শাহেরজাদী

[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

একজন স্টোরিটেলারের কাজই হইলো নিজেরে সেইভ করা। আরব দেশের রাত-এর গল্প পড়েন নাই, আপু! সাদমান ব্যাকুল হয়া বলে।

ও, আরব্য রজনী; পড়ছি তো। আপু হয়তো অন্যকিছু ভাবে।

হয়তো উনার মন-খারাপ। সাদমান ভাবে। সাদমান উত্তরায় থাকে। এ-লেভেল দিছে। মালয়েশিয়ায় যাবে পড়াশোনা করতে। আরো কয়জন বন্ধুও যাবে ওইখানে। ওদের চিটাগাংয়ের কিছু বড়ভাইও ওই ইউনির্ভাসিটিতে পড়ে। এখন সে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলছে। সাদমান ম্যাচিউরড ফিল করতে চায় নিজেরে। উনাদের সাথে নিজেই যোগাযোগ করে।
এই আপু’টার সাথে কথা বলতে তার ভাল্লাগে। খুববেশি কথা অবশ্য কখনো হয় নাই। বড় ভাইয়েরা উনারে নিয়া অনেক পজিটিভ কথা বলেন। দুয়েকবার যখনই কথা হইছে মনে হইছে যে মন খুইলা কথা বলা যায় উনার সাথে। নিজেরে নিয়া কিছুই বলেন না উনি। কানাডায় থাকেন।

হঠাৎ কইরাই মেসেজ পাঠাইলেন একদিন। আমার খুব মন-খারাপ, আমার সাথে কথা বলবে!

সাদমান তখন ছিল ফেইসবুকে, এই মেসেজ সে দেখে আর এই শব্দে আছাড় খাইয়া পইড়া যাওয়া মন-খারাপ পড়তে গিয়া তারে ধইরা ফেলে। মন-খারাপ এমন একটা বাজে জিনিস যেইটা সুয়াইন ফ্লু’র চাইতেও দ্রুত ছড়ায় আর আমাদেরকে কানেক্ট করতে পারে। অভিজ্ঞতার কারণেই আপুটা এইটা জানেন আর সাদমানেরও মন-খারাপ লাগে, মন-খারাপের বয়সে। যেহেতু সে কিশোর আর পুরুষ হইতে চায় একজন মহিলার  (হোয়াটএভার হার এইজ ইজ, মহিলা তো সবসময় মহিলাই!) বিপদে সে হেল্প করতে চায়। কথা বলে আর উনার মন ভালো করার ট্রাই করে।

সাদমান নিজের চাইল্ডহুড মেমোরি আর ফ্যান্টাসি’র কথা বলে। বাচ্চাকালের কথা বলতে বলতে ওর তখন আপুটারেই বাচ্চা লাগতে থাকে। উনার বয়সের কথা জিগাইলে, উনি হাইসা ফেলেন! বলেন, স্কাইপে আসবা? আমি কিন্তু ভিডিও অন করবো না। শুধু কথা বলবো আমরা!

এই আমরা শুইনা সাদমানের অন্যরকম লাগে। এইরকম আমরাতে সে তো কখনোই আটকায় নাই। আপু’র কণ্ঠ’টাও খুব আপন মনেহয় সাদমানের।

আপুরা ছোটবেলায় যখন ঢাকায় থাকতেন তখনকার গল্প বলেন; জিগান যে, নাবিস্কো চকলেট পাওয়া যায় নাকি এখন? আলাউদ্দিনের জিলাপি?

সাদমান তো হাসতে হাসতে শেষ, এইগুলা কি জিনিস!

আপু জানতে চায়, ঢাকায় কি এখন বৃষ্টি হইতেছে খুব? সাদমান তখন আবহাওয়ার বর্ণনা করে, ভাষাতে তার মন-ই মিশে থাকে; কণ্ঠের আওয়াজের ভিতর দিয়া আপুটার কাছে চইলা যাইতে চায় সে। কথাগুলারে আজিব মনেহয় তাঁর, রাত জাইগা খুববেশি পর্ণগ্রাফিক ভিডিও দেখার কারণেই মেবি তাঁর  মনেহয় গ্লোরি হোলের ভিতরে সে তাঁর ডিক ইনাসার্ট করে দিছে আর আপুটা তাঁর হুঁ হ্যাঁ দিয়া, হাসি আর কনর্ভাসেশন দিয়া তাঁর মগজে থাকা ডিকটারে সাক করে দিতেছে। কেউ কাউরে দেখতেছি না আমরা, আর এই কারণেই মেবি প্লেজারটা আরো এমপ্লিফাই হইতেছে।

সাদমান জিগায়, কানাডায় কি শীত খুব? আপু, তোমার কি খুব ঠান্ডা লাগতেছে? আপুটা ফ্রিজ হয়া থাকে, কোন কথা বলে না।

সাদমান টের পায় তাঁর শরীরের শীতলতা। তখন ওরা হ্যারি পটার নিয়া কথা বলে। দুইজনের ইন্টারপ্রিটেশন দুইরকমের, এইটা নিয়াও ঝগড়া করতে থাকে। আবার হাসে। এইটা যেন দুইটা দুনিয়া; দুইটা নক্ষত্র অনেক কাছাকাছি চইলা আসছে নিজেদের। আর তখনই ভোর হয়া আসতে থাকে। সাদমানের খুব ফাঁকা লাগতে থাকে। কেনো সকাল হয় দুনিয়ায়! রাত কেন শেষ হয় শাহেরজাদী!

আপু বলেন, একটা রাতের জন্য শাহেরজাদী’র তো একটাই গল্প; সেইটা শে আর রিপিট করতে পারে না। তারপরও তোমার কথা আমি মনে রাখবো। তুমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও। আমি অ্যাকসেপ্ট কইরা নিতেছি। কিন্তু আমরা আর কখনোই কথা বলবো না। ঠিক আছে?

সাদমানের মনেহয় দুনিয়ার কোনকিছু কোনদিনই আর ঠিকঠাক থাকতে পারবে না। কখনোই না।

*************************

সে শাহেরজাদীরে আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় না। মাসখানেক পরে উনি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। সাদমান একসেপ্ট করে। তখন সে মালয়েশিয়ায় চলে আসছে। মাঝে মধ্যে উনার ওয়ালে যায়, ফানি ফানি পোস্ট দেখলে লাইক দেয়।

একবার উনি স্ট্যাটাসে লিখলেন, আজ রাত, সারারাত জেগে থাকবো…; তখন ওই স্ট্যাটাসে ২০০/২৫০ লাইক; কমেন্ট যে, আমিও জেগে থাকবো, একা… এইরকম হাবিজাবি কতকিছু; তখন আপুটা বলেন যে, আরে, এইটা তো সাবিনা ইয়াসমিনের গান, আমি ঘুমাই এখন; হাহাহা… এইরকমের ফানি; তখন সাদমানেরও ভাল্লাগরে ভাই  টাইপের ফিলিংস হয়। সে ভাবে, বয়স যতোই হোক, মাইয়া মানুষ মানেই তো চপলা কিশোরী! তা নাইলে কোন মেয়ে কি আর মেয়ে হইতে পারবে, এইটা বাদ দিলে পোলাদের মতোই তো মনে হবে।

বয়স বাড়তেছে যেহেতু, সাদমানেরও এখন মাঝে-মধ্যে মন-খারাপ লাগে; তখন উনার ওয়ালে যায়, জিগায়; কেমন আছেন, আপু? আপুও দুইদিন পরে উত্তর দেন, ভালো আছি। ইনবক্সে আসো। তারপর ইনবক্সে কিছুক্ষণ কথা বলে। তেমন কোন কথা নাই আসলে। মাঝে-মধ্যে তারা আরব দেশের রাতের কথা মনে কইরা হাসাহাসি করে। হি হি হি। কি রকম বাচ্চা ছিলাম আমরা! এখনো অনেক কিছু মনে করতে পারি বইলাই হয়তো বাঁইচা আছি আসলে আমরা, তাই না?

আমরা… সাদমান ভাবে।

রাত পোহাবার আর কতো দেরি, শাহেরজাদী!

এপ্রিল,২০১৫।

 

Leave a Reply