নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ১]

বাংলাদেশের কোন ভার্সিটিতে কি কার্ল মার্কসের কোন লেখা বা বই কোন কোর্সে পড়ানো হয়?

২০/২৫ বছর আগে আমরা যখন ঢাকা ভার্সিটিতে ইকনোমিকসে পড়তাম তখন মার্কসিস্ট ইকনোমিকস বইলা একটা কোর্স ছিল, অপশনাল। অই কোর্সেও মার্কসের কোন টেক্সট ছিল না মনেহয়। উনার ইকনোমিক থিওরিগুলা নিয়া অন্য বই পড়ানো হইতো, আবু মাহমুদের বইও ছিল। এখন মনেহয় অই কোর্স পড়ানো হয় না আর। এইরকম সোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, মিডিয়া স্টাডিজ, বা অন্য কোন সাবজেক্টে কোন কোর্স কি আছে যেইখানে মার্কসের লেখা রেফারেন্স হিসাবে পড়ানো হয়? মার্কসিস্ট লিটারেচার তো থাকতেই পারে, কিন্তু আমি একটু ডাউটফুলও যে, উনার লেখা অইরকম ‘পাঠ্য’ হিসাবে নাই মনেহয়। ছিলো কি কখনো, সিক্সটিইজেও? (জানতেই চাইতেছি আসলে…)

আমাদের সময় যা দেখছি, মেইনস্ট্রিম একাডেমিয়া’তে, টেক্সটবুকগুলাতে মার্কসের চিন্তার কোন রেফারেন্স নাই, বা খুব কম। আমার ধারণা, প্যাটার্নের দিক দিয়া মার্কস্টিট চিন্তা একাডেমিয়াতে যেই ধরণের পড়াশোনা চালু আছে, তার লগে ফিট-ইন করে না, খুববেশি। উনার বই-পত্র, লেখালেখি মেবি সবসময়ই কম-বেশি আউটকাস্ট জিনিসই ছিল। যদিও বেশিরভাগ ভার্সিটির টিচারদেরই নিজেদেরকে মার্কসিস্ট দাবি করার একটা ব্যাপার আছে। ইভেন যারা শিল্প-সাহিত্য করেন ইন্টেলেকচুয়াল-এক্টিভিস্ট তাদের সবাইও কম-বেশি মার্কসিস্ট। কার্ল মার্কসের চিন্তারে অপোজ করা, সাবস্ক্রাইব করার বা মডিফাই করার একটা ঘটনা এখনো চালু আছে। মানে, উনার চিন্তা-ভাবনা তো এখনো একটা স্ট্রং রেফারেন্স পয়েন্ট।
তো, আমার একটা অনুমান হইতেছে যে, উনার লেখা-পত্র একাডেমিক প্রসেস মাইনা, ডিসিপ্লিন মাইনা তো লেখা হয় নাই এতোটা, যার ফলে অইভাবে শেইপ-আপ কইরা নেয়াটাও মুশকিলের, যার ফলে একাডেমিক জায়গাগুলাতে মোস্টলি মিসিং।… হাউএভার, ব্যাপারটা এইরকম না-ও হইতে পারে। আমি জাস্ট ভাবলাম, মেবি হইতে পারে…

রবার্ট ফ্রস্ট

একজন ক্রিটিক রবার্ট ফ্রস্টের প্রশংসা করতেছিলেন এই জায়গা থিকা যে, এলিয়ট, এজরা পাউন্ড উনাদের কবিতা ‘মর্ডান’ এবং এই কারণে ডিফিকাল্ট, কিন্তু ফ্রস্টের কবিতা এইরকম না। তো, রবার্ট ফ্রস্ট কইতেছিলেন, উনি কঠিন বা সহজ কবিতা লেখেন – ঘটনা’টা এইরকম না।

(আমার মনে হইতেছিল, এলিয়ট, এজরা পাউন্ডরা কি করতেছিলেন আসলে? উনারা খালি কবিতা-ই লেখেন নাই, কনটেক্সট’টারেও বানাইতেছিলেন যে, কবিতারে কই থিকা পড়তে হবে। শ’য়ে শ’য়ে রিভিউ, ক্রিটিক লেখতেছিলেন। অইগুলা একটা বেইজ তৈরি করতেছিল। এর বিপরীতে, রবার্ট ফ্রস্ট কবিতা নিয়া তেমন কোনকিছুই লেখেন নাই। উনি ধরে নিছেন, কবিতা নিজেই তার কনটেক্সট’টা তৈরি কইরা নিবে, বা কনটেক্সটরর লগে কানেকশনটা তৈরি কইরা নিবে। মেবি এইরকম।)

ফ্রস্ট বরং বলতেছিলেন যে, দুইটা জিনিস কবিতার ব্যাপারে ইর্ম্পটেন্ট। একটা হইতেছে, পারফর্মেন্সের ঘটনা থাকতে হবে, স্কোর’টা করতে পারতে হবে। আপনি যতো কিছুই করেন, যদি কানেকশন’টা ক্রিয়েট না করা যায়, পারফর্মেন্সটা না থাকে তাইলে জিনিস হবে না। (মানে, পারফর্মেন্স জিনিসটা ঠিক পারফর্ম অর্থে না, ভিজিবল হইতে পারার মতো একটা জিনিস।)

সেকেন্ড হইলো, উনি বলতেছিলেন, পোয়েটিক থট হোক বা যে কোন একটা থট যা করে তা হইতেছে, এদের “feat of association” থাকে, একটা জিনিস আরেকটা জিনিসরে জড়ায়া ধরতে পারে, কানেক্ট করতে পারে। আর এইভাবে নতুন কিছু ক্রিয়েট হয়।

তো, এইটা কবিতা নিয়া উনার ভাবনা, বা কবিতার কাছে উনার এক্সপেক্টশন, বা কবিতারে উনি এইভাবে দেখেন। এই জিনিসগুলারে কবিতা বইলা ধইরা নিলে আরেকটা ঝামেলাই হবে আসলে। 🙂

একজন কবি’র কবিরা গুনাহ হইতেছে মানুশ তারে ভালোবাসে

একটা জিনিস খেয়াল করছি, যেইসব ইন্টেলেকচুয়াল’রা কবিতা লেখতে পারেন না (বা লেখেন না), উনারা কবি’দেরকে (আমি বলবো) ভালো-রকমেরই হেইট করেন।* মানে, বাটে পাইলে ভালো রকমের মশকরাই করেন। যুগে যুগে কবি’রা এইরকম হেইট্রেটের শিকার হইছেন, হইতেছেন 🙂 (কবি’রাও তো আর “ধোয়া তুলসী পাতা” না….)

আবার যারা পাওয়ারফুল লোক (কুস্তরিকা’র “আন্ডারগ্রাউন্ড” সিনেমা দেখতে গিয়া খেয়াল করছিলাম, বা অন্য অনেক উদাহারণও পাইবেন) উনারাও দেখবেন অনেক সময় কবিতা লেখতে চান বা কবি হইতে চান। কেন?

কয়েক বছর আগে বলছিলাম, একজন কবি আর একজন ইন্টেলেকচুয়ালের ডিফরেন্সটা কোন জায়গাটায়? কবি হইতেছেন মানুশের কাছের লোক, আপনা মানুশ, ভালোবাসার ধন, এইসব কিছু। মানে, সে খারাপ, ফাউল, কোনকিছু বুঝে না, আজাইরা কথা কয়, কারেক্টার ভালো না… এইসবকিছু কইয়া বা বানায়া (মানে, মানুশ হিসাবে আমরা নিজেরাও তো কম-বেশি এইরকমই) খুব একটা লাভ হয় না। মানে, কবি হিসাবে আপনার যারে ভালোলাগে তারে আপনি ভালোইবাসেন, তার লগে অন্য কোন রিলেশন আসলে হইতে পারে না।

এখন একজন ইন্টেলেকচুয়ালরে যে আপনি ভালোবাসতে পারেন না – তা না, অনেক ক্ষমতাবান মানুশও আছেন বা থাকতে পারেন যারা ক্ষমতার কারণে ভচকায়া যান নাই, তাদেরকেও ভালোবাসতে পারেন আপনি। কিন্তু অইটা সমানে-সমানে হয় না সবসময়। বা অইটা বেইজটা না একজনরে ইন্টেলেকচুয়াল বা মহান ভাবার। কিন্তু একজন কবি’রে যদি আপনি ভালো না বাসেন, সে তো তখন কবি-ই না কোন আপনার কাছে!

তো, আমার ধারণা, কবি’রে যে মানুশ ভালোবাসে, আদর কইরা গাইল্লায়, কাছের লোক ভাবে, এই কারণে ‘কবি’ হওয়ার একটা তাগিদ থাকে, বা কেউ “কবি” বইলাই যে জরুরি কিছু না, অই জিনিসটাও প্রমাণ করা লাগে, অনেক সময় 😛

মানে, এইটা সুপিরিয়র কোন জিনিস না, কিন্তু অন্য সব সামাজিক পরিচয়ের চাইতে তো আলাদা জিনিসই, সবসময়।

…….
*আমার অবজারভেশন ভুলও হইতে পারে, কিন্তু আপনারা ভাইবা দেইখেন ব্যাপার’টা।

সাহিত্য আর সাংবাদিকতা

কয়েকদিন আগে এই জিনিস’টা মনে হইতেছিল; সাংবাদিকতা যে সাহিত্য হয়া উঠলো, সেইটা তো বেশিদিন আগের ঘটনা না মনেহয়। মানে, দুইটা ফর্মই ভাষা নিয়াই তো কাজ করে। আর শুরু থিকাই (অন্য অনেক মিলের পরেও) আলাদা দুইটা ঘটনা।

সাহিত্যে ‘সত্য’ জিনিস থাকতে পারবে না – তা না, কিন্তু এইটা কতটুক ‘সত্য’ – এইটা দিয়া যেমন ‘সাহিত্য’রে মাপা যায় না, একইরকমভাবে ‘সাংবাদিকতা’ জিনিসটার মানে ‘সুন্দরভাবে লেখা’ না আর কি! যখন থিকা ‘সুন্দরভাবে লেখা’ জিনিসরে ‘সাংবাদিকতা’ ভাবা শুরু হইছে তখন থিকা ‘সাংবাদিকতা’ ‘সাহিত্যের’ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়া উঠে নাই, বরং নিজের জায়গাটা হারাইতে শুরু করছে, বাংলাদেশে।
এইটাই ঘটছে, বা এই কারণে ‘সাংবাদিকতার’ জায়গাটা রিস্কে পড়ছে – ব্যাপার’টা এইরকম না। বরং অন্য অনেক ঘটনার সাথে এই ঘটনাটারও কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা, বা আছে।

ভাষা: ১০১, শেয়ালের লেজের মতন একটা নিরবতার কথা

অনেকসময় শব্দের কোনোটেশনই (connotation, মানে সুর’টা, বলার ধরণ’টা, অন্য শব্দের লগে রিলেশনটা) শব্দের মিনিং ঠিক কইরা দিতে থাকে…

ভাষার বদল সবসময় ব্যবহারের ভিতর দিয়া হয়, ব্যাকরণের ভিতর দিয়া না।

এই কারণে যারা লেখেন বা বলেন; রাইটার’রা, নায়ক-নায়িকা, পলিটিক্যাল লিডার, পাবলিক সেলিব্রেটি’রা… এইরকম যারা আছেন, তাদের লেখা বা কথা-বলার ভঙ্গি’টা ইর্ম্পটেন্ট – এইরকম খালি না, বরং যারা মানুশের কথা-বলার, ভাষা-ব্যবহারের জায়গাগুলা নিজেদের কাজকামের মধ্যে নিতে পারেন, উনারা ভাষার ফ্লো’র লগে থাকতে পারার ভিতর দিয়া পাবলিকের কাছাকাছি থাকতে পারেন বরং।

মানে, ‘ইমরুল হাসানের ভাষা’ বইলা কিছু নাই। আমার সময়ের মানুশ-জন যেই ব্যাকরণ-না-মানা (সেই অর্থে, জটিল এবং) সহজ বাংলা-ভাষা ইউজ করেন, লেখালেখির ভিতরে আমার চেষ্টা সবসময় অইটার কাছাকাছি থাকার।

ভাষার ভিতরে ব্যাকরণের প্রেজুডিস নিয়া পইড়া থাকলে কথা বলতে পারবেন না, বস! অইগুলা অটোমেটিক্যালি কিছু একো বা প্রতিধ্বনি’র বাইরে কিছু হয়া উঠতে পারবে না।

গরিবের কথা শোনেন, লেজ কাটাইলে আপনি শেয়াল থাকতে পারবেন না – তা না, কিন্তু ‘শহুরে শেয়ালের’ কথায় লেজ কাটাইবেন কিনা, সেইটা ভাববেন না?

গ্রামারের বাইরে গেলেই ‘নতুন সাহিত্য’ তৈরি হয়া যাবে না। কিন্তু ‘সাহিত্য’ করতে হইলে, কথা কইতে হইলে ‘গ্রামার’ মানতে হবে, ‘শুদ্ধ-ভাষায়’ কইতে হবে – এইটা হইতেছে “ভাষা-পলিটিকসের” (এবং আপনারে কথা বলতে না দেয়ার এবং কন্ট্রোলেরও) সবচে কোর জায়গা। এইটা মনে রাখবেন।

কুয়ার ব্যাঙ হইতে পারাটা কেন জরুরি একটা জিনিস

আপনি যেমন “সবাই”রে চিনেন না, “সবাই”ও আপনারে চিনবে না। আর এইটা কখনোই জরুরি না।

আপনার ইন্টারেস্ট যদি থাকে লিটারেচারে, হিস্ট্রিতে তাইলে ফিজিক্সের, বায়োলজির সবকিছু জানার দরকার তো আপনার নাই! জানতে পারবেন না, বা জানলে আপনার লস হবে – তা কখনোই না, অনেক সময় হয়তো হেল্পও করতে পারে; কিন্তু অইটা যে বাড়তি ঘটনা, বা তেমন কিছু মিন করে না বেশিরভাগ – এই বুঝটা না থাকলে লিটারেচারের জায়গাতে আপনি কনসানট্রেটই করতে পারবেন না! মানে, আপনি কি জানতে চান, সেইটা আপনার সময়ের, আপনার নিজের সার্চিংয়ের একটা ঘটনা। আর যদি সত্যিকার অর্থেই আপনি কিছু জানতে চান, টু সাম এক্সটেন্ড আপনারে একটা কুয়ার ব্যাঙ হইতে হবে। একটা বা দুইটা জায়গাতেই আপনি ফোকাস করতে পারেন, করাটা বেটার হবে।
দুনিয়ার “সবকিছু” জানার ভিতর দিয়া আপনি দুনিয়ারে জানেন না, বরং কোন একটা জিনিস জানেন বইলাই অন্য সব জিনিসের লগে বেটার কানেক্ট করতে পারেন।

২.
এখন মুশকিল হইতেছে, চারপাশে এতোসব জ্ঞানের হুমকি-ধামকি, মনে হবে আরে, এইটা জানি না, অইটা জানি না, এরে চিনি না, অরে জানি না!… এইগুলা বেশিরভাগ কেইসেই “সাংবাদিক-প্রতিভা”র ঘটনা। ডরাইয়েন না! 🙂

এইসব দিয়া ‘জানা-বোঝা’ কিছু হয় না, মোস্টলি একটা কমিউনিটি কানেকশনই তৈরি হয়। কমিউনিটি প্রেশার এবং ইল্যুশনগুলাও তৈরি হয়।
বাঁইচা থাকলে আপনারে কোন না কোন কমিউনিটির কুয়ার মধ্যেই থাকতে হয়। একটা “চারপাশ”-এর বাইরে তো আপনি যাইতে পারবেন না! আপনার কমিউনিটি সাইজ এক্সপান্ড করলে, কুয়ার সাইজ বড় হইলেই আপনার জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়তে থাকে না। আপনার জানা-বোঝা’টা হয়তো বেশি মানুশের মধ্যে ছড়াইতে পারে। কিন্তু সোশ্যাল রিকগনিশন দিয়া চিন্তার সিগনিফিকেন্স টের পাইবেন না সবসময়।

একটা কমিউনিটি’র মধ্যে থাকেন বইলাই কমিউনিটির অইসব প্রেশার নিয়েন না। যদি সেইটা খুব বুঝদার কমিউনিটিও হয়, তাইলেও না। চিন্তা করা সবসময় ইন্ডিভিজ্যুয়ালের কাজ। অনেকের কাজ আপনারে হেল্প করবে, অনেকের চিন্তা আপনারে গাইড করবে; কিন্তু কমিউনিটির ফর্মেশন আলাদা ঘটনা। এই দুইটারে মিলাইলে হবে না।

একটা কমিউনিটি বা সমাজ একজন ইন্ডিভিজ্যুয়ালের কোন কাজের কদর করতেছে, কেমনে করতেছে সেইটা একটা কালেক্টিভ মেজাজ তৈরি করে; অনেক কিছু ভাইসা উঠে, অনেক কিছু হারায়াও যায়, ভাইসা উঠে পরে আবার। হিস্ট্রি লিনিয়ার কোন জিনিস না, সাইকেলিকও না; মানুশ তার ইন্ডিভিজ্যুয়াল এফোর্ডগুলারে কম্বাইন করার ভিতর দিয়া টাইমরে তৈরি করে, করতেছে। অই সুতাগুলা দিয়া সময়ের মালা’টা গাঁথা। সুঁইটা কোন ব্যক্তির হাতে নাই, কোন কমিউনিটির হাতেও নাই; সমাজের সাথে মানুশের রিলেশনের প্যাটার্নগুলার ভিতর দিয়া অইটা তৈরি হইতেছে।…

৩.
তো, সবসময় এইরকম কোন না কোন টাইমের কুয়ার মধ্যেই আপনি আছেন, কোন একটা স্পেইসের কুয়ার মধ্যেই থাকতে হইতেছে আপনার ফিজিক্যাল এগজিসটেন্সটারে। অই কুয়ার ব্যাঙ হইতে রাজি হইতে পারাটাই হইতেছে দুনিয়াটারে জানতে-বুঝতে রাজি হইতে পারার ফার্স্ট স্টেপ। আপনি “সবকিছু” জানবেন না, জানার দরকারও আপনার নাই। এইটা ঠিক করতে পারাটা দরকারি একটা কাজ।…

– যে কোন আলাপেই আমি’রে ম্যানিফেস্ট করা কেন জরুরি না –

দেখেন, আমি তো আছিই, না থাকলে এইটা লেখতে পারতাম না। এইখানে কথার আগে, কথার ভিতরে এবং কথার শেষেও একটা ‘আমি’ আছে এবং থাকেই। এই ‘আমি’ না থাকলে কথা হয় না। প্রোগ্রামিং কইরাও তো এখন গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখা যাইতে পারে, কিন্তু সেইটা কোন না কোন হিউম্যান এক্সপেরিয়েন্সের জায়গা থিকাই ডিরাইভ করা। মানে, এখন পর্যন্ত এই জায়গাতে আমরা আছি।

এখন একটা ‘আমি’র মধ্যে আরেকটা আমি’রে ঢালা যাবে না – এইটা আমার পয়েন্ট না। বরং বাতাসের মধ্যে বাতাস, পানির মধ্যে পানি, ভাষার মধ্যে ভাষার আলাপ তো করবোই আমরা, কিন্তু এইটা যে, ডাবল একটা ঘটনা – এইটা মার্ক কইরা রাখতে পারাটা জরুরি। মানে, যদি আমি ‘আমি’ নিয়া কোন আলাপ না-ও করি, সেইখানে ‘আমি’র একটা আলাপ আছে, থাকতেই থাকে।

এই কারণে, ‘আমি’ নিয়া আলাপ করতে হবে – এই ফতোয়ার এগেনেস্ট, ‘আমি’ নিয়া আলাপ করা যাবে না – এইটা আমার পজিশন না। আমার পজিশন হইতেছে, যে কোন আলাপেই আমি’রে ম্যানিফেস্ট করাটা জরুরি না। এইটা আছে বইলাই যেমন এইটা নিয়া কথা বলতে হবে – এইটা জরুরি না, একইভাবে তারে বাতিলও কইরা দিতে হবে না।

তবে আমার ধারণা, ‘আমি’ দিয়া আমারে এতোটা ধরা যাবে না। আমারে ধরা যাবে তুমি দিয়া, গাছ-পাতা-ফুল-ফল দিয়া, প্রেম-ভালোবাসা-ঘৃণা দিয়া, পলিটিক্স-ইকনোমিক্স-ধর্ম দিয়া… এইরকম রিফ্লেকশনগুলার জায়গাগুলাতে দেখা যাবে, ‘আমি’দেরকে ঝুলায়া রাখতেছি আমরা।

একটা ‘আমি’হীন অবস্থা যেমন নাই, একটা ‘আমি’রে আবিষ্কার কইরাই সবকিছু রিভিল কইরা ফেলা যাবে না। এইগুলা হইতেছে “জাগতিক ভ্রম”র ঘটনা। রাধারমণ যেমন বলছেন, “ভ্রমর, কইও গিয়া…”

‘আমি’ হইতেছে একটা ভ্যাসেল।

ভ্যাসেল’টা দরিয়া না।

সিঙ্গারা আর সমুচা

কয়দিন আগে, একটা টিন-এইজ ড্রামা-সিরিজ দেখতেছিল মেয়েরা, টিভি’তে। আমিও ভাত খাইতে খাইতে দেখতেছিলাম, নাম মনে নাই সিরিজটার। তো, অইখানে একটা ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি আছে; অই ফ্যামিলির টিন-এইজ ছেলে’টা সেন্ট্রাল একটা কারেক্টার। তো ছেলেটারে বাঁচানোর লাইগা বা কোন একটা ফন্দি-ফিকিরের করতে গিয়া ছেলেটার গ্রান্ডমা আরো কয়েকজনের লগে মিইলা বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটিদেরকে সিঙ্গারা বানায়া খাওয়াইতেছিল। বলতেছিল, খাও, খাও, সমুচা খাও!

মানে, খাওয়াইতেছে সিঙ্গারা, আর বলতেছে সমুচা! সিঙ্গারা আর সমুচার ডিফরেন্সই অরা জানে না!

তো, আমি শিওর, এই সিরিজ দেখা ইউরোপ-আম্রিকা-আফ্রিকা বা ইন্ডিয়ার লোকজনও যদি কখনো ঢাকা শহরের রাস্তায় সিঙ্গারা দেখে, কইবো, সমুচা! (ইন্ডিয়াতে কোন জায়গায় সমুচা বলেও হয়তো, কিন্তু সেইটা তো অদের নিজেদের কাছে, আমাদের সিঙ্গারা’রে তো অরা সমুচা বানায়া দিতে পারে না!)

এমনকি আমরা যারা সিঙ্গারা’রে সিঙ্গারা বইলা জানি একটু তো কনফিউজড হয়া যাইতেই পারি, সমুচা নাকি এইটা! এখন থিকা কি তাইলে সমুচা বলা লাগবে নাকি!

ইগনোরেন্সের পাওয়ার আসলে এতোটাই 🙂

প্লেজার নিয়া

যে কোন অন্যায়-অবিচার, ক্রাইম, এবং “ক্ষমতার অপব্যবহার”-ও হইতেছে প্লেজারের একটা ঘটনা। যদি প্লেজারের এলিমেন্ট’টা না থাকে অইটা করার তেমন কোন ইচ্ছাও আসলে তখন হবে না। এই যে মানুশ-জনরে ঘরে আটকায়া রাখা হইতেছে – এইটা খালি করোনা থিকা প্রটেকশন দেয়ার একটা ঘটনা না, এইটাতে যে প্লেজার’টা আছে, সেইটারে ইগনোর করাটা পুরাপুরি ঠিক হবে না। বা ধরেন, এতো রিস্ক নিয়া, কষ্ট কইরা ব্যাংক-ডাকাতি করার কথা কেন ভাবে মানুশ? টাকা-পয়সার মামলা তো আছেই, কিন্তু লোকজন সবাই পুরা তাশকি খায়া যাবে না! – এই ভাবার যেই আনন্দ, অইটা তো প্রাইসলেস একটা জিনিস। ন্যায় বা অন্যায়ের বাইরে, এই প্লেজারের জায়গাটা বেশিরভাগ সময়ই ক্রুশিয়াল একটা ঘটনা।

এখন এর এগেনেস্টে আপনারে খ্রিশ্চান মিশনারি হয়া যাইতে হবে, ‘চির দুখী’ হয়া থাকতে হবে – এইটা কোন কথা না, কিন্তু এই কারণে দেখবেন ‘দুঃখ’রে আরো বেশি মাইনা নেয়া যায় না, আরো বেশি প্যাথেটিক জিনিস মনে হইতে থাকে। আর্টে-কালচার যে খালি মানুশের দুঃখ-বেদনার কথা কয়, এই কারণেও প্যানপ্যানানি লাগতে পারে এইগুলা, যতক্ষণ না পর্যন্ত অই দুঃখগুলাও সেলিব্রেশনের ব্যাপার হয়া উঠতেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর্ট হিসাবে মাইনা নেয়া যায় না। যেইরকম ধরেন, টাকা-পয়সা হওয়ার পরেই আপনি একটা সময়ে টাকা না থাকার দুঃখের কথা বলতে পারেন, তখন সেইটা বলতেও ভাল্লাগার কথা, একটা ‘প্লেজার’ থাকতে পারে তখন।…

আমি বলতে চাইতেছি, নিজের প্লেজার জায়গাগুলারেও মার্ক কইরেন। প্লেজার বইলাই যেমন গিল্টি-ফিলিংসের আইটেম না, আবার সবসময় ইনোসেন্ট জিনিসও না। সাফারিংসের জায়গাটাতে যদি অন্ধ না হয়া যান, তাইলে বেশিরভাগ সময় অইটা দিয়াই হইতেছে বেহুলার বাসরের সাপ’টা ঢুকে। অইটারে বন্ধ কইরা দিয়া আপনি বাঁচতে পারবেন না, মারা যাবেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে। প্লেজার কোন ক্রাইম না। মানুশ হিসাবে যে কোনভাবেই আনন্দে থাকার অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু কোন ক্রাইম-ই প্লেজারের ফিলিংসটা ছাড়া পসিবল হইতে পারে না। প্লেজারের ঘরের সামনে দারোয়ান বসায়া এইটা হবে না। এইটা আমাদের ভিতরেই আছে সবসময়, টুকটাক সবার ভিতরেই আছে; কিন্তু এই প্লেজারের জায়গাটাতে অবসেসড হয়া যাওয়া যাবে না, আমাদের কনশাসনেসের দখল তার হাতে ছাইড়া দেয়া যাবে না। ব্রডার সেন্সে, মানবিকতা, বেশিরভাগ সময় এইটুক ঘটনাই।

বাংলাদেশে বিজনেসের অবস্থা

গত সপ্তাহের ঘটনা। একটা বই কিনবো, কেমনে কেনা যায়, অনলাইনে খুঁজতেছিলাম। ইপাব কপি পাইতেছিলাম কিছু ৬-৭ ডলার দেখাইতেছিল (৬০০ টাকার মতো)। পরে ভাবলাম, বাংলাদেশে তো এখন ইংলিশ বই এভেইলেবলই। কয়েকটা জায়গায় নক কইরা দেখি।

বিদেশ থিকা বই আইনা দেয় এইরকম সাইটও আছে, অরা দাম চাইলো ১১০০ টাকা। তখন একটা বইয়ের বেচার সাইটে দেখলাম আছে বইটা, ইনবক্সে নক করাতে কইলো, ১৮০০ টাকা দাম পড়বে দুইটার। আমি কইলাম, ভাই, এক বই দুই কপি কেন কিনবো, আমি তো বিজনেস করবো না! তখন কইলো, ৯০০ টাকা + কুরিয়ার চার্জ ১০০ টাকা। বাজেই লাগলো, কারণ বইটার যেই লেখাগুলা, অইগুলা অনলাইনেই পাওয়া যায়, আমি বইটার ফর্মমেশনটা আসলে দেখতে চাইতেছিলাম। ৫০/৫২ পেইজের বইয়ের জন্য এতো টাকা দিবো! কইলাম, কুরিয়ার লাগবে না, আপনারা তো দেখতেছি, টেইক-এওয়ে সার্ভিস দেন, মাঝে-মধ্যে তো অফিসে যাইতে হয়, আমি আপনাদের দোকান থিকা নিবো।
তো, পরে দোকান থিকা অই বই নিলাম ৪০০ টাকায়।

মানে, ব্যাপারটা চিন্তা কইরা দেখেন! যেহেতু বইটা সব জায়গাতে পাওয়া যাবে না, বাংলাদেশে এর কাস্টমার যেহেতু কম, এই কারণে ডাকাতি করা লাগবে! অথচ আমি শিওর, এই বই নিয়া একটু আলাপ-টালাপ চালু হইলে ৫০ টাকায় নীলক্ষেত প্রিন্ট পাইতে শুরু করবো আমরা।
যে কোন জিনিসেরই কোন দাম নাই দেশে। নিয়ম-কানুন তো নাই-ই, নিয়ম-কানুনের নামে আছে চাঁদাবাজি।

২.
এর লগে আরেকটা জিনিস মনে হইতেছিল, ২০/২২ বছর আগে সিলেটে যখন ছিলাম, তখন খেয়াল করছি, অনেক দোকানদার দোকান নিয়া বইসা আছেন, কিন্তু জিনিসপত্র বেচতে চাইতেছেন না, খালি খালি কাস্টমার কেন আসছে! – এইরকম বিরক্ত হইতেছেন। ঢাকা শহরেও বসুন্ধরা, যমুনা মার্কেটে যারা লাখ লাখ টাকা দিয়া দোকানের পজিশন কিনছেন, তাদের ব্যাপারেও হিসাব কইরা দেখছি, যেই পরিমাণ বেচা-কেনা হবে, ২০ বছরে লাভে আসতে পারার কথা না। তাইলে বিজনেস কেন করতেছেন উনারা?

সিলেটের ঘটনা শুনতাম যে, একটা দোকান দিয়া বসায়া রাখছে যে, কিছু একটা করে, এইটা দেখানোর লাইগা। আর এইসব মার্কেটের দোকানের মালিকরা কারা – এইটার একটা ডেটাবেইজ নিলেও নাকি টের পাওয়া যাবে যে, এইগুলা আসলে বেশিরভাগ কেইসেই টাকা শাদা করার, লিগালাইজ করার একটা ঘটনা। মানে, এইগুলা আসলে ব্যবসা, কিন্তু আসলে যেই ব্যবসা দেখাইতেছে, সেই ব্যবসা না।

একইরকম ভাবে, বাংলাদেশে একটা সময় “কোল্ড ড্রিংকসের” কারখানা করার লাইসেন্স নেয়া হইতো চিনি আমদানি করার লাইগা। নিউজপেপার ছাপানোর লাইসেন্স নেয়া হইতো সরকারি কাগজ পাওয়ার লাইগা, বেশি লোকসান দেখায়া ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার লাইগা। সব বিজনেস সেক্টরেই আমরা ধারণা, এইরকম কিছু না কিছু জিনিস পাইবেন। আর এইগুলা অই বিজনেস কমিউনিটি’র লোকের কাছে এক রকমের “ওপেন সিক্রেট” ঘটনাই। আমরা অই বিজনেসের বাইরের লোক বইলা জানি না, বেশিরভাগ সময়। আর অবাক হই, আরে, অরা এইরকম করতেছে কেনো! কাস্টমার হিসাবে আমারে দাম দিতেছে না কেনো!

কিন্তু ঘটনা হইলো, কাস্টমারের দরকার নাই তো এতো!

জিনিস বেচার সময় লাভ করতে হয় না, বড় বড় বিজনেসম্যান যারা উনারা বেচার আগে, কিনা’র আগে, এমনকি বিজনেস শুরু করার আগেই লাভ’টা কইরা ফেলতে পারেন এখন। (কুইক রেন্টালগুলার কথা ভাবেন!)
তো, এইটা হইতেছে বাংলাদেশের বিজনেসের অবস্থা।

৩.
আবার, এইটাও আসলে ভুল হবে, যদি বলি, এইটাই পুরা সত্যিটা, এর বাইরে কোনকিছু ঘটে না। বরং এইখানে দুইটা ফেইস আছে, সত্যি’র। এই একটা ফেইসরে আমরা কখনোই কন্সিডার করি না আমাদের সো-কল্ড “সমাজ-বাস্তবতার আলাপে”, যার ফলে অই ‘সমাজ-বাস্তবতার’ আলাপগুলা ধীরে ধীরে আরো বেশি অ-দরকারি হয়া উঠে আমাদের কাছে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ঘটনাগুলা নিয়ম মাইনা ঘটে না; বরং নিয়মগুলা কেমনে ভচকায়া যাইতেছে, সেই জিনিসগুলারে খেয়াল না করতে পারলে আমাদের এগজিসটিং বাস্তবতারে সবসময় ‘পরা-বাস্তবতা’ বইলা মনে হইতে থাকবে। আর অইটাও এক ধরণের বাজে সাহিত্যিক বিজনেসেরই ঘটনা! 🙁

Leave a Reply