২০৪৬

:আমার এখনো তোমার লাইগা মায়া লাগে তো।

আমি হাসি। হাসিতে মনেহয় একটু দুঃখ দেখতে পায় নীলু। কয়,
: তোমার বিশ্বাস হইতেছে না!

আমি আর হাসি না। কই, যাই গা তাইলে…

একটা বিকাল শেষ হয়। আরো কতোভাবেই তো হইতে পারতো। ভাইবা খারাপ-ই লাগে। এই কারণে মনেহয় আকাশে যে সন্ধ্যার মেঘ, সেও মনেহয় দুখী। বৃষ্টি হইলে মনে হবে, কেউ কানতেছে। অথচ যদি মন ভালো থাকতো, মনে হইতো কেউ নাচতেছে। কত যে মিনিং লাইফের। যতো কিছুই হোক, এই লাইফ নিয়া আরো কিছুদিন তো বাঁইচা থাকবো।

২.
নীলু ডাক্তার। অর কাছে গেছিলাম আমার ব্রেস্ট দেখাইতে। অন্য পোলাদের মতোন আমার বুক বা স্তন বড় হইতেছে না। ত্রিশ হইলেই এইটা হওয়ার কথা। আমারটার গ্রোথ হইতেছে না। পেনকেকের মতো একটু ফুইলা রইছে খালি। কিউপিড’স সিক্রেটস-এ গেলে শরমই লাগে। অথচ নীলুর কি সুন্দর চাপ দাড়ি উঠছে। বোঝা যায় সপ্তাহে দুইবার ট্রিম করে ও। কলেজে থাকতে কইতো ও, ডাক্তার হবে। পরে যখন দাড়ি উঠবে তখন নিজের দাড়ি নিজে ট্রিম করবে। ঠাট্টা কইরা কইছিল, তোর বুক বড় না হইলে আমার কাছে আসিস… আমি ঠিক কইরা দিবো নে! হাসতেছিল। তখন তো কথার কথা। একশজনে দশজনের এই সমস্যা হয়। আমি যে অ্যাভারেজের বাইরে এইটা মানতে অনেক কষ্ট হইছিল। আমার এক্স-ওয়াইফ কইতো, আমার দাড়ি উইঠা গেলো, তোমার বুক বড় হয় না ক্যান?

ডাক্তারদের ডিরেক্টরি খুঁইজা দেখি, আরে নীলু-ই ডাক্তার! নাম দেইখাও শিওর ছিলাম না। অস্বস্তিও আছিলো, চিনবো না মনেহয়। অথচ পয়লবার তাকাইয়াই চিইনা ফেললো। তাকানোতে কোন কনফিউশনই নাই। ওর দেখাটা দেইখাই আমি শিওর হইলাম, নীলু-ই এইটা। একই নামের ক্লোন না কোন।

নাম ধইরা রাখা তো অনেক এক্সপেন্সিভ। এর লাইগা বিয়া করা লাগছিলো, স্পার্ম ডোনেট করতে হইছে। নীলু বিয়া করে নাই। এমনেই শে তার নাম ধইরা রাখছে। অনেক পরিশ্রম করছে লাইফে। নিজের ড্রিম ফুলফিল করছে। আমি তেমন কোন ড্রিমের কথাই ভাবতে পারি নাই।

এমনকি হইতে পারে যে, নীলু আগে থিকাই জানতো এইরকম ঘটবো… আমার বুক দেখানোর লাইগা ওর কাছেই আসা লাগবো? একবার একদিন ক্যাজুয়াল সেক্সের ঘটনাই। আমিও মনে রাখি নাই। নীলুর তো মনে রাখার কোন কারণই নাই। পুরান একটা সিনেমা মান্ধাতার আমলের, তখন আম্রিকা সিনেমাও বানাইতো; নো স্ট্রিং অ্যাটাচড নামে; দেইখা কইলো, ফার্স্ট পার্ট ভালো আছে, আমি ওইরকম হবো! শে পারতো। এখনো পারে। আমরা তখন নদীর পাড়ে বইসা সন্ধ্যা বানায়া সিনেমা দেখতাম। আরেকটা সিনেমা দেখছিলাম ৫০/৫০। বেকুব পোলাটার ক্যান্সার হয়, কিন্তু কিউর হয়া যায়। শালা! মরা’র এতো কাছে গিয়াও মরতে পারে না।

আমার বুকও বড় হইতে পারবে এখন। মাইনর একটা হরমোনের সমস্যা আছিলো। নীলু ভালো ডাক্তার। আমার আর যাওয়া লাগবে না ওর কাছে।

৩.
রাতে বাসায় ফিরা ড্রিমটা ইন্সটল করি আমি। আমি নীলু হই আর নীলুরে আমি বানাই।
: আমার এখনো তোমার লাইগা মায়া লাগে তো।

নীলু হাসে। হাসিতে মনেহয় একটু দুঃখ দেখতে পাই আমি। কই,
: তোমার বিশ্বাস হইতেছে না?
নীলু আর হাসে না। কয়, যাই গা তাইলে…

৪.
মাঝে মধ্যেই রিনিউ কইরা এই ড্রিমটা দেখি আমি। পুরান ড্রিম রিনিউ করতে বেশি টাকা লাগে। নতুন ড্রিম অফার করে অরা। তারপরও টাকা জমায়া এইটাই কিনি আমি। ড্রিম অফিসার কয়, আপনে ভাই পাবলিক একটা! তারপর আমরা দুইজনেই হাসি। রিয়েল টাচ এই এক ড্রিম অফিসে আসলেই পাওয়া যায়। অফিসে কেউ আসে না এমনিতে। আমার অফিসের কাছে বইলা কফি’র মগটা হাতে নিয়া হাঁটতে হাঁটতে চইলা আসি। গত তিনমাসে তিনবার আসাতে সে চিইনা ফেলছে আমারে। ড্রিম অফিসের দেয়ালে সালভাদার দালি’র আঁকা ছবি, আরো অনেকের আছে, নাম জানি না সবার। মিউজিকও বাজায়, কার কার জানি। আমি ড্রিমটা রিনিউ করার স্লিপটা দেই। সে টাইম এক্সটেন্ড কইরা দেয়। ‘টাকা হইলে পেটেন্ট করাইয়া নিয়েন।‘ সে কয়। আমিও হুঁ-হ্যাঁ করি।

রাস্তায় একবার দেখার ইচ্ছা হয়, কিন্তু দেখি না। বাসায় আইসা গোসল-টোসল কইরা ফ্রেশ হয়া বসি। ড্রিম যে দেখবো এইটা ভাইবাই কেমন ড্রিমি ড্রিমি লাগে। অনেককিছু ভাবি তখন। কোন এক টাইমে সিনেমার নায়িকাদের নাম-ই আছিলো নাকি ড্রিম-গার্ল। আমি ভাবি, আলাদা আলাদা নামের কি দরকার, সবার নাম তো নীলু-ই হইতে পারতো। নীলু শুনলে হাসতো।

৫.
বুক বড় হইলে নীলু’র ড্রিম আর দেখি না আমি।

 

 

Leave a Reply