অবিচুয়ারি: জয়নাল হাজারী

পলিটিক্স করা মানেই যে হইতেছে মাস্তানি করতে পারা – বাংলাদেশে এই ট্রাডিশন যারা তৈরি করছিলেন, জয়নাল হাজারী অইসব সেলিব্রেটিদের একজন।

১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশে এই জিনিস এস্টাবিশড হইছে যে, এলাকার যে যত বড় মাস্তান, যত বড় টেররিস্ট, সে হইতেছে তত বড় পলিটিশিয়ান। [এইটা কম-বেশি সবসময়ই ছিল, কিন্তু ‘পলিটিক্স’ হিসাবে আইডেন্টিফাইড হওয়ার ব্যাপারে রাখ-ঢাক থাকার কথা কিছুটা।] বাকশাল আমলে, রাষ্ট্রীয় মদদে এই জিনিস এস্টাবলিশড হইছিল। এই পলিটিক্যাল কালচার থিকা আমরা বাইর হইতে পারি নাই আর। বিএনপিও ‘পলিটিক্সে’ ততটাই পাওয়ারফুল ছিল যতদিন এলাকায় এলাকায় মাস্তানি করতে পারতো। [অন্য অনেককিছুর বাইরে, বামদলগুলার মাস্তান ছিল না বইলাই ‘পলিটিক্স’ হয় নাই, বা এখনো হয় না 🙂 ]

কিন্তু নয়া বাকশালের আমলে এই পুরান মাস্তানদের দরকার নাই তেমন। পুলিশ, রেব, সরকারি চাকরিজীবীদের দিয়াই এই টেরর তৈরির কাজগুলা করা যায়, লোকজনরে ডরের ভিতরে রাখা যায়। একটা রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে থাকতে থাকতে উনারা, পুরান-দিনের মাস্তানরা বাতিল হয়া গেছেন একভাবে। ডিসি, এসপি, ওসিদের সাগরেদ হিসাবে টিইকা আছেন। ওস্তাদ হিসাবে বা ড্রাইভিং সিটে আর নাই উনারা এখন।
তো, এই জায়গা থিকা জয়নাল হাজারির জন্য আহাজারি করতেই পারেন অনেকে। মনে হইতে পারে যেন, নায়কের মৃত্যু!
জুলুম করতে পারা যেইখানে পলিটিক্স করতে পারার ঘটনা, সেইখানে জালিমরে হিরো মনে করতে পারাটা তো কোন ইল্যুশন মনে হইতে পারবে না! বরং কেমনে জাস্টিফাই করা যায় চিন্তাটারে, সেই রাস্তাগুলাই সার্চ করা হবে তখন। জয়নাল হাজারীর লাইফ থিকা টেররিস্ট ইভেন্টগুলারে বাদ দেন, দেখবেন উনার ‘পলিটিক্স’ বইলা কিছু নাই আর। Continue reading

পাবলিক স্পিকিং এবং পাবলিক স্পেইস নিয়া

১.
– বিশিষ্টজনদের বিবৃতির ব্যাপারটা নিয়া –

এইরকমের একটা ট্রাডিশন দেখছি বাংলাদেশের পত্রিকায়, অন্য দেশেও থাকার কথা, যে ইম্পর্টেন্ট কোন ঘটনা ঘটলো, তখন সমাজের বিশিষ্ট লোকজন বিবৃতি দেন। চিটাগাংয়ের সিআরবি’র ঘটনায় এইটা দেইখা মনে হইলো। সিআরবি আমার নিজেরও অনেক পছন্দের জায়গা। রেলওয়ের হাসপাতাল, পাহাড়ের উপরে মসজিদ আছে একটা।… এই জায়গাটারে বাংলাদেশের ‘ন্যাচারাল হেরিটজ’ বইলা মার্ক করা উচিত আসলে।…

তো, বলতেছিলাম, বিবৃতি’র জায়গাটা নিয়া। আমি এর বিপক্ষে না। আর বিবৃতি দেয়া মানুশরাই যে এর বিরোধিতা করতেছেন, তা তো না-ই, এবং বিরোধিতা করতে হইলে আপনারে ‘বিশিষ্ট’ কেউ হইতে হবে – এইটাও জরুরি না। ‘বিশিষ্টজনদের বিবৃতি’র মধ্যে এই জিনিস’টা আছে – এই দাবিও আমি করতে চাই না। কিন্তু এই প্রাকটিসের কারণে নর্মস হিসাবে একভাবে সামনে থাকে, একটা বিরোধিতা যেমন থাকে, একটা ‘বিশিষ্টজনের’ তালিকাও তৈরি হইতে থাকে; এই জিনিসটা বাজে না অবশ্যই, কিন্তু টু সাম এক্সটেন্ড অস্বস্তির জিনিস বইলা মনেহয় আমার কাছে।

অস্বত্বি’টা হইতেছে এর ভিতর দিয়া ‘বিরোধিতা’ জিনিসটা একটা ‘বিশিষ্ট’ ব্যাপার হয়া উঠে, একটা স্পেশাল ঘটনা হয়া উঠে। আমি বিরোধিতা করতেছি, এই কারণেও আমি ‘বিশিষ্ট – এইরকম পারসেপশনের জায়গাতে গিয়া ঠেকে, এর বাইরে সবাই যেন মাইনা নিতেছেন! অথচ ঘটনা তো এইরকম না, কখনোই। যে কোন জিনিস নিয়া সমাজের ‘সব’ (এইটা হইতেছে ক্যাচ’টা) মানুশ কখনোই কনসার্ন হবে না, আর যেহেতু হইতেছে না, ধইরা নেয়া যাবে না যে, এই ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বাদ দিয়া ‘সবাই’ এইটা মাইনা নিতেছেন!

(এইটা ঘটে, নিরবতা জিনিসটারে সিঙ্গুলার হিসাবে ধইরা নেয়ার ভিতর দিয়া। অথচ নিরবতা ভাষার চাইতে, বলার চাইতে আরো বেশি মাল্টিপল।…)

এখন ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিরা’ বিবৃতি দেয়া বন্ধ কইরা দিলেই তো এইটা এস্টাবিলশ হয়া যাবে না, বরং আরো বাজে-ই হওয়ার কথা।

আমার কথা হইতেছে, যেই কয়জন মানুশ এর বিরোধিতা করতেছেন, তারা-ই ‘সমাজের সচেতন অংশ’ – এই টাইপের ব্র্যান্ডিং করা যাবে না। এই ধরণের বিবৃতির ভিতরে ইনটেনশনালি থাকে যে, যারা কথা বলতেছেন-না (না, যাদের কথা-বলাটারে সিগনিফিকেন্ট কইরা তোলা হইতেছে না আসলে) যেন তাদের রিপ্রেজেন্টেশন করতেছেন উনারা; এই রিপ্রেজেন্টেশনের জায়গা থিকা হাইলাইট করাটা ইস্যুটারে পাবলিক ঘটনা কইরা তুলতে পারে না, বরং পুরা ব্যাপারটাতে পাবলিক’রে যে এড়ানো হইতেছে – সেই কোর জায়গাটারে বাদ দিয়া একটা অবৈধ অথরিটিরেই মুখ্য কইরা তোলা হইতে থাকে।

এইভাবে ‘প্রতিবাদ’ যে হয় না – তা না, একটা সাবমিশনের ঘটনাও হাইলাইট হয়। যেইটা আমার অস্বস্তির জায়গা। Continue reading

দিদারুল আলম ভূঁইয়া

দিদারুল আলম ভূঁইয়া’র ঘটনা’টাতে (উনি রাষ্ট্রচিন্তা নামে একটা নতুন পলিটিক্যাল প্লাটফর্মের অর্গানাইজার; সেকেন্ড ওয়াইফ উনার নামে নারী-নির্যাতনের মামলা করলে পুলিশ সেকেন্ডবারের মতন উনারে গ্রেফতার করে) মনে হইলো আবার, যখন আপনি পলিটিক্স করতে যাইবেন, পাবলিকের দরবারে যাইবেন, আপনারে পলিটিক্যাল, ফিলোসফিক্যাল বোঝা-পড়ার বাইরে মোরাল জায়গাগুলা নিয়াও প্রিপারেশন নিতে হবে আসলে। কারণ আপনার পারসোনাল লাইফ আর পারসোনাল না তখন; ইলেকশনে কমপিট করার লাইগা যেমন হলফনামা দিতে হয়, পলিটিক্সেও এই হলফনামা বা স্বীকারোক্তি দিয়া রাখলে বেটার। ভিপি নূর অন্য অনেককিছুর বাইরে উনার পারসোনাল লাইফের ইন্ট্রিগ্রিটির জন্যই এখনো টিইকা আছেন। উনারে প্যাঁচাইতে গিয়া কিন্তু উল্টা ধরাই খাইতে হইছে সরকারের।

ফরহাদ মজহার যখন গুম হইছিলেন, তখন এই জিনিসটা নিয়া একবার আলাপ হইতেছিল আ-আল মামুনের সাথে, রাজশাহীতে গিয়া, ২০১৮ সালের দিকে হবে সেইটা। যদ্দূর মনে পড়ে উনারে এইরকম কথাই বলছিলাম যে, সমাজে একজন পাবলিক ফিগারের পারসোনাল লাইফরে বাতিল কইরা দিতে পারি না আমরা, তার পাবলিক কাজকামের লগে মিলায়াই দেখতে হবে; এখন কেমনে দেখবো – এই জায়গাটা হয়তো ক্লিয়ার না কখনোই।

নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে যাওয়ার আগেই, যখন পার্টিতে উঠতি লিডার তখনই উইনি ম্যান্ডেলার প্রেমে পড়ছিলেন, সেকেন্ড বিয়া করছিলেন। জেলে থিকা বাইর হওয়ার পরে উইনি’র লগে তার ডির্ভোস হইছিল, মেবি উনি তখন প্রেসিডেন্ট। মানে, এইটা নেলসন ম্যান্ডেলার বেটাগিরি না আসলে, বরং উনি যেই দুইজন মহিলার লগে রিলেশনে ছিলেন, উনারা দুইজনেই মেবি কন্সিডারেট ছিলেন, পাবলিক লিডার হিসাবেও উনারে বিশ্বাস করতেন। রিলেশনের শুরু এবং শেষটা উনারা ভালোভাবে করতে পারছিলেন।

মানুশ হিসাবে আপনার প্রেম-ভালোবাসা-ঘৃণা এইসব ইমোশন সবসময় এতোটা কন্ট্রোলের মধ্যে থাকে না, কিন্তু আপনি ক্লিয়ার থাকতে পারেন নিজের কাছে, এবং পাবলিক ফিগার হইলে, পাবলিকের কাছেও; এতে আপনার উপর পাবলিকের বিশ্বাস কমে না। কয়দিন আগে, কিরণ রাও আর আমির খান করলো না! একটু বেশি নাটক হইলেও জিনিসটা ভালো।

এখন আমি যেহেতু পাবলিক ফিগার না, আমার পক্ষে এইগুলা বলা সহজ। (কেউ আমরা ফেরেশতা না, শয়তানও না; গুড হিউম্যান বিইয়ং’রাও আছেন, সবার কাছে একসেপ্টবল না হইলেও। আমি অই ক্যাটাগরি লোক – এই ক্লেইম আমার নাই।) আর কবিদের উপ্রে তো লোকজনের চেত এই কারণেও যে, এইসব ইমোশনাল ইস্যুগুলা উল্টা আরো এপ্রিয়েশট করা হয়, মাফ কইরা দেয়া হয় যে, কবি তো, একটু করবেই! (আসলে এইরকম না ব্যাপারটা। কাউরে কবি মনে হইলে, তার অনেককিছু মাফ কইরা দেয়া যায় আর কি…)
পলিটিশিয়ান, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালদের ব্যাপারেও যে মাফ করা যায় না – তা না; কিন্তু উনারা যখন গোপন করেন, তখন পাবলিক বিশ্বাসের জায়গাতে ধাক্কা খায়, ইনিশিয়ালি মনে করতেই পারে, গোপন করলো কেন! তারে তো আমরা আমাদের কাছের লোক ভাবছিলাম! তো, পিপলরে যদি আপনি কাছের লোক বানাইতে চান, তাদের লগে ভেদ বা ইনফরমেশন গ্যাপ যতো কমানো যায়, ততই তো ভালো, তাই না?

এইটা জরুরি না যে, আপনার ইমোশনাল ‘ভুলগুলার’ (ক্রাইম না বা হয়তো পাপও না) কথা আপনি বইলা বেড়াইবেন, কিন্তু লিগ্যাল বা ডকুমেন্টেড যেই জিনিসগুলা, সেইগুলা না-বলাটা ‘বিশ্বাসভঙ্গের’ একটা ঘটনা হয়া উঠে।

কাউরে রিলেশনের ব্যাপারে এডভাইস দিতে চাইতেছি না আমি। বা এইভাবে মোরালি যে ভিক্টিমাইজ করা হইতেছে, একট ট্যাবু বানানো হইতেছে ‘ভালো মানুশের’ – এর এগেনেস্টেই আমি। আমি বলতে চাইতেছি পলিটিক্স করতে গেলে আপনারে ‘ভালো মানুশ’ হইতে হবে – এইটা জরুরি না হইলেও, আপনার পারসোনাল লাইফের ব্যাপারে স্পষ্ট হইতে পারাটা দরকার, তা নাইলে পাবলিক আপনারে কাছের মানুশ মনে করতে পারবে না আসলে। এর বাইরে অন্যসব ঘটনাগুলা তো আছেই।…

 

The People v. O. J. Simpson নিয়া কয়েকটা কথা

১. এলান বাদিউ কইছিলেন এই কথা যে, কোথাও কোন জাস্টিস হইলে সেইটার বুঝার উপায় না থাকলেও, কোথাও কোন ইনজাস্টিস বা অন্যায়-অবিচার হইলে সেইটা টের পাওয়া যায়; লোকজনের একটা অসম্মতি, একটা রেজিসট্যান্স থাকে। তো, ও.জে. সিম্পসন’রে যখন গ্রেফতার করতেছিল পুলিশ, তখন ব্ল্যাক লোকজন এর প্রতিবাদ করতেছিল। আবার সে যখন খালাস পাইলো মামলায় হোয়াইট লোকজন তার বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়ায়া এই রায়ের প্রতিবাদ করতেছিল।

২. ব্যাপারটা এইরকম লিনিয়ার না যে, আমাদের সামাজিক বাস্তবতা আমাদের পারসোনাল লাইফ’রে এফেক্ট করে, বা এর উল্টা’টা যে আমাদের পারসোনাল লাইফ-ই সামাজিক বাস্তবতাগুলা তৈরি করতেছে; মানে, এইগুলা সত্যি কথা-ই; কিন্তু সত্যি জিনিসটারে এর মধ্যে আটকায়া ফেললে মুশকিল হবে। বরং আমার প্রস্তাব’টা হইতেছে এইরকম: সমাজে যখন এক ধরণের অন্যায়-অবিচার লিমিট ছাড়া, ভয়াবহরকম ভাবে হইতে থাকে, তখন কোন না কোন পারসন ভিক্টিম সাইজা এর বেনিফিট নিতে পারে; একটা পর্যায়ে গিয়া সমাজের অন্যায়-অবিচার ব্যক্তির পর্যায়ে গিয়া জায়েজ হয়া যায়।

ও. জে.’র ব্যাপারটাতে ধরেন, বুঝা যায় যে, খুন দুইটা সে-ই করছে; কিন্তু আম্রিকান সমাজে ব্ল্যাক পিপলদের প্রতি হেইট্রেট এই জায়গাতে আছে, এই পরিমাণ হইছে যে, সোসাইটি অন্ধ হয়া গেছে এই জায়গাটাতে; ব্ল্যাক পিপল’রা খুন করতে পারে না – তা না, বরং একজন ব্ল্যাক লোকরে কন্সপিরেসি কইরা ফাঁসানো’টা খুবই কমন ব্যাপার। আমাদের, বাংলাদেশের সমাজেও দেখবেন, কোন ওয়াইফ, প্রেমিকা যদি বলেন উনার জামাই, প্রেমিক উনারে মাইর-ধর করছে, টর্চার করছে – সেইটারে কোন প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস না করার কোন কারণ নাই, কারণ এইটা ঘটে; তো, কোন পার্টিকুলার কেইসে কোন মেয়ের পক্ষে ‘ভিক্টিম রোল’ প্লে করাটা খুব সহজেই বিশ্বাস করার মতো একটা ঘটনা। সমাজে যদি ‘নারী-নির্যাতনের’ ঘটনা না থাকতো বা কম থাকতো, পাবলিক বিশ্বাসও কম করতো। এইরকম একটা কানেকশন আছে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের বিচার সমাজ-বাস্তবতার উপ্রে নির্ভর করে। আইন-কানুন তো আছেই, কিন্তু বিচার বেশিরভাগ সময়ই সোশ্যাল পারসেপশনের, রিয়ালিটির ঘটনা।

৩. এই কারণে জুরি সিস্টেম’টা ভালো। আমি ভাবতেছিলাম, বাংলাদেশে যদি এই জুরি সিস্টেম থাকতো আদালতের বিচারে, তাইলে কি হইতো? জুরি’রা ঘুষ-টুষ খায়া বারোটা বাজায়া দিতো হয়তো, পারসোনাল রেষারেষিরেও কাজে লাগাইতো হয়তো; কিন্তু তাইলেও ভালো হইতো আসলে। পাবলিক’রে যতো বেশি সম্ভব আদালতের বিচারের লগে রিলেট করা দরকার। তাইলে সমাজের যেই বিচার সেইটার নমুনা আমরা পাইতে পারতাম, খারাপ হোক আর ভালো হোক। আমরা মেবি বুঝতে পারতাম, এই সমাজ কতোটা ভালো বিচার করতে পারে। এই অভ্যাস’টা দরকার আসলে। Continue reading

আহমদ ছফা’র ইতিহাস বর্ণনা

আহমদ ছফা ১৯৬৭ সালে বিএ পাশ করার পরে দুই বছর সময় নিয়া ইতিহাসের একটা বই লিখছিলেন “সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস” নামে, যেইটা ১৯৭৯ সালে পয়লাবার ছাপা হয়। পরে ১৯৮৭ সালে বইটার সেকেন্ড এডিশন এবং ১৯৯৬ সালে প্রতিপক্ষ প্রকাশনা থিকা বইটার থার্ড এডিশন ছাপা হয়। তো, এই বইটার নাম খুব একটা শোনা যায় না, কারণ বই হিসাবে এইটার তেমন কোন সিগনিফেন্স নাই; মানে, বইটাতে আহমদ ছফা’র নিজের তেমন কোন বিচার-বিবেচনা নাই; যেইসব রেফারেন্স বই উনি ইউজ করছেন, সেইগুলার ন্যারেটিভটারেই উনি নিছেন। 
ফার্স্ট এডিশনের ফার্স্ট লাইনেই উনি বলছিলেন, “আমার যৌবন ধর্মের অপরাধের প্রমাণ এই গ্রন্থ।” তো, উনার এই লাইনরে ভুলভাবে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি, যেন উনি বইটারে বাতিল কইরা দিতে চাইতেছেন। কিন্তু আসলে, তা না; বরং দুইটা কারণে এই বইটা নিয়া উনি রিস্ক ফিল করতেছিলেন। পয়লা কারণ’টা বেশ ইন্টারেস্টিং, “এ রকম জমকালো বিষয়ে গম্ভীর একখানি কেতাবের লেখক জানলে লোকে আমার লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা অন্যান্য রচনা পড়বে না। আমাদের দেশের পন্ডিতদের লেখার প্রতি সাধারণ মার্জিত রুচির পাঠকদের একটা ভীতি এবং একটা অনীহার কথা আমি জানতাম।” সাউন্ডস ফিমিলিয়ার? 🙂
মানে, আপনি ‘পন্ডিত’ বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ হইলে ‘কবি-সাহিত্যিক’ হইতে পারবেন না। দুইটা দুই জিনিস। 🙂 এই ডরে উনি বইটা ছাপাইতে চাইতেছিলেন না। তো, দেখেন, এইটা কিন্তু আছেই; আহমদ ছফা যতোটা ইন্টেলেকচুয়াল হইতে পারছেন, ‘কবি-সাহিত্যিক’ কিন্তু হইতে পারেন নাই এতোটা! এই বইয়ের কারণে না, বরং আমরা আইডেন্টিটি হিসাবে “দুইটা দুই রকম” ভাবতে পারতেছি বইলাই। এই পারসেপশনের জায়গাটাতে আহমদ ছফা নিজেও সাবস্ক্রাইবই করতেন।… (বইলা রাখা ভালো, দুইটা একইরকম – এইটা আমার প্রপোজিশন না, বরং পারসেপশনগুলা কেমনে কাজ করে, সেইটার কথাই বলা।)
দুসরা জিনিস হইলো, থার্ড এডিশনের ভূমিকাতে, ১৯৯৬ সালে উনি বলতেছেন, এখন যদি বইটা লিখতেন তাইলে এইরকম ঘটনা-ওয়াইজ না লেইখা পারসন-ওয়াইজ লিখতেন। মানে, আরো টেরিবল ব্যাপার হইতো একটা! 🙁 উনি ইতিহাসরে দেখতেছেন ব্যক্তি’র ভুল আর সাহসের জায়গা থিকা, “সিপাহী যুদ্ধের আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করার বদলে সিপাহী যুদ্ধের কতিপয় কুশীলবকে নিয়ে একটি ভিন্ন রকমের গ্রন্থ রচনা করতে চেষ্টা করতাম।…আজিমুল্লা, তাঁতিয়া টোপী, ঝাঁসির লক্ষীবাঈ, মাওলানা আহমদউল্লাহ… সামন্তবাদের জগদ্দল ঠেলে এ অসাধারণ মানুষ মানুষীরা যদি যথার্থ ভূমিকায় অভিনয় করতে পারতেন তাহলে এই যুদ্ধের ইতিহাস ভিন্নভাবে লিখিত হতো।” হয়তো সেইটা একটা ডকু-ফিকশন হইতো তখন। উনার ‘সাহিত্য করার’ জায়গা থিকা সেইটা ভালোও হইতো হয়তো। কিন্তু ইতিহাস হিসাবে আরো ট্রাশ একটা ব্যাপারই হওয়ার কথা; কারণ ব্যক্তির যে কোন ভূমিকা নাই – তা না, ইতিহাসের ঘটনাগুলা ব্যক্তির অ্যাক্ট দিয়া, চিন্তা দিয়া ইনফ্লুয়েন্সড হইছে বইলাই ব্যক্তির জীবনীই তো ইতিহাস না! বরং ইতিহাসরে কোন ধারণা’র জায়গা থিকা আমরা দেখতেছি, সেইটা জরুরি একটা জিনিস। আহমদ ছফা’র কাছে এই এক্সপেক্টশন করাটাও আসলে ঠিক না। কিন্তু উনার টেনডেন্সিটারে মার্ক কইরা রাখাটা দরকার, যাতে উনার ভুলগুলারে ‘সাহস’ বইলা রিপিট না করতে থাকি আমরা।

Continue reading