুনিয়াতে, অন্য কারো’র
ভিজিবিলিটি’র কাছে
অন্য কোন অডিয়েন্সের সামনে

আর আমার চোখের সামনে কালো পর্দা

সিনেমা শেষ
অথবা অন্য একটা শো
শুরু হওয়ার আগেই চইলা আসছি আমি

প্রজেকশনের রে কখোন পড়বে!
আমি ওয়েট করতেছি
একলা একটা সিনেমা হলে

যারা দৃশ্যের ভিতর, সিনেমার ভিতর চলে গেছে
তারা আর ফিরা আসতেছে না

তবে, আসবে
কালো পর্দাটা সইরা যাবে
একটা প্রজেকশন রে পড়বে
আমি দেখবো, মানুষ
আরে, অরা তো আছে!

আমার সামনে আর একটু দূরে
বাঁইচা থাইকা যাইতেছে

আমি অডিয়েন্স,
আমারে অরা দেখতেছে না, কিন্তু
ভাইবা নিতে তো মনে হয় পারতেছেই
আমি বা আমার মতোন অন্য কাউরে

আর
আমি সিনেমা দেখবো বইলা বইসা আছি
দুনিয়ার একটা সিনেমাহলে

 

চৈত্রের কুয়াশার মতোন

চৈত্রের কুয়াশার মতোন, আননেসেসারি
তুমি আর আমি

শীত শেষে চকমকি গরমের দিন
তারপরেও আমরা থাকতেই চাইতেছি

দুপুরবেলার শয়তান

কোন একটা দুপুরবেলায়
শয়তান আইসা বসে পাশে,
কয়, “চলো ঘুইরা আসি!
তুমি আর আমি,
হালকা হয়া আসা জ্যামের রাস্তায়”
আমরা পথ হাঁটি,
মানে, আমি তো হাঁটি না
আমারে লগে নিয়া
শয়তানে ঘুরে,
কয়, “দেখো, গাছের পাতা-ঝরা শেষ,
শেষ বসন্তের বাতাসও,
দেখো, বারো তলার ছাদ
অইখানে চলো যাই,
গিয়া, অইখান থিকা আমরা লাফ দেই!
পাতা-ঝরা শেষ যেহেতু
পাতার মতোন আমরা
পইড়া যাবো, বসন্তের শেষে”
খুবই ফানি, হিউমারাস একটা জোকসের শেষে
হাসতে থাকে সে;
আমি বুঝি, সে যে শয়তান
তারে বলি, “আসো, আমরা সিগ্রেট ধরাই”;
সে তাকায়া থাকে আমার দিকে,
এখন কি নসিহত করবো সে
আমারে?
যে, ছোটখাট এইরকম দুয়েকটা
পাপ তো তুমি করতেই পারো!
আমি ভাবি, শয়তানের ভাবনা-ই,
মন-খারাপ হইলো কি তার?
বৃষ্টি নাই, তারপরও একটা লাফ
দিতেই তো আমরা পারতাম,
আমি ভাবি,
শয়তান’টা আমার কথা ভাবে না আর,
সিগ্রেট টানতে টানতে সে
আরেক দিকে চইলা যায়,
একটু দূরে গিয়া দাঁড়ায়া থাকে,
আমি দেখি তারে
আর সে দেখে আমারে;
আমার শয়তান
আমারে ছাইড়া আর
কার কাছে যাবে!
আবার বসবো আমরা
একলগে,
আমারে ফুঁসলাবে সে
আর আমি তারে বলবো,
“ঠিকাছে তো! ঠিকাছে. . .”
রাস্তা পার হওয়ার সময়
ধাক্কা দিয়া ফেইলা দিতে চাইবে
হয়তো আমারে, আর আমার সন্দেহ
দেইখা হাইসা ফেলবে,
বলবে, “যাহ্, এইবারও বাঁচায়া দিলাম
তোরে”, গাছের নতুন পাতার মতোন
নিউ লাইফ যেন পাইছি, এইরকম
খুশি আমি আর হই না এখন,
আমি মরলে আমার শয়তান
করবে’টা কি, আমি তো জানি,
আরো যতো যতো শয়তান আছে
দুনিয়ায়, তারাও লোনলি এক রকম
মরতে মরতে বাঁচায়া দিতেছে বইলা
নিজেদের বাঁইচা থাকাটারে জাস্টিফাই
করতে পারতেছে, থাকতেছে
আমার সাথে, অথচ সে যে নাই
তাও তারেই বলতে হইতেছে
দুপুরবেলা’তে, ভাত খাওয়ার পরে
একটা হালকা ড্রাউজিনেসে সে
টুং টাং টুং টাং
গান-ই গাইতেছে, অভিমানী
একটা থ্রিলারের

 

ব্রাকেট

আমি কি তোমার মতোন ঘাসে
(তারপরে ছন্দ মিলাইতে গিয়া লেখবো?)
আমি কি তোমার মতোন হাঁসে
(তারপরে আগাইতে শুরু করবো?)
পানি থিকা উইঠা ডানা ঝাড়া দিয়া
পানি ঝরায়া ফেলবো?
(এই যে হাঁস’রে তুমি বানায়া দিলাম, তুমি তো বুঝছো,
চেততেও কি পারতেছো?)
যেন উড়ে যাইতেছি – এইভাবে দৌড়াইতে দৌড়াইতে
আরো অনেক হাঁসেদের লগে
দৌড়ায়া চইলা যাবো?
(এখন আমি যে হাঁস হইছি বা হইতে চাইতেছি
এইটা একইসাথে একটা গিল্টি ফিলিংস আর ট্রাপও)

তখন তুমি হাঁস, হাসতে হাসতে বলবা,
“তোমার এইসব বালছাল কবিতা কে পড়ে!”
(দেখছো, আমার ইমাজিনেশন আর থট প্রসেসের বাইরে আমি আর যাইতে পারতেছি না, ভাবতেছি তোমার ইমাজিনেশনরে আর ভাইবা হাঁসফাঁস করতেছি)

আমি দেখবো, হাঁসটা চলে যাইতেছে
আমাদের মাইক্রোবাস থিকা দূরে, চাপাইনবাবগঞ্জে
(বেদনা বেচার চেষ্টা শেষমেশ, দূর শব্দটা দিয়া; মানে যাইতেছে মাইক্রোবাস, কিন্তু
আমি কইলাম হাঁসটার কথা, সেও যাইতেছে, কিন্তু সে তো তার একটা পেরিফেরি’র ভিতরেই, আর মাইক্রোবাস যেই ইমেজ, সে তো আমার শব্দ আর চিন্তা, তারা তো কোন মিনিংয়ের কাছে স্থির থাকতে চাইতেছে, কিন্তু পারতেছে না )

একটা সকালবেলাই যেন আরেকটা সকালবেলার কাছে
যাইতে যাইতে যাওয়ার সিনারিটার ভিতরেই আটকায়া থাকতেছে
(মিনিংয়ের চেষ্টাটাই আসলে সত্যিকারের মিনিংলেসনেস, তাই না?)

 

একটা ছবি

একটা ছবি’র ভিতর আটকায়া আছি
তুমি আর আমি
আমরা ট্রাই করতেছি বাইর হয়া আসতে

ছবিটার ভিতরে থাকতে আমাদের যে খুব বেশি খারাপ লাগতেছে
– তা না; কিন্তু
আমরা তো মানুষ, আমরা
ছবি’র ভিতর কেনো আটকায়া থাকবো!
– এই ভাইবা আর থাকতে চাইতেছি না

ছবি’টার ভিতর থিকা
বাইর হয়া আইসা নাহয় বলবো নে আমরা,
“ছবি’র ভিতর থাকাটা কিন্তু ততো একটা খারাপ ছিলো না!”

ছবি’টা যখন থাকবো না, তখন
ছবি’র ভিতরে থাকা আমাদের কথা
ভাবতেই তো পারবো আমরা, তাই না?

তুমি ঠোঁট টিইপা হাসলা একটু,
আমি আর বললাম না, যাই গা. . .

ছবি’টা ফেড হইতে থাকলো আর
তুমিও যেন একটা ছবি-ই ছিলা, এইরকম চুপচাপ

আসলে
আমাদের দেখাদেখি’র বাইরে আমরা ছিলাম না তো কোনদিন, কোথাও-ও

এইরকম-ই কি ভাবতেছিলাম আমরা?

 

নিরবতা

কিছু ভালো নিরবতা রাখলাম আমি
কিছু দমবন্ধ নিরবতার পাশে

নিরবতাগুলি তখন
আস্তে আস্তে, ফুঁপায়া ফুঁপায়া কান্দতে শুরু করলো

 

আমি আর আমার দুর্ভাগ্য

আমার দুর্ভাগ্য চলে যাইতেছে তার ভাগ্যের সাথে
হাত ধরাধরি করতে করতে
আমি বললাম তারে, “আর কিছুটা সময়
তুমি থাকতে পারতা তো!”

সে হাসলো, কইলো, “যাই নাই তো,
আমি আছি, আমার বদদোয়া আর অভিশাপের ছায়া
থাকবো সারা জীবন, তোমার লগেই।”

হাসলো না আর সে; চইলা গেলো যে

আমাদের লাইগা মনেহয় আমাদের খারাপ-ই লাগতেছিলো, মনে মনে

 

সিন্ডারেলা

ছায়াবাণী সিনেমাহল থিকা ম্যাটিনি শো’তে ‘অবুঝ মন’ দেইখা বাইর হওয়ার পরে তুমি উদাস হয়া গেলা। বললা, “কি মজা হইতো, আমিও যদি হিন্দু হইতাম! কিন্তু শাবানার সাথে রাজ্জাকের মিলনটা হইতে পারতো তো, তাই না!” ডেইলি লাইফ বাদ দিয়া অনেকদিন পরে কথা বলার মতোন একটা সাবজেক্ট পাইছি আমরা। শাবানা আর রাজ্জাকের লাইগা খারাপই লাগতেছে আমরা’র, শওকত আর সুজাতা’র উপ্রে চেতও উঠতেছে কিছুটা। অরা তো স্যাক্রিফাইসটা করতেই পারতো!… গাঙিনার পাড়ে, সন্ধ্যাবেলা, কয়েকটা জুতার দোকান খোলা। জুতা কিনতে হবে তোমার। আমরা সিনেমাহল থিকা বাইর হয়া জুতার দোকানের দিকে যাইতেছি। তুমি শাড়ি পরছো, স্যান্ডেল পায়ে দিয়া। রাস্তায় প্যাঁক-কাদা। পা টিইপা টিইপা হাঁটতে হইতেছে তোমার, শাড়ি ধইরা। তোমার ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে নিয়া আমি পিছনে পিছনে হাঁটতেছি। আবারো বৃষ্টি নামবো কিনা, বুঝতেছি না।

 

আমি

ধানখেতের কাছে বাতাস আমি
বাতাসের কাছে ধানখেত

গরু নিয়া হাঁইটা যাইতেছে সন্ধ্যাবেলা
একটা লোক, 
তার পিছনের ছায়া আমি

লম্বা হইতে হইতে মুছে যাইতেছি, অন্ধকারে
সন্ধ্যার

 

নদী পার হওয়ার আগে

শব্দগুলি বন্ধক রাখলাম আমি
ঘাটপাড়ের ইজারাদারের কাছে,
নিরবতাগুলাও পুটলি বাইন্ধা পুঁইতা রাখলাম
নদীর পাড়ের মাটির নিচে

ফিরা আসার পরে ফেরত পাবো সব
আমি জানি;
আরো জানি

ফিরা
আসবো
না
আর
আমি

বন্ধকী মালগুলা বাতিল হয়া যাবে একদিন, আর
গুপ্তধনের কলসি ভাইবা পুটলা’টা খুঁইজা পাইয়া, কইবো কেউ,
“শালার, নিরবতাও আবার কেউ পুঁইতা রাখে, বাইনচোত!”

 

দুপুরবেলা

বাতাসে উইড়া বেড়াইতেছে অনেক অনেক জ্বরের জীবাণু,
বগলের তলে বিউগল বাজাইতে বাজাইতে আঁকা-বাঁকা কইরা হাঁইটা যাইতেছে একলা একটা চিকন পাকা-রাস্তা…

দুপুরবেলা, বিছানায় পাশাপাশি শুইয়া শুইয়া আমরা ভাবতেছি, যা কিছু আমরা ভাবতে পারি, তার সবটুকই তো আর সত্যি না, তাই না!

 

মানুষ

একটা মানুষ, কাচের বাসনের মতোনই

ফ্রেজাইল;

একবার হাত থিকা পড়লেই ভাইঙ্গা যায়

 

মেটামরফসিস

একটা চিন্তার ভিতর যেমন ঘোঁট পাকাইতে থাকে আরো আরো চিন্তা
একইরকমভাবে একটা কান্দার ভিতর জমতে থাকে আরো আরো আগের না-কানতে-পারাগুলা;

এক টুকরা বরফ গলতে গলতে পানি পানি হইতে থাকে,
একটা সময় পরে গিয়া বরফটাই আর থাকতে পারে না।

 

দেয়াল

আমারে শে বলে যে, আমারে তার ভালো লাগে না।
আমি কই, ভালো তো এইটা! আমারে যে আর ভাল্লাগে না।

আমাদের ভালো না লাগা একটা অন্ধগলির মুখের একটা দেয়াল, আমরা আঁকিবুঁকি করতে থাকি;
কোনদিন আর কোন রাস্তা বাইর হবে না – জানি বইলা
আমাদের আর কোন তাড়াহুড়াও নাই;

বইসা বইসা দেখি, সকালের রইদে দেয়ালটা একরকম,
দুপুরে অন্যরকম, বিকালে, সন্ধ্যায় আর রাতে
দেয়ালে আলো আর অন্ধকার
খেলতে থাকে, যেন আরেকটা দুনিয়ায় আটাকায়া রইছে তারা
নিজেদের মতোন।

 

Leave a Reply