কবি, তত্ত্ব-চিন্তাবিদ এবং সমাজবিপ্লবী

এই তিনটা জিনিস ত এক না! কিন্তু আবার একইরকম হইতেও ত পারে!

আমার আগ্রহ মূলত কবি’রে নিয়া বলার। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

কবি’র কাজ কি? কবিতা লেখা। কিন্তু সে কি চিন্তাবিদ হইতে পারবে না তাই বইলা এবং সমাজ-বিপ্লবী? মুশকিলটা হইলো, এই দুইটা জিনিস ছাড়াও সে কবি হইতে পারে কিনা! মানে, ‘একলা ঘরের কোণায়’ বইসা যে কবি লিখতেছেন কবিতা, তিনিও দিনশেষে একজন চিন্তাবিদ এবং সমাজবিপ্লবী না হইলে, কবি হইতে পারবেন কিনা – এইটাই জিজ্ঞাসা।

জনমানসে এইটা সম্ভব হয় বইলা মনে হয় না।

ধরেন, এমনে তো অনেক কবি-ই আছেন তত্ত্ব-চিন্তা করেন এবং সমাজ পরিবর্তনে বিপ্লবী ধারণা নিয়া কাজ-কাম করেন, কথা-বার্তা বলেন। এর বাইরে কেউ যদি এইটা নাও করেন সিগনেফিকেন্টলি, আমার ধারণা, এইটা তার উপর চাপানো হয়। তা নাইলে জনমানসে কবি হওয়াটা বেশ দুর্বল একটা ব্যাপার মনে হইতে পারে। এই যে পারসেপশন, এইটা নিয়াই চিন্তিত হওয়া।

[এর একটা হিস্ট্রিক্যাল ব্যাপার-ও থাকতে পারে। আগেরদিনের যারা কবি ছিলেন, তারা অনেকে তো কবিরাজও ছিলেন, মানে অসুখ-বিসুখ সারাইতে পারতেন, পারস্যের কথা মনে কইরা বলতেছি। বা জ্ঞানীও ছিলেন উনারা, অনেক বিষয়ে জানা-শোনা থাকতো, এই এক্সপেক্টশনটা পরে যারা কবিতা লিখছেন তাদের উপরেও চইলা আসতে পারে। হয়তো ধীরে ধীরে ফেড হইছে জিনিসটা, কিন্তু টাইম লাগছে। বা লাগে।

যেমন ধরেন, রবীন্দ্রনাথ অনেক জ্ঞানের কথা বলছেন বা নজরুল ব্রিটিশ-আমলে জেলে গেছেন – এই জিনিসগুলি উনাদেরকে ‘কবি’ ভাবতে হেল্প করে তো। যার ফলে, এখনকার টাইমে যারা কবিতা লিখবেন, তাদের কাছ থিকাও ব্যাপারটা এক্সপেক্টেড। যদি না থাকে, তখন সন্দেহ হইতে পারে পাবলিকের যে, ‘কবি’ তো, নাকি?

মানে, যিনি দুইটা জ্ঞানের কথা কইলেন না বা ‘বিপ্লবী’ কাজ করলেন না – তখন তারে ‘কবি’ বইলা ভাবতে পারাটা কিছুটা টাফ হওয়ার কথা।

একজন কবি, কবিতা-লেখার বাইরেও সোশ্যালি এবং হিস্ট্রিক্যালি কন্সট্রাক্টেড একটা ইমেজ।]

কবিতা তো খালি তা না, যা লেখা হয়। বরং কবিতা সেইটাই হয়া যায়, যেইভাবে তারে রিড করা হয়।

কবিতার সাথে কবি’র ব্যক্তি-জীবনরেও রিড করা হয়। যেমন ধরেন, অক্টাভিও পাজ এবং পাবলো নেরুদা দুইরকমের কবিতা লিখছেন বইলাই দুই ধরণের কবি না, বরং দুইরকমের যে জীবন-যাপন করছেন এইটাও একটা ফ্যাক্টর হিসাবে থাইকা যায়। এই জীবন ত কবিতারও একটা বাই-প্রডাক্ট! মানে, একটা কবিতা লেখার পর দেখা গেলো, কবিতাটা আপনার জীবনে ঘটতে শুরু করলো।

এখন জীবনের কোন অংশটা নেয়া হইবো আর হইবো না, এইটারও একটা ‘আরোপ’ থাকে। যেমন, জীবনানন্দ দাশের বেকার-জীবনরে ব্যাপকভাবে নেয়া হয় তার কবিতা রিড করার সময়। কাজী নজরুল ইসলামের করুণ শৈশব। অথচ জীবনানন্দ পরে মোটামুটি ‘ভালো’ চাকরি পাইছিলেন আর নজরুল তো ইভেন মোটরকারে চড়তেন তখন; কিন্তু জীবনের সামগ্রিকতা সিগনিফাইড হইতেছে তার নির্বাচিত ঘটনা দিয়া…

আবার ধরেন, বিদ্যমান চিন্তা এবং সমাজ-ব্যবস্থা নিয়া যদি কোন সমালোচনা না থাকে তাইলে একজন কবি কবিতা লিখবেন কেন! কিন্তু এইটা করতে গিয়া নতুন কোন তত্ত্ব-চিন্তা হাজির করতে পারলেন কিনা বা কোন সমাজ-বিপ্লবরে উসকাইয়া দিতে পারলেন কিনা এইটা তার কবিতার সাফল্য বা বিবেচনা হিসাবে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? – এইরকম একটা জিজ্ঞাসা আসছে মনে।

ব্যাপারটা খুবই সামান্য। কবি’র সাথে চিন্তাবিদ এবং সমাজ-বিপ্লবীর মিল ও পার্থক্য খুঁইজা বাইর করা কিংবা একটা সর্ম্পকের মানদন্ড এস্টাবলিশ করা না। এই যে ব্যাপারগুলা একজিস্ট করে, সেইটার সর্ম্পকে নিজেরে একটু ক্লিয়ার রাখা।

 

সেপ্টেম্বর ৭, ২০১১

Leave a Reply