কবিতা: মার্চ, ২০১৯

একটা পাত্থর

একটা পাত্থর সরানোর ট্রাই করতেছি অনেকক্ষণ ধইরা।
পাত্থরটা সরতেছেই না।
অনেকক্ষণ পরে বুঝলাম, পাত্থরটা আসলে নাই।
পাত্থরটা আমি বানাইছি আমার লাইগা।
পাত্থরটা এই কারণে সরতেছেই না।
আমি ভাবতেছি, এইটা তো নাই!
না-থাকা পাত্থরটারে তারপরও আমি সরাইতেই পারতেছি না।

 

নিউমার্কেটের পিছনের রাস্তাটা

রিকশা কইরা আসছি আমরা নিউমার্কেটের পিছনে। পোস্ট অফিস পার হয়া। বিজয় ৭১ হলের সামনে। দুপুরবেলা। চায়ের দোকানগুলি জমে নাই। বিকালের ভীড়ের লাইগা ঝিমাইতেছে প্লাস্টিকের চেয়ারগুলা। আমি ফুটপাতের একটা চায়ের দোকানের টুলে বসলাম। সিগ্রেট’টা ধরাইলাম। রইদ আইসা বসলো আমার লগে। তুমি তো আসতেই পারো। আমি ওয়েট করতেছি। আসলে আমি বইসা আছি একটা পারপাস নিয়া যে, আমি ওয়েট করতেছি। মানে, এমন যদি হইতো আমি একলা একলা চইলা গেছি নিউমার্কেটের পিছনে, দুপুরবেলা বইসা চা খাইতেছি, কোন কারণ ছাড়া। খুবই উইয়ার্ড মনে হইতে পারতো তো! এইজন্য আমি ওয়েট করতেছি। আমি আসছি তোমার সাথে। তুমি তো আসছো তোমার কাজে। একলাও আসতে পারতা। বা কোন ফ্রেন্ড নিয়া। তারপর ধরো, বইসা একসাথে চা খাইলা। বললা, কাজটা তো হইলো না! আরেকদিন আসা লাগবে! আমি ভাববো, এই যে কাজ বলা গেলো, কাম বললে তো সেক্সের কথাই ভাবা লাগতো একটু; একটু হাসি এড়ানো লাগতো। রইদ’টা তখন আমার এই কুটনামি দেইখা মুচকি হাসতে হাসতে সইরা যাইতেছিলো একটু একটু কইরা। আমি দেখলাম, তুমি আসতেছো। কাজটা শেষ হইছে তোমার। আর আসা লাগবে না। আইসা বললা। নিউমার্কেটের পিছনের রাস্তাটারে আমি দেখলাম আবার। রিকশা কইরা ফিরা যাইতেছি আমরা। রাস্তাটা অই জায়গাতেই পইড়া থাকলো। আমার লগে, আমাদের লগে আর তো আইলো না!

 

থাকো!

এইটুক জোর তো করা-ই যায়, আমি ভাবতেছিলাম।
এইটুক জবরদস্তি, থাকতেই পারে মেবি, কনফিউশনের জায়গাটাতে, একরকম।
যেমন শীতশেষের ঠান্ডা বাতাস যাইতে যাইতেই দুইটা দিন থাকতে চাইলো আরো;

তুমি বললা, অসহ্য!

আমি আর আমার ইনসেনেটি

আমি আর আমার ইনসেনিটি রাস্তার সাইডে দাঁড়ায়া সিগ্রেট খাইতেছিলাম। তখন সন্ধ্যা নামলো। হর্ণে হর্ণে রাস্তা ভরে উঠতেছে, নদীতে জোয়ারের পানির মতোন, ফুলে-ফেঁপে উঠতেছে। আমি আর আমার ইনসেনেটি সিগ্রেট খাইতে খাইতে দেখতেছি। একটু পরে ফাল দিয়া আমরাও স্রোতে নামবো। অনেকগুলি ছোট বড় ক্যারক্যারা হর্ণের ঢেউয়ের ভিতর চুপ কইরা বইসা থাকবো।

 

এই বেড়ার ঘরের পাশে

কেউ যেন আসে,
এই বেড়ার ঘরের পাশে
বইসা থাকে, কুয়াশার মতোন
একটা সুরে
থাকতে থাকে
সারা রাইত

আমি জিগাইতে চাই তারে,
‘কষ্ট হয় নি তোমার কোন
চালা ছাড়া, খোলা আকাশের নিচে
যে থাকো?’

জিগাই না আর,
যদি শে চইলা যায় আবার!

হয়তো শে ভাবে, আমি ঘুমাইতেছি

ছোট্ট একটা বেড়া
তার এইপাশ আর অইপাশে
আমরা থাকি

কথা কই না কেউ আর।

 

মায়া

ভাতের হোটেলে
ধনিয়া ভাজার বাটিতে
কয়েকটা টুথ-পিক
তাকায়া আছে
দাঁতগুলির দিকে
গরুর মাংস
খাওয়ার
পরে

 

অল রোডস লিড টু রোম

রাস্তায় চইলা আসো,
রাস্তায় পাগলেরা দৌড়াইতেছে

রাস্তায় উল্টা-পাল্টা বাতাস, রইদ নিইভা আসতেছে, বিকালের

রাস্তায় আমরা অচিনা কাউরে দেখতেছি,
চিনা চিনা লাগতেছে,
আবার অরাও চিনে কিনা আমরা’রে, ভাবতেছি. . .

ভালো লাগতেছে আমাদের
তুমি নাই, তারপরেও তুমিই হাঁটতেছো আমার লগে
আমি বলতেছি, “কি সুন্দর পাতাগুলি বাতাসে ভাসতে ভাসতে পড়ে যাইতেছে…”

রিয়ালিটি ঘুইরা ঘুইরা আইসা বাতিল কইরা দিতেছে ইমাজিনেশন’রে

রাস্তা ঠেইলা ঠুইলা আমাদেরকে কোন না কোন ঘরে পাঠায়া দিতেছে
অথবা রাস্তা-ই টায়ার্ড হয়া পড়তেছে, বলতেছে,
“আর কতো! যাও গা তুমি!”

রাস্তায় আমি তোমারে নিয়া হাঁটতেছি,
রাস্তায় পাগলেরা দৌড়াইতেছে
রাস্তায় চইলা আসো তুমি!

 

তালগাছ 

‘তুমি জিতছো!’ – এইটা বলার পরেও
থমকায়া থাকে শে;
যদি শে জিইতা থাকে, তারপরেও
আমি কেনো বলবো এইটা!

এইটা কি তার জিইতা যাওয়ারে
অপমান করা না?

আমি চুপ থাকি,
আর চুপ থাকে বিলের পাড়ে
একা তালগাছ।

একটা ভুলের মতোন

একটা ভুলের মতোন
দাঁড়ায়া আছি আমি, একটা গাছ

তুমি ব্যাকুল বসন্তের বাতাস

চলে যাইতেছো, তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি

গরমের দিনের কাছে;
ওয়েট করতেছে সে, তোমার ফিউচার
বলতেছো তারে,
“ভুল তো মানুষ-ই করে. . .”

একটা ভুলের মতোন দাঁড়ায়া আছি আমি,
ট্রানজিশনাল টাইমে তোমার।

হসপিটাল

একটা হসপিটালের বারান্দায় বইসা আছো তুমি,
বিকালবেলায়, একটা বেতের চেয়ারে;
আমি দেখতে আসছি তোমারে আর তুমি
আমারে চিনতে পারতেছো না।

তুমি দবির ভাইবা আমার সাথে কথা কইতেছো,
আবার ভাবতেছো, না, এ মনেহয় কবির;
চোখ বন্ধ কইরা তুমি আইনের বইয়ের পাতা উল্টাইতেছো;
সামনের ছোট্ট মাঠে গাছগুলি ফেলে দিতেছে তাদের পুরান পাতা. . .

দুধে ভিজায়া পাউরুটি খাইলাম আমরা,
ছোটবেলার অনেক কথা বললা তুমি, হাসলা;
হঠাৎ, কি কারণে জানি মন-খারাপ হইলো,
একটু চুপ থাকার পরে বললা,
‘তুমি তাইলে যাওগা!’

বইলা, চেয়ার থিকা উইঠা হাঁটতে হাঁটতে
বারান্দার আরেকটা মাথায় চইলা গেলা,
বিকাল’টা তখনো শেষ হয় নাই

আমি ভাবতেছিলাম, দুধের গ্লাস আর প্লেটের পাউরুটিগুলি
আর কতোক্ষণ তাকায়া থাকবো আমার দিকে?

তুমি আর আমারে দেখতেছো না,
দবির আর কবিরের চাইতে অন্য কোন কনফিউশন আইসা
দখল কইরা ফেলছে তোমারে;

আমিও চাইতেছি, কোন কনফিউশন আইসা নিয়া যাক আমারে;
এই বেতের চেয়ার’টা বেতের চেয়ার কিনা?
বা তুমি আসলে আছো কি নাই? বা কখনো ছিলা কিনা?
মেবি এইটা কোন হসপিটালও না?

আর আমি তো যে কেউ একজনই,
ঘুরতে ঘুরতে হারায়া যাইতেছি,
একটা না-থাকা’র ভিতর

সূর্য ডুইবা যাবে একটু পরে
রুমের ভিতর চইলা যাবা তুমি

আমি তোমার হসপিটালের গেইট থিকা বাইর হয়া
আমার হসপিটালের দিকে হাঁইটা যাবো
ভাববো, আমাদেরকে তো বাঁচায়া-ই রাখছে
আমাদের ভুইলা যাওয়া।

তুমি না, তোমার মতো অন্য কেউ

তুমি না, তোমার মতো অন্য কেউ আসে
কথা বলে, হাসে, চুপ কইরা থাকে

তুমি না, তোমার মতো অন্য কেউ চইলা যায়
আমার কাছ থিকা, তারপরে. . .

লাইফ

ঘর থিকা বাইর হওয়ার পরে আমি ঘরটার কথা ভুইলা যাবো।
রাস্তায় বাইর হওয়ার পরে রাস্তার কথাও মনে থাকবো না আর।

মনে হবে, একটা অ্যাকসিডেন্টের দিকে যাইতেছি তাড়াহুড়া কইরা
আর অ্যাকসিডেন্ট’টা আমাদেরকে খুঁজে পাইতেছে না।

Leave a Reply