কবিতা: নভেম্বর, ২০১৮

ওয়ান লাইনার

ভাষার চাইতে অধিক বোবা একটা সকাল, রিকশাভ্যানের চাকার মতোন ঘুরতে ঘুরতে চলে যাইতেছে লাউয়ের মাচা’র সাইড দিয়া…

 

স্টিলেটো

টক, টক, টক
শি টকস, শি টকস

লাইক অ্যা স্টিলেটো, ওয়াকস অন মাই ব্রেইন-রোড

 

ধোপা-দীঘির পাড়

ভুল করতে করতে ঠিক পূজার মন্ডপের কাছে চইলা গেলাম আমি। ভাবছিলাম, দূর থিকা দেইখা চইলা আসবো। দূরেই আছিলাম, রাস্তায়। একটা বিল্ডিংয়ের নিচে খোলা জায়গায় পূজার প্রিপারেশন চলতেছে। তখন একজন আমারে চিইনা ফেললো, ‘কইলো আপনে অর ফ্রেন্ড না! দেখছেন ও এখনো আইলো না!’ আমি কইতে পারি না কিছু… ব্ল্যাংক লুক দিতে দিতে ফিরা আসতে থাকলাম। গাড়িতে উইঠা ফিরা আসতে থাকলাম, যেইখান থিকা আসছিলাম আমি। আর তখন এই যে সে চিইনা ফেলতে চাইতেছিলো আমারে সেইটা আমার ভিতরে চইলা আসলো আর আমি তো কোনভাবেই চাইতেছিলাম না নিজেরে বুইঝা ফেলতে, তাইলে তো এই রিয়ালিটি’টাতে থাকতে পারবো না আমি!

ফিরা’র পথে ড্রাইভার যখনই ধোপা-দীঘি’র পাড় দিয়া গাড়ি ঘুরাইতে নিছে, আমি কইলাম এই মোড়টা তো না… তখন সে সামনে চইলা গেলো আর আমি বুঝতে পারলাম ওইটাই ছিলো ঠিক রাম্তা, আর ওইটা ধোপা-দীঘির পাড়। সামনে চইলা যাওয়ার পরে তারে ফিরতে কইলাম। আর সে ফিরার পথ ধরলো।

আমার মনে পইড়া গেলো, বাচ্চাদের স্কুলে নামাইতে হবে। সাকিবের ড্রাইভার তো তার বউ’রে নিয়া গেছে। ট্রল হইতেছে। মাদ্রাসার পোলাপাইনগুলি সেক্যুলার স্পেইসে চইলা আসতেছে, আসতে হইতেছে, তাদের নেগোশিয়েট করতে হইতেছে, হোয়াট টু ডু! আমারেও আমার রিয়ালিটি নেগোশিয়েট করতে বলতেছে। বাচ্চাদের স্কুলটা কোনদিকে, কোন মোড়ে অরা দাঁড়ায়া আছে? আমি রিয়ালিটি’টা থিকা বাইর হয়া গিয়া রিয়ালিটি’টার কথা ভাবতেছি।

ধোপা-দীঘির পাড়ে যাইতে পারতেছি না।

 

কড়াইল বস্তি-গ্রাম

কড়াইল বস্তি-গ্রামের পাশ দিয়া যাই
যাওয়ার সময় ব্রীজ থিকা দেখি,
ড্রেজিং মেশিন, এখন বিকাল…

বনানী টাউনের পিছনে সূর্য ডুইবা যায়

 

কয়েকটা জানা চড়ুইয়ের মতোন

বিন্দু বা বিসর্গের মতো কিছু না কিছু তো জানা-ই যায়;

এমন কি জানতে না চাইলেও
কয়েকটা জানা চড়ুইয়ের মতোন
পার্কের ঘাসে আইসা বইসা থাকে, দুপুরবেলায়

চা খাওয়া দেখে আমাদের,
দেখে, তারপর আমরা চইলা যাই,
অন্য কোথাও

বিন্দু আর বিসর্গের মতোন কয়েকটা জানা
থাকতেই থাকে, দুপুরবেলায়

সন্ধ্যা পার হয়া হয়তো চইলা যাবে তারা
রেলস্টেশনের টিকেট কাউন্টারের উপরে
এসি’র খোঁপে, ছন দিয়া বানানো তাদের বাসায়,
ঘুমায়…

যদি না আবার কোন দুপুরবেলায়
অদেরকে দেখি আমরা, বিন্দু ও বিসর্গের মতোন:

ছিলো, বা আছেই, কিন্তু এখন নাই!

 

জুতার দোকানে

(তারপর ঘাসের জঙ্গলে পড়ে আছে তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি – উৎপলকুমার বসু)

তারপরে, ঘাসের জঙ্গলে উৎপলকুমার বসু
পইড়া থাকতে পারে তো ঘাসের ভিতর
এক জোড়া জুতার একটা, ‘তোমার’ই হয়তো

রাস্তায় যাইতে যাইতে দুপুরে দেখতেছি আমি
সেই ছবি, জুতার দোকানে
এখনো ব্যক্তিগত না সে, বাজারে বেচা হইতে চায়

‘শীতের পরে আসবে তো বসন্ত’
এই কথাও বলতেছে মনেহয় সে,
হেমন্তের বাতাসে;

তারপর, উৎপলকুমার বসু, আপনার চটি’রে যে
আমি জুতা বইলা ফেললাম
আপনে শুইনা মুচকি মুচকি
হাসতে পারতেছেন তো! 🙂

 

একটা হোটেল রুমে

মরার লাইগা কোন তাড়াহুড়া নাই
মরার লাইগা পর্দা টাইনা দিয়া বইসা আছি
একটা হোটেল রুমের খাটে হেলান দিয়া
দেখতেছি, দুপুরের রইদ সইরা যাইতেছে, বিকালের দিকে
গাছগুলির ছায়া দীর্ঘ হইতে হইতে হারায়া গেলো তারপর
সন্ধ্যার অন্ধকারে

তখন মনে হইলো, জাইগা উঠতে পারি তো আমরা
অথবা মরতে যে চাই, তা নিয়া
এতো তাড়াহুড়ার তো কিছু নাই

তুমি ঘুমাইতেছো,
জাইগা উঠার পরে আমরা ভুইলা যাবো
কি নিয়া ঝগড়া করতেছিলাম,
আর তারপরে ঘুমায়া পড়ছিলাম

ঘুম থিকা উঠার পরে আদর করবো, মদ খাইতে যাবো
ফিরা আইসা আবার ঝগড়া করবো
শেষে আবার আদরও করবো, এই ভাইবা যে,
আর তো কয়টা দিন…

সকালবেলায়, সামনের দালানের ছাদে
করলার ফুল দেইখা মনে হবে
শীত আসার আগে
ঝইরাই তো যাবে আমাদের শরীর!

কি হবে আর এতো তাড়াহুড়া কইরা…

আর তারপরও একটা কন্সটেন্ট অস্থিরতা
থাকতেই থাকে, দেয়াল ঘড়ির কাঁটা’টা
ঘুরতেই থাকে
টিকটিকির লেজের মতোন
কখোন যে খইসা পড়বে!

আমরা তো জানি না…

 

থাকা

‘আরো একটা প্রেমের ভিতর থাকতে থাকতে
ভুইলা যাবো যা, সেইটা তো তোমারই প্রেম…’
বুঝায় শে আমারে হাত নাড়ায়া নাড়ায়া

তারপর চুপ কইরা থাকার পরে একটু,
কয়, ‘তুমি তাইলে যাও গা…’

আমি দেখি, আমার থাকা আর না-থাকা
এমন কোনকিছুই না

যে কোন একটা প্রেম যে কোন একটা প্রেম না থাকার মতোই ঘটনা…

 

বেলের শরবত

কোনটা ভালো বেলের শরবত?
তুমি বলতেছিলা, পানি পানি হবে না
দুধ থাকতে পারে কিছুটা বরং,
বাঁশের চালনি দিয়া ভালো কইরা ছাঁকা হইতে হবে
গ্রাউনোউলসগুলি থাকা যাবে না
খাইতে হবে আস্তে আস্তে…

তখন বিকাল,
বৃষ্টির পরে পেইল রংয়ের ঝাপসা আকাশ

একটা বেলের মতো টুবলা হাসি দিয়া আমি কইলাম,
আচ্ছা!

 

ডিম্পল

তুমি নাই বইলা আমি আর. ডি. ল্যাং’রে খুঁইজা বাইর করলাম
পিকি ব্লাইন্ডার্স ডাউনলোড করলাম
এই-সেই করতে করতে শেষে
ডিম্পলের আন্ধারে গিয়া বসলাম সন্ধ্যাবেলায়
পাশের চেয়ার’রে কইলাম, ‘আমি তো আছি, তাই না?’

শুইনা চেয়ার’টা হাসে, টেবিল’টা কুঁচকায়া তাকায় একটু
তারপরে অরাও উদাস হয়,
কয়, ‘হ, আমরাও তো আছি…’

থাকতে থাকার নামে কতকিছু যে থাকে,
যেমন আছে, তোমার কয়েকটা ছবি, তুমি নাই’টাও তো থাকেই…

 

নন-এগজিসটেন্স

একটা বেদনার উপর আছাড় খায়া পড়লো
সব চিন্তা আমার;

একটা প্লেজারের গর্তে ইন্দুর খুঁজতে গিয়া
সাপ বাইর কইরা আনলা তুমি;

আমিও হাসলাম তোমার হাসি দেইখা,
হিউমারের মতোন হালকা কুয়াশা সরে যাইতেছিলো তখন

 

টাইমল্যাপস

তুমি ফিরা গেলা তোমার না-থাকা’র কাছে;
আমি একটা গাছের ছায়ার কাছে গিয়া জানতে চাইলাম,
‘কখোন সন্ধ্যা হবে?’

ধী র এ এ ধী র এ এ এ 
অথবামোমেন্টেরভিতরে
নিইভা গেলো শে, একটা অন্ধকারে

গাড়িগুলি চলে যাইতেছিলো তখন সিটিলাইটসের ভিতরে
টাইমল্যাপস অন করা ছিলো ক্যামেরায়
দেখা যাইতেছিলো না আর, কে যে যাইতেছে, এতো তাড়াতাড়ি, কোনদিকে…

 

ওয়ান লাইনার

একটা আলো ফিরা যাইতেছে তার অন্ধকারের কাছে…

 

দুপুর

কাঠের কাজ করতেছে কেউ,
একটা ফ্যামিলি বাসা শিফট করতেছে পাশের বিল্ডিংয়ে,
দুপুরের নিরবতা ভাঙতেছে আছরের আজান, মানুষের কথা-বার্তা, রিকশার টুং টাং…

 

Leave a Reply