এ. আর. রহমান ও হিন্দি গান

আল্লা রাখা (এ. আর.) রহমানের পয়লা গান শোনার পরই থিকা আমি উনার মিউজিকের মুরিদ হইছিলাম। রোজা সিনেমাতে উনার সুর করা গান শুনছিলাম পয়লা, এরপর থিকা উনার খুব কম গানই আমি মিস করছি। খারাপ ভালো বা পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার তো আছেই, কিন্তু উনার বেশিরভাগ গানই আমি শুনছি। যে কোন গ্রেট আর্টিস্টের মত উনি ট্রাই করছেন সবগুলা জনরাতেই উনার ছাপ রাখতে।

তো, আমরা যখন উনার গান শুনতাম, নাইটিইসের দিকে, তখন হিন্দি গান শোনা একটা দেশ-বিরোধী, বাংলা কালচারের এগেনেস্টের একটা ব্যাপার আছিলো। এখনো আছে আসলে। ইন্ডিয়া-বিরোধিতা আর হিন্দি সং পছন্দ না হওয়া একই ব্যাপার হয়া আছে।* কেন এইরকম হইয়া আছে, সেইটা ভাবতে গিয়া মনে হইলো, হিন্দি গানের দুইটা জিনিস আছে, যেইটা সো-কল্ড হাজার বছরের বাঙালি ঐহিত্যের লগে কন্ট্রাডিক্টরি।

এক হইলো, ইসলাম-ফোবিয়া। হিন্দি গানে যেই পরিমাণ ইসলামিক বিষয়-আশয় আছে এবং পপুলারভাবে (মানে, মিডলক্লাস টু লোয়ারক্লাস, সবারই সাবস্ক্রাইব করার স্পেইসটা আছে, আপনারে মুসলমান বা হিন্দু হওয়াটা জরুরি না) সেইটা ইসলামি রাষ্ট্র বাংলাদেশেও নাই, এতোটা। মানে, ধর্মের জায়গা থিকা না, একটা মিউজিকের একটা জনরা হিসাবেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হওয়ার পরে পাকিস্তানি হয়া যাওয়ার ডরে আমরা অইরকম করতেও ডরাই মনেহয়। কিন্তু আমার ধারণা, হিন্দিতেও যে এইসব আছে, এইটা একটা রাস্তা দেখায় বা সাহস দেয় কিছুটা, বাংলাদেশের মিউজিশিয়ানদের। তো, এই কারণে হিন্দি গানও এতোটা ভালো হইতে পারে না আর কি!

আর দুসরা জিনিস হইলো, ভাষার জায়গাটা। বাংলা ভাষা এখনো সংস্কৃতির দুহিতা। এই দুহিতা হওয়ার চাইতে যদি হিন্দি, উর্দু, নেপালি, অহমিয়া এইরকম রিজিওনাল ভাষাগুলার বইন বা ভাই হইতে পারাটা মাইনা নিতে পারতো, তাইলে এই নাক সিটকানিগুলা কম থাকতো। বরং এই মিলের জায়গাগুলা দেইখা এইসব সংস্কৃতি-মনারা ডরাইতে থাকে আসলে। তো, এই ফাতরামিগুলা বাংলাদেশের এতোটা না, কারণ দেখবেন বাংলাদেশের কালচারাল গুন্ডাদের ঠেস-মারা ও গালি-গালাজের পরেও পাবলিক কিন্তু হিন্দি গান পছন্দই করে, শুনেও। এইগুলা বরং আমাদের দেশের কালচারাল গুন্ডাদের পশ্চিমবঙ্গীয় ছোটলোকির হ্যাং-ওভার।

তো, আমার কথাগুলা হয়তো অদরকারি মনে হইতে পারে। কারণ খালি চোখে এতোটা টের পাইবেন না আপনি, মনে হবে, “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন“ (স্টুপিডগুলার বাংলা দেখেন!) কিন্তু জিনিসগুলা এইরকম সহজ-সরল না। এরা সহজ-সরলরে সত্যরে বানায়া ফেলতে চায়, সত্যরে সার্চ করার সাহসটাও নাই। আমি বলতেছি না যে, হিন্দি গান আপনারে পছন্দ করাই লাগবে, কিন্তু অপছন্দ করার বা বাতিল করার (একইভাবে সাবস্ক্রাইব করার) জায়গাগুলারে খেয়াল করতে পারেন।

তো, এ. আর. রহমানের সুফি ঘরানার (আবারো বলি, সংজ্ঞা দিয়া বস্তুরে বাইন্ধা ফেইলেন না, বরং সংজ্ঞা জিনিসটা কেমনে বস্তু থিকা ডিরাইভ করা হয়, সেইটাতে কনসানট্রেট করাটা বেটার।) কিছু গান আছে। গানগুলা ঠিক আধ্যাত্মিক জায়গা থিকা আমি শুনি না বা সুদিং আছে বইলা (যেইরকম ধরেন হেলদি থাকার লাগার ব্যায়ামের মতন অনেকে যেইরকম সেক্স করেন বা নামাজ পড়ার কথা বলেন), বরং এই সবকিছুর বাইরে বা এইসবকিছু সহই গান হিসাবেও শুনতে পারি আমি।

আর যেহেতু আমি শুনি, শেয়ার কইরা রাখলাম। শুনতে পারেন!
আরজিয়া সারি https://www.youtube.com/watch?v=PN-RMTiiEgI
খাজা মেরে খাজা https://www.youtube.com/watch?v=rf9_x9fT0rY
কুন ফায়া কুন https://www.youtube.com/watch?v=IdByOJh71Ik
পিয়া হাজী আলী https://www.youtube.com/watch?v=KlBur59chFI
মারহাবা ইয়া মোস্তফা https://www.youtube.com/watch?v=0eM0chOQ0Q0&pbjreload=10
জিকির https://www.youtube.com/watch?v=BW93tJWMKsc
আল মাদাদ মওলা https://www.youtube.com/watch?v=g4KUfs-oe9U
ইয়া নবী https://www.youtube.com/watch?v=7ypBX6zbANc&pbjreload=10
সজো সালাম https://www.youtube.com/watch?v=oaXbo_PZvV4

………………

(*অনেক পাকিস্তান বিরোধী সেক্যুলাররা আছেন দেখবেন কাওয়ালি পছন্দ করেন বা উর্দু সাহিত্যের রেফারেন্স দেন, কিন্তু কোন জায়গা থিকা করেন, সেইটা আর্টিকুলেট করতে পারেন বইলা আমার মনেহয় না। মানে, ঘটনাটা রাষ্ট্রের বিরোধিতা কইরা মানবিক জায়গা থিকা কালচাররে অ্যাকসেপ্ট করার ব্যাপার না। বরং অই কালচারের এলিমেন্টগুলা যে আমাদের কালচারেও আমরা ফিল করি, প্রাকটিস করি, সেইটার ঘটনা। এমন না যে, বাংলাদেশের মুসলমনরা বাঙালি বইলা মুসলমান না। পাকিস্তান বইলা যে ধারণা, সেইখান থিকা এইটা ভাবা যাইতে পারে। যেইরকম বাঙালি বইলা যে ধারণা, সেইখান থিকা ভাবা যায় যে, আমরা বাঙালি বইলা মুসলমান না। তো, দুইটা বেরিয়ার, ঝামেলার। মানে, কাওয়ালি শুইনা পাকিস্তান-বিরোধিতা আর হিন্দি-গান না শুইনা ইন্ডিয়া-রাষ্ট্রের বিরোধিতা একইরকমের ফাঁপা জিনিস।)

Leave a Reply