আর্কাইভ: করোনা ভাইরাস নিয়া পাবলিক পোস্ট (মার্চ ৯ – এপ্রিল ১৫, ২০২০)

মার্চ ৯

স্যানিটাইজার ইউজ করা তো ভালো, মাস্ক পরাও। এইটা কইরা করোনা ভাইরাস থিকা বাঁচা যাবে না – আমরা জানি; কিন্তু তারপরও আমরা যে সাবধান আছি, সেইটা দেখাইতে পারাটা তো জরুরি। মানে, আমি যে ‘সচেতন’ আর এইটা এফোর্ড করতে পারি – এইরকমের স্টেটম্যান্টও তো আছে! (সাবধানতা’টা থাকার পরেও।)

অনেকটা ধরেন, বামপন্থী দলগুলার, বা আর্টিস্ট-ইন্টেলেকচুয়ালদের আওয়ামী বিরোধিতার মতো; যে আমরা তো এটলিস্ট প্রতিবাদ’টা করতেছি! এফেক্টিভ হোক বা না হোক, সেক্সি তো অবশ্যই। 🙂 বরং, এই সেক্সিনেসটাই একভাবে জরুরি হয়া উঠে!

আজকে ধরেন, গর্ভমেন্ট বা এনজিওগুলা যদি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফ্রি স্যানিটাইজার আর মাস্ক বিলাইতে শুরু করে, ব্যাপারটা এতোটা সেক্সি থাকতে পারবে না তখন। এই ‘প্রতিবাদ’ করার ঘটনা’টাও, একইরকম। সবাই বা অনেকে যদি করতে পারে, বা করতে থাকে, তখন এতোটা ‘ক্লাস’-এর ব্যাপার হইতে পারবে না আর। মানে, সাবধান হওয়া যাবে না বা ‘প্রতিবাদ’ করা যাবে না – এইরকম না, একটা ‘ক্ল্যাসি’ বা ‘সেক্সি’ হওয়ার চাইতে ম্যাস লেভেলের ঘটনা বা এফেক্টিভ হইতে পারাটা জরুরি মনেহয়।

 

মার্চ ১৬

কি করা যাইতে পারে? ভাবলাম…

করোনা ভাইরাস নিয়া লেখালেখিগুলা পইড়া দুইটা জিনিস ক্রুশিয়াল মনে হইছে – যারা অলরেডি ইনফেক্টেড হইছেন তাদেরকে আইডেন্টিফাই করা, আর তাদেরকে আলাদা রাখতে পারা, যাতে ছড়াইতে না পারে আর।

তো, এর লাইগা কয়েকটা জিনিস করা দরকার –

১. করোনা ভাইরাসের ইনফর্মেশন জানার এবং জানানোর জন্য ১টা সরকারি হেল্প-লাইন ক্রিয়েট করা দরকার।

জেলা বা এলাকা-ভিত্তিক হেল্প-লাইনও থাকতে পারে।

২. করোনা ভাইরাস যাচাই করার যেই টেস্টিং কিট – সেইটা কোন কোন হসপিটালে আছে, জানানো দরকার।

সব থানা/উপজেলা/ওয়ার্ডে অ্যাভেইলেবল করা দরকার। গর্ভমেন্ট থিকা না পাইলে কমিউনিটির লিডার’রাও এই কাজ করতে পারেন কিনা…

৫০০০/৭০০০ হইলেই কাজ চলার কথা তো মনেহয়। ডিস্ট্রিবিউশনটা জরুরি, কোথাও ফেইলা না রাইখা।

৩. যেই যেই এলাকায় রোগী পাওয়া যাইতেছে বা যাবে, সেইগুলা জানানো দরকার। চলাফেরা রেস্ট্রিক করাটা জরুরি।

প্রতিটা এলাকাতেই আলাদা কইরা একটা কোয়ারেনটাইন সেন্টার তৈরি করা যাইতে পারে। হাসপাতালের চাইতে স্কুল, কলেজ, হোস্টেল, আবাসিক হোটলগুলা বরং বেটার অপশন হইতে পারে।

৪. রোগীদেরকে আলাদা করতে পারাটা যতোটা জরুরি, তার চাইতে বেশি জরুরি তাদেরকে যারা দেখ-ভাল করবেন বা কাছাকাছি যাইবেন, তাদের প্রটেকশন।

কারা দেখ-ভাল করবেন, কিভাবে করবেন – এই জিনিসগুলারও একটা গাইড-লাইন বানায়া পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্টরা আমাদেরকে জানাইতে পারেন।

৫. মানে, এইটা তো কোন পারসোনাল ইস্যু বা রাষ্ট্রীয় সমস্যা না খালি, একটা সোশ্যাল ক্রাইসিস; তো, সোসাইটি হিসাবে একসাথে মোকাবিলা করার কথা ভাবাটাই মনেহয় বেটার।

এখন পর্যন্ত আলাপ যা দেখছি, তা হইতেছে ব্যক্তি হিসাবে কি কি করবেন বা করবেন না; আর গর্ভমেন্ট কি করতেছেন বা করতেছেন না – এইগুলা নিয়া আলাপ হইতেছে। এইগুলা অ-দরকারি না। কিন্তু সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ নিতে পারাটা জরুরি।

এইরকম সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ নিতে পারা সহজ জিনিস না। কিন্তু যারা অ্যাক্টিভিস্ট আছেন, কাজ করার কথা ভাবেন, এই পয়েন্টগুলা হয়তো কন্সিডার করতে পারেন।

 

২.

জিনিস’টা নিয়া কথা-বলা’টা মুশকিলই একটু এখন; কারণ এখন আসলে ঠিক কথা-বলার টাইম না, বরং পারলে কিছু কাজ করার।… তারপরও যেহেতু মনে হইছে, ভাবলাম বইলা রাখি।

এই যে ভাইরাস, এইটা কিন্তু খালি চোখে দেখতে পাইতেছি না আমরা। আর যতক্ষণ না এইটা সিমটমগুলার ভিতর দিয়া হাজির হইতেছে, মানুশরে মাইরা ফেলতেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুঝতেও পারতেছি না। তো, এইটা যে প্রসেস, আমাদের ‘বোঝা-পড়া’র; সেইটারে সন্দেহ করা উচিত না কিছুটা?

যে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবো না, নিজে ফিল না করলে বুঝবো না – এইরকম ‘বাস্তব-ভিত্তিক’ জিনিসগুলা তো বড়সড় রকমের অবস্টেকল। এমন না যে, এইভাবে বুঝা যাবে না; কিন্তু ‘বুঝতে পারা’ জিনিসটারে এইটুকের ভিতরে আটকায়া ফেলাটা ভুল হবে।

জানা বা বোঝার তরিকা অনেকগুলা। বরং জানা-বোঝা যে তরিকাগুলা আছে, তাদের ব্যাপারে সবসময় ক্রিটিক্যাল থাকাটা জরুরি। কোনকিছু আমরা দেখতেছি – তাই বইলা এইটা যেমন সত্যি না, কোনকিছু আমরা দেখতেছি না বইলাও সত্যিও না। মানে, সত্যি জিনিস’টা দেখা বা না-দেখার উপ্রে ডিপেন্ডেড না এতোটা।

যেইভাবে, এই দুনিয়া, আমাদের এগজিসটেন্সের কারণেই থাকতেছে না; বরং আমাদের এগজিসটেন্সটা এই দুনিয়ার ভিতরে আছে। খুব মাইনর একটা জিনিসই এইটা; কিন্তু আমাদের চিন্তা, কাজ বা বাঁইচা থাকার ভিতরে এইটা অনেকসময় আমরা মিস কইরা যাই বইলাই আমার মনেহয়।


মার্চ ১৭

ব্যাপারটা এইরকম না যে, করোনা ভাইরাস নিয়া গর্ভমেন্ট বা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কিছু করতে পারতেছে না; বরং কিছু করতে যে চাইতেছে না – এইটা ভয়াবহ ব্যাপার।

২.

এই ভাইরাসের মহামারী’রে বন্যা বা সাইক্লোনের মত ভাবতে পারলে হয়তো অ্যাকশন নিতে বেশি সুবিধা হইতে পারে।

সাগরে সাইক্লোন দেখা গেলে কি করি আমরা? আগে থিকা জাহাজ, নৌকারে সইরা আসতে বলা হয় পাড়ে। সাগর পাড়ের মানুশজনরে আশ্রয়কেন্দ্রে বা বাড়িতে থাকতে বলা হয়, যতক্ষণ ঝড়টা থাকে। যদি না জানানো হয়, তাইলে তো যারা সাগরে ছিল, তারা তো সাবধান হইতে পারতেন না, অনেকেই মারা যাইতেন। ঘরের বাইরের মানুশজনও। আগে অনেক মানুশ মারাও যাইতো। কিন্তু যদি জানানো যায় মানুশ’রে, তখন তারা সাবধান হইতে পারেন। মানুশও কম মরে।

তো, এই কারণে ইনফরমেশন গোপন না কইরা জানানো’টা ভালো। এই জানানোর দায়িত্ব গর্ভমেন্ট, মিডিয়া, সরকারি লোকজনদের, মেডিকেল-সায়েন্সের মানুশ-জনদের। উনারা কথা না কইলে বরং অন্যদের কথা-বলার সুযোগটা তৈরি হইতে থাকে। কোন জায়গায় কয়জন করোনা রোগী ধরা পড়ছে, জানলে মানুশ জানলে প্যানিকড হবে না, না-জানা থিকা হবে।

মানুশদেরকে বাঁচাইতে হবে না; মানুশজন যাতে নিজেদেরকে বাঁচাইতে পারে, সময় মতো অ্যাক্ট করতে পারে, সেই সুযোগটা দরকার। অফিস-আদালত যদি বন্ধই করা লাগে দুইদিন পরে না কইরা দুইদিন আগে করেন।

আগামীকালকে, সারা দেশে সব ব্যাংকগুলার সামনে সমাবেশ করার কথা। ৬০টা ব্যাংকে ৫০০০ কইরা হইলেও ৩ লাখ মানুশরে ক্লোজ প্রক্সিমিটিতে দাঁড়াইতে হবে। এদের মধ্যে কারো একজনেরও যদি করোনা ভাইরাস থাকে, এইটা কতো জনরে এফেক্ট করবে, ভাবা যায়! যেইসব এলাকায় করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে, সেইসব জায়গায় তো অন্তঃত বন্ধ করতে পারেন।

ভয় না-পাওয়ার বেটাগিরি আর ভয় পাওয়ার প্যানিকের মাঝখানেও রেসপন্সিবিলিটির কিছু জায়গা আছে, সেই জায়গাগুলারে এক্সপ্লোর করতে পারাটা দরকারি।

যারা ডিসিশান নেয়ার জায়গাগুলাতে আছেন, ডিসিশান নেন, মানুশদেরকে জানান আর জানতে দেন, এটলিস্ট।

৩.

বাংলা-ভাষায় দুই ধরণের প্রাণী আছে। 🙂

এই quarantine শব্দ দিয়া টের পাইবেন; যে এর ‘বাংলা’ কি হবে? উনারা হইতেছেন, অনুবাদ-প্রাণী; সত্য’রে ট্রুথ বানাইছেন, ধর্ম’রে রিলিজিয়ন; আর এইভাবে একটা কালচার’রে যে আরেকটা কালচারের দাস বানায়া ফেলার টেকনিকটারে ফলো করতেছেন, এই বুঝ’টা বুঝতে রাজি হইতে পারতেছেন না। ভাবতেছেন, শব্দ আবিষ্কার করতেছি তো আমরা! যেন কলম্বাস! আসলেই কলোনিয়াল কলম্বাসের নাতি-পুতি এনারা।

দুসরা হইলো, সঠিক-উচ্চারণ প্রাণী; অরিজিনালি উচ্চারণ’টা কি হবে? কোয়ারেন্টান, কোয়ারেনটাইন, করেনটাইন… এইসব হাবিজাবি। প্রাচীন নদীয়া জেলার ভাষারে উনারা ‘খাঁটি’ বা অরিজিনাল বাংলা-ভাষা মনে কইরা থাকতে পারেন। মানে, কালচার যে পাত্থর টাইপের জিনিস না, এইটা তো উনারা জানেন, কিন্তু প্রাচীন ও পপ (কোনভাবেই এখনকার বা হ্যাপেনিং জিনিস না) বইলা ভাবতে পারেন।…

আরো অনেক ভাষা-প্রাণী আছেন, থাকতে পারেন। কিন্তু এই দুই ধরণের বিপ্লবীদের আমি এড়ায়া চলতে পছন্দ করি।

আলগা থাকার ট্রাই করি।

 

মার্চ ১৮

নিজেরে বাঁচানোর পয়লা ধাপ হইতেছে, সরকারি প্রেসনোট’রে বিশ্বাস না করা।

২.

সেকেন্ড ওযার্ল্ড ওয়ার নিয়া কয়দিন আগে একটা সিনেমা দেখছিলাম; মেইনলি উইনস্টস চার্চিলরে নিয়া। উনারে নিজের পার্টির লোকজনই পছন্দ করতো না, উনার বদমেজাজের জন্য। কিন্তু তখন অল-পার্টি গর্ভমেন্ট ফর্ম করা লাগবে, বিরোধীদল কইলো, অরা চার্চিল’রে মানবে; রাজা বা প্রিন্সও খুব একটা রাজি না চার্চিলরে প্রাইম মিনিস্টার বানাইতে। কিন্তু চিপায় পইড়া করা লাগলো।

তো, চার্চিলের যেই ব্যাপারটা ছিল, উনি ক্রুশিয়াল ডিসিশানগুলা নিতে পারতেন; ঠিক বা ভুল, সেইটা তো অই সময়ে বোঝা যায় না এতোটা; কিন্তু ডিসিশান নিতে পারাটা দরকারি। হিটলার যখন ফ্রান্সে অ্যাটাক করলো, উনি পুরা ফোর্স পাঠায়া দিলেন; তখন ড্রানকিকে সব ব্রিটিশ সৈন্য আটকা পড়লো। এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। তার অ্যাডভাইজার কমিটি চাপ দিতে লাগলো, হিটলারের লগে শান্তি-চুক্তি করতে। কিন্তু কঠিন এক ভাষণ দিয়া সেইটা এড়ায়া যান উনি।… মানে, বলতে চাইতেছি, ওয়ার-টাইম বা জরুরি-অবস্থার লিডারশীপ আরেকটা ঘটনা। চার্চিল অইটা পারছিলেন।

আমাদের সরকারে যারা আছেন, ডিসিশান-মেকিং জায়গাগুলাতে যারা আছেন, তারা ডিসিশান না নিতে পাইরা আমাদেরকে বিপদে ফেলতেছেন আরো! তো, আমি মনে করি না যে, একজন চার্চিলের লাইগা আমাদের বইসা থাকতে হবে; বরং গর্ভমেন্ট যখন ডিসিশান নিতে দেরি করে, তখন নিজেদের ডিসিশানগুলা নিজেদেরকে নিতে পারা দরকার। যার যার জায়গা থিকা যার যার নিজের, চারপাশের সেফটির ডিসিশান নেন! এইটা পয়লা ধাপ!

মার্চ ১৯

করোনা ভাইরাস নিয়া চিন্তা করাটা কি ঠিক হবে? এইরকম কিছু জিনিস চোখে পড়ছে। যেমন,

১. বাংলাদেশে রোড অ্যাকসিডেন্টে যত মানুশ মারা যায়, করোনা’তে তো এতো মানুশ মরে না। তো, এইটা নিয়া কথা-বলার, মাতামাতি করার কি আছে… এই সেই।

দেখেন, একটা হইলো অ্যাকসিডেন্ট আর একটা হইলো অসুখ। দুইটা একই জিনিস না। এমনকি, অ্যাকসিডেন্টও অ্যাকসিডেন্ট না আসলে; অনেকদিন আগে সেফটি’র উপ্রে ট্রেনিং নিতে গিয়া জানছিলাম যে, অ্যাকসিডেন্টরেও স্ট্যাটাসটিক্যালি অনুমান করা সম্ভব। কোন ফ্যাক্টরি’তে যদি পর পর ৫টা বা ১০টা ছোটখাট অ্যাকসিডেন্ট হয়, তাইলে বুঝতে হবে, কোথাও কোন সমস্যা হইতেছে সেফটি সিস্টেমে; এরপরে বড় রকমের কোন অ্যাকসিডেন্ট হবে আসলে। মানে, রোড অ্যাকসিডেন্ট (অ্যাকসিডেন্ট না, সিস্টেমেটিক খুন; সিনেমাতেও দেখবেন খুন’রে রোড অ্যাকসিডেন্ট হিসাবে দেখানো হয় 🙂 ) কি কি কারণে হয়, আমরা আন্দাজ করতে পারি তো, কিন্তু সেইগুলা ঠিক করতে পারি না বা পারতেছি না। একইভাবে, আমরা যদি জানি, করোনা ভাইরাস কেমনে ছড়ায়, তাইলে আমরা কেন সাবধান হবো না? রোড অ্যাকসিডেন্টে কোনদিন মারা যাইতে পারবো না বইলা করোনা ভাইরাসেই মরবো?

২. করোনা ভাইরাসে মরার রেট তো খুব কম, ৩% বা খুববেশি হইলে ৬%-৭%. এতো চিন্তার তো কিছু নাই!

পয়লা কথা হইলো, গর্ভমেন্টরে বিশ্বাস কইরেন না। যেই চীন নিজেদের একটা কোন খবর বাইরের দুনিয়ারে জানতে দেয় না, তারা করোনা’য় মরা’র খবর ঠিকঠাক দিতেছে – এইটা কেমনে মনে হইতে পারে আপনার? আর কর্পোরেট মিডিয়া দুনিয়ার সব খবর জানে – এই অ্যাজাম্পশনটাও তো ভুল। বাংলাদেশেই ধরেন, কেউ যদি নিজের বাসায় মারা যায় – সেইটা কেমন জানবেন আপনি? আর এর পার্শিয়াল জানা’টা মিডিয়া সেন্সরশীপের ভিতর দিয়া ঠিকঠাক জাইনাও যাইতেছেন আপনি? এই হোপ তো শশাঙ্ক রিডাম্পশনের চাইতেও বেশি হওয়ার কথা। মানে, মিডিয়ার ইনফরমেশনরে ‘সত্যি’ বইলা গিইলা ফেলার আগে চাবায়া দেখার কথা ভাইবেন একটু।

সেকেন্ডলি, ঠিকাছে, মরতেছে কম; কিন্তু একই সাথে অনেক মানুশ অসুস্থ হওয়াটা সমস্যার জিনিস না! যদি এভেয়ড করতে পারেন, করবেন না কেন?

৩. সবকিছু বন্ধ কইরা দিলে, বিশাল একটা ইকনোমিক ক্রাইসিস শুরু হবে তো! না খায়া আমরা সবাই মারা যাবো না!

আমার এইটা মনেহয় না। মানে, ইকনোমিক ইমপ্যাক্ট তো আছেই, কিন্তু এইটা তো লাইফ লং কোন ঘটনা না! কয়দিন বন্ধ রাখা লাগবে আসলে? বা সবকিছু বন্ধই করা লাগবে কেনো; যদি কাজের প্ল্যানিং করা যায়? কিন্তু যদি করোনা ভাইরাস ছড়ায়া পড়ে, মানুশজন কি কাজ করতে পারবে তখন? মানুশ কি পাওয়া যাবে, কাজকাম করার? বা দরকার কি পড়বে আসলে, কি কাজকাম করবে মানুশজন? মানে, যে কোন মহামারীর ইকনোমিক ইমপ্যাক্ট তো আমরা এভয়েড করতে পারবো না কোনভাবেই; বরং মিনিমাইজ করার ট্রাই করতে পারি।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলা রাইখা কি করবেন, যদি অর্ডারগুলা ক্যান্সেল হয়া যায়? বা নতুন অর্ডার যদি না আসে? তাইলে তো অটো শাট-ডাউনই হয়া যাবে। মানে, ইকনোমিক ইমপ্যাক্ট কি হবে, কেমনে মিনিমাইজ করা যাইতে পারে – সেই চিন্তাটা জরুরি। কোন কোন বিজনেস খোলা থাকবে আর বন্ধ থাকবে… এইসব ডিসিশান নিতে পারটা জরুরি। গর্ভমেন্ট কোন ডিসিশান দেয়ার আগেও নিজেরা ভাবতে পারা আর প্রো-অ্যাক্টিভ হইতে পারাটা বেটার হবে।

আরো কয়েকটা জিনিস আছে, যেইটা নিয়া ডিবেট এখনো চলতেছে; যে টীকা বা ভ্যাকসিন দেয়া বেটার নাকি আমাদের হিউম্যান ইমিউন সিস্টেমের উপ্রে ভরসা করা উচিত? মানে, রিকভারি তো করতেছেন অনেকে। এইসব জায়গায় আমি এক্সপার্টদের অপিনিয়ন খেয়াল করতে চাই।

আসল কথা হইলো, করোনা ভাইরাস ধরা পড়লে আপনি মারা যাইবেন না, কিন্তু নিজে ক্যারি করা শুরু করতেছেন মনে হইলে, অন্যদেরকে গিফট কইরেন না। আর অন্য কারো থিকা করোনা ভাইরাস গিফট নিয়েন না। এইটুক সাবধানতার লাইগা কিছু রুলস ফলো করাটা, এতোটা অসম্ভব কিছু তো না! কিছু অভ্যাস দিয়া আমরা লাইফরে বাইন্ধা রাখছি, এই অভ্যাসগুলাই আমাদের লাইফ না; আর এর বাইরে গেলেই আমরা মারা যাবো না। এইটুক এটলিস্ট কনফার্ম করতে পারি আমি। 

২.

মিডিয়াতে নিউজ না আসলে তো আপনি মরতেও পারবেন না, তাই না?

৩.

কোন কিছু কিনতে পারলে নিজেদেরকে কেন বেশি সেইফ মনেহয়? মানে ধরেন, মাস্ক কিনতে পারলে, স্যানিটাইজার কিনতে পারলে, চাল-ডাল কিনতে পারলে যে মনে হইতে পারে, আমরা মনেহয় এখন একটু সেইফ আছি – এইটা তো মিথ্যা না!

সময় মতো সাবধান হওয়াটা যে জরুরি না – তা না; কিন্তু এই সাবধান হওয়া জিনিসটা বেশিরভাগ সময়ই কেনাকাটার লগে বা পজেশনে লগে রিলিটেডও তো কিছুটা! মানে, কোনকিছু না কিইনা এইরকমের সেইফ ফিলিংসটা কি পাওয়া সম্ভব? যদিও আমরা জানি, এইগুলাই এনাফ না, কিন্তু সাবধান হওয়া বইলা ভাবতে পারি তো মনেহয় আমরা। তো, এইটা কেন হয়?

আমার ধারণা, এক ধরণের ব্যাপার তো আছে যে, আমাদের সাধ্যমতো আমরা ট্রাই করতে চাই। কিন্তু ভুল কইরা আমাদের এই সাধ্য, সামর্থ্য বা ক্যাপাবিলিটিরে ইকনোমিক্যাল টার্মগুলার বাইরে গিয়া খুব কমই ভাবতে পারি মনেহয়। তো, এইটা যদি ঘটনা হয়া থাকে, তাইলে তো ব্যাপারটা একটু ঝামেলারই।

 

মার্চ ২০

করোনা ভাইরাসের ডরে নরমাল হেলথ কেয়ার সিস্টেম ভাইঙ্গা পড়তেছে! করোনা ভাইরাস হওয়া লাগবে না। নরমাল অসুখ হইলেই এখন মারা যাইতে পারবেন। 

২.

কি করা যাইতে পারে? (২)

১৬ তারিখে লিখছিলাম একবার, কি করা দরকার। খুব স্লো হইলেও, ২ আর ৪ নাম্বার পয়েন্ট নিয়া কিছু কাজ হইতেছে মনেহয়। তবে ১ আর ৩ নাম্বার নিয়াও কাজ শুরু করা দরকার। তবে ৫ নাম্বার পয়েন্টটারে আরো স্পেসিফিক করা যাইতে পারে বইলা মনে হইতেছে এখন। (আগের পোস্টটা কমেন্টে দিতেছি।)

মানে, এই জিনিসগুলারে সেকেন্ড ফেইজ হিসাবে ভাবতে পারেন…

১. ফেসবুকে ন্যাশনাল কোন গ্রুপ না কইরা, এলাকা বেসিসে, জেলা, উপজেলা, থানা বা ইউনিয়ন/ওয়ার্ড বেসিসে একেকটা ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করেন।

ইনফরমেশন শেয়ার করেন। যেমন, কে কে বিদেশ থিকা আসছেন নতুন এলাকায়, কার জ্বর কাশি আছে, তারা যেন বাড়িতে থাকেন, কম ঘুরা ফিরা করেন, কয়েকদিন। ৫ দিনের বেশি কাদের এই সিমটম দেখা দিছে, তারা জানান গ্রুপে। তাদেরকে কোন একটা জায়গায় আলাদা রাখেন। সরকারি অফিসার, ডাক্তারদেরকে জানান। এইরকম।

এই করোনার ডরে নরমাল হেলদকেয়ারে ঝামেলা হইতে পারে। এলাকার বয়স্ক, অসুস্থদের লিস্ট কইরা অষুধ, ডাক্তারি সেবা যাতে পাইতে পারে, সেইসব নিয়া ভাবতে পারেন।

ফুড সাপ্লাই বা ডেইলি নিডের জিনিসপাতি যাতে অ্যাভেইলবল থাকে, এইসব নিয়াও কোন ইনিশিয়েটিভ নিতে পারেন। একটা কমিউনিটি হিসাবে অ্যাক্ট করার স্পেইস তৈরি করেন।

২. মোবাইল ফোনে স্কুল শুরু করতে পারেন স্কুল, কলেজের টিচাররা।

বাচ্চাদের বাসায় রাখা নিয়া ঝামেলা কথা শুরু হইতেছে অলরেডি। মোবাইল ফোন তো চালু আছে, তো, ডেইলি না হইলেও উইকলি বা সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন বাচ্চাদের ফোন কইরা ৫মিনিটের ক্লাস নিতে পারেন।

গর্ভমেন্ট বা মোবাইল কোম্পানিগুলাও হেল্প করতে পারে। মানে, যারা টিচার আছেন, উনারা আরো ভালোভাবে জিনিসটা নিয়া ভাবতে পারেন তো!

আমার ধারণা, দুয়েকটা স্কুল শুরু করলেই, ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বেসিসে সব প্রাইমারি, হাইস্কুল, মাদ্রাসার লাইগা মোটামুটি কমন একটা পদ্ধতি বাইর করতে পারার কথা।

৩. কোন জিনিস বন্ধ রাখা যায় আর কোন জিনিস খোলা রাখা জরুরি, তার লিস্ট করেন। যে কোন উপায়ে জরুরি কাজকামগুলা চালু রাখতে হবে। আর যেই কাজগুলাতে কোন রিস্ক নাই বা কম, সেইগুলা কন্টিনিউ করতে পারতে হবে।

মানে, আমরা তো ধরে নিছি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে যাওয়া, অফিস করা, আড্ডা দেয়া, ঘুরাফিরা… এইগুলা হইতেছে নরমাল কাজ। তো, এইসব নরমালিটিরে কিছুটা রিভাইজ কইরা লেস রিস্কি আর মোর এফেক্টিভ করার টুলগুলার কথা এখন ধীরে ধীরে ভাবতে পারাটা মনেহয় দরকার।


মার্চ ২২

করোনা ভাইরাসের ঘটনা’তে যেই জিনিসটা আরো স্পষ্ট হইলো, সেইটা হইতেছে, কোন রাষ্ট্রই তার পাবলিকরে নিয়া চিন্তা করে না। দেখেন, অলমোস্ট কোন রাষ্ট্র-ই আগে থিকা কোন অ্যাকশন নেয় নাই।

একটা হইলো, ভাইরাস’টারে পাত্তা না দেয়া, যে, ধুর! এইটা কিছু না! – একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল মানুশ এইরকম মনে করতে পারে; কিন্তু রাষ্ট্র, একটা ইন্সিটিটিউশন যখন এইরকম ভাবে, তার মানে হইতেছে, এইটা পারফর্ম করতেছে পারতেছে না আসলে এর রেসপন্সিবিলিটিগুলা। এইটা ঠিক ‘দূরদর্শিতার’ ব্যাপার না; মানে, যদি ভাবেন, রাষ্ট্রের বেসিক কাজ’টা কি? তার পিপলদেরকে বাঁচানো-ই তো; খাওয়ানো, পড়ানো তো পরের কথা; কিন্তু এই বাঁচানোর কাজটা করার কথা কি ভাবছে কোন রাষ্ট্র, বা কট্টুক করতেছে, বা পারতেছে?

রাষ্ট্রের চিন্তা-ভাবনা-কাজকামের সেন্টারে এর পাবলিক’রা নাই আর। একটা বুরোক্রেসি, যেইটা তারে চালায়, তারই একটা ইন্সিটিটিউশন এইটা, জাস্ট পাওয়ারফুল একটা ইন্সিটিটিউশন। এইটা যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারি, ততই বেটার মনেহয়।

 

মার্চ ২৩

পিপল তো প্যানিকড হওয়ার লাইগা বইসা রইছে। 🙁 মাথায় বারুদ নিয়া ঘুরতেছে; কোথাও একটু আগুনের লাগাল পাইলেই ছ্যাঁৎ কইরা উঠতেছে, জ্বইলা উঠতে চাইতেছে, ডরাইতেছে।

পাবলিকের দোষ নাই। গুজবের কারণে এইটা হইতেছে না। এইটা হইতেছে মানুশ জানতে পারতেছে না বইলা। যেইটাই ঘটতেছে, মানুশরে জানতে দেন, প্যানিক কম হবে।

বাংলার মানুশ বাঁচতে চায়! বাংলার মানুশ জানতে চায়! কোন কোন জায়গা সেইফ না আগে থিকাই জানান, বন্ধ করে দেন!

সরকারি ঘোষণার লাইগা বইসা থাইকেন না। টিভি নিউজের লাইগা ওয়েট কইরেন না। এক একটা প্রতিষ্ঠানে, এলাকায় নিজেরা একসাথে হয়া লজিক্যাল ডিসিশান নেন।

ওয়ার্ল্ড আপডেট ভালো জিনিস; কিন্তু আলাদা কইরা বাংলাদেশের আপডেট থাকলে মনেহয় ভালো হইতো। মানে, বাংলাদেশের ডিভিশন-ওয়াইজ, জেলা-ওয়াইজ বা শহরের এলাকা বেসিসে কোন ডাটা। বেসিক কয়েকটা জিনিস –

১. কয়জনের টেস্ট করা হইছে – টোটাল, আর আজকে।
২. কয়জনের ধরা পড়ছে – টোটাল, আর আজকে।
৩. কয়জন মারা গেছে – টোটাল, আর আজকে।

৪. কোন কোন এলাকা বা শহরে কোয়ারেনটাইনে থাকা মানুশদের টেস্ট করা হইছে, আর করা হয় নাই।
৫. কোন কোন এলাকা বা শহরে রোগী পাওয়া গেছে।

মুশকিল হইলো, এইটা তো কর্পোরেট মিডিয়ার নিউজগুলারই একটা কম্পাইলেশন। অইখানেই ইনফরমেশনগুলা নাই। কিন্তু যতটুকই পাওয়া যায়, জানতে আর জানাইতে পারলে বেটার।


মার্চ ২৪

ইতালি’তে কতোজন মারা যাইতেছে, আম্রিকার অবস্থা ভালো না, চীন কতোজনের মারা যাওয়ার খবর লুকাইছে – এইসব যে আমরা জানতে পারতেছি, ভালো জিনিস এইটা।

কিন্তু আরো ভালো হইতো, যদি আমরা জানতে পারতাম বাংলাদেশে কোন জেলায় কয়জন মারা গেছে, কয়জনরে টেস্ট করা হইছে, কয়জনের স্যাম্পল পাঠানো হইছে, কয়জনরে আলাদা রাখা হইছে – এইসব জিনিসগুলা। আর এইগুলা শেয়ার করতে পারলে নিজেদের মধ্যে সাবধান হওয়ার চেষ্টাটাও আরো বাড়তো মনেহয়। কারণ, ইতালি, আম্রিকা, স্পেন… এইগুলা তো অনেক দূরের ঘটনা! ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট, রংপুরের ব্যাপার তো না! 🙂

কিন্তু মুশকিল হইলো, এইরকম লোকাল ইনফরমেশনগুলা তো কপি-পেস্ট কইরা পাইয়া যাওয়ার জিনিস না। 🙁 একটা সিস্টেম দাঁড়া করায়া ইনফরমেশন কালেক্ট করা, যাচাই করা, অ্যানালাইসিস করা – এইটা কখনো তো করি নাই আমরা! কিন্তু এখন কিছুটা হইলেও চেষ্টা করতে পারেন তো মনেহয়, ছাত্র-সংগঠন, রিসার্চ-ফার্ম, সরকারি ডাক্তার, পত্রিকা-অফিস বা নিউজ-মিডিয়াগুলা; আলাদা আলাদা না কইরা একরকমের কোলাবরেশনের ভিতর দিয়া।

 

মার্চ ২৫

কয়জন মারা গেছে, কয়জন শনাক্ত হইছে; এইসবের চাইতে জরুরি হইতেছে, কয়জনরে টেস্ট করা হইলো। সেইটা আগে বলেন!

এই লিংকটা দেখেন। জিনিসটা ভালো। কিন্তু টেস্টের কোন আপডেট নাই।

http://corona.gov.bd/

২.

সবকিছুই হইতেছে, হবে। উনার কথায় ‘সেন্স অফ আর্জেন্সি’টাই নাই।

 

মার্চ ২৭

গতকালকে আমাদের বিল্ডিংয়ে একজন মারা গেলেন। বয়স্ক মহিলা। আমাদের ঠিক নিচের ফ্লোরেই থাকতেন। বয়স হইছিল। আগে থিকাই অসুস্থ ছিলেন। হসপিটালে ছিলেন। অইখানেই মারা গেছেন, সন্ধ্যাবেলা।

রাতে, এশার নামাজের পরে জানাজা পড়তে নামলাম নিচে। দেখলাম, মসজিদে এশার নামাজ পড়তেছেন ২৫/৩০ জন লোক। কাছাকাছি দাঁড়ায়াই, অইরকম কোন ডিসট্যান্স মেইনটেইন কইরা না। তারপরে জানাজা পড়াইতে যিনি আসলেন, উনার কথাতে বুঝলাম, কেন এই ঘটনা। উনি বললেন, এই ভাইরাস আল্লার জিনিস, আল্লা দিছেন, উনি নিয়া যাবেন; এইটা মুসলমানদের জন্য রহমত। কালকে যেন সবাই জুম্মা পড়তে অবশ্যই মসজিদে আসেন। এইসব। তো, জানাজা পইড়া চইলা আসছি বাসায়। ভাবলাম, যে যার মতো কইরা দুনিয়ারে ব্যাখ্যা কইরা যাইতেছি আমরা। কার কি দোষ!

মরণ এতো কাছাকাছি চইলা আসছে! গত বছরও পিয়াল ভাই এইসময়টাতে মারা গেছিলেন। প্রতিবছরই এখন পরিচিত কেউ না কেউ হয়তো মারা যাবে। জীবন নিয়া বা মরণ নিয়া আমার পারসোনালি আফসোসের কিছু নাই। কিন্তু এখনকার সময়ে সামান্য অসুখ-বিসুখ হইলেও বিপদ। আর ভাবতেছিলাম, যাদের কেউ না কেউ মারা যাইতেছে তারা হয়তো আহাজারিও করতে পারতেছেন না এখন, ঠিকঠাক মতন।

 

মার্চ ২৮

ফেসবুকে আমাদের আরবান সমাজ দেখলাম খুবই চিন্তিত, মানুশজন বাড়িতে থাকতেছে না। কামাই রোজগার করার লাইগা বাইর হইলে ঠিকাছে, কিন্তু মসজিদে চইলা যাইতেছে, পাড়ার দোকানে বইসা আড্ডা দিতে চাইতেছে। এইসব।

তো, আমার কাছে মনে হইছে, কেন করবে না?

মাইনশে খবরে দেখে ইতালিতে, স্পেনে মানুশ মরতেছে। চীনে কি হইতেছে, আম্রিকা কি করতেছে…। বাংলাদেশে তো রোগ ধরাও পড়ে নাই তেমন, মারাও যাইতেছে না কেউ! তো, মানুশ কেন বাড়িতে বইসা থাকবে, খামাখা?

 

মার্চ ২৯

শেষমেশ একটা ইনফরমেশন পাওয়া গেলো।
Covid-19 এর হটলাইনগুলাতে ফোন করছিল, ৮ লাখ লোক।
IEDCR ফোন রিসিভ করছে ৭০ হাজার।
৯১.২% কল ধরা হয় নাই।
(ফোন করা আর রিসিভ করা নিয়া পাওয়া ডাটা অনুযায়ী।)

এর মধ্যে টেস্ট করছে ১১০০ জনের।
যা কল রিসিভ করছে, তার ৯৯% টেস্ট করে নাই।

আর এর থিকা পজিটিভ পাইছে ৪৮ জনের। তো, এই ৪৮ নাম্বারটারে হাইলাইট না কইরা আগের নাম্বারগুলা কথা একটু বলেন, বেশি কইরা। দুনিয়াতে উত্তর কোরিয়া আর বাংলাদেশের যে একইরকম অবস্থা। সেইটা দিনে দিনে আরো ক্লিয়ার হওয়ার কথা।

https://tbsnews.net/coronavirus-chronicle/coronavirus-bangladesh/disturbing-curve-ahead-62299?fbclid=IwAR1leiisqQrP4-uF15acmQ5wWeaJEM2PTTWUu1jBGmR7CFSk7fCea9o1ic0

২.

ফুসফুসজনিত জটিলতায় মার্চের ১১ তারিখ থিকা কতো জন মারা গেছেন, তার হিসাব রাখা হইতেছে, এই জায়গায়।

সব হিসাব যে এইখানে আছে, তা না। যা দেখলাম, দুইটা সোর্স থিকা ডাটা কালেক্ট করা হইতেছে। এক, নিউজপোর্টাল থিকা নেয়া নিউজগুলার কম্পাইলেশন। দুই, কেউ যদি ডিটেইল তথ্য জানান। মানে, এক ধরণের কম্পাইলেশন হইতেছে এইখানে। কারা করতেছেন, আমি জানি না।

আমার ধারণা, মিডিয়া বা ডাটা নিয়া যারা কাজ করেন, আরো বেটার কিছু করতে পারবেন। ডাটা কালেকশন প্রসেসটারে কেমনে আরো বেটার হইতে পারে, বা সঠিক হইতে পারে, এইসব কিছু।… কিন্তু পাবলিক ইনফরমেশনের বেসিসে একটা শেয়ারিংয়ের জায়গা তৈরি করাটা, শুরু হওয়াটা দরকারি একটা জিনিস।

https://projectpulmonary.live/?fbclid=IwAR0EYcmBTWgFzYBkuz_BzDo3gvQ2ZeYGW1gSDWHLWhatTAHneepLgb781qM

 

মার্চ ৩০

এই ঘটনারে কন্সপিরেসি থিওরি দিয়া বুঝতে গেলে ভুলই হবে।

কারণ, ব্যাপারটা এইরকম না যে, কোন এক গোপন উদ্দেশ্যে কেরু কোম্পানির এমডিরে বদলি করা হইছে, বরং “আমরা যখন কেউ কিছু করতেছি না, তুমি আগ বাড়ায়া কিছু করতে গেছো ক্যান! কুত্তায় কামড়াইছে!“ এইরকম একটা জায়গা থিকা ঘটছে, এবং ঘটতেছে বইলাই আমার ধারণা। তো, কুত্তা যেহেতু কামড়ায় নাই, যারা এইটা ভাবছিলেন, তারা পোয়েটিক একটা কুত্তার কামড় দিছেন তারে! বদলি কইরা দিছেন।

গর্ভমেন্টের দিক থিকা যখন স্ট্রাটেজিটা হইতেছে, কোন আর্জেন্সি শো না করা, তখন কোন সরকারি অফিসার যখন আর্জেন্সি দেখাইতে চান, সেইটা তো ক্রাইমই একটা!

তো, মেসেজটা ক্লিয়ার। কিছু করতে চাইলে, পারসোনালি দান খয়রাত করেন! নামাজ রোজা করেন, আল্লারে ডাকেন। সরকাররে বিপদে ফেলবেন না!

 

মার্চ ৩১

Mishu‘র মেইন আর্গুমেন্টটা হইতেছে, বাংলাদেশের গর্ভমেন্ট এই বায়োপলিটিক্যাল রেসিজম দিয়া করোনা নিয়া যে কোন স্টেপ নিতেছে না, সেইটারে আড়াল করতেছে। সত্যি কথা এইটা, যে এইরকম কারো ঘাড়ে দোষ চাপায়া দিতে পারলে সুবিধা। এইটা হইছেও।

কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করবেন, কোন রোগরে আমাদের সোসাইটিতে খালি রোগ হিসাবে দেখার অভ্যাসও নাই। যেমন, পাপীদের কুষ্ঠ হয়! রোগ খালি রোগ না, কোন পাপও। নিশ্চয় আপনি কোন দোষ করছেন, বাজে কাজ করছেন, তা নাইলে আপনার রোগ হবে কেনো! মিশু যে রোগরে একটা রোগ হিসাবে দেখছেন এবং দেখতে চাইতেছেন, এইটা রেশনাল একটা এক্সপেক্টশন, সোশ্যাল সাইকিতে এইটা একইরকম না মনেহয়।…

একদম পারসোনাল জায়গাগুলাতেও দেখেন, জ্বর বাঁধাইছোস, নিশ্চয় রইদে ঘুরছোস, এইরকম, রোগ জিনিসটা কোন একটা অপরাধের লগে রিলেটেড একটা জিনিস। মানে, আমি বলতেছি না, রেসিয়াল হওয়াটা জাস্টিফাইড একটা ঘটনা, বরং এই জিনিসগুলারে পলিটিক্যালি যখন ইউজ করা হয়, তখন রেশনাল হওয়ার এক্সপেক্টশনটা এই প্রভোকেশনগুলারে এড়ানোর জন্য এনাফ জাস্টিফিকেশন দেখাইতে পারার কথা না।

এই জায়গাতে, আমি পিয়াল ভাইয়ের পুরান একটা লেখার রেফারেন্স রাখতে চাই। লেখাটার লিংক কমেন্টে দিতেছি। পিয়াল ভাই একদিন কথায় কথায় কইতেছিলেন, আপনাদের ফুকো দিয়া আমাদের পাগলামি ধরতে পারবেন না আপনি! 🙂 আমি কইছিলাম, আপনি তো ফুকোর লগে কাইজ্জা করতেই নামলেন না। ফুকোর ইউরোপিয়ান পাগলের লগে আমাদের দেশের পাগলের মিলে না, অনেক গ্রামে পাগলরে আদরই করা হয়, ভাবা হয়, তার লগে স্পেশাল একটা কিছু ঘটছে, সে ত্যাজ্য না, বরং প্রতিটা গ্রামে দুয়েকজন পাগল না থাকাটা অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এইরকম।

তো, রোগ বা মেডিকেল সায়েন্সের ঘটনাটাও, একটা রেশনাল পারসপেক্টিভ থিকা দেখাটা যে ঠিক না, তা না। আমাদের এইরকমের দেখাদেখিটারে, অবজেক্টিভের বিপরীতে সাবজেক্টিভ বলবো না, বরং ইনক্লুসিভ। রোগটা না খালি, ব্যক্তিটাও আছেন। তো, শর্ট রানে এই চিন্তার জায়গাটারে বাজেভাবে ইউজ করা সম্ভব বায়োপলিটিক্স দিয়া, একটা রেসিয়াল জায়গাটাতে নিয়া গিয়া। কিন্তু এই চিন্তারে যদি আপনি ফলো করেন, লং রানে এইটা একটা রোগ না যারে সারাইতে হবে, এইটা ব্যক্তিরে ফোকাস করে, যারে রোগী হওয়া থিকা বাঁচাইতে হবে।

The bio-politics of COVID-19 and a new kind of racism

 

২.

ফেসবুকে একজন বলতেছিলেন, করোনা নিয়া এতো কথা কইতেছি আমরা, এখন লোকজন কম মরলে তো মান ইজ্জত থাকবো না, এইরকম।  তো, লোকজন কম মরলে বা না মরলে আমি খুশি হবো বরং।

কিন্তু আমার সন্দেহ হইতেছে, লোকজন যে মরতেছে না তেমন, এই আনন্দে আমরা ঘরের বাইর হইতে শুরু করবো কয়েকদিন ভিতর। তারপর কিছু লোক মরা শুরু করলে, পারমানেন্টলি ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারবো আবার। তো, এইরকম হইলে, ব্যাপারটা বাজেই হবে। যে, লোকজন না মরলে বা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবো না! আর পুরাপুরি ফ্রিডম দরকার আমাদের, তা নাইলে টোটাল কলাপ্স, কিন্তু আগামী ৩ মাস বা ৬ মাসের জন্য কোন সিস্টেমের কথা যে ভাবতে পারতেছি না, এইটাই মেইন অবস্টেকল।…

আরেকটা জিনিস হইতেছে, যতই দিন যাবে, আমরা যত অসহায় হইতে থাকবো, কন্সপিরেসি থিওরির উপ্রে বিশ্বাস মনেহয় বাড়তে শুরু করবে। তো, কন্সপিরেসি থিওরিগুলা সত্যি কি মিথ্যা, তার চাইতে এর বড় ইমপ্লিকেশন হইতেছে, আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, আমাদের নিজেদের তো করার কিছু নাই! আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার, অসহায়! অসহায়ত্ব তো বাড়তে থাকবেই, এইটা সবাই আমরা বুঝতেছি। কিন্তু কি করতে হবে, এইটা তেমন একটা আন্দাজ করতে পারতেছি না মনেহয়। 

 

এপ্রিল ১

Jared Diamond একটা লেকচারে কইতেছিলেন, বুড়া লোকজন কি রকমের বাতিল মাল আম্রিকান সোসাইটিতে। হাসপাতালগুলাতেও এইরকম নিয়ম আছে, এর্মাজেন্সি টাইমে বয়স যাদের কম তাদেরকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। টেকনোলজি এতো দ্রুত চেইঞ্জ হইতেছে যে, টিভি রিমোট চালাইতে এখন উনাদের কষ্ট হয়, সত্তর বছরের উপ্রে যাদের বয়স। নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপণ কোন ভিজ্যুয়ালেই বুড়াদেরকে পাইবেন না তেমন। উনারা থাকলেও আসলে নাই। বুড়া হইতে হবে, এইটা মোটামুটি ভয়ের একটা ব্যাপার হওয়ার কথা, সোসাইটিতে এখন।

খালি আম্রিকান না, অন্য সোসাইটিগুলাতেও বুড়া লোকজনরে বার্ডেনই ভাবি আমরা। বয়সের কারণে উনারা অনেক জানেন, এইটা তো ভ্যালিড না আর তেমন, কারণ বই পইড়া তো জানতেই পারি আমরা, আগের জিনিসপত্র। কিন্তু ডায়মন্ড একটা কথা কইতেছিলেন, যে গ্রেট ডিপ্রেশনের সময়টা কি রকম ছিল, এইটা কিন্তু এই বুড়ারাই জানেন। সোসাইটির ক্রুশিয়াল টাইমগুলাতে বুড়া লোকজন মেবি দরকারি হয়া উঠতে পারেন।

আমার মনেহয়, আমাদের প্রডাকশন অরিয়েন্টেড সোসাইটিতে, আমরা যেইভাবে একটা এক্সক্লুশনের তরিকাতে চলতেছি, সেইটাই ভয়ংকর। এফিশিয়েন্ট হওয়ার একটা তাগিদের ভিতর থাকতেছি সবসময়। দরকার আর অদরকারের বেসিসে বাছাই করতে চাইতেছি। এই জিনিসটা সবসময় কাজ করার কথা না। মানে, যেইভাবে দরকার আর অদরকাররে ডিফাইন করতে থাকি আমরা।…

২.

যেই গর্ভমেন্ট পাবলিকের ভোটে ইলেক্টেট হয় নাই, তারে নিয়া সবচে বেশি রিস্কটা হইতেছে যে, পপুলার হইতে চায়। এই আওয়ামী লীগ গর্ভমেন্টও ক্রুশিয়ার ডিসিশানগুলা নিতে পারবে না আসলে, বরং পপুলার কাজকামই করতে চাইবে আরো। সেইটার রেজাল্ট আরো ভয়াবহই হওয়ার কথা।

ইকনোমিক অ্যাক্টিভিটি যদি বন্ধ থাকে, দান খয়রাত দিয়া লোকজন কয়দিন চলতে পারবে! ফেসবুকে আজকে একটা পোস্ট দেখলাম একটা নিন্মমধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একজন বলতেছেন, তার বাপের চালডাল নেয়ার ছবি নিয়া।… মানে, ১ মাসও হয় নাই এখনো, যদি মিনিমাম ৩ মাসও এই অবস্থাটা থাকে, কি হবে তাইলে!

গার্মেন্টস বন্ধ, রেমিটেন্স বন্ধ, লোকাল কোম্পানিগুলাও বন্ধ… পাবলিকের ইনকাম কই থিকা আসবে! কোন প্রিডিকশন নাই, প্ল্যান নাই, কোন আলাপও নাই! যেইরকম দেশে কোন করোনা ভাইরাসের রোগী নাই!

মিনিমাম ৩ মাস, ৬ মাস বা ১ বছরের একটা প্ল্যান তো করা দরকার, ইমপ্লিমেন্ট করেন বা না করেন। কোন আলাপই নাই! একটা এমার্জেন্সি গর্ভমেন্ট দরকার, একটা এমার্জেন্সি ইকনোমিক প্ল্যান। পলিটিক্যাল কোন স্টেপই নাই।

মিলিটারি নামায়া দিয়া ক্ষমতা ধইরা রাখা যাবে, কিন্তু পরিস্থিতির কোন সমাধান হবে না, কখনোই। পাবলিকরে খাবার দিবার নাম কইরা গর্ভমেন্ট যদি মজুদ বাড়াইতে শুরু করে, সেইটা হবে আরেকটা দুর্ভিক্ষের শুরু। মানে, ফেসবুকে লাইক পাওয়ার মতন কাজকাম গর্ভমেন্ট যত কম করে, তত বেটার।

 

এপ্রিল ২

করোনা ভাইরাসের এই ছবিটা তো এখন খুবই হিট। জাস্ট মনে হইতেছিল, এইটা কিন্তু করোনা ভাইরাস না। একটা আর্ট। কিছু ইনফরমেশন নিয়া ছবিটা বানানো হইছে। যেইটারে করোনা ভাইরাস বইলা দেখতেছি আমরা। আবার মিথ্যাও না কিন্তু। বলা যাইতে পারে, সায়েন্টিফিক আর্ট। হলিউডের ‘বেইজড অন অ্যা ট্রু স্টোরি’র সিনেমার মতন! 🙂

কাহিনিটা পড়তে পারেন, এইখানে

 

এপ্রিল ৩

ধর্ম কিভাবে রেজিসট্যান্সের কাজ করে, দেখেন! কয়দিন আগে একজনের সাথে কথা হইতেছিল, সে বলতেছিল, এলাকার মসজিদে নামাজ পড়ার লোকের সংখ্যা বাইড়া গেছে।

এইটারে, বিপদের দিনে লোকজন আল্লাবিল্লা করা বাড়ায়া দেয়, এইরকম সাইকোলজিক্যাল জায়গা থিকা তো দেখতেই পারেন, কিন্তু পলিটিক্যাল জায়গা থিকাও দেখেন। এখন বাজারে যাওয়ার নাম কইরাও আপনারে ঘরের বাইর হইতে দিবে না, অফিসে যাওয়ার হেনস্তা তো দেখছেনই ফেসবুকে, গতকালকে। কিন্তু আপনাদের কি মনেহয়, আজকে জুম্মার নামাজ পড়ার কথা বইলা যদি বাইর হন, আপনারে আটকানোর মতন হিম্মত পুলিশ বা এই রাষ্ট্রের হবে?

ব্রিটিশ আমলেও, বা এই অঞ্চলে রাষ্ট্রের ফর্মেশনের শুরুতে যে ধর্মভিত্তিক আন্দোলনগুলা সম্ভব হইছিল, সেইখানেও ধর্মের আধ্যাত্মিকতা বা অন্য জিনিসের চাইতে, এই রেজিসটেন্সের ফর্মটারে প্রায়োরিটি দিয়া ভাবতে পারাটা দরকার। আর এখন যখন রাষ্ট্র ফাংশন করতে পারতেছে না, তখন ধর্ম একটা অপশন হিসাবে হাজির হইতেছে। কারণ, রাষ্ট্র আপনার পারসোনাল লাইফটারে সিকিওর তো করেই না, উল্টা কব্জা করতে চায়। কিন্তু ধর্ম এমন একটা জায়গা, যেইখানে রাষ্ট্রের এখতিয়ার নাই, সেক্যুলার রাষ্ট্রে ব্যক্তির পারসোনাল স্পেইস একটা। এইটা রাষ্ট্রের খবরদারির সীমানা। যদিও এইরকম অনেক সীমানাই মানে না রাষ্ট্র, বিপ্লবীদের মতো আউলায়া ফেলতে চায়। 

তো, আজকে, এই শুক্রবারে, লোকজন যে মসজিদে যাবে, এইটা খালি ধর্ম মানতে না; রাষ্ট্ররে না মানতে চাওয়ার একটা ঘটনাও এইখানে আছে।

২.
এখন লোকজন যে নামাজ পড়ার লাইগা মসজিদে যাইতেছে, এইটা খুব ঠিক কাজ হইতেছে, এইটা আমার পজিশন না। কিন্তু পাবলিক আইন শৃংখলা মানতেছে না, সিচুয়েশনটা বুঝতেছে না – এই জায়গা থিকা দেইখেন না, বরং পাবলিক কেন গর্ভমেন্টের কথায় বিশ্বাস করবে? – এই জায়গাটা থিকা ভাবতে পারেন।

এই গর্ভমেন্ট ক্ষমতায় আসছে পুলিশ, মিলিটারি আর সরকারি কর্মচারীদের দিয়া। এরাই এই গর্ভমেন্টরে টিকায়া রাখছে। তো, যখন বিপদ শুরু হবে, এদেরকেই তো আগে বাঁচাবে সরকার। পাবলিক ভোট দিয়া এই গর্ভমেন্ট বানায় নাই। পাবলিকরে বাঁচানোর কোন দায়ও এই গর্ভমেন্টের নাই। পুলিশ, মিলিটারি দিয়া যেই পাবলিকরে আজকে দাবড়ানি দিতেছে, কয়দিন পরে, অবস্থা আরো খারাপ হইলে দেখবেন এই মিলিটারি পুলিশরাই সরকারি কর্মচারিদের অফিস, বাসা পাহারা দিতেছে।

তো, এখন পাবলিক তাইলে কি করবে? গর্ভমেন্টের কথা বিশ্বাস কইরা বাসায় বইসা থাকবে, কখন সরকারি বা বেসরকারি দানখয়রাতের পুটলা বাসায় পৌঁছাবে? বা এইরকম নামাজ পড়ার নাম কইরা একটু পরে পরে বাইর হয়া যাওয়ার রেজিসট্যান্স দেখাবে? ব্যাপারটা এই জায়গাটাতেই থাইমা থাকবে না আর কি!

এইরকম লকডাউনের ভিতর দিয়া রাষ্ট্র যে খালি করোনা ভাইরাস ঠেকাইতে চায়, এইটাই না, তার ক্ষমতাও যে ধইরা রাখতে চায়, না পারাটারেও যে ঢাইকা রাখতে চায়, এইটাও তো বুঝতে পারি আমরা। যার ফলে এই আনঅফিশিয়াল লকডাউন সিস্টেমটাও বেশিদিন চালু থাকতে পারবে না।

রাষ্ট্রের দিক থিকা নতুন কোন চাতুরি লাগবে, আর পাবলিকের দিক থিকা নতুন নতুন রেজিসট্যান্স।

 

এপ্রিল ৪

এইটা ভালো একটা ইনিশিয়েটিভ। একটা কমিউনিটি স্পেইস তৈরি করেন! এলাকার ডাক্তার, সরকারি লোকজন, স্টুডেন্ট, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সবাইরে নেন!

https://www.corona.amadersherpur.com/?fbclid=IwAR0XqFZsJ7vOZhBvVRx6rxBLVJbN-niyfs-FSvvjo7liYZ-5DqRmIO9krEQ

দেখেন, শেরপুরে ট্রাই করতে পারতেছে লোকজন, মিরপুরে পারে নাই! মানে, ইতালি, স্পেন নিয়া তো চিন্তা করবেনই… কিন্তু সুপারম্যান হয়া দুনিয়া বাঁচানোর দরকার নাই। হিরোগিরিরও দরকার নাই। ছোট ছোট কাজগুলা করতে পারা দরকার।

কমিউনিটি স্পেইস তৈরি করার আগে, ঠিক করেন কি কি কাজ করবেন?
১. যাদের ইনকাম নাই, তাদের লিস্ট করবেন, খাবার দিবেন।
২. যারা অসুস্থ, তাদের নরমাল মেডিকেল সার্ভিস দিবেন।
৩. করোনার সিমটম যাদের আছে, তাদের আলাদা একটা জায়গায় রাখবেন।
৪…..
৫…

খুববেশি কিছু করার দরকার নাই। পাঁচ সাতটা কাজ করলেই দেখবেন, প্যানিক কমতে শুরু করতেছে।

কিভাবে নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য করবেন?
১. টাকা পয়সার হিসাব রাখবেন।
২. ডাটা মেইনমেইন করবেন।
৩. কি কি রিকোয়ারমেন্ট, স্পেসিফিক্যালি জানবেন, জানাবেন
৪…..
৫…

মানে, একটা কমিউনিটি স্পেইস যদি তৈরি করা যায়, এফেক্টিভ করা যায়, এর চাইতে বড় ভরসার কিছু হইতে পারে না আসলে!

২.

কি করা যাইতে পারে? (৩)

এইরকম অবস্থায় কি করা যাইতে পারে, এইটা নিয়া তো অনেকেই ভাবতেছেন, কথা বলতেছেন। আমিও কিছু জিনিস ভাবছিলাম আর বলছিলাম মার্চের ১৬ তারিখে আর ২০ তারিখে। এখন এইগুলার সাথে আর একটা কথা বইলা আসলে আমার কথা শেষ করতে চাই।

৯. আলাদা আলাদা কইরা দেখলে করোনা সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে না। একটা প্রসেসের ভিতর দিয়া যাইতে হবে। মেইনলি ৩টা টাইম ফ্রেমে ভাগ কইরা ভাবতে পারলে বেটার।

একটা হইতেছে, করোনা ভাইরাসের এই মহামারী কতোদিন পর্যন্ত চলতে পারে? আমরা এখনো জানি না। জানি না বইলাই ডরাইতেছি আরো বেশি। কিন্তু একটা প্রেডিকশন করতে পারাটা জরুরি। ৩ মাস? ৬ মাস? বা ১৮ মাস? যেইটাই হোক, পাবলিক হেলথস্পেশালিস্টদের মতামত নিয়া এই টাইমলাইনটা প্রেডিক্ট কইরা কিছু স্টেপ নিয়া জরুরি, যে যতদিন করোনার মহামারী চলবে, কিভাবে চলবো আমরা। দুনিয়ার কোন দেশের গর্ভমেন্টই মনেহয় এইটা শুরু করতে পারে নাই। না পারার একটা মেজর কারণ হইতেছে, জাতীয় সরকার টাইপের কিছু গঠন করা শুরু করে নাই এখনো। যদি ৩ মাসের বেশি চলে, তাইলেই এইটার দরকার হবে। রাষ্ট্র কেমনে চলবে, ইকনোমি কেমন চলবে… একটা নতুন গাইডলাইন লাগবে এই ৩ মাস, ৬ মাস বা ১৮ মাসের জন্য। কতো জন মানুশের খাবার লাগবে, কতো খাবার লাগবে, কি কি প্রডাকশন চালু রাখতে হবে, কেমনে রাখতে হবে, ডিস্ট্রিবিউশন কেমনে হবে, এই সমস্ত ডিটেইলস।

মুশকিল হইলো, এই গাইডলাইন যদি টু মাচ অথরেটেরিয়ান হয়া উঠে, ভালোর চাইতে অবস্থা আরো খারাপ হবে তখন। কারণ আজকে একটা খবরে দেখলাম বলতেছে, দানখয়রাত করতে হইলে আগে থানায় জানায়া নিতে হবে! তো, এইরকমের নিয়ন্ত্রণ বা অবস্টেকলের চাইতে আরো রিয়ালিস্টিক কোন পদ্ধতি বাইর করা দরকার। ৬ নাম্বার পয়েন্টে যেই কমিউনিটি স্পেইস তৈরি করার কথা কইছি, সেই আইডিয়াটারে আরো ইলাবরেট করা যাইতে পারে।

সেকেন্ড জিনিস হইলো, রিকভারি বা বিল্ডিং পিরিয়ডের প্ল্যান করা। কি কি ইমপ্যাক্ট হবে, আর সেইগুলা কেমনে ঠিক করবো আমরা।

মানুশ তো মারা যাইতেছে, বা যাবেও আরো। যারা বাঁইচা থাকবেন তাদের ইনকাম কইমা যাবে, বা থাকবে না। মানসিকভাবে ভাইঙ্গা পড়বেন। দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক মন্দ… এইসব যাতে না ঘটে, কিভাবে ঠেকাবো আমরা, সেইগুলা ঠিক করা। এইটা আলাদা আলাদাভাবে হবে না। আপনি একলা যেমন বাঁচতে পারবে না, একটা দেশের জন্য পারাটা টাফ হওয়ার কথা। যারা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কানেক্টেড, কোন একটা ফোরামের ভিতর দিয়া চিন্তাটা শুরু করা দরকার। করোনা স্প্রেডের উপর ডিপেন্ড কইরা এইটা মেবি দুই চাইর বছরের একটা প্ল্যান হইতে পারে।

থার্ড বা মোস্ট ক্রুশিয়াল হইলো, সমাজের জন্য নতুন প্যারামিটার তৈরি করা। জিপিডি, পার ক্যাপিটা ইনকাম, এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট… এইগুলারে বাদ না দিলেও, ফোকাস পয়েন্ট হিসাবে না রাখা। এইটা খুবই লং রানের একটা জিনিস। কিন্তু এখনই চিন্তা করতে পারা, বা শুরু করতে পারাটা দরকার।

 

এপ্রিল ৫

Jared Diamond কইতেছিলেন, দুইটা কারণে সিভিলাইজেশন যে ধ্বংস হইতেছে, সেইটা সে নিজে টের পায় না। এর মধ্যে একটা হইতেছে, এলিট ক্লাস, আমি বলবো, ডমিনেন্ট মাইনরিটি, পাবলিকের কথা ভাবে না। শর্ট টার্ম লাভ দেখে, লং টার্মে পাবলিকের ভালোর কথা ভাইবা ডিসিশান নিতে পারে না।

সেকেন্ড জিনিস হইলো, যেইটা সিভিলাইজেশনে স্ট্রং জায়গা, সেইটা সবচে দুর্বল পয়েন্ট হয়া উঠে। সেইটারে চেইঞ্জ করতে পারে না। এই জায়গাটাতে আসলে আমি আরো স্পেসিফিক হইতে চাইতেছি।

মানে, আমাদের এই সিভিলাইজেশনের স্ট্রং জায়গাটা তো হইতেছে, যোগাযোগ। ধরেন, বাংলাদেশে চিনি বানায়া বেচত ৮৫ টাকা লাগে, একই চিনি যদি আপনি ব্রাজিল থিকা আনেন ৬৫ টাকায় বেচতে পারেন। তো, বাংলাদেশে চিনি না বানায়া, ব্রাজিল থিকা আনলেন। আম্রিকাতে মোবাইল ফোন না বানায়া চীনে বানাইলেন। এইরকম এফিশিয়েন্সি আনতে গিয়া, স্পেশালাইজড হইতে গিয়া দেখা যাইতেছে, যোগাযোগের কারণে, কোন একটা জায়গাতে ঝামেলা হইলে, সব জায়গাতেই বিপদ। ব্রাজিলে একবার কোন একটা ব্যারাছ্যারা লাগলে বাংলাদেশে চিনির ক্রাইসিস শুরু হয়া যাবে।

আর হইলো তো সেইটাই। চীনে ভাইরাস অ্যাটাক করলো, সারা দুনিয়ায় ছড়াইতে ৩ মাসও লাগলো না। আর চীন থিকা সবকিছুর সাপ্লাই ঝামেলা বইলা, ইউরোপের ডিমান্ড কইমা আসবে বইলা বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ আরো ইন্ড্রাষ্ট্রি বন্ধ হওয়ার রিস্ক দেখা দিছে।

আমরা যে ইন্টার-কানেক্টেড, এই কারণে আমরা এফিশিয়েন্ট। এইটারে কয়েকদিনের ভিতরেই একটা দোষ বইলা আইডেন্টিফাই করা হইবো। আর আমার পয়েন্টটা এইখানেই। যোগাযোগহীনতা আমাদেরকে বাঁচায়া রাখতে পারবে না, বরং নতুন ধরণের যোগাযোগরে আমরা যদি পসিবল কইরা না তুলতে পারি।

মানে, স্পেশালাইজেশনরে বাদ দিয়া দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। আগের কোন একটা জায়গাতে ফিরা যাইতে হবে না, বরং নতুন একটা কিছুরে সম্ভব কইরা তুলতে হবে। আর এইটা অবশ্যই এক নাম্বার পয়েন্টটারে ঠিক না করতে পারলে হবে না।

আগের জিনিসটারে ঠিক না কইরা, মানে পাবলিকের ভালোর কথা ভাইবা যদি ডিসিশান না নেয়া হয়, সেইটা হবে আরো বড় একটা ভুল। মানে, যদি ভাবেন, মানুশ যেহেতু ছোঁয়াচে, এর জায়গায় মেশিন বেইজড সিস্টেম, এ আই, রোবটিক ইঞ্জিনিয়ার… এইগুলা হইতেছে সমাধান, তাইলে আরো বড় একটা ডিজাস্টারই ওয়েট করতেছে। এইগুলা তখনই ভালো জিনিস, যখন মানুশরে বাতিল করা জন্য না, বরং মানুশের একটা বড় অংশের কাজে এইটারে ইউজ করা হবে। তো, সমস্যা না খালি, কেমনে আমরা সমাধান চাইতেছি, সেইটা নিয়াই সাবধান থাকাটা দরকার বেশি।…

 


এপ্রিল ৭

এইরকম ক্রুশিয়াল সময়গুলাতে ছোটখাট টেকনিকগুলা বরং অনেকবেশি কাজের।*

যেমন, ৭/৮ ঘন্টা ঘুমাইতে পারা। এইটা ক্রুশিয়াল মনেহয় আমার কাছে। একটা রুটিন তৈরি করতে পারা আর সেইটা কমবেশি ফলো করার ট্রাই করা।

মানে, শেষমেশ আমরা তো টাইমের ভিতরেই থাকি। ২৪ ঘন্টা টাইম পার করাটাই ঘটনা। খাওয়া-দাওয়া, রান্ধা-বারা, ঘর-দোর সাফ করা, গোসল করা… এইরকম কাজগুলাতে ৩/৪ ঘন্টা পার কইরা দেয়া পসিবল মনেহয়। তারপরে, ২/৩ ঘন্টা সিনেমা দেখা, ২/৩ ঘন্টা বই পড়া, ২/৩ ঘন্টা অনলাইন, ফেসবুক, ফোনে লোকজনের সাথে কথা বলা, ঘন্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করা, ১/২ ঘন্টা নিজেরে নিয়া, ফিউচার নিয়া, দেশ-জাতি-সমাজ-দুনিয়া নিয়া চিন্তা করাটাও কাজ মনেহয় একটা, মানে ডরানো বা হোপফুল থাকা না, কিছু জিনিস ভাবতে পারা।… এইরকম।

তো, একটা রুটিন বানানো আর সেইটা ফলো করাটা কঠিন কাজই হওয়ার কথা। রিপিটেশন তো আমরা করি বা করতামই ডেইলি লাইফে, কিন্তু এইটা চোখে পইড়া গেলে তখন কন্টিনিউ করাটা মুশকিল হয়। বা আগে যেমন অপশন বেশি ছিল, এখন তো একটু কমই।…

তবে কোন কিছু নিয়া বেশি অবসেসড না হওয়াটা ভালো। মানে, সিনেমা দেখলে দিনে ১টা সিনেমা দেখা। বই পড়তে গেলে, কয়েক ঘন্টার বেশি না পড়া, এইরকম। কিন্তু এইটা মানাটাও মনেহয় কঠিনই। যেমন, আমি লেখালেখি নিয়া তো অবসেসডই। দিনে ৫/৭ ঘন্টা এই কাজ করি, বা লেখার টেবিলে থাকি। (আরো বেশিই হবে হয়তো।) তো, এই কোন অভ্যাস থাকাটা মনেহয় বাজে না, যদি লাইফের সাথে মানায়া নেয়া যায়। মানে, কেউ বাড়ির সামনে বা ছাদে বাগান করতে পারেন, কেউ কোন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে পারেন, এইরকম মেজর একটা কাজ থাকলে বরং ভালোই।

এইরকম লকডাউন সময়ের সবচে কাছাকাছি যে এক্সপেরিয়েন্স আমার আছে, সেইটা হইতেছে কলেজে পড়ার সময়। ঢাকা কলেজের সাউথ হলে থাকি তখন, কোন কারণে বাড়ি থিকা হলে আসার পরেই দেখি, কলেজ বন্ধ, কোন মারামারি কারণে মনেহয়। হল অলমোস্ট ফাঁকা, ক্যান্টিনেও ঠিকমতো রান্ধা হয় না। এইরকম ১৫/২০ দিন ছিলাম। সকালে একটু দেরি কইরা উঠতাম, নাশতা বা দুপুরের খাবার খাইতাম কলেজের সামনে মহনচাঁন সুইটসে গিয়া। আইসা দস্তয়েভস্কির ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট নিয়া বসতাম। খুব আস্তে আস্তে পড়তাম। বিকালে একটু হাঁটতে বাইর হইতাম, আবার সারারাত অই বইটাই পড়তাম। এইভাবে ১৫/২০ দিন ছিলাম।…

তো, আমি একটা মিডল ক্লাস লাইফের কথাই বলতেছি। কিন্তু যে কোন একজন মানুশেরই একটা নতুন ডেইলি রুটিন থাকলে, বা কয়েকটা জিনিস করার কথা ভাবতে পারলে, এই টাইমটা তেমন কোন বড় পারসোনাল ঝামেলা ছাড়া পার করাটা সম্ভব হইতে পারে মনেহয়।

…………………

এইটা মনে হইলো @Red Cliff সিনেমাটার কথা ভাবতে গিয়া। দেখবো এইটা আজকে। 🙂 যুদ্ধ নিয়া একটা চাইনিজ সিনেমা। ছোটখাট জিনিসগুলা যে কতোটা জরুরি, এইটা আছে সিনেমাটাতে।

২.

এই ডেটা’টা ইর্ম্পটেন্ট। যা টেস্ট করা হইতেছে, তার ৩.৫% এর মতো পজিটিভ আসতেছে। আর বাংলাদেশে টেস্ট করা হইছে ৩,৫০০ জনের।

এইখানে টেস্ট করার পাশাপাশি, সিমটমগুলারে ঠিকঠাক মতো ক্যাটাগোরাইজ করতে পারাটাও জরুরি, মানে পটেনশিয়াল রোগী আইডেন্টিফাই করতে পারাটা। রেশিও বাড়ানো না, বরং এফেক্টিভ টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর ট্রাই করা।

ব্যাপারটা এইরকম না যে, এই রেশিও আরো বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু রেশিও কমায়া রাখার লাইগা এমনেই কিছু টেস্ট করাইলাম – এই জিনিসটা যাতে না হয় আর কি! বাংলাদেশে এইটাও হইতে পারে, এই ডর তো কিছুটা থাকতেই পারে মনেহয়! 🙁

আর টেস্টের নাম্বার বাড়ানো দরকার, রোগীর সংখ্যা বাড়ানোর লাইগা না! যারা রোগী, তারা যাতে জানতে পারেন, উনারা এফেক্টেড; আর যাতে সাবধান হইতে পারেন, ছড়াইতে না পারেন – এইজন্য দরকার।

মানে, নাম্বার তো নাম্বারই। নাম্বারের মিনিংগুলারে কেমনে পড়বেন বা পড়তেছেন, এইটা খেয়াল রাখতে পারেন।

92159609_10157008977247093_3077001101560512512_n

৩.

পুরান বা পরিচিত উপমা দিয়া বললে, সুবিধা হইতে পারে। যেমন ধরেন, এইটা তো একটা জরুরি অবস্থা, যুদ্ধের মতন। (মানে, যুদ্ধ শব্দটার ভিতরে আটকায়া যাইয়েন না।)

তো, যুদ্ধের সময় হয় কি, কুইক ডিসিশান নিতে পারতে হয়। একটা ডিসিশান সকালবেলা না নিতে পারলে, বিকাল বেলা গিয়া অই ডিসিশানের কোন গুরুত্ব থাকে না। যেমন ধরেন, টেস্ট ল্যাবের সংখ্যা নাম্বার বাড়ানো, বেশি টেস্ট করা, সারা দেশে করা… এইগুলা ১০/১৫ দিন আগে করতে পারলে যতো বেশি লোকের ভাইরাসে এফেক্টেড হওয়া কমানো যাইতো, এখন সেই রেটে পারবে না। এই কারণে যে অ-দরকারি – তা না, কিন্তু টাইমলি করতে পারলে সুবিধা আরো বেশি পাওয়া যাইতো।

এইরকম, এখন পিক টাইম আসলে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। আইসিইউ র নাম্বার বাড়ানো যায় কিনা, সেই উপায় চিন্তা করা। এইগুলার জন্য ১০/১৫ দিন টাইম হয়তো এখনো আছে আমাদের হাতে। পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্টরা আরো স্পেসিফিক্যালি বলতে পারবেন হয়তো।…

আরেকটা জিনিস হইলো, জরুরি সেক্টরগুলা আইডেন্টিফাই করা, যেমন, নরমাল চিকিৎসা, খাবার দাবার, ডিস্ট্রিবিউশন… কেমনে চালু রাখা যায়, সেইটা আইডেন্টিফাই কইরা প্রসেস তৈরি করাটা। এই জিনিসগুলা ঠিক করাটা এখনই জরুরি।

কে করবে এইটা? আরো ভালো কইরা বললে, কার করার অথরিটি আছে আসলে? আপনার, আমার তো নাই। এই অথরিটি আছে এখন গর্ভমেন্টের।

কিন্তু এই গর্ভমেন্ট, এই মন্ত্রিসভা এই কাজগুলা করতে পারবে বইলা মনেহয় না। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাতে যেইরকম মেজর জেনারেলরা থাকেন, এইরকম এখনকার জরুরি অবস্থায় পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট, ডাক্তার, ইকনোমিস্টদের নিয়া মন্ত্রীসভা বানানো দরকার। এমন একটা অথরিটি যারা কিছুটা হইলেও পাবলিকের রিপ্রেজেন্টেটিভ হবে, আর অজনপ্রিয়, দ্রুত ডিসিশানগুলা নিতে পারবে।

মানে, চিন্তা করাটা যদি কাজ করার জায়গাটার সাথে না মিলে, তাইলে বাস্তবে কোন রেজাল্ট আমরা পাবো না, চিন্তাটা থিকা। কিন্তু তাই বইলা চিন্তা করাটা বাজে কাজ না। ভুল চিন্তা হইলেও, কারণ এর থিকা বেটার আরো কিছু ভাবতে পারবেন, বা করতে পারবেন হয়তো অন্য কেউ। এই কারণে, বইলা রাখা।

 

এপ্রিল ১০

এই ছবিটার কথাই বলতে চাইতেছিলাম গতকালকে, এই স্ট্যাটাস দুইটাতে –

92840636_10157019818192093_202917413526700032_n

 

১.
(একটু ক্রুয়েল হয়তো চিন্তা’টা, কিন্তু…), যারা ছবি তোলেন, গল্প-কবিতা-গান লেখেন, সাবজেক্ট হিসাবে করোনা ভাইরাস তো একটা অপারচুনেটিই তাদের জন্য।

কমেন্টস:
মহামারী’র উপ্রে বানানো আগের সিনেমা/নভেলের মতন, করোনার সময়ের আর্টেরও একটা ডিমান্ড তৈরি হওয়ার কথা, বাজারে; খুব দ্রুতই এই ডিমান্ড ফুলফিল করার লাইগা আর্ট-কালচারের লোকজন আগায়া আসার কথা।

…চীনের বা ইতালির লকডাউনের কিছু ছবি দেখার সময়ই মনে হইতেছিল, এইরকম আর্টের ডিমান্ড তো বাংলাদেশেও শুরু হবে। এখন এইটারে ‘মোরাল’ জায়গা থিকা না দেখাটাই বেটার। আমরা তো দেখতেই চাইতেছি, এইরকম জিনিসগুলা।

এই জিনিসগুলা নিয়া আর্ট হবে না, বা করা যাবে না – এইটা আমার পয়েন্ট না; জাস্ট মনে হইলো, আর্টের কাজ তো পাবলিক ডিমান্ড ফুলফিল করা না! এইখানে একটা ছোট্ট ডিফরেন্স আছে, যেইটা লোকেট করতে চাইছি।

…যারা বিজনেস করার কথা, তারা তো বিজনেস করবেনই; যারা আর্ট কালচার করার কথা, তারাও তা ই করবেন। এইখানে একটা মার্কেট ডিমান্ড আছে অন্যসব জিনিসের মতো, আর্ট কালচারেরও…


পয়লা বার, ১৯৯০ সালে আম্রিকা যখন ইরাকে যুদ্ধ শুরু করছিল, তখন Jean Baudrillard একটা লেখা লেখছিলেন, The Gulf War Didn’t Take Place. যদ্দূর মনে আছে, উনার কথা ছিলো যে, এইটা মোস্টলি একটা মিডিয়া ওয়ার! টিভিতে দেখাইতেছে, নিউজে বলতেছে। আর মিলিটারির মিডিয়া উইং ঠিক কইরা দিতেছে, কোনটা দেখাইবো, কিভাবে দেখাইবো, এইরকম। আর এইভাবে যুদ্ধটা তৈরি হইতেছে, বানানো হইতেছে, আমাদের সামনে।

Apocalypse Now সিনেমাটাতে এইটা অল্প একটু আছে, একটা সিনে। সৈন্যরা হেলিকপ্টার থিকা নামার পরে, একজন ক্যামেরা চালায়া লগে লগে যাইতেছে, একজন সৈন্য দেইখা থাইমা গেলে, ক্যামেরাম্যান কয়, না, না… তুমি যাইতে থাকো! আমি ছবি তুলতেছি! 🙂

তো, ব্রদিয়াঁ এখন বাঁইচা থাকলে হয়তো বলতেন না যে, করোনা ভাইরাস বইলা কিছু নাই! কিন্তু আমি বলতে চাইতেছি যে, দেখেন, করোনা ভাইরাস মহামারীটারে আমরা কেমনে বানাইতেছি!

একটা কন্সপিরেসি থিওরির জায়গা থিকা এইটা ঘটতেছে, ব্যাপারটা এইরকম না। বরং মিডিয়ার স্টিমুলেশনটারে আমরা কিভাবে এমপ্লিফাই করতেছি, এইটা খেয়াল করাটা আর্ট-কালচারের কাজ না হইলেও, এইটা নিয়া কনশাস না হয়া আর্ট করতে যাওয়াটা বিরক্তিকরই মনেহয় কিছুটা। 

যেমন ধরেন, নুর হোসেনের ছবি দেইখা শামসুর রাহমান যখন কবিতা লিখছেন, তখন তো ভালোই লাগছিল আমাদের। এখন ব্যাপারটারে কিছুটা আজাইরা বইলা ভাবতে তো পারা যায় মনেহয়। মানে, আজাইরা না ভাবলেও, আর্ট হিসাবে কিছুটা কম মহান বইলা তো মনেহয় ভাবতে পারি আমরা, এটলিস্ট।

 

এপ্রিল ১২

মার্কসের পরে কেইনস আমার পছন্দের ইকোনমিস্ট। (জন ন্যাশ আর অমর্ত্য সেনও পছন্দের।) কারণ উনারা একেকটা পাজল সলভ করছিলেন। যদিও এই জিনিসগুলা পুরাপরি খেয়াল করতে পারি না আমরা এখনো। তারপরেও (বা এই কারণেই হয়তো), উনাদের কথাগুলারে বারবার রি-ইনভেন্ট করা লাগে আমাদের। একেকটা সুন্দর আর্টের মতো।

তো, কেইনসের কথা ভাবতেছিলাম। ১৯৩০ এর মন্দার সময় উনি যে সলিউশন দিছিলেন, গর্ভমেন্টরে ইনভেস্ট করা লাগবে, খরচ বাড়াইতে হবে, সেইটা থিকা এমপ্লয়মেন্ট হবে, ইকনোমি’র চাকা’টা আবার ঘুরতে শুরু করবো।… মানে, একটা ফলস ডিমান্ড ক্রিয়েট করা লাগবে, ইকোনমিতে। ক্যাপিটালিজম কিন্তু এরপরে এই সূত্র’টা মাইনাই চলতেছে! ইকোনমি গ্রো করার যেই ব্যাপারটা, সেইটা কোন না কোন ‘ফলস ডিমান্ডের’ ভিতর দিয়াই বড় হয়া উঠতেছে, বা বলা ভালো, উঠতেছিল। (আবারো, শুরু হবে।)

এখন, ক্রাইসিস মোমেন্টে যখন কনজামশন বন্ধ হয়া যাইতেছে, ‘প্রডাকশন’ নিয়াও চিন্তা শুরু হইতেছে, যে কি করবো তাইলে, এইরকম প্রডাকশন ক্যাপাসিটি নিয়া? কয়দিন আগে, টিভি’তে একটা নিউজ দেখলাম, বরিশালের দিকে কোথাও তরমুজ চাষীরা খুব বিপদে আছেন, খেত থিকা তরমুজ তুলতেছেন না, ট্রাক নাই; আমার ধারণা, ঢাকার পাইকার’রাও চাইতেছেন না ঢাকায় তরমুজ আনতে, এই সিজনে; কারণ কোটি খানেক লোক তো কমছে ঢাকায়, এতো তরমুজ খাইবো কে! এইরকম।

সাপ্লাইয়ের ক্রাইসিসের কারণে ইকোনমির অবস্থা বাজে হয় না, বাজে হয়, ডিমান্ড কইমা যায় বইলা। বা ডিমান্ড কইমা যাইতে পারে – এই এক্সপেক্টশন থিকা। যেইরকম (অমর্ত্য সেন কইছেন) দুর্ভিক্ষ প্রডাকশন কম হইছে বইলা হয় না, হয় ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমটা কাজ করে না বইলা।

তো, ডিমান্ডটারে কেমনে ঠিক রাখবেন আপনি? অভিজিৎ ব্যানার্জি’রা বলছেন, পাবলিকরে টাকা দিয়া ডিমান্ড ঠিক রাখা লাগবে। আমার কাছে, জিনিসটা রিস্কিই মনেহয় কিছুটা। মানে, এই জিনিসটা দুয়েক মাস করা যাইতেই পারে; কিন্তু এর সাথে যদি ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমটারে চালু না রাখা যায়, এই টাকা ব্যাপারটাও বেশিদিন এফেক্টিভ থাকার কথা না।…

মানে, টোটাল একটা ইকোনমিক প্ল্যানিংয়ের কথাই ভাবতে পারাটা দরকার। এইখানে, ওইখানে ত্যানা পেঁচায়া সিস্টেমটারে মেরামত করার চিন্তাটা বাজে-ই হওয়ার কথা।…

তর্ক’টা এইটা না যে, গরিব’রে টাকা দেয়া ভালো, নাকি চাল-ডাল-তেল দেয়া; বরং যেইটাই দেন, গরিব পর্যন্ত পৌঁছাইবেন কেমনে? – সেইটা হইতেছে আসল আলাপ।

 

এপ্রিল ১৫, ২০২০

এখন আমরা দুইটা দল দেখতে শুরু করবো – ভালো মানুশ আর খারাপ মানুশ। দেখবেন, একদল মানুশ কতো ভালো! আরেকদল মানুশ জঘন্য!

তো, খারাপ/ভালো মানুশ যে নাই – তা তো না, কিন্তু এইরকম ক্রিটিক্যাল টাইমগুলাতে এইরকম নৈতিক ক্যাটাগরিটা হইতেছে চিন্তা না করতে চাওয়ার বা পারা’র শেষ অজুহাত-ই, শেষ পর্যন্ত।

 

Leave a Reply