জুন-খাতা, ২০১৬।

ট্রমাটিক টারজান

সাফারি পার্কগুলাতে একটা টারজান কবে আনা হবে? এক একটা জঙ্গলে টারজানদের কি একলা লাগতেছে না? বা এই যে বাঘ- সিংহ-হাতি-জিরাফ-জেব্রা আর স্পেশালি বান্দরগুলা – অদের কি একলা লাগে না টারজানরে ছাড়া? টুরিস্ট জিপ আর বাসগুলি যথন যায় তখন অরা কি মানুষগুলির দিকে তাকায়া টারজানের কথা-ই ভাবে না? আমাদেরও তো দুই হাত মুখের কাছে নিয়া ডাকতে ইচ্ছা করে, আঙঙ-আ-আ-আ-আ…। টারজান নাই বইলা ইচ্ছা করে আমরাই টারজান হই গিয়া।

জঙ্গলে টারজান একলা একলা কি করে? সাফারি পার্কে আইসা থাকতে পারে না? আমরা দেখলাম উনারে। উনি বইসা আছেন কোন গাছের ডালে, যেন আমরারে দেখতেছেন না, জেনের কথা-ই ভাবতেছেন মনেহয় – এইরকম ভাইবা নিলাম আমরা।

 

Walky Talky

We walk and talk. We talk and walk. We become us. We laugh. Then keep our silence awake. Trees whisper with their leaves. ‘Take us with you,’ they politely ask. We laugh again. ‘Ki ajib!’ They are talking with us! We talk and walk. We walk and talk.

 

পুরানো দিনের গান

এই ড্রিমি ড্রিমি
সাগরের পাড়ে বন্ধু
এই হাল্কা ড্রাউজি সন্ধ্যায়

কে যে কোথায় চইলা যাবো
মনেও থাকবে না আর

তখন না থাকবো আমি
আর না থাকবা তুমি

মনে হবে মাঝে মধ্যে

এই ড্রিমি ড্রিমি সাগরের পাড়ে, বন্ধু
এইরকম ড্রাউজি সন্ধ্যায়

হাঁটতেছিলাম আমরা।

নাকি, তাও হাঁটি নাই?
হাঁটবো বইলা ভাবছিলাম
আর

ভাবাটারে সত্যি ভাইবা
একটা সিন ক্রিয়েট করছিলাম?

যেইখানে ড্রিমি ড্রিমি সাগরের পাড়
যেইখানে ড্রাউজি সন্ধ্যা…

 

ইলাসট্রেশন

বর্ণনার ভিতর
আটকাইয়া থাকা ভূত
ফিরে এসো

ফিরে এসো
তাকায়া থাকতে থাকতে
স্থির হয়ে যাওয়া চোখ

যেন অন্য আর মিনিং নাই কোন
যেন একটা শাদা পাতা
শাদা থাকতে থাকতেই বুড়া হয়া যাইতেছে

বাঁজা মহিলা
আর ইম্পোটেন্ট পুরুষের প্রেম
ফিরে এসো

ফিরে এসো
ধীরে ধীরে ক্রিয়েট হওয়া সাসপেন্স
মবিল-তেলে ভাজা ভাজা ক্রিসপি তেলাপোকা ফ্রাই

জীবন যেইখানে অন্যরকম
পারসোনাল মিথের ভিতর জড়োসড়ো ট্রুথ
ফিরে এসো

সন্ধ্যাবেলার ঘুম, বামুনের সাথে
ফ্লার্ট করতে করতে চাঁদের সেক্স
তারপর মলিন হাসি, যৌন-ঈর্ষার মেঘ

ফিরে আসতে আসতে হঠাৎ উদাস বাতাস
ফিরে এসো, ফিরে এসো

সাগরের নিচে ডুবরীর অক্সিজেন শেষ হওয়ার পরে দেখতে পাওয়া মুক্তার বিভ্রম

ডাস্টবিনে পড়ে থাকা পর্ণ সিডির দুঃখ
ভিজা বৃষ্টির গন্ধের মতোন একলা দিন

রিটায়ার্ড-হার্ট ব্যাটসম্যান আসতেছে ড্রেসিংরুমে, হাঁটতে হাঁটতে
আর টিভি ক্যামেরা ফিরে যাইতেছে পিচের দিকে

ফিরে এসো ক্রিকেট ব্যাট
চামার-পট্টির আঁধার

কাঁপতে থাকা ভোর
অ্যাড্রিনালিন রাশ

দেখতে দেখতে নিভে যাওয়া দৃশ্য
কাটপিসের মতোন ঝাপসা ইল্যুশন

ফিরে এসো, ফিরে এসো

আবার।

 

দয়াল চাঁন

চাঁদের গায়ে লাইগা আছে আরেকটা চাঁদ।
টাইমের গায়ে ধাক্কা দিতেছে আরেকটা টাইম।

জড়োসড়ো একটা ঘরের ভিতর
অনেকগুলি মানুষ বাইর হয়া আসতে চাইতেছে।
ক্লেইম করতেছে, দেখেন ভাই আমরাও কিন্তু মানুষ!
ছায়াগুলি বলতেছে, একজন হুমড়ি খায়া পড়তেছে আরেকজনের উপ্রে
তারপর কান্দার মতো মুখ কইরা
বইসা থাকতেছে ঘরের কোণায়।

দেখতেছে, চাঁদের গায়েও লাইগা আছে আরেকটা চাঁদ
টাইমের গায়ে ধাক্কা দিতেছে আরেকটা টাইম।

 

কলম্বাস

এমন অনেক ভোরের ভিতর অনেক ভোরের বাতাস

অস্পষ্ট কুয়াশায় লঞ্চের ডেকে একজন মানুষ পড়তেছে নামাজ

একটা পঁচিশ পয়সার কয়েন
উঠে আসতেছে কেবিনের দরজায় আর সরে যাইতেছে রেলিংয়ের কাঠের কাছে

কাগজের ঠোঙায় বিক্রি করতেছে যে নারিকেল চিড়া
তার ঠ্যাংয়ের কাছে ধীরে ধীরে জেগে উঠতেছে রোদ

ঘোলা নদীর পানি
এতোক্ষণে দেখা গেলো

দেখা গেলো কুয়াশার বাইরেই ছিল
আরেকটা দুনিয়া

লঞ্চের দুলুনিতে আমি টেরই পাই নাই
কলাগাছ আর টিনের বাড়িগুলা আছে,
থাইমা থাকতেছে,
লঞ্চে কইরা আমরা চইলা যাইতেছি বইলা

 

সন্ধ্যা নামলো ধীরে

লেকের পাড়ে অনেক্ষণ বইসা ছিল দুইটা ছেলে আর একটা মেয়ে
বিকাল থিকা শুরু কইরা সন্ধ্যার আজানের আগে পর্যন্ত
আর তার পরেও

অন্ধকার এসে মুছে দিয়ে গেলো

একটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে বইসা যে ছিল
লেকের পাড়ে

সন্ধ্যা নামলো ধীরে
গুলশান লেকে
প্যারট্রুপারের মতো আম্রিকান অ্যাম্বেসির ছাদে।

 

ফ্যামিলি

বেলুনটা চুপসাইয়া যাইতেছিল।
বাচ্চা পোলাটা হাততালি দিতেছিল।
বাচ্চার মা’টা হাসতেছিল।

বেলুনের ভিতর থিকা বাতাস বাইর হয়া
একটা এক লাইনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মতোন
এর ওর হোমপেইজে গরম হয়া ঘুইরা বেড়াইতেছিল;
তারপর বাতাস হয়া বাতাসে মিইশা গেলো।

বাতাস না থাকলে বেলুন আর কিসের বেলুন?
লিক ছিল মনেহয় কোন…
বাপ’টা পাশে বইসা আর কোনকিছু ভাবতে না পাইয়া
বেলুনের কথাই ভাবতেছিল।

 

কাঁঠাল পাতার প্রেম

এই জুন মাসেও কৃষ্ণচূড়া, এই জুন মাসেই কদম ফুলের গাছটা ভরা। যদিও আষাঢ় মাস বৃষ্টি নাই তেমন। যদিও কালো মেঘ, যদিও মানুষের ভীড়, যদিও বাতাস আর যদিও বিমান আকাশে, ছাদের উপর পানির ট্যাংক আর মোবাইলের টাওয়ার; একটা চিল তো থাকতেই পারতো, জীবনানন্দের।

ভাষার ভিতর ইনসার্ট হইতে থাকা মিনিং যা আমার বলতে চাওয়ার চাইতে কিছুটা আলাদা; যতোটা না থাকা তার চাইতে আরেকটু না-থাকা নিয়া থতমত, বাসগুলির চিপা দিয়া বাইর হইয়া যাওয়া রিকশার মতো, একটু দূরে গিয়াই আটকাইয়া যাওয়া; যেন গরু দুইটা গাড়িটা আর টানতে চাইতেছে না, খালি মাঠের সুন্দর সিনটা দেইখা উদাস হইয়া তার গাভীটার কথাই মনে পড়ছে… যেন একটা সকালই এইটা দুপুরের দিকে যাইতেছে, কোথাও না কোথাও, কোন না কোন দৃশ্য, যা খালি ড্রিম না… কৃষ্ণচূড়া আর কদম ফুলের মতো বাস্তবতা।

হি হি হি… তুমি আসলেই আর পারতেছো না। কাম অন ম্যান, গাছে কাঁঠাল না থাকলেও আছে তো কাঁঠাল পাতা। :p

 

বেড়ায় যখন খেতরে খাইলো

বেড়া’য় যখন খেত’রে খাইলো
খেত’রে কইলো, “দেখো, আমি তো খালি নিজে আসি নাই
গরু, ছাগলও এখন আসতে পারতেছে।
তুমি কি এরপরেও খুশি হইতে পারতেছো না?”

খেত তো বইসাই ছিল মন-খারাপ কইরা।

আজিব! – বেড়া ভাবতেছিলো অবাক হইয়া।

 

সুগার কেইন

প্রেম ছিলো না বইলা নদী সাঁতরাইয়া আমরা ওইপারে যাওয়ার কথা ভাবি নাই।

ওইপারে রাইস মিলের চাতাল, সিমেন্টের উঠান
আর দূরে ইটের ভাটার চিমনি থিকা বাইর হইতেছিল কালো কালো ধোঁয়া

নদীর পাড়ে রোদ
বড় বড় পাথরগুলির উপর বইসা ভাবতেছিলাম

প্রেম থাকলেই নদী পার হইয়া ওই পারে যাইতে পারতাম আমরা

তখন ভিজা কাপড়
তখন হালকা বাতাস
তখন ক্লান্ত আমাদের শরীর
আমাদের মন, একটু উদাস…

অথচ দুপুরের রোদ আরো কাইত হয়া আমাদেরকে জড়াইয়া ধরতে চাইতেছিল

একটা আখ-এর খেতে আরেকটা আখের লাঠির মতো
বাতাসে ঝুঁইকা পড়তে চাইতেছিলাম আমি তোমার দিকেই,

আর তুমিও হাইসা দিয়া কইলা,
হায় সুগার, তুমি এতো মিষ্টি ক্যান!

 

হ্যাং-ওভার

মদ এক বিবিধ প্রাণী।

প্রথমে নরোম কোমল সাপ, তারপরে ব্যাঙের লাফ
তারপরে একটা চিল, একলা আকাশে

বিমান দেইখা মনে হইলো
সাগরে হাঙর হই, যদিও আছে সাবমেরিন
নদীতে ইলিশ হই, দামি এক মাছ, পেটে ডিম…

ডাঙায় উঠার পরে সিংহ, ঝিমাই একটু;
ইঁদুরের খটখটানিতে ঘুম ভাঙার পর
হরিণ হয়াই নাহয় ঘুরলাম একটু

আসবে যে বাঘ, তার গলায় মালা দিয়া
হয়া যাবো বাঘিনী আবার

দাম্পত্য-কলহ হইলে কুত্তার মতোই চেঁচাবো,
বিলাইয়ের ঘাপটি মারা চোখ দেইখা মনে হবে,
হ্যাং-ওভার, সেও তো এক বিস্ট

এই গরমে হাঁফাইতে হাঁফাইতে
গুলিস্তান থিকা সদরঘাটে আসা ঘোড়া,
ওরে বিউটি বোর্ডিংয়ের লাচ্ছি পিলাও!

মাংসের দোকানে গরুর রান দেইখা
মনে পড়তে পারে তখন গতরাতের কথা;
প্রাণী-ই ছিল অরা, মানুষের চাইতে একটু কম স্টিমুলেশনঅলা।

 

ইনসেইন

ব্যাপারটা এইরকম না যে, ইনসিনিটি আমারে বাঁচাইয়া দিবে; ইনসেইন হওয়ার ভিতর দিয়া প্লেজারটাই পাওয়া যাবে আসলে, অন্য কাউরে অপমান কইরা। একইসাথে এইটা আমার নিজের সেলফরেও অপমান করতে পারে তো যে, দেখো, লোকটা কতো বাজে, আরেকজনরে নিয়া কত বাজে বাজে কথা বলতেছে…। মে বি দিজ আর দ্য থিঙ্কস। নিজে নিজে আর কতোটা বাজে হওয়া যায়, অন্যদেরকে বাজে না কইতে পারলে।

দুইটা শুয়োর, গ্রে কালারের, দুপুরের রোদে, কাদামাটিতে গা ঘষতেছে। ওরা কি জানে, ওরা যে ইনসেইন?

 

 

 

Leave a Reply