মিডলাইফ ক্রাইসিস

[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]
‘তোমার জামাই তোমারে ভাঁজ দিলো আর তুমি প্যাঁচ খায়া গেলা!’

‘তুমি জানো, ইটস নট ট্রু! তুমি একটা বাজে লোক আমি জানি, কিন্তু এই সময়ে আমারে ডিসট্রাক্ট করাটা অন্তঃত স্টপ করো!’

‘তোমারে যদি আমি ডিসট্রাক্টই না করতে পারি তাইলে তোমারে আমি কেমনে ভালোবাসবো? তোমারে ত আমি আমার ইলিউশনের মধ্যে নিয়া যাইতে চাই। সেইখানে তুমি বন্দী রাজকন্যা আর আমি রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মী। দেখো, একটা রিলেশনের কাজই হইলো একটা ইলিউশনরে সম্ভব কইরা তোলা। যাতে কইরা এর ভিতরে আমরা নিজেদরেকে আটাইতে পারি। এখন সুমন পারতেছে। কারণ সে তোমারে কনভিন্স করার লাইগা টাইম পাইছে। তোমরা একই প্যানে হাগা-মুতা করো। আমি ত বাল তোমার চুলের গন্ধটাও ভুলে গেছি। বিশদিন পরে পরে একটা ঘণ্টা খালি; তোমার সাথে এইটুক সময়ের মধ্যেই আমি শেষ। সুমন রে সুমন!’

নিম আর হাসে না। শে তার কাপড় পড়তে শুরু করে।

একই ট্রিকস বারবার কাজ করে না আসলে। প্রথম প্রথম আমরা সুমনরে নিয়া হাসতাম। কুত্তা-বিলাই নিয়া যেমন আমি হাসতে পারি, মানুষ নিয়াও পারি যে সে আসলে মানুষ না তেমন একটা। কোনকিছুরে তার অ্যাকজেগ্ট অবস্থা থিকা রিডিউস না করা গেলে ত হাসা যায় না। এইটা একটা চালাকি ওরে ইগনোর করার, ইস্যুটারে হালকা কইরা ফেলা। কিন্তু চালাকিটা হইলো প্রেমের শত্রু। সুমন আমাদের কাছে বোকা থাকতে থাকতে জিইতা যাইতেছে। আই ক্যানট প্রুভ যে, আমি আরো বড় বেক্কল। আমার আত্মা বেইচা দিছি আমি খামাকা ফ্লার্ট করতে গিয়া। আমি রিয়েল প্রেমিক হইতে চাইতেছি আর ওরে বাইন্ধা ফেলতে চাইতেছি এইভাবে আমার ভাবনার ভিতরে; আর নিজেও আটকাইয়া যাইতেছি। রিয়ালিটির কি যে যন্ত্রণা, কারণ রিয়ালিটি কনসেপ্টটা কখনোই প্লুরাল হইতে পারে না, অথচ আমাদের কল্পনায় কতকিছুই না সাজাইতেছি আমরা।

এইটা খুবই ভয়ংকর একটা গেইম। আমি জানতাম। আমারে মাসুদ রানা হইতে হবে; টানে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না… কিন্তু আমি হইলাম জাস্ট রিভার্স; বাঁধনে জড়াইতে চায়, কিন্তু টানতে পারে না… ইন দ্যাট কেইস নিশিন্দা হইলো গিয়া বেক্কল’টা। শি নোটিসড যে, আমি পারি না এবং আমার বোকামি’র সাথে তার বোকামিটারে মিলাইয়া ভজঘট’টা পাকাইলো। যে, রিয়ালিটি এগজিস্ট! আরে, আমি ত প্রেমে পড়তেই পারি। কোনকিছু না জাইনা এবং না বুইঝা। বেক্কল হিসাবে এইটা আমার অভ্যাস, আমার কোয়ালিটি। ওরও যে কোন কুক্ষণে নিজেরে বেক্কল প্রুভ করার লাইগা উতলা হইতে হইলো, আল্লা জানে!

নিম আর সুমন হইলো হাইস্কুল সুইটহার্ট। ক্লাশ নাইনে থাকতে সুমন যখন ওরে প্রপোজ করে, তার আগে থিকাই শে সুমনরে খেয়াল করতো। ঠিকই ছিল এইসব। একটা সময় আমি ভাবি, শে নিশ্চয় সুমনরে কইতো, ‘একটা লোক আছে ইতর টাইপের; আমার দিকে কেমনে জানি তাকাইয়া থাকে; দেখলেই কেমনে গা ঘিন ঘিন করে আমার!’ বইলা শে তার শরীরটা আরেকটু ঠেইলা দিতো সুমনের দিকে। ফিলিংসটারে মোর বিশ্বাসযোগ্য করার লাইগা। আমি ভাবি এইসব। হইতেই পারে। কে জানে, আমি কি নিশিন্দার কথা কইছি নাকি নিম’রে; যে শে আমারে সুমনের কথা কইবো।

গল্পের ভিত্রে আমি একটা কঠিন ভিলেন। বাজে লোক। আমার বউ সিদাসাধা, ইনোসেন্ট; মেয়ে আর জামাই ছাড়া কিছু জানে না বা জানতে চায় না। ছোট মেয়েটা মারা যাওয়ার পরে বড় মেয়েটারে নিয়াই সারাদিন থাকে। ফেইসবুক দেখলেই সন্দেহ করে।

অন্যদিকে ছেলেটা হইলো নিশিন্দার জান। সুমন বা আমি দুইজনেই ধইনচা আসলে। নিশিন্দা তার মা-হওয়াটারেই মেয়ে হওয়া ভাইবা নিতে পারছে। আর এইটা শে কোনভাবেই ছাড়তে রাজি না। এখন পোলার লাইফ সিকিওরড করার লাইগা আবার সুমনরে ধরছে। আমি যে বাজে লোক সেইটা আমার এই ভাবনাটা রিকমফার্ম করে আবার। কারণ ওরা ত এমনিতেই নাইস কাপল!

মাঝখান দিয়া আমি, কাবাব মে হাড্ডি। এখন শুয়া শুয়া আপনার ধোন হাতাই। গান শুনি। বিরহ বড় ভালো লাগে; শচীনকর্তা, জীবনে যিনি সবই পাইছেন, গাইতেছেন এখন, আমার মোবাইলে।

এই গল্পের নারী’রা সবাই স্ট্রং উইমেন: সিংহরাশির জাতিকা আর কঠিন তুলা। কিন্তু রাশি যা-ই হোক, এত এত কনফিডেন্ট এরা! আমি অর্থাৎ নায়কের বেকুব হওয়া ছাড়া আর কোন পথই থাকে না। তবে ঝামেলাটা বাঁধে নিম আর নিশিন্দার বার্থডে নিয়া।  কে যে সিংহ আর কে যে তুলা! অগাস্টেই জন্ম কার? কার অক্টোবর? ছয় তারিখ না নয় তারিখ জানি! সারাক্ষণই কনফিউশন হয়। কে অতীত আর কে ভবিষ্যত? যেহেতু বর্তমান একটা শূণ্যস্থানের গর্ত, এইরকম একটা ধারণার ভিতর আমি পার হইতে থাকি। আমি আসলে কার সাথে কথা কই? অবশ্য এমনো হইতে পারে যে, ওরা মিউচুয়্যালি এক্সক্লুসিভ সত্তা, একজন থাকলে আরেকজন থাকতে পারে না বা একজন আসলে আরেকজনই। ওরা আসলে দুইজন না, মেবি কয়েকজন।

বা নিম যদি নিশিন্দা হইতে পারে, আমিও ত তাইলে হইতে পারি আরেকটা কিছু। অ্যাজিউম করতে করতে আগাই আমি। আমি কি রাসেল হইতে পারি না, পর্ণার ভাই? রেললাইনের স্লিপারে পা রাখতে রাখতে হাঁইটা যাই, স্কুল শেষে। একটু পিছে পিছে কাঁচুমাচু কইরা হাঁটি। বড়ভাই ত পাড়ার মাস্তান। কিন্তু আমি খেলাঘর করতে চাই। পর্ণাপা’র প্রেমিকের মতো হইতে চাই। চাওয়ার ভিতর হারাইয়া যাই একদিন। আর ফিরা আসি না। কোথাও কোন ঘাসের ভিতর ঘাসপোকা হয়া আটকাইয়া যাই। নাকি, কলেজের মাস্টার, ইকনোমিকস পড়াই। কালা একজন মানুষ। সুস্থ্য-সবল। হাসি দিয়া গায়ের রং লুকাই। শ্যামলা একজন বউ আছেন। ততোধিক সুন্দর একটা হাসির মতোন। মিশুক। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ওরাও সুস্থ্য-সবল, হাসি-খুশি। ফিজিক্যালি বা মেন্টালি চ্যালেঞ্জের কোন ঘটনাই নাই। তারপর আট বছর আগে একদিন। ঘুমানোর আগে রাতের বেলায় ষ্ট্রোক কইরা মারা যাই। হায় হায় এখন ত অনেক কষ্ট কইরাও নিজেরে চিনতে পারি না। কি নাম ছিল আমার? নাম ছাড়া কোন মানুষ হয় নাকি? নামটাই তো হইলো মানুষ।

নাম আছে বইলাই নিমের কথা ভাবতে পারি আমি। নিমের যখন বিয়া হয়া গেলো তখন খুব খারাপ লাগছিলো আমার। নারকোল গাছের পাতার মতোন দীর্ঘ বিকাল জানি ঘরের দরজায় আইসা বইসা আছে। এইটা কোন ঘটনাই না। নারকোল পাতাটা বুঝতেছে। আমি বুঝতে পারতেছি না। কেন আমরা পরস্পর সম্পর্কের দড়িতে ঝুইলা যাই। এইটা পলিগ্যামির কোন বিষাদ বা মনোগ্যামির আর্তনাদ না। একটা এম্পটি স্পেইস যেইখানে ইন্ডিভিজ্যুয়াল তার ইন্ডিভিজ্যুয়ালিটি নিয়া থরথর, কাঁপতে থাকে খালি। বিপদে মোরে রক্ষা করো, বিপদে যেন না আমি পড়ি! এইরকম। কারণ বিপদ তখন আবারো শুরু হয়া গেছে।

কনভারসেশনটা শুরু হয় আবার।

‘এতো মিথ্যা কথা তুমি কেমনে বলো! সত্য’র প্যাঁচ দিয়া তুমি এমন ভাব করো যে, মিথ্যাগুলা আসলে মিথ্যা না, এরা জানি সত্যি। এইভাবে, সত্যিকার অর্থে তুমি কি এচিভ করতে চাও? তুমি কি প্রমাণ করতে চাও যে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরের সত্যি এবং মিথ্যাগুলি চুদাচুদির সময়ের দুইটা শরীরের মতো, যে আলাদা করা যায় না? যার যার ধোনের আর বোদার বালে বালে গিট্টু লাইগা আটকাইয়া গেছে? আসলে তুমি নিজেই পুরাটা ফাকড-আপ। তোমার নিজের ঝামেলার ঝাল তুমি আমার উপরে ঢাইলো না।’

‘আমি মোটেই সেইটা করতেছি না। বরং তুমি নিজেরে দিয়া আমারে ডিফাইন করতেছো। একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে একটা জিনিস সত্য অথবা মিথ্যা-ই; এইখানে গ্রে কালারের আবিষ্কার আসলে ঘটনাটারে কাঁপাকাঁপি করা কোন গ্রাউন্ডে নিয়া যাওয়া, মৃদু মৃদু ভূমিকম্পের মতো, ট্রেনের ঝিকঝিক ঝিকঝিক শব্দের ভিতর মনোটোনাস কইরা তোলা; যাতে আমরা ভুলগুলা করতে পারি ইজিলি। এর বেশি আর কোন রহস্য এইখানে নাই। মানুষ আসলে যা, মানুষ আসলে তা-ই; যা তা একদম। বুঝলা? এইখানে আমি আমারে ডিফেন্ড করতেছি না, বরং তোমারে সেইভ করতে চাইতেছি, তুমি নিজেরে ঠকাইও না যে, তোমার ছেলে’র লাইগা তুমি এইটা করতেছো! এইটাই তুমি, যে পালাইতে চাও, প্রেম’রে প্রতারণা ভাইবা শেষে ট্রেনের নিচে চইলা যাওয়া: আন্না কারেনিনা!’

‘প্রেমের ত শেষ আছে! তুমি ভালো কইরাই সেইটা জানো। তোমার বিভ্রান্তির ভিতর খামাখা তারে চিরজীবী কমরেড ফরহাদ বানাইয়ো না।’

আমি টোনটারে টেম্পারড করার চেষ্টা করি তখন। মিনমিন বিলাইয়ের মতো, একটা ফেরেশতার মতো কথা বলার চেষ্টা করি।

‘আই অ্যাম নট ডান উইথ ইউ। আর তুমিও সেইটা জানো। তুমি ভয় পাও, যদি তুমি সত্যি সত্যি আটকাইয়া যাও। এই রিয়ালিটিরে তুমি মনে করো, ডুয়াল। ডুয়ালিটির বাক্সবন্দী জীবন থিকা তুমি মুক্ত হইতে চাও। কিন্তু ব্যাপারটা এট্টুকই না। তোমার মোরালিটি দিয়া তুমি তোমার লাইফরে আটকাইয়া ফেলতে পারো না। আর তুমি সেইটা জানো। এই কারণেই চিৎকার করতেছো, যাতে তুমি তোমার আবেগ দিয়া, ইনটেন্স দিয়া অস্বীকার কইরা ফেলতে পারো।’

‘আর তুমি কি ভাবো যে তোমার রিভার্স ইনটেন্স দিয়া তুমি পার পায়া যাবা?’

‘নাহ্! মাঝে-মধ্যে ক্লান্ত লাগে আর কি। এই যে এত এত কথা, সবই ত মিনিংলেস, তাই না?’

‘তুমি কি তাইলে এতোটাই ডেসপারেড? আমার বিশ্বাস হয় না। তোমার ফন্দিটা কি বলো?’

আমি কেমনে বলি! সত্যি এমন একটা পাত্থর যা সিসিফাসও তুলতে পারে না। পারলেও সে গড়াইয়া গড়াইয়া পইড়া যায়। আই ডেয়ার নট স্পিক। কিন্তু একটা কিছু ত বলা লাগবে আমারে। আমি কি বলি তারে? যে কোন উচ্চারণই সত্যি এখন। এই মোমেন্টে।

‘আমার বিভ্রান্তিরে তুমি খামাখা গ্লোরিফাই কইরো না!’

অ্যান্ড বলার পরেই বুঝতে পারি, কি ভুল আমি করলাম! ওইটা ছিল ওভারের লাস্ট বল। শর্টপিচ ধরণের। তার পুরা শক্তি দিয়া শট’টা খেললো শে। যদিও এক রান নিলেই শে জিততে পারতো। কিন্তু শে ছক্কাই পিটাইলো। এতোটাই অ্যাডামেন্ট শে, তার অস্তিত্বের লাগি। জান কোরবান। কি যে এক মুহূর্তের হাসি। শে বুঝে। আর আমি বুঝি।

‘তাইলে তুমি বলো, আমি কে, নিম না নিশিন্দা!’

এইটা ওর পুরান খেলা। নরমালি আমি বলি যে, তুমি বাঁধন, নিরবতার উপ্রে কস্টেপ আমার! আর জড়াইয়া ধরি তারে। কিন্তু এখন আর এইটা সম্ভব না, এই খেলার ভিতর আমরা পুরানারে আর ডাইকা আনতে পারি না। টাইম ইজ ওভার নাউ। একটা মুহূর্তের ভিতর আমরা আটকাইয়া যাই। ট্রাপড ইন আওয়ার অউন ট্রান্সলেশন।

আর সময় তুমি পাবা না, চান্দু; নিম বলে, নিশিন্দা বলে, বাঁধন-হারা হয়া।

তারপর চইলা যাইতে থাকে শে। শ্যাওলা-রঙের একটা জামা পইরা।

 

জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ়, ১৪২১।

 

Leave a Reply