‘বিপ্লব করা’ কেন একটা বাজে কাজ?

বিপ্লব কেন একটা বাজে ধারণা – এইটা নিয়া দুয়েকবার বলছি মনেহয়। কিন্তু এখন, যখন আবার ‘বিপ্লব’ হবে হবে অবস্থা – তখন আরেকবার যতোটা পারা যায় ক্লিয়ার কইরা বলাটা মনেহয় দরকার।pullquote] [/pullquote]

‘বিপ্লবী করা’ বলতে ট্রাডিশন্যালি সবকিছু ‘উল্টায়া-পাল্টায়া’ দিতে চাওয়ার কথা-ই আমি বলতেছি। এইটা মেইনলি একটা ইমোশনাল ঘটনা। এখন ইমোশনাল ব্যাপার বইলা বাজে – তা না; বরং এই ইমোশনাল জিনিসটা কেমনে কাজ করে, সেইটা খেয়াল করতে চাইতেছি আমি।

দেখবেন, কোনরকমের রেইজ (rage), রিভেঞ্জ ছাড়া বিপ্লব ব্যাপারটা অলমোস্ট মেন্দা-মারা একটা ঘটনা। মানে, এই ইমোশনগুলা বাদ দিলে, ঘটনা হিসাবে বিপ্লবে কি থাকে আর, বা কট্টুকই থাকে?

তো, বিপ্লবের এই ইমোশনটা যেহেতু ট্রু, এই ইমোশন দিয়া এইটা পয়লা কি কাজ করে? অথরিটি’টারে চেইঞ্জ করে; একটা ‘খারাপ’ অথরিটির জায়গায় ‘ভালো’ অথরিটি’রে বসাইতে চায়।

এইটা ঠিক যে, কোন কিছু করার অথরিটি যদি না থাকে, যেই কাজগুলারে আপনি ঠিক মনে করেন, করবেন কেমনে! কিন্তু আমরা তো দেখছি, খালি এই অথরিটি চেইঞ্জ করাটা কোন কাজের জিনিস না। মোটামুটি যেই লাউ, সেই কদু-ই! মানে, অথরিটি চেইঞ্জ করার দরকার নাই – এইটা আমার পয়েন্ট না, বরং বলতে চাইতেছি, অথরিটি চেইঞ্জ করাটাই সমাধান না। এই ‘ভালো’ অথরিটিও একটা সময় পরে গিয়া নিজেরে আর ফেক্সিবল রাখতে পারে না। কারণ যে কোন অথরিটি’র কাজই হইতেছে, নিজেরে অথরিটি হিসাবে বাঁচায়া রাখা; অথরিটি হিসাবে পাবলিকের কাছে সারেন্ডার করা না।

আর পদ্ধতিও একটা ঘটনা, যে কেমনে আপনি অথরিটি’টারে চেইঞ্জ করতেছেন। বিপ্লব করার সময় ধইরা নেয়া হয়, ‘পাবলিক তো বুঝে না!’ যার ফলে পাবলিক কি বুঝে আর বুঝে না – তার দায়িত্ব নিয়া নিতে হয়, পাবলিকের চাইতে পাবলিকের বুঝ’টা ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠে তখন।

বিপ্লবীদের সবসময় ‘অ-বুঝ’ বা ‘না-বুঝ’ পাবলিকের পক্ষ নিয়া লড়াই করতে হয়। মানে, পাবলিকের বুঝতে না-পারা’টা একটা অনুমান হিসাবে নেয়ার কারণে পাবলিকের কাতারে বিপ্লবী’রা আর সামিল হইতে পারেন না। পাবলিক যদি বুঝতোই, তাইলে তো বিপ্লব-ই করতো! এইভাবে পাবলিকের থিকা আলাদা-ই না খালি ‘ডিফরেন্ট’ না হইতে পারলে বরং ‘খাঁটি বিপ্লবী’ হওয়াটাই সম্ভব হইতে পারে না! মানে, আপনি বিপ্লব করতেছেন, পাবলিকের লাইগা, কিন্তু আপনি পাবলিক থিকা আলাদা – এই হইতেছে বিপ্লবের তরিকা! এইটা ‘গণ-বিরোধী’ ব্যাপার না হইলেও সাম সর্ট অফ ‘গণ-বিচ্ছিন্নতা’র ব্যাপার তো অবশ্যই, এই ‘বিপ্লব করা’টা।

আর এই বিপ্লব ‘সফলতা লাভ’ করে, একটা ভায়োলেন্সের ভিতর দিয়া। এতে কইরা যা হয়, ভায়োলেন্স’টাও আর একটা ‘পথ’ হিসাবে থাকে না, বরং একটা সময়ে ‘পথ-ই হয়া উঠে গন্তব্য’। 🙂

এখন ভায়োলেন্স করা যাবে না – এইরকম না, কিন্তু মুশকিল হইলো, এর একটা এফেক্ট থাকেই। যখন আপনি একবার ‘লুকিং ফর শত্রুস’-এ ঢুকবেন, দেখবেন, কোথাও না কোথাও, কোন না কোন শত্রু খুঁইজা পাইতেছেন। ইমোশনাল ব্যাপারে পারসোনাল লেভেলে যা হয়, সোসাইটির লেভেলে সেইটা আরো বেশি কইরা ঘটতে থাকার কথা। এই ইমোশনাল জায়গাটারে খেয়াল করা হয় না অনেক সময়। বা সোসাইটির সাইকোলজিক্যাল পারসেপশনের জায়গাগুলারে।

যেমন ধরেন, ব্রিটিশ আমলে বিপ্লবীদেরকে যে ডাকাত বলা হইতো, কারণ তারা সরকারি জিনিস লুঠ করতো; ডাকাতদের লগে তাদের কাজ-কারবার মিলতো তো; আর একইভাবে ডাকাত হওয়ার মত তাকদ না থাকলে কিন্তু বিপ্লবী হওয়াও সম্ভব ছিল না। তাই বইলা উনারা ডাকাত না, উনারা ভালো একটা কারণে লুঠ-তরাজ করতেন। কিন্তু ‘ক্রুয়েল’ বা ‘কঠিন’ হইতে পারাটা – বিপ্লবী হওয়ার জন্য ‘মাস্ট’ একটা ঘটনা তো, যেমন ‘পুরুষ’ হওয়ার জন্য ‘ম্যাচো’ হইতে পারা, ‘নারী’ হওয়ার জন্য ‘সিডিউসিভ’ হইতে পারা। এই ‘মাস্ট’ জিনিসগুলা সোসাইটি এক্সপেক্ট করে – তা না, এই এক্সপেক্টশনগুলা মাথায় রাইখা আমাদের অ্যাক্ট করতে পারতে হয় তো! আর সেই জিনিসগুলারে এই ‘বিপ্লব’ কোনরকম অল্টার তো করেই না, বরং আরো এস্টাবলিশ করে, অ্যাপিয়েরেন্সে এক রকমের বিরোধিতা করার ভিতর দিয়া।…

বিপ্লব ‘করা’ লাগে, এমনি এমনি হয় না, অ্যাক্টিভ একটা জিনিস। তো, এই অ্যাক্টিভনেসের একটা গরিমা থাকে যে, আমরা বিপ্লব করছি, বা করতেছি! তো, এই প্রাইড থিকা বাইর হওয়াটা মুশকিলই হয়, শেষমেশ।…

২.
এখন আমরা চাই বা না-চাই, বিপ্লব তো হয়-ই দুনিয়াই। সোসাইটি’তে তো চেইঞ্জগুলা ঘটতেই থাকে, একটা সময়ে গিয়া ব্রার্স্টও করে।

তো, এই কনফ্লিক্টের জায়গাগুলা আর্ট-কালচারে একভাবে খেয়াল করা যায় মনেহয়। এমন না যে, সাহিত্য দিয়া বিপ্লব হয়, কিন্তু গ্রামসি’রে ওস্তাদ মানতে পারলে, আর্ট-কালচার’রে, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কিরে; বা ফরাসি রাইটারদের’রে আরেকটু ইর্ম্পটেন্স দিতে মেবি রাজি হইতে পারবো আমরা, তাদের পরের ‘বিপ্লব’র জায়গাগুলাতে। মানে, আর্ট-কালচার সেসাইটির একটা কনশাসনেস হিসাবে একভাবে কাজ করার কথা।…

তাইলে কি বিপ্লব করবো না আমরা? এই জালিম অথরিটিরে মাইনা নিবো? – এইটা অবশ্যই আমার কথা না।

বিপ্লব করার চাইতে, ইনসাফ কায়েম করার চাইতে ইনসাফ বলতে আমরা কি বুঝবো – সোসাইটিতে এই কনশাসনেসটারে জারি রাখাটা জরুরি কাজ মনে করি। বলতে পারেন, অনেকটা ধর্মপ্রচারের মতন, ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাক্টিভিটিগুলা জরুরি।

বিপ্লব মানে আমি বুঝতে চাই, পাবলিকরে তার ফ্রিডম বাছাই করতে দেয়া, পাবলিক যে তার ফ্রিডম বাছাই করতে পারে আর সেই বাছাইয়ের জায়গাগুলাতে যেই যেই জিনিস তারে আটকায়া রাখে, সেই জায়গাগুলারে সাফ সাফ তারে দেখানো; সে যাতে বাছাই করতে পারে, সেই সুযোগ তারে দেয়া।

কিন্তু আমাদের ‘বিপ্লব করা’ যা করে, সোসাইটিরে ‘ফ্রিডম’ দিতে গিয়া, ‘ফ্রিডম’ জিনিসটারেই সুডো কিছু কনফ্লিক্টের ভিতরে বাইন্ধা ফেলে। যেইটা নিজের লাগানো প্যাঁচ থিকা আর বাইর হইতে চায় না, বা পারে না।

৩.
বিপ্লব নিয়া জিনিস’টা বইলা রাখার আরেকটা কারণ হইতেছে, বাংলাদেশের এখনকার অবস্থা।

বাংলাদেশে এর আগেরবার বাকশালী সরকারের পতন হইছিল, মিলিটারির হাতে। সেইটারে, বা তার পরের কিছু ঘটনারে বিপ্লব বইলা ডাকেন অনেকে। এখনো অনেকে শলা-পরামর্শ দেন বিএনপি’রে মিলিটারি দিয়া বিপ্লব করাইতে।

এইবারের ভোট-চুরি করা সরকার বরং মিলিটারির কাছে ক্ষমতা ছাইড়া যাবে, পাবলিকের কাছে কোন রকম সারেন্ডার করার চাইতে। তো, সেইটারে ‘বিপ্লব’ বইলা ভাবার ভুল’টা করার ব্যাপারে, আগে থিকাই যাতে নিজেদেরকে একটা রিমান্ডার দিয়া রাখতে পারেন, সেই কারণেও বইলা রাখা।

Leave a Reply