দুইটা কবিতা পড়া।

কবি রণজিৎ দাশের দুইটা কবিতা পড়তে গেছিলাম। সেইটা নিয়া কিছু কথা।

ধানখেতে বৃষ্টির কবিতা।। রণজিৎ দাশ।।রচনাকাল: ২০১০ – ২০১২; প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০১৩; সর্প্তষি প্রকাশন।। কলকাতা, ইন্ডিয়া।। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

 

‘বধূ’ নিয়া ভাবনা

 

মূল কবিতা

মূল কবিতা

 

তুমি কি গো দেখতেছো আমি’রে?

যে আমি তুমি’রে দেখাই, তৈয়ার করি?

 

মানে, পুরান দিনের সুন্দরী ‘বধূ’রা (কি যে যৌনতা-কাতর এই শব্দ, পুরানা দিনের কথা বাদ দিলেও) কি পরকীয়া প্রেম করতো না? যেহেতু তারা ‘বধূ’, তাদের এই আইডেন্টিটির বাইরে তাদের আর কোন অস্তিত্বই ত আর নাই। যদি থাকে, সেইটা কি রকম ভয়াবহ যে, তারা আর ‘বধূ’ই থাকতে পারেন না। পজ।

 

চ্যাটবাক্স

 

মূল কবিতা

মূল কবিতা

 

কি সুন্দর গ্রাম-ভাবনা! মানে, বৃষ্টির ফোঁটা = বিদেশ, একলা। এইভাবে চ্যাটিং করা, কবিতা লেখা। আলাদা আলাদা না হইলে জানি কথা বলা সম্ভব না; খালি আলাদাই না, একদম অপজিট টাইপের দূরবর্তী; মানে, একই লোক আর কি; একটাই আত্মা, কিন্তু দুইটা ইমেইল আইডি! উপমাগুলা স্মার্ট এবং একইরকমের – বিয়া ভার্সেস লিভ-টুগেদার, বুজুম ফ্রেন্ড ভার্সেস ভুইলা-যাওয়া, প্রাউড মাদার ভার্সেস চাইল্ড-ওয়েলফেয়ার পুলিশ। এরা একজন আরেকজনের ‘আদার’ – এই আদার মাছ-ধরা সাপেক্ষেও হইতে পারে যে, কে কার মৎস-শিকার?

 

বৃষ্টির ফোঁটা এইখানে সাবজেক্ট, সে নিজেই অবজেক্টটারে ক্রিয়েট করতেছে; সে মাটিরে হিট করে আর এই অ্যাক্ট এর ভিতর দিয়া সে নিজেরে সাবজেক্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। টরোন্টো হয়া সে আউশগ্রাম’রে দেখে। মানে, বিদেশে থাইকা সে গ্রাম আবিষ্কার করে। আর গ্রাম যেহেতু মূক ও বধির, টরোণ্টো চ্যাট করে একতরফা। ‘অন্য’ বা ‘গ্রাম’ এর কোন আওয়াজ নাই; কারণ সে আসলে কল্পনা, বৃষ্টির ফোঁটার; যে মাটি, সে ত একজিস্ট করে না, এইখানে।

 

উপমার দ্বৈততাবোধ একদিক দিয়া ভাষার একপাক্ষিকতারে সামনে নিয়া আসে। শব্দের যে বাই বার্থ একটা দ্বৈততাবোধ আছে তারে আড়াল করে। যেমন ধরেন, ‘স্নেহ’ এর অর্থ স্ট্রিকলি পরিবার-প্রথার একটা অনুভূতি। এই সাজেশনটা খুবই মর্মান্তিকভাবে রূঢ়। এই কারণে না যে চাইল্ড-ওয়েলফেয়ার পুলিশ তার সন্তানরে নিয়া গেছে, বরং মা’ হয়া যে স্নেহ তার দেওয়া উচিত ছিল এবং শে যে সেটা দিতে পারলো না এইটারে আবশ্যিক কইরা তোলে। এইটা ত আছেই, কিন্তু তারে মাস্ট কইরা তোলাটা একদিক দিয়া খালি মাতৃত্ব না, নারীত্বেরই আবশ্যিক একটা ফর্ম হিসাবে সাজেস্ট করা।

 

এমনিতে কবিতা ত খাসা। মানে, এক ধরণের বোধ এর ফ্লুয়েন্ট ব্যবহার। বাংলাকবিতার রৃতু-ভিত্তিক কবিতার প্যার্টানরে বর্তমান টেকনোলজিক্যাল বাস্তবতার ভিতর রিপ্লেস করার চেষ্টা, তারে সমসাময়িক করতে চাওয়া। আর এর যে বিষাদ সেইটা রিডারের মনে বিবমিষা জাগানোর উপায়; যে থাকে টরোন্টোতে, লিভ টুগেদার করে (বিয়া করে না), সন্তানরে কাছে রাখতে পারে না, সে আসলে দুঃখী মানুষ। এই বিষাদের ভিতর দিয়া সে প্রমাণ করে যে, রিয়েলি ধানখেত আছে দুনিয়ায়, যেহেতু আমি বৃষ্টির ফোঁটা, আমার পারপাস কি আর যদি না থাকে ধানখেত, আউশগ্রাম এর কল্পনা!

 

এইটা এইরকম না যে, বৃষ্টির ফোঁটা আছে বইলাই ধানখেতের ইমাজিনেশন তৈরি হইছে, বরং ধানখেতের কল্পনা আছে বইলাই বৃষ্টি হইতেছে আজ।

 

কবিতা পড়তে গেলে এতো কিছু ভাবা লাগে না, কিন্তু যদি ভাবনা আইসাই থাকে, তারে চ্যাটবক্সে বন্দী করার কথাটা একবার আর ভাবলাম না। কবিতা আর না লিইখা, লিখতে চাইলাম কবিতা পড়ার কথা।

 

জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৪২০

 

Leave a Reply