কি কারণে ইন্ডিয়া এখন বাংলাদেশের ‘জাতীয় শত্রু’

মিছা কথা কথা যে খালি মানুষ পারসোনাল লাইফে কয়, এইরকম না কিন্তু; বরং সমাজ, রাষ্ট্রে, হিস্ট্রি’তে অনেকবেশি থাকে, থাকতে পারে। যেমন, টার্কিশ’রা যে ১৫ লক্ষ আর্মেনিয়দের মাইরা ফেলছিল ১৯১৫ সালের দিকে, এই কথা তুরস্কে পাবলিকলি বলাটা ‘মিছা কথা’ বলার মতোন। এইটা ফার্স্ট জানছিলাম, ওরহান পামুকের নামে যখন মামলা হইছিল ২০০৫ সালে, তখন। এইটা এক রকমের ‘রাষ্ট্রীয় মিছা’, আর হিস্ট্রিক্যাল ট্রুথ।

তো, গতকালকে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপের সেমিফাইনালে যখন ইন্ডিয়া হারলো নিউজল্যান্ডের কাছে, তখন ঢাকার রাস্তা-ঘাটে মানুষের আনন্দ দেইখা সন্দেহ করার কোন কারণ নাই যে, এই সময়ে ইন্ডিয়াই হইতেছে বাংলাদেশের ‘জাতীয় শত্রু’। ১০/১২ বছর আগে এইরকম ডেফিনিট কইরা বলাটা মেবি টাফ-ই ছিল। এই কারণে মনে হইছে, রিস্ক নিয়া হইলেও একটা ‘সত্যি’ কথা বলার ট্রাই করা যাইতে পারে।

বাংলাদেশিদের ইন্ডিয়ারে পছন্দ না করার অনেক কারণ আছে: বর্ডার-কিলিং, বাজার-দখল, তিস্তার পানি… কিন্তু একটা হিস্ট্রিক্যাল মিসরিডিংয়ের কথা আমি বলতে চাইতেছি এইখানে।

জিনিসটা নিয়া একবার আলাপ হইছিল, যখন বলিউডে ‘গুন্ডে’ সিনেমা রিলিজ হইছিল, ২০১৪ সালে। তখন সিনেমা শুরু’র দিকে দেখানো হইতেছিল, ১৯৭১ সালে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা। মানে, বাংলাদেশের কোন কথা-ই নাই! যুদ্ধ’টা জানি খালি ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের মধ্যেই হইছিল! (শশী থারুর একবার এক ভাষণে ব্রিটেনের কাছে ইন্ডিয়ার সম্পত্তি ফেরত দেয়ার দাবি করছিলেন, অইখানে উনার কথাতে মনে হইতে পারে, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ যেন ইন্ডিয়াই! উনি পাকিস্তান আর বাংলাদেশের কথাও কইবেন – এক্সপেক্টশন এইটা না, কিন্তু গায়েব কইরা দেয়ার চালাকিটা খেয়াল করা দরকার।)

সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে জাপানের সারেন্ডারের দলিল

সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে জাপানের সারেন্ডারের দলিল

কিন্তু ফ্যাক্ট’টা কি আসলে? যুদ্ধ তো একটা চলতেছিল – বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে, ইন্ডিয়া পরে জয়েন করছিল বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু শেষে পাকিস্তানি মিলিটারি তো বাংলাদেশের কাছে না, ইন্ডিয়ার কাছেই সারেন্ডার করছিল। ছবি আছে। সারেন্ডার ডকুমেন্টে জেনারেল অরোরা’রে “General Officer Commanding in Chief India and BANGLADESH”-ও বলা হইছে। সারেন্ডারের পরে কিছুদিন ইন্ডিয়ার মিলিটারিরাও ছিল বাংলাদেশে পাকিস্তানের মিলিটারির জায়গায়; তারপরে তারা কুইট করছে। ইন্ডিয়ার কাছে যেহেতু সারেন্ডার করছে, এই কারণে পাকিস্তানিরা যদি কয়, তারা বাংলাদেশের কাছে হারে নাই, ইন্ডিয়ার কাছে হারছে; আর ইন্ডিয়াও যদি কয়, অরা যুদ্ধ করছে আর জিতছে; এই ক্লেইম’টা কতোটা ‘মিছা’ আসলে?

নো ডাউট, এই মিছা কথা-ই আমাদের কাছে। পাকিস্তান যা ইচ্ছা মনে করুক, কিন্তু ইন্ডিয়া যে এইটারে মিছা কথা বইলা মনে করে না, সেইটা মানা’টা তো ঝামেলার বেশি! আর ইন্ডিয়া যে এই মিছা কথা কয় সবসময় বা এইরকম চালাকির সুযোগটা নেয়, সেইটা ভালো-লাগার তো কোন কারণ নাই আমাদের, বাংলাদেশিদের। (আগেও ভাবতো মেবি এইরকম, কিন্তু এইরকম ভিজিবল ছিল না, এখনকার পলিটিক্যাল ইন্টারফেয়ারেন্সের কারণে চোখে পড়ার কথা ব্যাপারটা।)

মানে, আমরা জানি যে, ইন্ডিয়া বাংলাদেশরে হেল্প করছে; এখন ইন্ডিয়া কয় যে, হেল্প করে নাই, অরা-ই আসলে যুদ্ধটা করছে আর জিতছে। এইটা তো মিছা কথা! কিন্তু আমাদের ‘সত্যি’টা কতদূর তক ক্লেইম করতে পারছি আমরা? দলিল-দস্তাবেজ চেক করা দরকার না কিছুটা, আমাদের?

এইটা নিয়া যদি কনক্রিট কোন আলাপ থাকে, কেউ শেয়ার কইরেন।

সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে জার্মানির সারেন্ডারের কাগজে সিগনেচারগুলা

সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে জার্মানির সারেন্ডারের কাগজে সিগনেচারগুলা

Leave a Reply