অনলাইন এন্টারটেইমেন্ট প্লাটফর্মগুলা নিয়া

টিভি-স্টেশন বেইজ এন্টারটেইনমেন্টের দিন তো বাংলাদেশে মোটামুটি অফিসিয়ালি শেষ হইতে যাইতেছে। চরকি’র শুরু হওয়ার পরে এইটার কথা মনে হইলো। (ঘটনা’টা তো শুরু হইছে আরো আগেই আসলে।) উনাদের কনটেন্টের কারণে না, অডিয়েন্স হিসাবে বাংলাদেশি পিপলরে টার্গেট করার ভিতর দিয়া। যদিও উনারা ম্যাস-লেভেলে যাইতে রাজি না এখনো। যেমন বাংলা-ক্ল্যাসিক হিসাবে বেহুলা’রে রাখছেন, রূপবান’রে রাখেন নাই। আমার একটা ধারণা হইতেছে, বাংলা-সিনেমা হিসাবে এটলিস্ট রূপবান, ছুটির ঘন্টা এবং বেদের মেয়ে জোসনা’রে যারা নিতে পারবেন, উনারা ‘বাংলাদেশি অডিয়েন্সরে’ কিছুটা হইলেও নিতে রাজি হইতে পারবেন।… তো, এইসব জিনিস চেইঞ্জ হবে ধীরে ধীরে, ওয়েব কনটেন্ট এবং প্লাটফর্ম যারা বানাইতেছেন উনারা বুঝতে পারবেন যে, মিডল-ক্লাস উনাদেরকে ভাত দিবে না; কিন্তু তারপরও উনারা এই মিক্লাদের দরবারেই হাজির হইবেন। কেন?

এই আলাপ’টা আসলেই অনেক বড় এবং যে কোন একটা পারসপেক্টিভ নাই। আমি তিনটা জিনিস এটলিস্ট হাইলাইট করতে চাই।

এক হইলো, উনাদের ইকনোমিক উদ্দেশ্য যে নাই – তা না, কিন্তু এইটা মোটিভেশন ফ্যাক্টর না এতোটা (আবদুল্লাহ মাহমুদ সাদের কথা শুনলেও বুঝতে পারবেন সেইটা)। ধরেন, লাখ লাখ মানুশ আপনার কোন পোস্টে প্রশংসা করলো, আর ধরেন, টারানটিনো (বা এই লাইনের যারা মাস্টার মানুশ আছেন, উনাদের কেউ একজন) আইসা একটা লাইক দিলো, বা কইলো, ভালোই তো হইছে; বিশাল ব্যাপার হবে না তখন সেইটা! কিন্তু এইটা খালি একজন বুঝদার মানুশের রিকগনিশন হিসাবে দেখতে চাই না আমি, সেইটা তো আছেই; কিন্তু এর বাইরেও একটা ক্লাস-ওয়ারফেয়ারের ঘটনাও। আর্ট সবসময় একটা রুচি’র ঘটনা। এমন না যে গ্রেট আর্ট খালি একটা ইকনোমিক ও কালচারাল ক্লাসের জিনিস, অ্যাক্রস দ্য ক্লাস পিপলরে কানেক্ট করতে পারে; কিন্তু ফার্স্টে একটা ক্লাসের রুচিরে স্যাটিফাই না করতে পারলে এইটা হয় না। তো, এই ক্লাস কোনটা?

এইখানে সেকেন্ড পয়েন্ট’টা আসে, আমি আগেও কয়েকবার বলার চেষ্টা করছি (থিওরেটিক্যালি স্পষ্ট করতে পারি নাই মেবি) যে, একটা গ্লোবাল কালচারাল ক্লাস এমার্জ করতেছে, সারা দুনিয়াতে। একটা সময়ে, কৃষক ও জমিদারের ক্লাস-ওয়ার থিকা আমরা পাইছি ন্যাশনাল বুর্জোয়া ক্লাসটারে; দেখবেন, ‘জাতীয়’ হওয়াটা জরুরি ছিল তখন (এখনো আছে সেইটা, কিছুদূর পর্যন্ত), এখন এইটা আর মাস্ট কোন ক্রাইটেরিয়া না; বরং ইথোপিয়ার না-খাইতে-পারা বাচ্চাদের জন্য যদি আপনার মন না কান্দে, আপনি তো মানুশই না! যে কোন আর্ট এখন এই গ্লোবাল কালচারাল ক্লাসের লগে রিলিটেড একটা ঘটনা। মানে, জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়া শ্রেণী একটা পুরান ক্লাস এখন।

থার্ড পয়েন্ট হইতেছে, এই যে নতুন ক্লাস, এইটা তৈরি হইতেছে খালি পুঁজির গ্লোবালাইজেশনের ভিতর দিয়া না, বরং এই আর্টের পাওয়ারের ভিতর দিয়াও। এই পাওয়ারটারে ক্রিয়েট করতেছে নতুন টেকনোলজি, নতুন ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম। আপনি কি মনে করেন, ‘সার্টেন রুচি’র ম্যাটেরিয়াল না হয়া কোন আর্ট নেটফ্লিক্সে ডিস্ট্রিবিউটেড হইতে পারবে? বালের ‘প্রমিত ভাষায়’ না লেখলে মরা নিউজপেপারগুলা যেমন আপনার লেখা ছাপাবে না, এইরকম সার্টেন রুচি’র জায়গারে প্রমোট না করলে নেটফ্লিক্স এবং অন্য ওয়েব প্লাটফর্মগুলাও আপনার সিনেমা-আর্টরে প্রমোট করবে না। (হাউএভার, এইগুলার কারণেই এরা টিইকা থাকে না, বরং এই বৈশিষ্ট্যগুলা হইতেছে এই ফর্মেশনগুলার কোর জিনিস।) গ্লোবাল কালচারাল ক্লাসের ঘটনা’টা থাকাই লাগবে, আপনার কাছে মনে হবে এইগুলা ‘স্বতঃসিদ্ধ’ বা ‘স্পন্টিনিউয়াস’ একটা ঘটনা!

নিউজপেপার, রাষ্ট্রীয় টিভি-চ্যানেল যেমন ছিল জাতীয়তাবাদের বেইজ, এইরকম ওয়েব প্লাটফর্মগুলা হয়া উঠতেছে গ্লোবাল কালচারাল ক্লাসের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম। পলিটিক্যাল পাওয়ার এবং আর্টের একটা রিচুয়াল সুপরিয়রিটি ক্লেইম করার ভিতর দিয়া।

ভালো বা খারাপের বাইরে, এই জিনিসটারে খেয়াল করাটা দরকার।

২.
বাংলা-সিনেমা নিয়া লেখাতে (কমেন্টে লিংক দিতেছি) কইছিলাম, বাংলাদেশের নাটক-সিনেমা (এখন ওয়েব সিরিজেরও) ডিরেক্টদের একটা মেজর সমস্যা হইতেছে যে, উনারা ধইরা নেন, পাবলিক তো আর্ট বুঝে না!
মানে, পাবলিকের এন্টারটেইনমেন্টের লাইগা যদি কোন নাটক-সিনেমা-ওয়েবসিরিজ বানাইতে চান তাইলে আপনারে “একটু নিচে নামতে হবে” কিছু “নাচা-গানা” (অশ্লীল 🙂 ) রাখতে হবে, তা নাইলে পাবলিক দেখবে না! এইটার শুরু মেবি আলমগীর কবিরে, উনি ঘোষণা দিছিলেন, থার্ড ক্লাসে বসা দর্শকদের জন্য উনি সিনেমা বানাইবেন না, একজন কমিউনিস্ট হিসাবে ফার্স্টক্লাসের দর্শকের পকেটের পয়সা বাইর কইরা নিয়া আইসা সমাজ-বিপ্লব উনি করবেন! 😄

তো, আমাদের দেশের এখনকার ডিরেক্টর’রা এই অনুমান ফলো কইরাই চলেন। হয় নিজেদের ‘আর্ট’ বানান তা নাইলে ‘ফর্মূলা’র জিনিস বানান। ফার্স্টেরটার চাইতে সেকেন্ডটা এই কারণে আরো বেশি ট্রাশ হয়।

ক্রিয়েটিভিটি সবারই কম-বেশি আছে বা নাই, কিন্তু যতটুক ক্রিয়েটিভিটিই থাকুক সেইটা যখন একটা হেইট্রেটের জায়গা থিকা ইউজ করা হয়, সেইটা আর্টিস্টরে যেমন কোন আনন্দ দিতে পারে না, অডিয়েন্সরেও ডিটাচড কইরাই রাখে।

সবকিছুতেই কিছু প্যাটার্ন আছে, টেকনিক আছে, ট্রাডিশন আছে, কিন্তু অইগুলাই আর্টের কানেকশনের ঘটনা না! বাংলাদেশের ডিরেক্টর’রা এই “পাবলিকরে ঘৃণা” করার জায়গাটারে যতদিন এড়াইতে না পারবেন, ক্রিয়েটিভ হওয়ার পরেও কোন আর্ট তৈরি করতে পারবেন বইলা আমরা মনেহয় না।

“পাবলিক বুঝে না” বা “পাবলিক বুঝতে পারবে না” – এই ফাঁকিবাজি’টারে যতদিন না “পাবলিক বুঝে” বা “পাবলিক ধরতে পারবে” – এই বিশ্বাস দিয়া রিপ্লেইস করা যাবে, ততদিন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরদের কাছ থিকাও ‘ভালো’ জিনিস পাওয়ার আশা আসলে কমই।

এইটা ভিজ্যুয়াল কোন জিনিস না এতোটা, বরং এতোটাই ইন্টিগ্রেটেড জিনিস যে, ডিরেক্টর এবং অডিয়েন্স সবারই ব্যাপারটা ফিল করতে পারার কথা।…

৩.
বাংলাদেশে যারা ওয়েবে ভিডিও কনটেন্ট বেচেন (চরকি, হইচই, জি-ফাইভ, বংগ…) উনাদের সবচে বড় drawback হইতেছে, সাবটাইটেল নাই কোন! সরি ভুল হইছে, পুরানগুলাতে নাই, নতুন কনটেন্টের অনেকগুলাতে ইংলিশ সাবটাইটেল আছে, বাংলা-সাবটাইটেল নাই।

সবগুলা আমি দেখি নাই, চরকি’র কিছু কনটেন্ট দেখতে বসছিলাম, অইখানে বাংলাটা নাই দেইখা ধইরা নিছি অন্যগুলাতেও থাকবে না; মানে, যদি এইটা ইন্ডাষ্ট্রি প্রাকটিস হইতো, তাইলে চরকি’তেও থাকতো। চরকি’তে এমনকি একটা বিদেশি সিনেমা রাখছে, অইখানে ইংলিশ সাবটাইটেলও রাখে নাই!

বরং ইংলিশ বা বিদেশি (তামিল, কোরিয়ান) সিনেমার বাংলা-সাবটাইটেল দিয়া যদি মুভি রাখতে পারে, সেইটা আরেকটা বিজনেস উইংস হইতে পারে।… (কষা বাংলায় হবে না আসলে, এইটা মাথায় রাখতে পারলে ভালো।)
সাবটাইটেল হেল্পস! নেটফ্লিক্স এইটারে নেসেসারি পার্ট বানায়া ফেলছে। ইংলিশের লগে বাংলাটাও দরকারি জিনিস!

বাজারে যেই জিনিস চালু আছে, তার চাইতে বাজে মাল দিয়া বিজনেস হবে না। উদাহারণটা অনেক একস্ট্রিম মনে হইতে পারে, কিন্তু “টকিজ” আসার পরে যেমন “সাইলেন্ট মুভি”তে ফিরা যাওয়ার কোন অপশন নাই, এইরকম সাবটাইটেল ছাড়া অনলাইন মুভি তো খুবই ইনকমপ্লিট একটা জিনিস, ইভেন ইউটিউব ভিডিও-ই হয় না।

মানে, আমি বেশ সারপ্রাইজড হইছি। না হইলেও ৪/৫’শ রিভিউ দেখছি এইসব বাংলাদেশি ওয়েব-কনটেন্ট নিয়া (বেশিরভাগই পেইড মনে হইছে), কোন রিভিউয়ারেরই এইটা চোখে পড়লো না! বা বলার মতো ব্যাপারই মনে হইলো না!

[পরে আরেকটা জিনিস মনে হইলো, লেখতে গেলে, এইগুলা যে “প্রমিত-ভাষা” না অইটা যেহেতু এক্সপোজ হয়া যাবে, বানাম ভুলও করতে হবে পচ্চুর, অই ডর থিকাও দেন নাই মেবি, বা দিতে পারতেছেন না। 🙂 ]

 

Leave a Reply