অন ‘আঞ্চলিক ভাষা’

ভাষা তো সবসময় একটা অঞ্চলেরই ঘটনা; মানে, একেকটা অঞ্চল বা জিওগ্রাফি’র লোকজন একেক ভাষায় কথা বলেন। ফ্রান্সের লোকজন ফরাসী, জার্মানের লোকজন জার্মানি, বাংলাদেশের লোকজন বাংলায়… এইরকম। (অন্য এলাকার লোকজনও শিখে, বা মাইগ্রেশনের ব্যাপারও আছে।…) এর মধ্যেও ডিফরেন্স আছে; নর্থ-বেঙ্গলের লোকজন যেইরকম টোনে বাংলা বলেন, কুষ্টিয়ার লোকজন, ভাটি-অঞ্চলের লোকজন একই টোনে বলেন না; সিলটি আর চিটাগাংইয়া তো আলাদা বাংলা-ই, একরকমের। তো, আমার কনসার্নটা এই জায়গাটা নিয়াই, একটা ভাষারে আলাদা কইরা ‘আঞ্চলিক’ কেন বলা লাগে?
 
মানে, বলা যাবে না – তা না; আলাদা টোনগুলার কথা তো বললাম-ই, বরং বুঝতে চাইতেছি এই বলাবলির সিগনিফিকেন্সটা কি? সিগনিফিকেন্স হইতেছে একটা সেন্টারের জায়গা’রে নিয়া আসা । যে একটা ‘সেন্টার’ আছে ভাষার; ধরেন, ঢাকা হইতেছে বাংলা-ভাষার সেন্টার; ঢাকা (অঞ্চলে)র লোকজন যেই বাংলা-ভাষায় কথা কয়, সেইটা আর ‘আঞ্চলিক’ না 🙂 বা লন্ডনের লোকজন যেমনে ইংলিশ কয় সেইটা হইতেছে ‘আসল’ ‘অরিজিনাল’ বাংলা-ভাষা। এইভাবে একটা ‘টোন’ বা ‘ভঙ্গিমা’রে সেন্টার না কইতে পারলে অন্য টোনগুলারে আপনি ‘আঞ্চলিক ভাষা’ বলতে বলতে পারবেন না তো আসলে। তো, যখন আপনি বলতেছেন, আমি বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় লিখতেছি, কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় লিখতেছি, তখন আপনি একটা সেন্টার’রে ভাষার ‘আসল’ ‘অরিজিনাল’ মালিকানা দিতে রাজি থাকতেছেন। আমি বলবো, এই জায়গা থিকা ‘আঞ্চলিক ভাষা’ টার্মটা পলিটিক্যালি খুবই ভুল একটা প্রপোজিশন। ব্যাপারটা এইরকম না যে, ‘আঞ্চলিক ভাষা’ বইলা কিছু নাই; কিন্তু ‘আঞ্চলিক ভাষা’ জিনিসটা বা টার্মট কেমনে কাজ করে – সেইটা খেয়াল করতে পারাটা তো দরকার!

 
ক্যাটাগোরাইজ করতে পারাটাই জ্ঞান না, কিন্তু জ্ঞান পাওয়ার হিসাবে এইরকম ক্যাটাগরি বানানোর ভিতর দিয়াই নিজেরে এফেক্টিভ রাখে। – এই জানা জিনিসটা ভুইলা যাওয়াটা ঠিক হবে না আমাদের। 🙂

এইটাও দেখতে পারেন লগে:

আঞ্চলিক ভাষার অভিধান: সৈয়দ আলী আহসান ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র ভাষা প্ল্যানিং

Leave a Reply