কবিতা: ডিসেম্বর, ২০১৮

একটা চিন্তা থিকা একটা উদাহারণের মতোন
আলগা হয়া গেলাম আমি 

একটা চিন্তা থিকা
একটা উদাহারণের মতোন
আলগা হয়া গেলাম
আমি
আর তারপরে দড়ি-ছিঁড়া
বাছুরের মতোন
একটু দূরে গিয়াই
খাড়ায়া রইলাম
দেখলাম,
তুমি আমারে
দেখো কিনা…

একটা চিন্তা থিকা
একটা উদাহারণের মতোন
আলগা হয়া রইলাম আমি
তোমার কাছ থিকা

তারপরও থাকতেছি
যে কোন একটা
উদাহারণের
মতোন

নট নেসেসারি
যে
উদাহারণ একটাই,
আরো আরো
উদাহারণ হইতে পারে
তো
চিন্তার;

আরো আরো
রিলিভেন্স
থাকতেই পারে,
এইরকম
একটা অপশন
আমি
তোমার;

ভাষার ভিতরেও
আমি
একটাই
হইতে চায়
আর কয়,
অনেকগুলি তুমি
জানি
আছো;

অথচ
যেই তুমি
অনেক,
একজনই
তো;

তারপরে
লিখলাম,
তুমি একটা কথা,
কথার ভিতর
তুমি
থাকলা
একটা তোমারই মতোন;

আর
আমি
তখন উদাহারণ
হয়া
তোমার পিছন পিছন
একটা গাছ
থিকা
পইড়া যাওয়া
একটা পাতা
হলুদ
শীতের দুপুরে
ঘুরতেছি
একলাই;

তারপরে
রাস্তায়
ধূলায়
আরো আরো
ধূলা-বালির সাথে
‘আর কে জানি
আর কে জানি…’
উত্তরের বাতাস
আইসা
ইনকোয়ারি করে,
পাওয়ারে না-পায়
হারায়

সন্ধ্যার আকাশও
কয়,
‘কোন মেমোরি
তো
নাই’

 

দুপুরের বার

দুপুরের বারে আমি ছাড়াও বইসা আছে
আরো ফকিন্নি দুইজন
একজন বিজনেস করেন, আরো দুইজনের লাইগা বইসা আছেন, এইরকমভাবে সিঙ্গেল পেগ খাইতেছেন,
পাশের টেবিলের জন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, ঢাকায় আসছেন
বেড়াইতে, ফ্রেন্ড নাই কোন মনেহয়,
বিয়ারের দাম আবার বাড়াইছে বইলা কিছুক্ষণ চিল্লাইলেন,
বিদেশে থাকলে ঢাকা শহর’রে যেইরকম চিপ মনেহয়, এইরকম তো না
একটা হ্যানিকেন বিয়ারের দাম ৫০০ টাকা,
আর দুপুরবেলা যেন আমাদেরকে দয়া করতেছে
বারের লোকজন, বসবার একটু জায়গা দিয়া;
যেন রেস্টুরেন্টই এইটা, খালি ড্রিংকসও সার্ভ করে
এইরকমভাবে বইসা থাকার ট্রাই করতেছি আমরা

তারপরও
ফকিন্নির মতোই লাগতেছে আমাদেরকে,
আমাদের লোনলিনেস তিনটা টেবিলে
তিনটা পাশাপাশি কলাগাছের মতোন
খামাখাই
দাঁড়ায়া আছে।

সিনেমা

একটা সিনেমার ভিতর বইসা আরেকটা সিনেমা দেখতেছি আমরা,
ওইখানেও আমরা-ই আছি;

সিনেমাটার ভিতর সূর্য ডুইবা যাইতেছে,
হুট কইরা সন্ধ্যা হইয়া আসে
আমরা দেখতেছি দুপুরবেলা চিল উড়তেছে, স্থির আকাশে
বাইরে রইদ, নিমগাছ আঁকা,
রাস্তায় কিছু রিকশা আর গাড়ি যাইতে-থাকার মুডে
আটকায়া আছে…

তখন মনে হইলো,
আরে! আমরা তো ফটো ফ্রেম খালি, মেমোরি’র!
আমাদের লাইফ ডিসপ্লে হইতেছে
আমাদের লাইগা
আর
আমরা দেখতেছি দুপুরবেলায়,
সূর্য ডুইবা যাইতেছে . . .

 

রাস্তায়

রিকশাটা আদাবর বাজারে ঢুকতেই
দেখলাম, অন্য সাইডে আরেকটা রিকশায়
শামীম, ওর মেয়ে’রে কোলে নিয়া যাইতেছে
লগে বউও আছে; দুইজনেই চুপচাপ, উদাস
তখন সন্ধ্যাবেলা, রাতও হইতেছে
আমি ভাবলাম, রাস্তায় এইরকম দৃশ্য তো
দেখা-ই যায়; হঠাৎ কইরা আরেকটা দুনিয়া
চইলা আসে আমাদের সামনে, আবার চইলা যায়
আমাদের সাইড দিয়া, আমরা ভাবি, আসলে কিছুই দেখি নাই…

 

Mono no aware

একটা টেবিল, চারটা চেয়ার
একটা মগ, দুইটা গ্লাস, একটা বোতল
কয়েকটা বই, কিছু কাগজ
আয়না, সাবান, টুথব্রাশ, বেসিনের শাদা কালার
ফ্রিজ, টোস্টার, কয়েকটা প্লাস্টিক আর কাঁচের বয়াম
দেয়াল ঘড়ি, ময়লা দেয়াল, ধূলা-বালি… আর
ছোট্ট একটা শীতের বাতাস
জানালা দিয়া স্রোতের মতোন ভাইসা আসে…

বলতেছে সবাই, ‘ভুইলো না, আমায়!’

 

কবীরের দোকান

আমার একটা দোকান আছে
প্রতিদিন সকালে আইসা দোকান খুইলা বসি আমি
মালগুলির ধূলা ঝাড়ি, ওয়েট করি
কাস্টমার আসবে কখোন!

যারা আসে, তারা তো আসেই
ঘুরা-ফিরা করে, আমারেও জিগায়
এই মাল কি আছে? বা ওইটা?

আমি দেখাই, বলি
এইটা তো নাই, আছে ওইটা
কাস্টমার ফিরা যায়

বেচা-কেনা হয় না আমার

 

আমি দেখতেছি অনেকগুলি জানালা

অনেকগুলি জানালা দেখতেছে আমারে
আমি জানালাগুলির দিকে তাকাই না
আমি নিজেও একটা জানালা

আমি জানালার সিন থিকা বাইর হয়া বারান্দায় যাই
চারপাশে আছে আরো অনেক বারান্দা

অনেকগুলি বারান্দা দেখতেছে আমারে
অনেকগুলি ছাদ, অরাও

আমি যাদেরকে দেখি আর দেখি না
সবাই আমারে দেখতে পারে, কিন্তু
সবাই তো আর আমারে দেখতেছেও না

আমি দেখতে থাকি
একটা একটা জানালা বন্ধ হয়া যাইতেছে, ধীরে ধীরে. . .
মিশে যাইতেছে অন্ধকারে

হয়তো আমিও একটা অন্ধকার

আর আমারে দেখাও যাইতেছে না

 

জুম্মাবার

থার্সডে নাইট
রাস্তাগুলি কি পোলাইট

ঠান্ডা বাতাস
তাউরাইতেছে

রিকশাটা টাল খাইলো
সিএনজিটা উড়লো একটু

গাছগুলি বলতেছিলো,
আরে থাম!

কে শোনে কার কথা. . .

মদ খায়া টিপসি হইছে আজ
আমার থার্সডে নাইট

আমি দেখি আকাশে আকাশে
কি সুন্দর উল্কাপাত!

জমিনে তড়পায় হলুদ পাতা
মরা রিলেশনের ছায়া
করে হায়-হুতাশ

আমি খুঁজি উর্দু রোডে
গালিবের কবর

দুইজনে হাসতে চাই সারারাত

কেউ নাই, থাকে না কেউ তো আর

পোলাইট রাস্তাগুলি
বারটেন্ডার বন্ধুর মতোন
কইতেছে, ‘বস, বাসাত যান!’

থার্সডে নাইট, কোন একদিন
রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে গিয়া আমরা
বইসা থাকবো সারা রাইত

ভোর হইলে বলবো,
সূর্য’রে তো বানাইছি আমরাই!

হাসবো তখন ভোরের বেলা
চায়ের দোকানদার
কইবো, আজকে তো ভাই
জুম্মাবার!

 

আনন্দ-বাজার

বাজারে বাজারে ঘুরি
কাঠের তাক থিকা মসলার প্যাকেটগুলি তাকায়া থাকে
নুডুলস, বিস্কিট, আরো কতো কি. . .
মাছগুলির মরা চোখ
গরু’র ঠ্যাংয়ের মাংস
শীতের সব্জি . . .
সবাই দেখতেছে আমারে

আমি কিনতে চাই না কিছুই,
আমি দেখি, জিনিসগুলি দেখতেছে আমারে

একটা পঁচতে থাকা মাছের মতোন মনেহয় নিজেরে
একটা শুকাইতে থাকা ফুলকপির মতোন
ডেইট এক্সপায়ার্ড হওয়া একটা জুসের প্যাকেটের মতোন

কেনা-বেচার বাজার থিকা বাদ পইড়া যাবো
আগামীকালকেই,
ফ্রি-ও নিবে না কেউ তখন

নানান রকমের মালগুলির মতোন
চুপচাপ বইসা থাকি আমি, দোকানের তাকে

কখনো কোন কেনা-বেচা হয়,
কখনো হয় না কিছুই

(তারপরও, যতোদিন বাঁইচা আছি)
বাজারে বাজারে তোমার সাথে আমার-ই তো দেখা হয়. . .

 

তোমার অন্ধকার ঘরে

আমি চিনি তোমার অন্ধকার ঘর,
কালা একটা বিলাই আসে, কোন আওয়াজ ছাড়া
হাঁটাহাঁটি করে
তুমি দেখতে দেখতে ঘুমায়া পড়ো. . .

তোমার অন্ধকার ঘরে না-থাকা কালা একটা বিলাই থাকে,
আমার মতোন।

 

সকালবেলার কথা

ঘুমের অষুধ পার হয়া আসো,
আসো সকালবেলার রইদ
বারান্দায় কম্বলের শরীরে উড়তে-থাকা ধূলা হয়া বসো

রাস্তায় দাঁড়ায়া থাকা পুলিশটার মতো
এইদিক, ওইদিক ঘুরো
যেন কুয়াশার পর্দা সরানোর কাজে ব্যস্ত

কথার শেষে ছোট্ট একটা পজের মতো
নিরবতা যেন ছড়াইলো আরো,
চুপচাপ গাছগুলাও তখন বলতেছে কথা, ‘আর কতো…’

 

কবিতাগুলি হইতেছে না-কবিতা

আমি পাখিদের নিয়া, ফুলেদের নিয়া
আর গাছদের নিয়া কবিতা লিখি;
অরা তো আর কবিতা পড়তে পারে না,
অরা জানেও না এই কবিতা লেখার ব্যাপারটা
অদের কিছু যায়ও আসে না, লিখলে লিখছে আর কি!

ফুল, পাখি আর গাছেরা যদি লিখতো
আমারে নিয়া কবিতা, আমিও ভাবতাম হয়তো
লিখলে লিখছে আর কি!

কারণ
কবিতাগুলি হইতেছে না-কবিতা;
ফুল, পাখি, গাছ আর আমি হইতেছে
না-ফুল, না-পাখি, না-গাছ আর না-আমি

আমরা কেউ-ই কখনোই আমরা না।

 

সমাপ্ত

ওকে বস, চলেন তাইলে…
আমরা পথ হাঁটতেছি
আমাদের পথে পথে ছড়ায়া আছে
অনেক পেয়ারা’র গাছ, অনেক পুকুর, অনেক ঘোড়া
অনেক সুবজ সুন্দর গাছ আর ঘাস, অনেক অনেক ছায়া আর
মৃদু-মন্দ আমরা হাঁটতেছি
তুমি ভুলে গেছো আর মনে করতেছো গতকাল রাতে তোমার প্রেমিকের আদরের স্মৃতি আর
নতুন কোন প্রেম আসতেই তো পারে আবার, ভাবতেছো
আর শীতের বাতাসে ঝইরা পড়তেছে পাতাগুলা
আমাদের পায়ের কাছে
মড় মড় শব্দ কইরা তাদের পাড়াইয়া যাইতেছে আরো কিছু মানুষ আর কুত্তা
আমরা দুইজন গাধা, হাঁটতেছি শেষে
ওক্কে, ঠিকাছে…

এইরকম একটা সিনে, সিনেমায়
কালা পর্দায় লেখা উঠতেছে শাদা কালিতে
‘সমাপ্ত’

ছবিঘর সিনেমাহল থিকা বাইর হয়া দেখি,
একই তো সন্ধ্যাবেলা
বাইরেও, একই সিনেমা যেন চলতেছে

একই একই গান আমরা গুনগুনাইতেছি…

Leave a Reply