মিথ্যাবাদী রাখাল

 

মিথ্যেবাদী রাখাল

আর কে-ই বা আছে ভেড়ার রাখাল!

যখন প্রতিতুলনার ঘোড়ার দৌড়ে অংশ নিতে
চলে যেতে থাকলো সবাই, আমি ম্রিয়মাণ ছায়ায়
দাঁড়াই, তোমার অপেক্ষা করি, ভেড়াদের চলাচল দেখি
ভাবি, কখন তুমি হঠাৎ-ই দেখা দিবা তেপান্তরের টিলায়

যে মিথ্যাবাদী, যে রাখাল, তার লাগি তো অপেক্ষাই খালি!

২০০৮

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

গো গো গোকূল তুমি
বাড়িছো যে!

আমারে যে খাইতে আসবে বাঘ
সে কই? ঘুমায়ে গেছে?

০৫.০৮.২০১৪

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

আমার প্লে লিস্ট ভরে যাইতেছে তোমার গানে।
ভ্যালিতে ভেড়াগুলি কাঁপতেছে শীতে।

কুয়াশার মতো আমাদের মনে
গানগুলি বাজতেছে
পোঁ পোঁ পোঁ, স্কটিশ বাঁশির সুরে।

একটা ভেড়ার গোঙানি, দূরে

ভাবতেছি, তার গলা কামড় দিয়া ধইরা আছে বাঘ, রক্ত পড়তেছে…

অথবা আমি ঘুমায়া পড়ছি
সন্ধ্যার আগে;

বাঘ আইসা বলতেছে, ‘কি ব্যাপার, আবার স্বপ্ন দেখতেছো নাকি তুমি, আমারে?’

১৫.১২.২০১৬

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

বাঘ বলে রাখাল’রে, আসো আমার ঘর গোছাই আমরা!
রাখাল কয়, আমার তো আছে গল্প-বলা, সারমন, ইমাজিনেশনের অনেকগুলি ভেড়া
আর তাদেরকে খাইয়া ফেলবা না তখন তুমি?
বাঘ কয়, তুমি খালি কনফিউজড কর। কই ভেড়া? কই ভ্যালি?
এইখানে তো আমরা রাস্তায় দাঁড়ায়া চা খাইতেছি!

ঘুমের ঘোরে দেখি অনেকগুলি পানির খালি জার। রাস্তার পাশে, ফুটপাতে।
দাঁড়ায়া আছি আমি আর বাঘ বসছেন একটা শাদা প্লাস্টিকের চেয়ারে।…

‘এইগুলি তো ট্রু না, তাই না?’ রাখাল কনফিউজড হয় আর সিগ্রেট ধরায়।
বাঘের ঠোঁটের লিপস্টিক কি আমার ঠোঁটে লাগে?

বাঘ বলে, চইলা যাবো আমি তাইলে!
এক রিকশাওলা আসে যার মেয়ে হসপিটালে
রংপুরের ভাষায় কানতে থাকে…

সুন্দরবন থিকা আইসা একটা বাঘ হাঁইটা হাঁইটা চইলা যাইতেছে শীতের রাতের হালকা কুয়াশার ভিতরে
বড় রাস্তা থিকা একটা ছোট গলির রাস্তায়, রিকশার টুং টাং নিয়া, একটা কনফিউজড রাখালের মনে…

৩০.১২.২০১৬

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

তুমি বাঘ, আমি মিথ্যাবাদী রাখাল

০৪.০১.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

একটা মিথ্যা’র বাঘ আইসা আমার সব সত্যিগুলিরে একদিন বাঁচায়া ফেলবে…

আমি বইসা থাকি ভ্যালিতে, সকালের
রইদ আসে; ভেড়াগুলি ঘুরে নিজেদের মতোন
অরা একজন আরেকজনের খবর রাখে, আর
আমারে দেখে, পাহারাদার
অদের ডরের দরজার সামনে দাঁড়ায়া আছি;
বাঘটারে আসতে দিতেছি না…

আমি থাকতেছি, একটা বাঘের না-থাকার ভিতর
বাঘটা থাবা বিছায়া বইসা আছে আমার ঘুমে,
ঘুম ভাঙার পরে দৌড় দিবো আমি একটা,
ভেড়াদের ফালায়া দিয়া চইলা যাবো কিছু কাকতাড়ুয়াদের কাছে, বলবো
‘বাঘ আসছে! বাঘ আসছে!’

কাকতাড়ুয়াগুলি তখন মানুষ হয়া যাবে, তারপর

বাঘ হাসবেন। আসবেন না আর!

কইবেন, ‘তোমার সত্যি নিয়া তুমি থাকো না রে ভাই!
আমার না-থাকাটারে তুমি কি আর থাকতে দিবা না!’

বাঘ তো কইতেই পারেন এইরকম…

এই ডরে আমি আর জাগি না
আমার সব সত্যিগুলির ভিতর মিথ্যার বাঘ ওঁত পাইতা বইসা থাকেন

আমি কান্দি তাঁর থাবার ভিতর বইসা,
‘তুমি তো আর আসবেন না!’

২২.০৩. ২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

আমি বলতেছি সত্যি কথা।
বলতেছি, বাঘ আসছে!
বাঘের করুণ মুখের দিকে তাকায়া আছে সবাই:
সত্যি সত্যি বাঘ এইটা? নাকি আঁকা ছবি?

বাঘ নড়তেছে, হাঁসফাঁস করতেছে
মানুষের সন্দেহের ভিতর…
আমি ভাবতেছি, বাঘের আঁচড় লাগায়া গলায়
মইরা যাবো কিনা?

ভ্যালিতে, সবুজ ঘাসে, ভেড়াদের হাঁটাহাঁটি দেখতে দেখতে বলবো আবার,
ওই যে বাঘ, বাঘ আসছে!

১৩.০৪.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

পাহাড় পার হয়া আসছি
রোদে ভরা বাতাসের ভ্যালিতে
ভেড়াদের পাশে শুইয়া গাছের নিচে
স্বপ্ন দেখতেছি, আমি আর আমার বাঘ হেঁটে যাইতেছি পাশাপাশি…

বাঘ কয়, ‘কামড় দিবো কিন্তু তোমারে আমি!’
আমি হাসি
বাঘও হাসে

আমাদের হাসাহাসি
কৃষ্ণচূড়া গাছগুলি কপি করে দেখাইতেছে
রাস্তার দুইপাশে…

২৯.০৪.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল: ভ্যালির বাতাস

যেইদিন বাঘ আসবা তুমি
আমারে বইলো না ভ্যালির বাতাসে
কাঁপতেছে ঘাস আর ইল্যুশন আমাদের
মিলায়া যাইতেছে একটা রিয়ালিটিতে আইসা

বাঘ কয়, ‘দেখো, এইটাই পসিবল
ভেড়াদের স্বপ্নের ভিতর থরথর কাঁপতেছি
আমরা, আমরা
যমজ আত্মা জেগে উঠতে চাইতেছি…’

‘পিছলায়া যাইতেছি যে আমরা, আমাদের কথা কি তাইলে আমরা মনে-ই রাখবো না?

পয়লা তো আসে ওয়ার্ড, তার ভিতর থিকা জাইগা উঠে ওয়ার্ল্ড…’

এক একটা মিথ্যার পাহাড় আসে
দাঁড়ায়া থাকে থাকে তারা যেন নাড়ানোই যাইবো না
আর তারপর একদিন মাঠে মাঠে বইতে থাকে শোঁ শোঁ বাতাস,
পাহাড়গুলি ধুলার মতো লুটায়া পড়ে ভ্যালিতে আইসা, আসতে থাকে
বাঘ আসার আওয়াজ…

০৯.০৫.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

‘পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুইরা বেড়াবো আমি
কল্পনা চাকমা’রে খুঁজবো, রমেলের ছাই বাইর কইরা ফ্যামিলির কাছে দিয়া আসবো
কালচারাল এক্টিভিস্ট হবো, কাঠের ঘরে শুইয়া অনেক অনেক বই পড়বো
আনারসের অনেকগুলি চোখ হয়া বোবা বোবা ভাব নিয়া তাকায়া থাকবো
যেই ভাষাগুলি হারায়া গেছে তাদের মেমোরি’র দিকে,
ভাসা ভাসা কথা লিখবো কবিতার নাম দিয়া…

নিজেরে ইম্পোজ করবো আমি পলিটিক্যাল রিয়ালিটির ভিতর
তবু তোমার মিথ্যার কাছে আসবো না,
তোমার উতলা প্রেম তুমি বেচো গিয়া বার্মিজ মার্কেটে, কক্সবাজারে
না পারলে বইসা থাইকো ঈদগা মাঠে, সন্ধ্যার আন্ধারে…’

আমার বাঘ আমারেই বলে বাঘের ডর দেখাইও না আমারে তুমি!

যেইদিন ছাইড়া যাবা সেইদিন আমিও তো থাকবো না!
আমি ভাবি, নিজেরে বুঝাই, মানুষ কি আর সবসময় মানুষ থাকে নাকি!

সুন্দরবনের বাঘশুমারির সময় একটা বাঘের বাচ্চা আইনা ক্রিকেট মাঠে ছাইড়া দিবো,
বলবো, দেখো, বাঘ আইছে, রামপালের আন্দোলন করতে স্টেডিয়ামে!

বাঘের শরীর নিয়া বাঘের কাছে গিয়া বলবো, এইবার তুমি মন নিয়া আসো!

আমাদের এরিয়াতেও বাঘ আসতেছে
এই ভাবনা নিয়াই লোকজন বইসা থাকবে
শাহবাগে, মোতিঝিলে…

তাদের নিয়া একটু টুইস্ট তো করতে পারা দরকার আমার

তখন বাঘ হইতে চাওয়া প্রতিটা মানুষের মুখের দিকে তাকায়া থাকবো,

গায়েবি আওয়াজ দিয়া বাঘ আমারে বলতেই থাকবে,
‘যাও, তুমি গিয়া তোমার বালের কবিতা লিখতেই থাকো,
বই বাইর কইরো!’

।। ১১।০৫।২০১৭ ।।

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

মিথ্যার বাঘ
তুমি আসলা যেইদিন
আমি দেখলাম আমি বানাইছি তোমারে

‘এইবার আমি, তোমারে খামু, হালুম…’
বইলা বাঘ হাসে

বাঘের দুইটা দাঁত নড়ে চড়ে
কয়েকটা দাড়ি মুখে

আমি ভাবি, বাঘের পেটের ভিতর
যাওয়ার পরেও
আমি কি থাইকা যাবো
আমি-ই?

২১.০৬.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী রাখাল

মিথ্যার নদী সাঁতরাইয়া পার হইলাম
মিথ্যার পাহাড়ে উইঠা বইসা থাকলাম
মিথ্যার সাগর-পারে বইসা মিথ্যার সূর্যরে কইলাম, নিইভা যান…

মিথ্যার বৃষ্টিতে মিথ্যার রাস্তাতে হাঁটলাম

মিথ্যার সকালবেলায় নিজেরে একটা মিথ্যা বানায়া জাগায়া তুললাম…

মিথ্যার বাঘ আইসা বলবেন আমারে, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল!
আরো অনেক অনেক মিথ্যা আপনি বলেন আমারে
যেন তারা সত্যি হয়
এইরকম সুন্দর সুন্দর মিথ্যার মতোন!’

০৩.০৭.২০১৭

 

মিথ্যাবাদী বাঘ

(মাইকেল মধুসূদন দত্ত’রে মনে রাখার পরে…)

 

রেখো না গো বাঘ, রাখালেরে মনে

 

 

Leave a Reply