শাহবাগ ৩

শাহবাগ এর ২১ তারিখের ঘোষণার পর এই আন্দোলন আরো বেশি মিডিয়ার এবং আওয়ামী লীগের দখলে চইলা গেছে। এই সম্ভাবনার ভিতর শাহবাগ সবসময়ই ছিলো। কিন্তু শাহবাগ শুরু হইছিলো মিডিয়ার রিয়ালিটির বাইরে (যদিও মিডিয়া এইটারে কব্জা করতে খুববেশি সময় নেয় নাই) এবং সরকারের বিরোধিতায় (যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রাজনৈতিক ছাড় দেয়া হইতেছে); আর এখন পরিণত হইতেছে একটা মিডিয়া রিয়ালিটিতে এবং সরকারি আন্দোলনে। এইটারে এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসাবেই দেখা সম্ভব। আওয়ামী ডিলেমার বাইরে শাহবাগ এর অন্য তেমন কোন রাজনৈতিক অপশন এখনো নাই। থাকাটা সম্ভব যদি শাহবাগ নিজেই একটা পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি হয়া উঠতে পারে। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

অবশ্য শাহবাগের রাজনৈতিক মিত্র এবং শত্রু সবাই এইটাই চাইছে যে, শাহবাগ যেন বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে কোন অবস্থান তৈরি করতে না পারে। কারণ, শাহবাগের অবস্থান এমন কিছু রাজনৈতিক প্রশ্নরে সামনে নিয়া আসে যারে রাজনৈতিক দলগুলা সরাসরি ডিল করতে প্রস্তুত না, এইটা উনাদের রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে। এর মধ্যে ত অবশ্যই অন্যতম, মুক্তিযুদ্ধ এবং ইসলাম। এইটা শুধুমাত্র শাহবাগ-ই না, বাংলাদেশের ইন্টেলেকচুয়ালিটিরও মূল জায়গা।

আর এইটা শেষ পর্যন্ত শাহবাগেও আইসা গেলো। এইটারে এড়ানোর কোন রাস্তা ছিলো না। কিন্তু এই ধর্ম প্রশ্নটারে ধার্মিকতা দিয়া মোকাবিলা করার ত উপায় নাই। বাঙালি মুসলমান (অথবা মুসলমান বাঙালি) তাইলে কেমনে ধর্ম প্রশ্নটার মোকাবিলা করবো? এইটাই শাহবাগের মূল ইন্টেলেকচুয়াল ক্রাইসিস।

পাকিস্তান রাষ্ট্র বানানোর ভিতর দিয়াই এই এলাকার মানুষ রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুসলমান’ পরিচয়রে গ্রহণ করছিলো, তারপর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের ভিতর দিয়া সেই ‘মুসলমান’ পরিচয়রে বাতিল কইরা দেয় নাই, বরং এর সাথে ‘বাঙালি’ পরিচয়রেও রাষ্ট্রীয়ভাবে যোগ করছে।[অন্য জাতি-গোষ্ঠী’র আলাপটা এইখানে যে নাই তা না, উনাদের ধর্ম এবং জাতিসত্তার মামলাও আছে।] কিন্তু এইটা ইন্টারপ্রেটেড হইছে সবসময়ই একটা ধর্ম-নিরেপেক্ষ জায়গা থিকা, যারে পাশ্চাত্য অর্থে, সেক্যুলারও ডাকা হইতেছে। যে বাঙালি (পাশ্চাত্য অর্থে, সেক্যুলার) সে আবার মুসলমান হয় কেমনে বা যে মুসলমান (পাশ্চাত্য অর্থে সম্ভাব্য-টেররিস্ট) সে আবার বাঙালি হয় কেমনে? – এই ডুয়ালিটির কোন সমাধান এই অর্থের ভিতর নাই।

পাশ্চাত্য অর্থের বাইরে আমাদের এই রাজনৈতিক বাস্তবতার অন্য কোন অর্থ আমরা আমাদের ইন্টেলেকচুয়ালিটির ভিতর আবিষ্কার করতে পারি নাই। না-পারাটা বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা এবং এই না-পারাটারে আরো অ্যামপ্লিফাই করতেছে মিডিয়া। একটা মিডিয়া ওয়ারফেয়ার শুরু হইছে এই বেকুবি’র জায়গা থিকা। এই ব্যর্থতারে মোকাবিলা করার উপরেই নির্ভর করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যত।

শাহবাগ প্রশ্নটারে স্পষ্টভাবে সামনে নিয়া আসছে। সেইটার সমাধান অন্তঃত ধার-করা অর্থের ভিতর দিয়া যে করাটা সম্ভব না – এই ঘটনাটাও স্পষ্ট এতদিনে।

 

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৩।

 

Leave a Reply