ভাসানী সিনড্রোম

এই জিনিসটা নিয়া কয়েকবারই বলছি, কিন্তু ঠিকঠাকমতো বলা হয় নাই। আর মওলানা ভাসানী’রে দিয়া জিনিসটা বুঝা গেলেও, ব্যাপারটা খালি ভাসানী’রই ছিল বা আছে – তা না; আমার মধ্যেও জিনিসটা ফিল করছি আমি অনেকসময়, আর অন্য অনেকের ভিতরই লোকেট করা যাইতে পারে মনেহয়।

তো, ভাসানীর ঘটনা’টা আগে বলি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলতেছিল, তখন তো উনি বাঁইচা ছিলেন, কিন্তু কই ছিলেন? বা কি করতেছিলেন? মানে, এইরকম খুবই বড় একটা ঘটনার সময় উনার মতন বড় একজন লিডার কি করতেছিলেন – এইটা মোটামুটি খোঁজ-খবর কইরা বাইর করতে হবে আমরা’র। (তার মানে, আবার এইটা না যে, উনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন; উনি তো শেখ মুজিবের আগেই “আসসালামুয়াইলকুম” কইছিলেন। বা উনারে সাইড-লাইনে ফালায়া রাখা হইছিল আসলে – এই জিনিসটাও খুব বেশি কনভিন্সিং মনেহয় না আমার কাছে।)

আর এইটাই একমাত্র ঘটনা না, শেখ মুজিবুর রহমানের নামে যেই বই ছাপা আছে – ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, সেইখানে এইরকম দুয়েকটা ঘটনার কথা আছে। ২৫৫ নাম্বার পেইজে আছে, “মওলানা ভাসানীর দরকারের সময় এই আত্মগোপনের মনোভাব কোনদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যতের অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।” মানে, ক্রিটিক্যাল একটা মোমেন্ট, কোনকিছু করা লাগবে, কোন ডিসিশান নিতে হবে, ভাসানী তখন ‘অভিমান’ কইরা বসলেন। এইরকম।

শেখ মুজিবুর রহমান ধারণা করছেন, ভাসানী যেহেতু ইংলিশ ভালো জানতেন না বা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেন নাই, উনার মধ্যে একটা ইনফিরিয়টি কাজ করতো। তো, এই জিনিসটা আমার কাছে এতোটা ‘সত্যি’ মনেহয় না। সব মানুশের মধ্যেই কিছু ইনফিরিয়টি-সুপিরিয়টি, হাবিজাবি জিনিস থাকে। মানে, একজন মানুশ ‘নিখুঁত’ কোন জিনিস না, আর সেইটা হইলে তারে মানুশ বইলাই মনে হবে না; বরং এই জিনিসগুলারে সে কেমনে ডিল করতেছে বা এক্সপোজ করতেছে, সেইটাই ঘটনা’টা।

ক্রুশিয়াল মোমেন্টে ভাসানী পালায়া যাইতেন – এইরকম না। যখন আপনার পাবলিকলি অ্যাক্ট করার কথা, তখন ইনঅ্যাক্টিভ হয়া পড়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

কেন ঘটে? – এই জিনিসটা মেবি এতোটা সার্টেন না। পারসোনাল ইনফিরিয়রিটির জায়গাগুলা যে কাজ করে না – তা না; ইংলিশ না-জানা না, মানুশজন যদি মনে করে ভাসানী বুইড়া, পাত্তা না দিতে চায়, দুয়েকটা ফাউল টক করে, তখন উনি সেইটারে স্পোর্টিংলি নিয়া কাউন্টার দেয়ার চাইতে চুপ থাইকা নিজেরে ‘প্রমাণ’ করার কথাও ভাবতে পারেন। বা ইভেন ধরেন, পাজামা না পিন্দা লুঙ্গি পিন্দেন বইলাই হয়তো আনইজি লাগতে পারে।… মানে, পারসোনাল ইস্যুগুলা পাবলিক ইভেন্টে ক্রিটিক্যাল হয়া উঠতেই পারে, পসিবল এইটা। কিন্তু কোন পারসোানল ঘটনা কেমনে কোন পাবলিক ইভেন্টে রিলিভেন্ট হয়া উঠে, সেইটা এতোটা স্পেসিফিক হওয়ার কথা না, সবসময়।

এইখানে, নেলসন ম্যান্ডেলার একটা ঘটনার কথা বলা যায়। একদম উল্টা জায়গা থিকা। ৩৫ বছর (এইরকমই তো মনেহয়) জেল খাটার পরে ম্যান্ডেলা যেইদিন ছাড়া পাইবেন (বা মেবি যেইদিন উনি সারেন্ডার করার পরে উনারে আদালতে নিয়া যাওয়া হবে তখন, মানে, আইন-আদালত ছিল তো দুনিয়ায় 🙂 ) উনি কইলেন যে, উনার ট্রাইবের ট্রাডিশন্যাল ড্রেস উনি পরবেন। মানে, উনি বেশিরভাগ সময়ই স্যুট-কোট পইরা থাকছেন পাবলিক স্পেইসে; কিন্তু এইরকম ক্রিটিক্যাল মোমোন্টে উনি তো আর একজন পারসন না খালি, একটা পাবলিক ইভেন্টে উনি আছেন; সেইখানে ‘রিপ্রেজেন্টেশনের’ জায়গা থিকা উনি ভাবছেন; উনার পারসোনাল জায়গাটারে প্রায়োরিটি দিতে চান নাই।

এখন ব্যাপারটা এইরকমও না যে, ভাসানী নিজের পাবলিক ইমেজে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন নাই; বরং উনি তো নিজের পাবলিক ইমেজটার ভিতরেই থাকতেন; মেবি মিটিং-রুম পলিটিক্স’টারে নিতে পারতেন না।… কিন্তু যেই কারণেই হোক, ক্রিটিক্যাল মোমেন্টগুলাতে উনি থমকায়া যাইতেন; এটলিস্ট উনার সময়ে পলিটিক্যাল ঘটনাগুলার দিকে তাকাইলে, এইরকম মনেহয়।

এইটারে আমি বলতে চাইতেছি, ভাসানী সিনড্রোম।

২.
এই জিনিসটা যে কারোর লাইফেই ঘটে। ধরেন, রাস্তায় দুইজন মানুশ মারামারি শুরু করল, বা কোন প্যাসেঞ্জার রিকশাওলারে চড় মারতে যাইতেছে, তখন হঠাৎ কইরা বুঝতে পারি না, কী করবো!

অনেকে আবার পুরা উল্টা। এইরকম ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে লিড নিয়া নেয়। ইংলিশে যেইটা কয়, “হোয়েন দ্য থিঙ্কস গেট টাফ, দ্য টাফ গেটস গোয়িং।” অইটার মকারি কইরা যেইটা চালু আছে, “হোয়েন দ্য থিঙ্কস গেট টাফ, আই গো শপিং।” – এইটার কাছাকাছি রকমের একটা জিনিস। কিন্তু এইরকমের লিনিয়ার না আর কি!

একটা পারসোনাল অভ্যাস থাকে, আর একটা পাবলিক ইমেজের ধারণা বা এক্সপেক্টশনও – এই দুইটা জিনিস সবসময় মিলার কথা না। একটা আরেকটারে ডমিনেন্ট করার কথা, বা কনফ্লিক্টের জায়গাগুলা যখন সামনে আসে, তখন কি করি আমরা – সেইটার কথা বলতে চাইতেছি আমি।

৩.
আর ভাসানী সব ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে পালাইছেন বা নিরব থাকছেন বা অ্যাক্ট করতে পারেন না – এইরকম না। উনি যেহেতু একটা পাবলিক ফিগার, এই কারণে উনার ঘটনাগুলার উপ্রে বেইজ কইরা ব্যাপারটা মনেহয় অনেক স্পষ্টভাবে টের পাইতে পারা’র কথা আমরা’র। এইজন্য জিনিসটারে ভাসানী সিনড্রোম কইলাম।

Leave a Reply