দ্য হাম্মা সং

গার্ডিয়ানে-ই মনেহয় দেরিদা মরা’র পরে উনার একটা ইন্টারভিউ শেষ ইন্টারভিউ বইলা ছাপা হইছিল। ওইখানে ইন্টারভিউয়ার শেষে কনক্লোশ দিছিলেন এইভাবে, দেরিদা এখন সারাদিন বাসাতেই থাকেন আর টেলিভিশন দেখেন আর যা দেখেন তার ডিকনস্ট্রাকশন করতে থাকেন। ইন্টারভিউয়ারের এই বলাটাতে আম্রিকান টাইপ বেয়াদবি না থাকলেও বৃটিশ টাইপ তাচ্ছিল্য তো ছিলোই। মানে, কেউ টিভি দেইখা সারাক্ষণ ডিকনস্ট্রাকশন করতেছে, এইটা বেশ ফানিই মনে হইছিলো বলার টোনটাতে। অ্যানলাইসিস করতে পারা’র, ব্যাখ্যা করতে পারা’র, বিচার করতে পারা’র যে আনন্দ, সেইটা তো অন্য কোনকিছুতে নাই। ব্যাপারটা এইরকম একস্ট্রিম যে, একটা ডিজিজও হইতে পারে। মানে, এই অ্যানালাইসিস/ডিকনস্ট্রাকশন/জাজমেন্ট হইতেছে কি হইতেছে না সেইটা না, না কইরা যে থাকা যাইতেছে না, সেইটা টু সাম এক্সটেন্ড একটা সমস্যা হইতে পারে মনেহয়।

এই জিনিসটা মনে হইতেছে দ্য হাম্মা সং’টা দেখার পরে। গানটা তো এমনিতে ভাল্লাগছে, কিন্তু তারপরও এনালাইসিস যে করা লাগতেছে সেইটা এই রোগে’র কারণেই মনেহয়।  তামিল ও কাদহাল কানমানি  সিনেমার রি-মেইক হিন্দি ওকে জানু’র গান এইটা। এখনো রিলিজ হয় নাই সিনেমাটা, জানুয়ারি, ২০১৭-তে হবে। ২১ বছর আগে ১৯৯৫-এ বোম্বে সিনেমাতেই যখন গানটা বাজছিল তখন থিকাই আমার ফেভারিট। এ.আর.রহমান ‘রোজা’ দিয়া শুরু করছেন খালি, তখনই তারে জিনিয়াস ভাবতে আমার কোন সমস্যা হয় নাই। যদিও ইউনির্ভাসিটিতে ছাত্র ইউনিয়ন কইরা হিন্দি গান গাওয়াটা কবিরা গুনাহ’র মতো ব্যাপার ছিল, কিন্তু আমি গাইতে পারতাম; জিনিয়াস তো জিনিয়াসই, হিন্দি সিনেমার গানের সুরকার হইলেও। এইরকম নন-পলিটিক্যাল বা অ্যান্টি-বাংলাভাষা’র পজিশন নিতে পারছিলাম। 🙂  রোজা’র যেই মিউজিক সেইটা আরো এনহেন্স হইছিলো বোম্বে’তে। আমার কাছে এইটার প্যারামিটার ছিল: ‘রুকমিনি’ ভার্সেস ‘হাম্মা হাম্মা’।

 

 

রুকমিনি’টা বাজে তা না; রুকমিনি’টা ট্রাডিশন্যাল। এইরকম ইরোটিক গানগুলি সব কালচারেই আছে। সেক্সটারে পাওয়ার হিসাবে ইউজ করা হয় তো, যে কে জিতছে আসলে? এই টেনশনটা থাকে। হাম্মা’র লিরিকসটাতে প্রশংসা কইরা দখল করার একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু মিউজিক কমপ্লিটলি ডিফরেন্ট, যেই জায়গা থিকা ডিল করছে। যদিও বলা যায়, আরবান এসথেটিকস, কিন্তু এইটা আসলে গ্লোবাল ফেনোমেনাই। সার্টেন লোকাল কালচার’রে পুঁজি হিসাবে ইউজ করা লাগে নাই আর। মুরাকামি’র ব্যাপারেও আমার এইরকমের অ্যাজাম্পশন আছে যে, জাপানি জিনিস উনার বেচা লাগে না, মার্কেজ’রে যেইরকম লাতিন আম্রিকার কালচার বেচা লাগতো বা ধরেন কাউরে কাউরে বরিশাল-নোয়াখালী-ময়মনসিংহ বেচা লাগে আর্ট করতে গেলে। এইটা ডিগ্রেডিং একটা ব্যাপারাই আসলে, এই সেন্সে যে, একটা ‘কারণ’ আপনার লাগে যেইটা টু সাম এক্সটেন্ড ইথিক্যাল একটা বাউন্ডারি’র মধ্যেও আটকাইয়া ফেলে, লেখাটারে। যা-ই হোক…

 

 

কিন্তু ভিজ্যুয়াললাইজেশন খুব পুওর আছিলো বোম্বের’টার। সোনালী বান্দ্রে’রে যদিও পছন্দ ছিল আমার; সুন্দরীয় সাবুন নিরমা’র অ্যাডটাতে বরং বেটার লাগতো। এইখানে শেষে তো শরীরে আগুন ব্যাকগ্রাউন্ডে লাগায়া দিয়া বুঝাইতে হয় যে, দূরে কোথাও কোন সেক্সের ঘটনা ঘটতেছে। 🙂 নাইনটিসের হিন্দি সিনেমা বা মিউজিক ভিডিও’র এই সমস্যাগুলি আছিলো। যেমন, মোহিত চৌহানের ব্যান্ড সিল্করুট’র একটা গান আছিলো ডুবা ডুবা, লিটারালি পানিতে ডুবানো হয় আর্টিস্টদেরকে, মডেলসহ। বিশ্বাস নাও হইতে পারে, এইজন্য লিংকটাও দিয়া রাখলাম। একটা রিয়ালিটি’রে ইমাজিন করা ছাড়া ভিজ্যুয়ালাইজেশন পসিবল ছিল না আসলে ২০/২৫ বছর আগে।

 

 

 

এখন যেমন, একটু হিউমার ছাড়া রিয়ালিটি ক্রিয়েট করা পসিবল না। দ্য হাম্মা সং’য়ের শেষে আদিত্য কাপুরের পাছায় যে লাত্থি’টা দিলো শ্রদ্ধা কাপুর, এইটুক হিউমার ছাড়া হইতেই পারে না আসলে ঘটনাটা। মানে, শেষে যদি অরা সেক্স কইরা ফেলতো বা জড়াজড়ি কইরা বিছনায় শুইয়া পড়ছে এইরকমকিছু দেখাইতো, তাইলে খুবই সিলি একটা ব্যাপার মনে হইতো। ২১ বছর আগে বোম্বে সিনেমাতে ধরেন এইরকম হইলে ঠিক ছিলো, ভিউয়ার একটা ঢোক গিইলা সিন’টা হজম কইরা ফেললো; কিন্তু এইখানে একটা হাসি দিয়া শেষ করা লাগবো আসলে। ফান করতে পারাটা জরুরি না খালি, ফান করতে পারাটাই আসল রিয়ালিটি। তবে এমনো হইতে পারতো, সেক্স-টেক্স করলো, তারপরে আদিত্য কাপুর’রে লাত্থি দিয়া বাইর কইরা দিলো শ্রদ্ধা কাপুর। ওইটা রিয়ালিটিতে করতেই পারেন শ্রদ্ধা কাপুরেরা, কিন্তু ভিজ্যুয়াল যারা বানান সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’র কারণে শো করতে পারেন না, করতে আরো টাইম লাগবে মনেহয়। 🙂

আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। গানের বিহাইন্ড দ্য সিন ভিডিও’টা আমি দেখছি, ওইখানে আদিত্য রায় কাপুর আর শ্রদ্ধা কাপুর দুইজনেই বেশ সিরিয়াস হয়া কন যে, অরিজিনাল গানটা অরিজিনালের মতোই আছে। এইটা ঠিক রিমেইক না। এই বলাটা ইন্টারেস্টিং। শ্রদ্ধার সাথেই উনারা আগের ভার্সনটারে স্মরণ করতেছেন, কোন বেয়াদবি নাই এইখানে। নিজেরা নিজেদেরকে নিয়া করতেছেন, কিন্তু আগেরটার সিরিয়াসনেসের সাথে এইটার কোন সমস্যা নাই। আর এইখানে তো অরিজিনালটার আরেকটা ভার্সন হইছে, কিছু এক্সটেনশনও হইছে লিরিকসে, কিছু জায়গা বাদ গেছে, তো টোটাল ইনটেন্সিটি’টা ওভারঅল একটু নরোম করা হইছে। নুসরাত ফতেহ আলী খানের ‘আফরিন’-এরও এইরকম একটা ভার্সন হইছে, কোক স্টুডিও’তে; একটু সফট টাইপ। খুববেশি পপুলার হইতে পারে নাই মনেহয় ওইটা। কারণ আফরিন-এ তো আসলে সাবমিশনের কোন আর্জ নাই, ওইখানে একটা সাবমিসিভ ব্যাপার হয়া গেছে। ঝামেলাই হইছে। এইখানে ‘ফান’টা মনেহয় বাঁচায়া দিছে। রিমেইকের জায়গায় আরেকটা ব্যাপার মনে হইতেছিল, তামিল বা অন্যান্য রিজিওনাল ল্যাঙ্গুয়েজের হিন্দি রিমেইক হয় বা হলিউডও জাপানিজ বা জার্মানির, মানে ‘ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম’ বইলা যে ক্যাটাগরি সেইগুলির রিমেইক করে। উল্টাটা খুব একটা হয় না, যেমন হলিউডের কোন ফিল্মের রিমেইক করে না কোরিয়ান’রা বা হিন্দি সিনেমার বাংলা-ভার্সন বানায় না তো কলকাতার ‘বাণিজ্যিক’ ( 🙂 ) ফিল্ম-মেকার’রাও বা বানাইলেও বলেন না; মে বি রয়্যালিটি’র টাকা দিতে পারবেন না বইলাই বা ছোট অডিয়েন্স থিকা বড় অডিয়েন্সের কাছে তো যাওয়াই যায়, বড় অডিয়েন্স থিকা ছোট অডিয়েন্সের কাছে যাওয়ার মধ্যে বলার কিছু নাই। বা যা আছে, সেইটা শরমেরই। 🙁

হাম্মা’র আরেকটা ভার্সন হইছিল। ‘রেসপেক্ট ফর উইমেন’ ক্যাম্পেইনের লাইগা হ্যাভেলিস কোম্পানি বানাইছিলো। যে, কিচেন অ্যাপ্লাইয়েন্স দিয়াও গান গাইতে পারেন নারী’রা। 🙂 একটা পোলা গিটার লইয়া বইছে, কিন্তু কর্ডটা ঠিকমতো বাজাইতে পারে নাই, আরেক পোলা না বুইঝা সেইটার তারিফ করতেছে। তো, ভাশুদা শর্মা পপকর্ণ লইয়া আইসা ঠিক’টা বইলা দেয়; তখন পোলাটা চেইতা গিয়া কয়, আমার লাইগা স্যান্ডউইচ বানায়া নিয়া আসো। ভাশুদা শর্মা স্যান্ডউইচ না বানায়া গান’টা গাইয়া ফেলেন আর পোলা দুইটাও পরে জয়েন করে। হ্যাপি এন্ডিং হয়। নারীরাও গান গাইতে পারেন এই টাইপের একটা ফেনিজিম এস্টাবলিশ হয়।

 

 

মজাটা হইলো শেষে ভাশুদা শর্মা পোলাটারে কয়, যাও বাচ্চু [যদিও বেটা সে, মাইয়ার কাছে হারছে বইলা বাচ্চা হয়া গেছে সে; ফান কইরা বলছে শে, আমিও ফানটারেই লোকেট করতে চাইতেছি 🙁  যে বেটা হিসাবে আপনি একজন মাইয়ারে স্যান্ডউইচ বানায়া দিতে পারেন কিনা? বাচ্চা হওয়া লাগে না একটু? ]  আমার লাইগা স্যান্ডউইচ বানায়া নিয়া আসো। কিন্তু পোলাটা পয়লা ধরতে পারে না, পরে তার দোস্ত জিনিসটা ধরায়া দেয়; তিনজনেই হাইসা দেয়। এই ভুইলা যাওয়ার ব্যাপারটা সিগনিফেক্ট মনেহয়; মানে, বেটা হিসাবে এইরকম বাজে বিহেভ আপনি করতে পারেন আর পরে ভুইলাও যাইতে পারেন। এইটা জায়েজ আছে। আর আমার ধারণা, শেষে ব্যাপারটা এইরকম যে, পোলাটারে স্যান্ডউইচ বানানো লাগে না আর। বা হয়তো বানাইতে যাইতে পারে, মাইয়াটা বলবো যে, না, না, লাগবো না থাক! এইরকম ‘মাফ’ কইরা দিতে পারতে হয়, এইটা উইমেনলি বিহেভিয়ার আসলে। 🙁 যদি সত্যি সত্যি পোলাটারে দিয়া স্যান্ডউইচ’টা বানানো হয়, তাইলে অডিয়েন্সই কইবো, ব্যাপারটা ঠিক হয় নাই, রিভেঞ্জ হইছে। তো, হাসির মধ্যে আটকাইয়া দিয়া শেষ করাটাই বেশি ‘পোয়েটিক’ হইছে। 🙂

মানে, হাম্মা গান’টা আসলে ভালো। সেক্সুয়ালিটি’টারে এক্সপ্রেস করতে পারাটা বেটার সবসময়। ইউটিউবে নতুন ভার্সনটাতে ভিউ দেখলাম ৩ কোটির উপরে আর পুরানটার সবগুলি লিংক মিলাইলেও মনেহয় ৫০ লাখ হইবো না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, ভিউয়ারশীপ বাড়তেছে, বরং আরো আরো বেশি মানুষ আমরা একটা জায়গাতে জড়ো হইতেছি, এইটা যদি একটা লিনিয়ারনেসের দিকেই মার্চপাস্ট করার ঘটনা হয়, তাইলে খুববেশি এনকারেজিং কিছু হওয়ার কথা না আসলে।

 

 

Leave a Reply