১২ ই মে, ১৯৮৪ আর স্টিভ জবস: ফিউচার ইজ দ্য নিউ পাস্ট

১৯৮৪ নামে জর্জ অরওয়েলের একটা নভেল আছে; যেইখানে বলা হইছে, নতুন ধরণের সোসাইটি এমার্জ করবে; সবকিছু কন্ট্রোলড হবে, এই সেই। মানে, ১৯৮৪ একটা দাগ, নতুন রিয়ালিটির। নভেল’টা এখনো অনেক হিট।

কিন্তু ১৯৮৪ সালে আরেকটা ঘটনা ঘটছিল। স্টিভ জবস অ্যাপল কম্পিউটার লঞ্চ করছিলেন। উনি একটা টিভি অ্যাড বানাইছিলেন, যে ১৯৮৪ কেন স্পেশাল? সেইটা উনি রিভিল করার দাবি করছিলেন। 🙂 জর্জ অরওয়েল মেবি ১৯৮৪ সাল’রে জাস্ট একটা নিয়ার-ফিউচার হিসাবে দেখাইতে চাইতেছিলেন, অইরকম স্পেসিফিক কিছু হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু স্টিভ জবস এইটারে সিরিয়াসলি নিছিলেন; যে ১৯৮৪ সাল’রে যেহেতু সিগনিফিকেন্ট কিছু বলছিলেন জর্জ অরওয়েল, স্টিভ জবস তারে সিগনিফিকেন্ট কিছু বানানি’র দায়িত্ব’টা নিয়া নিলেন। বা যেইটা করলেন, নিজের কাজ’টারে অই বানানো-সিগনিফিকেন্ট’টার সাথে মিলায়া দিলেন!

যে একটা মিথ তো আছিল, ১৯৮৪ সাল নিয়া; তো, অ্যাপল হইতেছে অই মিথ’টা। মিথ’টা মিছা না, আমরা বরং বানাইতেছি মিথ’টারে। এইরকম।

তো, অঞ্জন দত্তের ১২ই মে’র মিথ’টা পুরাপুরি এইরকম না হয়তো অনেকের কাছে; কিন্তু কাছাকাছি রকমেরই। হইতে পারে তার একটা পারসোনাল কিছু, বা একটা ডেইটই। কিন্তু এই ১২ই মে’টারে যারা মনে করতে পারতেছেন, তারা এইরকমই বানাইতে চাইতেছেন মেবি, স্টিভ জবসের ১৯৮৪’রে মনে রাখার মতন একট্ জায়গা থিকাই। যে, ১২ই মে মালা যে চইলা গেছিল; এখন ১২ই মে’তে ‘ব্রেকাপ দিবস’ টাইপ বানাইলাম আমরা যেন কিছু। 🙂 তখন গান’টা যেমনই হোক, লাইনটা যা-ই হোক; আমাদের লাইফে আমরা ট্রু কইরা ফেলতে পারলাম!

[এইরকম আরো ছোট ছোট লোকাল মিথ আছে তো আমাদের লাইফে। আমরা যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়ি, রেলওয়ে স্কুলে; তখন এক প্রেমিক তার প্রেমিকার বিয়ার দিনে প্রেমিকার বাড়ি থিকা তার জামাইয়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পাশে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ছোট ছোট কবিতা লিইখা রাখছিলেন আলকাতরা দিয়া; এইরকম একটা কবিতা ছিল –

ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসা নয় ঠিক
ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসি তা-ও ঠিক

তো, উনারও এইরকম কোন ডেইট ছিল যে, অক্টোবর সামথিং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; কিন্তু সেইটা আর হইতে পারে নাই; নদী-ভাঙনে পুরা রেলওয়ে কলোনি-ই মেঘনা নদীতে ডুইবা গেছিল; তার আগে তার দেয়ালের কবিতা, ডায়ালগও মুইছা ফেলছিল মনেহয়, বাড়ির মালিকেরা। তো, অই সময়ে যদি ১৪ই ফেব্রুয়ারি’র ট্রাডিশন থাকলে বেটার হইতো মনেহয়। মানে, বড় কোন অকেশনের লগে মিলাইতে পারলে! ]

এই যে হইতে পারে তো! আর হয় যে, এইটার সবচে বড় প্রমাণ (আর এখন পর্যন্ত একজন-ই আমার কাছে, তবে খুঁজলে আরো অনেক পাওয়া যাবে হয়তো) হইতেছেন স্টিভ জবস।

তো, স্টিভ জবসের এই জিনিসটা ছিল। উনার ৪০০ পেইজের বায়োগ্রাফি’টা পড়ছিলাম আমি অনেকদিন আগে। অইখানে উনার ইয়াং বয়সের একটা ঘটনা আছে। উনার একবার ইচ্ছা হইলো, বুদ্ধ মঙ্ক হবেন। একজনরে পীর মানলেন। সেই লোক বুদ্ধ ছিলেন, আর বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে অনেককিছু জানতেন। স্টিভ জবস উনার পিছনে অনেকদিন ঘুরাঘুরি করলেন। উনি পরে কইলেন, দেখো, এমনে তো হয় না। লাইফে কিছু জিনিস তোমার ফিল করতে পারতে হবে; তাইলে টের পাবা যে, এই দুনিয়াদারি তুমি ছাড়তে পারবা; খামাখা জোর কইরা লাভ নাই। কিন্তু স্টিভ জবস ছাড়ার লোক না, জিগাইলেন ব্যাপারটা কেমনে টের পাওয়া যায়… কি কি হয়? কিছু সিমটমের কথা কইলেন তখন অই বৌদ্ধ পরহেজগার লোক। তো, দুইদিন পরে, কোন একটা অড টাইমে বৌদ্ধ লোকের ঘরে আইসা হাজির হইলেন স্টিভ জবস; কইলেন, আমি তো সিমটমগুলা টের পাইছি! আমার তো এই এই ফিলিংস হইছে! অই বৌদ্ধ লোকটা তখন মনেহয় একটু বিরক্তই হইলেন; কইলেন, দেখো, এইগুলা তোমার হবে না, তুমি বাদ দাও! অই লোক যে তারে বিশ্বাস করলো না, এইটাতে স্টিভ জবস কষ্টই পাইছিলেন মনেহয়।

তো, এইরকম ঘটনা উনার লাইফে মনেহয় আরো কিছু আছে; মিথগুলার সাথে উনার লাইফ’টারে খুব অ্যাক্টিভলি মিলাইতে চাইছেন। তারপরে নিজেই অন্যরকমের একটা মিথ হইতে পারছেন। 🙂

স্টিভ জবসের মতন এইরকম সবার হয় না; কিন্তু স্টিভ জবসের মতন মিথগুলার লগে এসোসিয়েট হওয়ার, রি-ক্রিয়েট করার একটা ডিজায়ার প্রায় সবার-ই থাকে মনেহয়।

Leave a Reply