কবিতা: নভেম্বর – ডিসেম্বর, ২০১৯

 

সন্ধ্যায়

অনেক দূর থিকা আসছি,
অনেক দিন ধইরা আসতেছি আমি

কুয়াশার ভিতরে, রেললাইন পার হয়া
একটা ছোট্ট গলির রাস্তায় দাঁড়ায়া আছি, পথ ভুইলা, হঠাৎ

সন্ধ্যা হয়া আসছে, পাড়ার মসজিদ থিকা
মাইকে বাজতেছে আযান…

ধুপ জ্বালাইতেছে হিন্দু বাড়িতে একটা

কবুতরগুলা উইড়া যাইতেছে, তাদের কাঠের খোপগুলার দিকে, ছাদের…

আমি আসতেছি সবসময়, আর যাইতেছি না কোথাও

 

লাভ ইজ অ্যা ডগ ফ্রম হেল

ফ্যাসিস্ট – আই লাভ ইউ।
লিবারাল – আই লাভ ইউ।
অ্যানার্কিস্ট – আই লাভ ইউ।

আই লাভ ইউ – সব শালা বাইনচোত!

 

ওয়ান লাইনার

দৃশ্যগুলা মুছে যাবে, কথাগুলা কেরোসিনের কুপির মতন একটু একটু কইরা ফেড হইতে থাকবে…

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

মনের বাঘ’রে আমি ছাইড়া দিলাম বনে,
এখন সবাই দেখতেছে তারে;
এমনকি গুগুল সার্চের রেজাল্টেও চইলা আসছে…

বনের বাঘ আমার থরথরাইয়া কাঁপে,
কয়, আর কোন মনের বাঘ পাঠাইও না তুমি
আমাদের এই বনে

 

লাল কালি

কালো কালি শেষ হয়া গেছিল, নীল কালিও;
লাল কালিতে লিখতেছিলাম আমি আমার কথাগুলা

আর লাল কালিতে লেখার কারণেই মিনিংগুলা অন্যরকম হয়া যাইতেছিল

শব্দগুলা আমার ছিল না,
আমি শব্দগুলার কাছে গেছিলাম
আর কালির রংয়ের কারণে অরা
আরো বেশি সইরা যাইতেছিল

এইটা হওয়ারই কথা,
যা কিছু আমার না, যা কিছু আমরা
ধইরা রাখতে পারি না, নিজেদের কাছে
তারা আরেকটা মিনিংয়ের দিকেই তো যাইতে থাকে, সবসময়…

আমি কালো কালি আর নীল কালি’র কথা ভাবতেছিলাম না,
দেখতেছিলাম, লাল কালির ভিতর শব্দগুলা জ্বলজ্বল করতেছে
আর বলতেছে, আমরা তো তোমার না!

আমি, হয়তো তাদের হইতে পারতাম
কিন্তু আমি দূর থিকা দেখতেছিলাম
একটা আমি হওয়ার লাইগা আমি জান দিয়া দিছিলাম

শব্দগুলা চইলা যাওয়ার পরে
আমি নিজেরে কইলাম,
যাক, আমরা যে কালো কালি আর নীল কালির উপর দিয়া
নিজেদেরকে পার কইরা দিতে পারলাম,
এইটাও তো এতোটা খারাপ না…

‘কি জানি!’ তুমি বললা,
একটা লাল কালিতে লেখা শব্দের মতন

 

উল্টা-সোজা

উল্টা জুতার পরার পরে আমি
উল্টা হয়া হাঁটতে শুরু করলাম

লোকজন কইলো, দেখো একটা লোক
সোজা হয়া হাঁটতেই পারে না

আমি দেখলাম, উল্টা একটা দুনিয়ায়
মানুশজন কি রকম, সোজা সোজা
থাকার ট্রাই কইরা যাইতেছে

আর বলতেছে, “দুনিয়াটা
কোনদিন ঠিক হইলো না আর…”

 

আমার ডোপামিন

ও ডোপামিন, আমার ডোপামিন
কার লাইগা তুমি বইসা থাকো?

ও ডোপামিন, আমার ডোপামিন
থরথরাইয়া তুমি কাঁপো, সুইয়ের আগায় একটা
প্যাথেড্রিনের ফোটার মতন; একটা সুন্দর ছবির
নিচে লাভ বাটনে চাপ দেয়ার আগে বুড়া আঙুলের
কনফিউশনের মতন, ডোপামিন তুমি
টপ টপ কইরা পড়তে থাকো

ডোপামিন তুমি, আসার আগে
মনেহয় তুমি ছিলা আমার;
রক্তে মিইশা যাওয়ার পরে
তোমারে চিনি না আর

ও ডোপামিন, আমার ডোপামিন
তুমি আমার লগে থাকো

সায়েন্সের ভিতরে ইথারের ধারণা বাতিল হয়া গেলে যেমন
শব্দটা থাইকা যায়; লোকজন এখনো কয়,
ফ্যান্টাসাইজ করে… যেন শব্দ কাঁপতে কাঁপতে
আসতেছে আর যাইতেছে কোথাও না কোথাও, এইরকম

ইনভিজিবল আমি, ভুল একটা
ডোপামিন তোমার কাছে
থাকতে পারি তো!

ডোপামিন হাসে,
গাঙের ঢেউয়ের মতন
ট্যাপের খোলা পানির মতন

আমারেই উল্টা বলে,
থাকো!

 

সকালবেলা

কি যে ঘন কুয়াশা
দুইটা গাছ পাশাপাশি দাঁড়ায়া আছে

কেউ কাউরে দেখতেছে না

 

একটা সকাল

কোথাও একটা চিন্তা আইসা পাথরের মতন
বইসা আছে; এতো জোরে সে
নিজেরে চাইপা ধরছে যে, পানি বাইর হইতেছে
টিপ টিপ কইরা… ঝর্ণার মতন
হয়া উঠবে চিন্তাটা, নদী হবে
আর মিলায়া যাবে
সাগরে।

এইরকম একটা চিন্তার শব্দের ভিতরে
জাইগা উঠতে চাইতেছে একটা সকাল

আমার মনে হইতেছে
কল কল কথার ভিতর নিরব
তোমার কথা-ই

যা তুমি বলতে পারতেছো না,
সেই চিন্তাটাই যেন আমি

একটা পাথরের মতন চিন্তা হয়া
বইসা আছি,
কোন একটা সকালের ভিতর

 

র‌্যাবিট হোল

তুমি আর কোনোদিন ফিরা আসবা না,
আমি বুঝে গেছি…

একটা র‌্যাবিট হোলের ভিতর দিয়া গড়ায়া গড়ায়া
নাইমা যাইতেছি আমি;
এর কোন শেষ নাই

যেমন শেষ নাই কোন, তোমার ফিরা-না-আসার

 

চিন্তা-পদ্ধতি

ডাক্তার তো মারা গেলো;
রোগীটা কি আসবো না এখনো?

আমরা বইসা ভাবতেছি,
পাস্ট পারফেক্ট টেন্স তাইলে
এখন মিলাবো কেমনে?

 

ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স

দুনিয়াতে কেউ আছে,

আর একটা দুনিয়াও তো আছে
থাকতেছে আমাদের সাথে,
কথা বলতেছে
বা চুপ কইরা আছে…

কিন্তু সবাই
একটা দৃশ্যের মতন, একটা চিন্তার মতন
ধীরে, ধী রে
মুছে যাইতেছে

 

গরু’র গাড়ি

হেই মানুশ, হেই হেই মানুশ!
একটা গরু দুইটা মানুশের পিঠে ঘুরাইতেছে লাঠি
হুঁশশ, হুঁশশ…

মানুশ দুইটা হাঁটতেছে
একটা গরু’র চিন্তা নিয়া মনে
আর
চাকা দুইটা চলতেছে ক্যাঁচ ক্যাঁচ কইরা
মাটির রাস্তা দিয়া,
তখন সন্ধ্যাবেলা, সূর্য ডুবে যাইতেছিল

আর গরুটা
উদাস

একটু পরে পরেই বলতেছিল, হেই, হেই মানুশ!

 

তোমার শহরে

একটা বুড়া বটগাছ
ঝুঁইকা পইড়া দেখতেছে
শীতের দুপুরে এরা কারা – আসছে আমার কাছে?

শহরের ভোটার লিস্টে এদের তো নাম নাই।
তারপরও বসতে দিছে।

একটা ফুটবল সামনের মাঠে ঘুইরা ঘুইরা দেখতেছে আমাদেরকে

মরা পাতাগুলা উড়তেছে হঠাৎ হঠাৎ, বাতাসে

‘বলছিলাম না! কেউ আমাদেরকে দেখতেছে না।’

তারপর

শে মিলায়া গেলো আবার

আরো একটা না-দেখার ভিতরে

 

ছোট্ট একটা রিয়ালিটি আমার 

“একটা গানের ভিতরে, একটা কবিতার ভিতরে,
একটা দিনের হাহাকারের ভিতরে
তুমি আমারে হারায়া যাইতে দিও না!”

আমি বলি তারে,
ছোট্ট একটা রিয়ালিটিরে
আমার

আর সে
সরতে সরতে
এতো দূরে চইলা যায় যে,
মনেহয়

ছিলো-ই তো না!

 

মেঘনা ব্রীজ

যারা যায়, তারা কই যায়?
আর যারা থাকে, তারা কই থাকে?

একটা সন্ধ্যার ট্রেন,
অন্ধকার ব্রীজটার উপর দিয়া
যাইতে থাকে

আর
একটু পরে
ব্রীজটাও তো মুইছা যায়

একটু পরে, দেখা যায় না কিছুই

 

শাহেরজাদী

অন্য ঘর থিকা কেউ
অন্য আরেকটা ঘরে চইলা যায়

আমি একটা ঘরের ভিতর
বইসা থাকি, শুনি

কিছু শব্দ, কিছু আওয়াজ
পাখিদের কথা-বলার মতন
একটু দূর থিকা আরো দূরের দিকে
চলে যাইতেছে

হয়তো
একটা ঘর থিকা
অন্য আরেকটা ঘরে

অথবা, অন্য কোন দিকে

একটা নিরবতা আইসাই তো
বইসা থাকে
প্রতিটা শব্দের শেষে,

আর
হারায়া যায়, কয়;

বিদায়!

আমারে…

 

আমার কাছে 

আমার কাছে আসার পরে,
আমার মতো চুপ কইরা আছে, আমার মন

একটা শীতের দিনের বিকালের মতন?

২.
একটা বাস চলে যাইতেছে হাইওয়ে’র রাস্তায়

একটা রিকশা ডক্কর ডক্কর, টুং টাং

কিছু পাতা উড়তেছে, ধুলার মতন

একটা আওয়াজ আসতেছে, ট্যাপ থিকা পানি পড়ার

দৃশ্য মুছে যাইতেছে

শব্দগুলা পইড়া থাকতেছে,
তোমার উচ্চারণের অপেক্ষায়

কেউ কথা বলতেছে, কেউ বলতেছে,
‘আর কোনদিন কোন কথা বলবো না আমরা আর,
ঠিকাছে?’

Leave a Reply