কবিতা: সেপ্টেম্বর, ২০২০

দুপুরের রইদ

যেমন একটা শাড়ি
উড়তেছে
দুপুরের ছাদে,
এইরকম
একলা
হয়া আছে
এই রইদ

নিভে যাইতেছে
একটু একটু কইরা
বিকালের ছায়ায়

কারো অপেক্ষার ভিতর যেমন
ধীরে ধী রে
মারা যাইতেছে কেউ

 

কচ্ছপ

ইচ্ছা হয়
কচ্ছপের মতন
একটা খোল বানায়া
তার ভিতরে মাথা ঢুকায়া
বইসা থাকি
১০০ বছর

 

লি পো

হেই
লি পো,
তুমি কি জানো?
গালিবের চে কতো গ্যালন বেশি
মদ তুমি খাইছো? উল্টায়া পইড়া রইছো
আর কইছো, আবোল-তাবোল সব কথা;
যার কিছু কিছু এখনো সত্যি মনেহয় বইলা
তোমার কথা কয় ইউরোপ-আম্রিকার কবি’রা…

হেই
লি পো
তুমি কি জানো?
চীন সুপার-পাওয়ার এখন,
কয়দিন পরে চাইনিজ ভাষা শিখবো
আমাদের পোলা মাইয়া’রা মদ খাইতে খাইতে
তোমার কবিতা পড়বো আর গাল্লাইবো, শালা,
মদখোর! শুয়োরের মতন গড়াগড়ি করতো সন্ধ্যা-
বেলায় তার নিজের বাড়ির সামনে, উঠানের কাদায়
চান্দের দিকে তাকায়া কানতো কুত্তার মতো, কুউউ কুউউ কুউউ…

হেই লি পো,
হেই, হেই!
কোনকিছু কি আসলেই শেষ হয় না আমাদের মনে…

কো ন দি ন ও?

 

গাছ’টা

“ঘটনার চাইতে চিন্তা বেশি সত্য”,
এই কথা বলার পরে
আরো চিন্তা করতে থাকলো গাছ’টা

পাখিগুলা উইড়া গেলো;
বাতাস আইসা তার চুল আঁচরায়া দিলো,
ছায়াটা তার, মেঘ আর রইদের খেলায়, নানান নকশা বানাইলো

ঘটনাগুলাও চিন্তার মতো আউলায়া গেলো,
এক একটা রিকশার মতো প্যাসেঞ্জার নিয়া
কে যে কোথায় চইলা গেলো!

 

তোমার কথা ভাবি

একটা পাথর ছুঁইড়া মারি
পুকুরের পানিতে
কিছুক্ষণ নড়তে থাকে পানিগুলা
তারপরে, আরেকট ঢিল মারি
আরো কিছুক্ষণ পানি নড়ে
তারপরে, ঢিল ছুঁড়ি না আর
পুকুরের পানি শান্ত হয়া থাকে
তোমার না-থাকার মতন
পুকুরের পাড়ে বইসা
আমি আর আমার অশান্ত মন
তোমার কথা ভাবি…

 

পারমানবিক বোমা নিয়া লেখা একটা মন-খারাপের কবিতা

রাস্তায় একটা পারমানবিক বোমা’র লগে দেখা হইলো।
একটা সময় পারমানবিক বোমা বিশাল ডরের ব্যাপার ছিল।
যক্ষা যেইরকম কঠিন অসুখ ছিল, ক্যান্সার যেইরকম, সিনেমা’তে
নায়ক-নায়িকা মারা যাইতো… তো, এইরকম পারমানবিক বোমা,
যে কিনা দুনিয়া ধ্বংস কইরা দিতে পারে সে আসছে আমার লগে
কথা কইতে; ব্যাপার’টা কি রকম উইয়ার্ড না? একটা জড়বস্তু তো অইটা…
আমি তারে দেখতেছি ডাইনোসারের মতন, যে কিনা ছিল একসময়
খুবই পাওয়ারফুল; এখন তার খুব মন খারাপ, করোনা-টরোনা আইসা
তার ডর’টারে ধামাচাপা দিয়া দিছে অনেকটা; একটা ভূত, যারে আমরা
আর ডরাই না ততো বেশি, পথের পাশে অচেনা ফুলের মতন পইড়া আছে,
এমনকি তারে নিয়া মন-খারাপের কবিতাও লেখা যাইতেছে;
‘দেখো, এইটা তো ঠিক না!’ – এইরকম কিছু মেবি সে বলতে চাইতেছে;
কিন্তু আমি তো ততক্ষণে লেইখা ফেলছি করোনা’র ডর
ফেড হইতে থাকার টাইমে পারমানবিক বোমা নিয়া একটা কবিতা

 

স্টিল লাইফ

যেন নদীটা আমাদেরকে দেখতেছিলো না,
যেন বাতাস আমাদের কথা শুনতেছিলো না

যেন আকাশ একটু মুখ নামায়া আমাদেরকে বলতেছিলো না:
“এই জীবন, বৃষ্টিশেষের বিকালে একটা হতবিহ্বল ছায়ার মতন…”

আমরা না-দেইখা, না-শুইনা, না-বইলা ভাবতেছিলাম,
যা কিছু আছে, তা আছে বইলাই, নাই কিনা…

নদী’টা শান্ত হয়া আসতেছিল বর্ষার শেষে
বাতাসটা নিরব হয়া বসতেছিল গাছেদের পাতায়
আকাশ’টা ফিরা গিয়া স্থির হয়া থাকলো আকাশেই আবার

শহরের মোড়ে মোড়ে বাড়তেছিল রিকশার জ্যাম
চায়ের কেতলি’তে নতুন পাত্তি দিয়া পান ধুইতেছিল বুড়া দোকানদার

আর হঠাৎ-ই
হু হু কইরা কানতেছিল পোশাকগুলা আমাদের
না-বোঝা জড়দের জীবন!

 

তোমার শরীর

তোমার শরীর, মাটির পুতুল
ছেনি দিয়া ছানতে ছানতে
তারে বানাই, আর শে
ব্যথায় চুপ কইরা থাকে;
দাঁতে দাঁত চাপে, স্বপ্ন দেখে
যেন শে সেলাইমেশিন
কাপড়ে নকশা তুলতেছে
আর লিখে যাইতেছে নিজেরে

তোমার শরীর, আগুনে-পোড়া
মাটির পুতুল

আমি ছেনি দিয়া ছানতেছি আবার
তোমার বুকে, পেটে, মাথায় গাঁইথা যাইতেছে
আমার যন্ত্রণা; আর
আমি কবিতা লিখতেছি তোমার শরীর নিয়া

নশ্বর এই দুনিয়ার সবচে ভঙ্গুর নশ্বরতা

কোনদিন যে ভাইঙ্গা পড়বে!
দেখবে বইলা তাকায়া আছে
আমাদের চোখগুলা

 

বিকালবেলা, একটা নদীর পাড়ের মাঠে, বাচ্চা ছেলেগুলা ফুটবল খেলতেছে

যতদিন বাঁইচা আছি, দেইখা যাইতে হবে
সময়ের এই ফুটবল খেলা

৯০ মিনিট শেষ হয়া যাইতেছে, আর
আমি যে কোন দলের প্লেয়ার
সেইটাও মনে করতে পারতেছি না!

কোন গোল যে দিবো,
আর কোন গোল যে ঠেকাবো…

টাইমের মতো ফুটবল দৌড়াইতেছে
প্লেয়ারদের পায়ে পায়ে
সামনে পিছে, উপ্রে নিচে

আমি ফুটবল’টারে দেখতেছি
আমার পায়ের কাছে একেকবার
চইলা আসতেছে

(আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের দিকে তাকায়া
দেখলাম, সে হাসতেছে!)

ফুটবলটারে তুইলা নিয়া আমি
মাঠের বাইরে ফালায়া দিতে চাই;
কিন্তু আমি তো এইটা করতে পারি না…

এইটা তো ফুটবল খেলা!

বিকালবেলা,
একটা নদীর পাড়ের মাঠে
বাচ্চা ছেলেগুলা খেলতেছে

সন্ধ্যা হওয়ার আগে অরাও ফিরা যাবে না

আমি ফুটবল হয়া ঘুরতেছি, সময়
তোমার মাঠের বাইরে যাইতে পারতেছি না

 

বাতাসে

কে যেন নাই,
আর আমি তারে
খুঁজতেছি

খুঁজতে খুঁজতে
আসছি নদীর কিনার

বাতাসে, নদীর পানি হাসতেছে

গাছের পাতাগুলা
কাঁপতে কাঁপতে বলতেছে
“কি যেন নাই, কি যেন নাই…”

 

দোস্ত-দুশমন

আমি ভাবতেছি, অরা নাই।
অরা ভাবতেছে, আমি নাই।
আমাদের না-থাকাগুলা থাকতেছে
আমাদের থাকা’র খুব কাছাকাছি।

ইন ফ্যাক্ট, আমি তো নাই
অরা যে ভাবতেছে, আমি নাই
এই কারণে কিছুটা থাকতে হইতেছে

অরা হাসতেছে, কিন্তু আমার না-থাকাটারে
বাতিল করতে পারতেছে না আর

 

পিকক

পিককে সন্ধ্যা নামে।
পিককে, আমি আর রাদ
আমি আর মিশু, আর বান্না আর
কাজল শাহনেওয়াজ
মদ খাইতে গেছিলাম বইলা
এখনো সন্ধ্যাবেলা উঠে চাঁদ;
শেরাটনের বিল্ডিং’টা দেখা যায়
সাকুরা’র নিচে বেচা হয় হ্যান্ডিক্রাফটস,
অরা বাংলাদেশ, বিদেশিদের কাছে
বেচতে পারে না, হুন্ডির ব্যবসা-ই করে
আর ভাব নেয়, ইংলিশে ট্রান্সলেট করা
বাংলা কবিতার মতন, যেন অরা বাংলাদেশ
আসলে তো বাল-ছাল…
এইরকম কতো কিছু যে আমরা চুদলাম না,
পিককে বইসা বইসা ভাবলাম খালি,
দুবাইয়ে বন্দী বাংলাদেশি লেবারদের মতন,
দেশ মে নিকলা হোগা চাঁন…

 

উপমা

আমি অসহায় পাবলিক হয়া তোমার বুকের প’রে শুইয়া থাকবো,
তুমি শেখ হাসিনার মতন আমার মাথায় হাত বুলায়া দিবা, বলবা:
“তোমার চিন্তায় আমার ঘুম আসে না, আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পইড়া তোমার লাগি দোয়া করি তো…”

 

বাঙালি-টাঙালি, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, পশ্চিমা-চিন্তা, অরিয়েন্টালিজম, ইত্যাদি…

অনেকগুলা নীরদ সি চৌধুরী’রে দেখলাম অনেকগুলা নীরদ সি চৌধুরী’র লগে অনেকগুলা নীরদ সি চৌধুরী নিয়া কথা কইতেছে।

 

ইমরুল হাসানের কবিতা

এতো যে কবিতা আসে মনে,
ঘুমাইলেও, মানে স্বপ্নে না, ঘুম-ভাঙার আগে, আবছা
ইল্যুশনের মতো, কবিতার মতন শব্দ আর কথারা
আসতে থাকে খালি; কিন্তু এতো কবিতা
লেখা তো ঠিক না, তাইলে তো ‘কবি’ বইলা মানবে না
আমারে সাহিত্য-সমাজ, উনাদের পছন্দ কৌষ্ঠ-কাঠিন্য,
ডায়রিয়া তো স্যালাইন খাইলেই ঠিক হয়া যায়…
আমি ভাবি, কবিতাগুলা রাগ কইরা অন্য কারো কাছে
চইলা যাইতে পারে তো; হাসান রোবায়েত তো লিখতে লিখতে
জসীমউদ্দিন হয়া যাইতেছেন, আরো অনেকেই
লিখতেছেন নিশ্চয়, সবাই’রে তো চিনি না; আর
ইয়াং কবি’রাও অনেকে কবিতা লিখতে না-পাইরা
প্রেমিক-প্রেমিকা, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, আধ্যাত্মিক ফাক-বয়,
সামাজিক বিপ্লবী আর বাচ্চার বাপ ও মা হইতেছেন… উনারা
এই কবিতাগুলা কেন লেখেন না? লিখলে কি ইমরুল
হাসান হয়া যাবেন?… উইয়ার্ড না ব্যাপারটা! আমি জানি না…
কবিতাগুলাও না-জানার মতো কইরা আইসা বইসা থাকে
চাঁদের গুহার দিকে যেইরকম তাকায়া থাকে বিনয় মজুমদারের ভুট্টা,
জার্নাল: ১৩৪৬ এ যেইরকম আটকায়া থাকে জীবনানন্দের বিকাল ও সন্ধ্যা,
মিরাবো ব্রীজের নিচে যেইরকম বইতে থাকে সিন নদীর পানি…
এইরকম কবিতাগুলা আসে, আর চইলা যায়; তখন
খারাপই লাগে একটু… আমি না লিখি, লিখতে পারতো তো অন্য কেউ…
অথবা অরা হয়তো অন্য কারো কাছেই চইলা যায়,
হয়া উঠে অন্য কারো কবিতা, আর
অরা যে আমার কবিতা হইলো না, এই কারণে অদের কি
খারাপ লাগে? আমি তো অদেরকে চিনতে পারি না আর…
অরা কি চিনে আমারে, অই কবিদের কি বলে, যে
“আমি তো আসলে হইতে চাইছিলাম ইমরুল হাসানের কবিতা…”

 

সন্ধ্যার বার

কবিতা লিখতে পারবো না বইলা
আমি বসে বসে মদ খাইতেছি।

সন্ধ্যা শেষ হয়া যাওয়ার পরেও
সন্ধ্যার মতো ফেড হয়া আছে বারের আলো।
এক প্রেমিক তার প্রেমিকারে ইমপ্রেস করার
চেষ্টা করে যাইতেছে, আর প্রেমিকাটাও
খুশি-খুশি ভাবে শুনে যাইতেছে প্রেমিকের কথা;
চিকেন ক্যাশোনাট সালাদ অর্ডার করতেছে হাফ;
প্রেমিক’টা বলতেছে, কেন যে লোকজন বুঝে না!
প্রেমিকা’টা এনশিওর করতেছে যে শে বুঝতেছে
তাঁর হাসি-হাসি চোখের সাইলেন্স দিয়া…
অরা হাসি-খুশি খাইতেছে হুইস্কি আর চিকেন ক্যাশোনাট সালাদ

আমি একটা কবিতার কথা ভাবতেছি,
যেইখানে থতমত একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ
ডুবে যাইতেছে অন্ধকারে, ডাকতেছে একটা কাক…

ঘুমের ভিতর, একটা স্বপ্নে, ডুবে যাইতেছি আমি
আমার হাত গলে গলে যাইতেছে, ডিসলভ হয়া
যাইতেছে শরীর আমার, ধীরে ধীরে দূরের
ধারণার ভিতর

শীত আসার আগে একটা গর্তে
কুন্ডলি পাকায়া ঘুমায়া পড়তেছে একটা সাপ…

 

শাদা

ময়লা একটা আকাশে উড়ে যাইতেছে ময়লা কয়েকটা চিল;
ভিজা রাস্তায় হেঁটে যাইতেছে একটা বাচ্চা কুত্তা, একা, ইয়াং কবি’র মতন সাহসে;
যেই সন্ধ্যা ছিল সারা বিকাল ধইরা, এখন সেই সন্ধ্যা হয়া আসতেছে
ক্যাচ ক্যাচ মেশিনে কাটা হইতেছে লোহার গ্রীল, আর সেই শব্দ মুইছা গেলে
বাতাস নিয়া আসতেছে আরো ভারী কোন নিরবতা – শব্দ নাই;
কোনরকম আওয়াজ ছাড়াই সূর্য ডুবে যাইতেছে;
ময়লা আকাশ থিকা মুছে যাইতেছে ময়লা কয়েকটা চিল…

 

বাঁশবাগানের কবিতা

তুমি একটা বাঁশবাগান
যাদের হাতের লেখা খারাপ, অরা
তোমার কাছে গিয়া বইসা থাকে
কয়, একটু পরে চাঁদ উঠবে, সুন্দর…
বইলা, তোমার অন্ধকারে অরা লুকায়
যাদের হাতের লেখা খারাপ, যারা
বাঁশবাগানে যায়; অরা-ই ধীরে ধীরে
হয়া গেলো এইভাবে, তোমার প্রেমিক
আর আমি কবিতা লেখলাম: ‘তুমি একটা বাঁশবাগান…”

 

আমার জীবনের অভিশাপ

আমার জীবনের অভিশাপ আমারে বললো,
‘তুমি একটা কার্স (curse) আমার লাইফের,
যতো পাপ আমি করছি লাইফে, তার রেজাল্ট!”

তখনই আমি বুঝলাম, এইগুলা আছে আসলে দুনিয়ায়, থাকে-ই…

হয় আমি কারো জীবনের অভিশাপ, নাইলে
অন্য কেউ আমার জীবনের; মানে এইগুলা
যদি না থাকতো, তাইলে কেমনে আমরা নিজেদেরকে
মাইনা নিতে পারতাম, আর ববিতা হয়া বুলবুল আহমেদ’রে বলতাম,
“তুমি আমার জীবনের একটা অভিশাপ”

Leave a Reply