কালাচারাল পলিটিকস নিয়া

এই যে ঘটনাগুলি – শাহাবাগ, মতিঝিল; মুক্তিযুদ্ধ, ইসলাম; ব্লগ, হেফাজত… এই বিষয়গুলা যে বাইনারি অপজিট না এইটা বাংলাদেশে এখন যে কারোরই বোঝার কথা। তারপরও বলা, কারণ পলিটিক্যালি এমনভাবে হাজির আছে যে, সেইটা মনে হইলেও কাউরে দোষ দেয়া সম্ভব না। কালাচারাল ক্রাইসিসটারে পলিটিক্যালি ব্যবহার করতে গিয়াই এই ঘটনা ঘটছে। তার মানে এই না যে, এইখানে কোন কালচারাল ক্রাইসিস নাই। বরং এর পলিটিক্যাল সমাধান অনেকে এইভাবেই করতে চাইতেছেন! জোর কইরা সাংস্কৃতিক অনৈক্যগুলারে চাপা দেয়ার এই যে লিবারাল চেষ্টা, এইটাই পলিটিক্যাল ফান্ডামেন্টালিজমরে আরো জোরালোভাবে সামনে নিয়া আসতেছে।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

 

অনেক ধরণের সংকট এবং সম্ভাবনাই একটা সংস্কৃতির ভিতরে থাকে। যেমন, এখনকার বাংলাদেশের কথা যদি ধরেন, আপনি বাঙালি হইলে মুসলমান হইতে পারবেন না, হয় নাস্তিক (পড়েন, ৬০ এর কমিউনিস্ট) হইবেন, নাইলে হিন্দু (ইন্ডিয়ার সার্পোটার); এইটারে বলা যাইতে পারে, সিম্বলিক ট্রুথ এর পূজারী। আবার, আপনি মুসলমান হইলে বাঙালি হইতে পারবেন না, আপনি হয় আফগানিস্তান থিকা আইছেন, নাইলে পাকিস্তানে যাইবার পাঁয়তারা করতেছেন। এইটারে বলা যাইতে পারে ইম্পেরিক্যাল ট্রুথ এর মওলানা। এইভাবে কালচারাল ডিফারন্সিয়েশনের জায়গাটা ছড়াইতেছে।

যেন এই দুইটা সংস্কৃতি আসলে দুইটা ইকনোমিক ক্লাশ; শ্রেণী-সংগ্রামের ঘটনা! অথচ ঘটনাটা মোটেই তা না। একটা ব্যক্তিগত উদাহারণ দেই: একটা কোম্পানির বার্ষিক প্রোগ্রামে গায়ক হিসাবে কারে নিয়া আসা যায়, এই সিলেকশন যখন চলতেছে; তখন মালিক তার স্ত্রীরেই কইলেন ঠিক করতে; উনি সাজেস্ট করলেন, মনির খান-এর নাম; ওই যে উনার বিখ্যাত একটা গান আছে, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে…’ ওইটার কথাও কইলেন। বউ-প্রেমের একটা দুর্দান্ত গান। জামাই এবং বউ দুইজনের দিক থিকাই। অথচ এর সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা এইভাবেই সম্ভব এবং সম্ভবত মিউজিক ভিডিওটাও এইরকমই যে, গ্রাম থিকা জামাই শহরে/বিদেশে চাকরি করতে আসছে আর গ্রাম থিকা বউ মাইগ্রেটেড জামাইয়ের কাছে চিঠি লিখতেছে; মানে গ্রাম এবং শহর – এই ইউটোপিয়ার ভিতর আটকাইয়া ফেলা সম্ভব এই গানটারে; কিন্তু এইক্ষেত্রে গ্রাম বা শহর মুখ্য না, বরং জামাই এবং বউ এবং তাদের নৈতিক প্রেমের বিজয়ই মুখ্য এইখানে। এই গানরে হয়তো তাদেরই কর্মচারী যুবকও মোবাইলে জায়গা দেন না হেডফোনে শোনার লাইগা, যার বউ থাকে কাছের মফস্বলে।

 

মানে, গ্রাম হোক বা শহর, মাইগ্রেটেড শ্রমিকের বউ বা ব্যবসায়ীর স্ত্রী, একটা কালচারাল গ্রুপের কাছে এই গান সমানভাবে তার আবেগ নিয়া হাজির থাকতে পারে, নট নেসেসারিলি যে তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ঐক্য থাকতে হবে। কারণ, আপনি যেই বাপ-মা মরা’রে মাদ্রাসায় দাখিল হইছে বইলা ভয় করতেছেন, সে আসলে লাদেন হওয়ার ড্রিম নিয়া ইংলিশ মিডিয়াম থিকাই আসতেছে। আর আপনি পেরেশান হইতেছেন, কারণ কালাচারাল স্ট্রাগলটারে আপনি শ্রেণী-সংগ্রাম ছাড়া আর অন্য কোনকিছু দিয়া ব্যাখ্যা করতে পারেন না।

 

কিন্তু এই যে কালাচারাল ডিফারেন্সেস, প্রচলিত রাজনীতি অবশ্যই এরে অ্যামপ্লিফাই করার সামর্থ্য রাখে এইভাবে যে, যেন এর আল্টিমেট সমাধান সম্ভব – ইসলামি জেহাদ কিংবা মিলিটারি ক্যু’র মাধ্যমে। আসলে এই দুইটা অপশনও একই। এক ধরণের অথরিটিরে তৈরি করা, মাস-পিপল এর নাম দিয়া, সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্বররে বোবা বানাইয়া দেয়া। অথচ একটা টেনডেন্সি দিয়া আরেকটা টেনডেন্সিরে বাতিল করার ভিতরে এর সমাধান নাই, বরং কালচারালি আমরা কিভাবে বৈপরীত্যগুলারে অ্যাকোমোডেড করতেছি, তার উপরেই এর সমাধান নির্ভর করে। এইটা আবশ্যিকভাবেই একটা বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা, এখন পর্যন্ত যার উত্তর করতে আমরা ক্রমাগত ব্যর্থ হইতেছি। ব্যর্থ কারণ, যেই গ্রাউন্ডের উপর এই কালচারাল ডিফারেন্সগুলা দাঁড়াইয়া আছে, সেই জায়গাগুলারে অ্যাকোমোডেড করার সামর্থ্য আমাদের চিন্তার ভিতর তৈরি করতে পারতেছি না।

 

অ্যাজ অ্যান পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি বাঙালি মুসলমানই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারারে রিপ্রেজেন্ট করে; কিন্তু আমাদের চিন্তার ভিতরে যতক্ষণ পর্যণ্ত আমরা ‘বাঙালি’ এবং ‘মুসলমান’ শব্দ দুইটারে তাদের পুরানা যে অর্থ তার বাইরে গিয়া বর্তমান বাস্তবতার ভিতর তাদেরকে আনফোল্ড করতে না পারতেছি, ততক্ষণ পর্যণ্ত এই বাস্তবতারে সে ডিফাইন করার সামর্থ্য তৈরি করতে পারতেছে না। মুসোলিনির ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা দিয়া যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদরে বুঝতে চাইতেছেন তারা আরেকটা ফ্যাসিস্ট অথরিটিরেই জায়গা করে দিতেছেন। আর এই কারণেই দেখবেন, আপনি বলার ভিতর দিয়া যতোটা না বলতে পারতেছেন তার চাইতে আপনার না-বলা দিয়াই বরং আপনার বলাটা ডিফাইনড হইতেছে! একটা ঘোরটোপের ভিতরই আটকাইয়া যাইতেছে কথাগুলা সবসময়।

 

এইটা একটা দীর্ঘ, ক্লান্তিকর আলাপ; কেননা আমরা বাস করতেছি শব্দের সীমিত অর্থের কারাগারের ভিতর। আমরা চাই যেন ভেদাভেদ না থাকুক। তুমি যাতে আমি হই অথবা আমি যাতে তুমি হও। এইটা যদি সম্ভবও হয়, এইটা কি আমরা সত্যিকার অর্থেই চাই?

চৈত্র ২৪, ১৪১৯; এপ্রিল ৭, ২০১৩

 

Leave a Reply