দুইটা মিথ্যা গল্প

দুইটা মিথ্যা গল্প শুনছিলাম কয়েকমাস আগে। সাহস থাকলে থ্রিলার লেখা যাইতো। বলা যায় না, লিখতেও পারি, পরে আবার। এখন স্টোরি লাইনটা বইলা রাখা আর কি।

প্রথম গল্পটা সাতক্ষরীরার; নতুন এসপি আসছেন, আসার সময় তিন ট্রাক গুলি নিয়া আসছেন শহরে। তো, মার্ডার তো বহুতই করা লাগতেছে। তবে মানবিক কারণে অনেক সময় মার্ডার না কইরা ঠ্যাং-এও গুলি করতেছেন কিছু। এইরকম কেউ একজন এমপি’র আত্মীয়, এমপি’র কাছে গিয়া কমপ্লেইন করলো, কইলো, একটু দেখেন! খামাখাই ঠ্যাং-এ গুলি করলো… এমপি’র তো একটু হইলেও প্রেস্টিজ আছে, এসপি’র অফিসে গিয়া জনতার পক্ষ নিয়া তারে জিজ্ঞাসা করলেন। এসপি তারে পাত্তা দিলেন না, নানান বাজে কথা কইলেন; কইলেন যে, দেখেন, জনতা তো আপনারে পাস করায় নাই, আমরা (পুলিশরা) পাস করাইছি, সো আমাদের কথা শুনেন। এমপি সাহেব এসপি’র কথা শুনলেন না; তিনি তবু জনতার কথা শোনার ট্রাই করলেন। এসপি সাহেব তখন আর না পাইরা প্রাইম মিনিস্টারেরই কল করলেন উনার মোবাইল দিয়া; কইলেন যে, কি এমপি বানাইছেন আপা, আমারে তো ‘কাজ’ করতে দেয় না! আপনি আমারে ট্রান্সফার দেন, এইভাবে ‘কাজ’ আমি করতে পারবো না… প্রাইম মিনিস্টারের তো মন এমনিতেই নরোম, এই কথা শুইনা উনার প্রায় কান্দা চইলা আসলো, পরে এসপিরে কইলেন এমপি’র কাছে মোবাইলটা দিতে, তারে কইলেন, উনার এমপি-গিরি ঢাকায় আইসা দেখাইতে। এমপি খুবই লজ্জা পাইলেন এই কথায়, নিজের ভুলও বুঝতে পারলেন। এসপি সাহেবও পরে উনারে সাত্বনা দিলেন যে, তিন ট্রাক গুলি শেষ হইয়া গেলে উনি এমপি’র সাথে বইসাই কাজ করবেন।

সেকেন্ড ঘটনাটা আরেকটু মাইল্ড, খুলনার। নতুন ব্যবসা দিছেন এক্স-ছাত্রলীগের কয়েকজন। ব্যবসা ভালো। কিন্তু ভাবেন খরচ-টরচ কমাইতে পারলে তো লাভ আরো বেশি করা যাইবো। এর মধ্যে পুলিশের এক নতুন এসআই আসলো এলাকায়, অফিসে আইসা বলে, ব্যবসা তো ভালোই করতেছেন প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা পাঠায়া দিয়েন। এক্স-ছাত্রলীগ নেতা একটু বিরক্তই হইলেন, এইগুলি নিয়া তো আর কবিতা লেখা যায় না, ভাবলেন এমপি’রে রিকোয়েস্ট কইরা টাকাটা বাদ দেয়ানো যায় কিনা, উনার সাথে দেখা এই কথা কইলেন। কথা কওয়ার পরের দিনই আবার এস আই আইসা হাজির অফিসে, কইলেন, আরে আমি তো আপনারে ছোট ব্যবসায়ী ভাবছিলাম, আপনি তো আরো বড় আসলে, এমপি পর্যন্ত খাতির আছে, আপনি দশ হাজার না ত্রিশ হাজার টাকা কইরা দিবেন আর এইটা এই মাস থিকাই যাতে শুরু হয়। এইটাই শেষ আসা উনার, টাকা নিজের হাতে নিবেন না, থানাতে গিয়া যাতে দিয়া আসেন উনারা। এক্স-ছাত্রলীগ নেতারা যত না দুঃখী হইলেন তার চাইতে অবাক হইলেন বেশি। এমপি’রে এই কথা ফোন কইরা বলাতে উনিও মাফ চাইলেন, কইলেন, এইসব নিয়া আর আমার কাছে আইসো না।

পুলিশ যে দেশ চালায়, পলিটিশিয়ানরা না, এইটা রিয়ালিটিটাতে আমাদের রিডারদরেক আসলে গল্প-লেখার ভিতর দিয়া ইউজ-টু করা দরকার।

 

জুন, ২০১৬।

 

Leave a Reply