গল্পের বই: পুরি’র গল্প (সেকেন্ড এডিশন)

২০১৬ সালে এই গল্পের বইটা ছাপাইছিলাম। বারোটা গল্প ছিলো। কিন্তু এখন একটু চেইঞ্জ করার কথা মনে হইলো। পুরান দুইটা গল্প বাদ দিয়া নতুন দুইটা গল্প ইনক্লুড করলাম। আর টেক্সটগুলি অনেক এডিট করা লাগবো আসলে। প্রথম দুইটা গল্পের কিছু এডিট করলাম। পুরাটা এডিট করা হইলে আরেকবার ছাপাবো হয়তো।

………………………….

পুরি’র গল্প

…………………………..

পুরি’র গল্প

অমর প্রেম অথবা আমার প্রেম

ছোট শহরের গল্প

গল্প-লেখকের স্বপ্ন

দঈত আননাহাল

কিছু মায়া রহিয়া গেলো

দুর্গতিনাশিনী

মিডলাইফ ক্রাইসিস

যুদ্ধ ও শান্তি

টাইগার

আমার ফ্রেন্ডের বউ

শাহেরজাদী

…………………………………………………..

 

পুরির গল্প

গল্পটা আসলে পুরি’র। চা-পুরি-সিঙ্গারা’র পুরি; সিলঅটি পুরি, উৎপলকুমার বসুর পুরি-সিরিজের পুরি কিংবা অন্য আর কিছুই না। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা এইটা। চূড়ান্ত অসাফল্যের একটা ইতিহাস, না-পারার একটা করুণ অধ্যায়।

তখন আমার বয়স দশ। ‘শৈশব’ মার্কা জিনিসটা শেষ হইতেছে। একটু একটু টিনএইজ। পাড়ার মাঠ ছাইড়া রেলের মাঠে যাই মাঝে মাঝে। মাঝে মাঝে বাজারে যাই আব্বার লগে। বাজার শেষে রিকশা কইরা দিলে একলা একলা বাসায় ফিরতে পারি। বাজারের টাকা মারতে পারি না। এইরকম সব ঘটনা। মানে আমি বুঝাইতে চাইতেছি যে, আমি তখন আসলে আর শৈশবের ভিতর নাই। কিন্তু আমার সম্পর্কে তখনও পোলা-মাইয়া ভেদ পুরাপুরি ঘটে নাই। নানুবাড়ি গেলে নানা-নানির সাথে এক বিছানাতেই থাকি। একটা বিহ্বল অবস্থার সূত্রপাতও হয় নাই। তখনও আমি টিনএইজ হওয়ার যোগ্যতাগুলির ভিতর দিয়া যাওয়া শুরু করি নাই।

তখন আমি পড়ি ক্লাস ফাইভে। পৌরসভার মডেল প্রাইমারী স্কুলে। আমি বলতেছি আশির দশকের মাঝামাঝি একটা সময়ের কথা। ইংলিশ মিডিয়াম তো দূরের কথা, কিন্ডারগার্ডেন স্কুলও তখন চালু হয় নাই সেইখানে। পৌরসভার মধ্যে নামি প্রাইমারী স্কুল। পৌরসভার বা পুরা উপজেলার ট্যালেন্টপুল বৃত্তিতে এই স্কুলের ছাত্রদের অনেকের নাম থাকে। আমাদের আগের ব্যাচে উপজেলার সাতটা ট্যালেন্টপুল বৃত্তির পাঁচটাই এই স্কুলের ছিল। গল্পের এবং স্কুলের সাফল্যের সীমানা এই পর্যন্তই। এরপর থিকা আমার  অধ্যায়, ব্যর্থতা আর অসাফল্যের গাঁথা। সেই ইতিহাসের বলি এইবার।

আমি যখন ক্লাস ওয়ান থিকা ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়ার কম্পিটিশনের ভিতরে ঢুকি, সম্ভবত  তখন থিকাই ফার্স্ট হওয়ার প্রতি আমার এক ধরনের ডরই বলা লাগবে এখন, সেইটা ছিল। কারণ আমি কখনোই ফার্স্ট হইতে পারতাম না, স্পেশালি ফাইনাল পরীক্ষায়। যখন ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টু তে উঠি, ভুল করার সম্ভাবনা আমার খুবই কম আছিলো, আম্মা-আব্বা, বিশেষ কইরা বড় ভাইয়ের কারণে। এরপরেও আমি ফার্স্ট হইতে পারি নাই। কারণ আমার হাতের লেখা যথেষ্ঠ পরিমাণ খারাপ হওয়ায়, একই নম্বর পাওয়ার পরও  আমাকে সেকেন্ড ঘোষণা করা হয়। তবে রোল নম্বর আমার ১ থাকে, বি সেকশনে। ক্লাস টু থিকাআমি ফোর্থ হইয়া ক্লাস থ্রিতে উঠি, পরিবারের নানা কটুবাক্য সহ্য কইরা এবং নিজের দিক থিকা কোনোরকম গ্লানি ও জটিলতা ছাড়াই। থ্রি থিকা ফোর-এ ওঠার সময় আবারও সেকেন্ড হই, নিজের দিক থিকা কোনোরকম গ্লানি ও জটিলতা ছাড়াই। কিন্তু পরিবারে কিছুটা শান্তি আসে এবং পাশাপাশি এই জিনিসটা এস্টাবলিশ হয় যে, এই ছেলে কখনোই ফার্স্ট হইতে পারবো না। কেননা, ফার্স্টের সাথে আমার ব্যবধান ছিল বিশাল। আর ফার্স্টওলাও আমার উপর খুব খুশি এইরকম সেকেন্ড পাইয়া। আর আমিও জেলাস হইতে পারি নাই। এইরকম খুশি খুশি ফার্স্ট-সেকেন্ড আমার ধারণা খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু ট্রাডেজিটা ঘটে তার পরেই। এই কম্পিটিশন না থাকাটা ফার্স্টের বাপ-মা মানতে পারে না, একই ঘটনা ক্লাস ফ্লোরে ওঠার সময় ঘটলে উনারা তারে কাছের হাইস্কুলের প্রাইমারী সেকশনে দাখিল করেন, আরো কম্পিটিশন মোকাবিলা কইরা হাইস্কুলের ভবিষ্যত প্রতিযোগিতার জন্য যোগ্য করার লাইগা। কিন্তু বিপদ হয় স্কুলের এবং আমার। আমি ফার্স্ট হতে পারি না আর ভালো স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করার মতো মেরিট ছাত্র আর খুঁইজা পাওয়া যায় না। তার উপরে ভয়, যদি আমাকে কাট দেওয়ার প্ল্যান করেন, আমার বাপ-মা। কিন্তু আমার ফ্যামিলিতে তখন স্বস্তির হাওয়া, এইবার তো অন্তঃত ফার্স্ট হতে পারবে! কারণ ক্লাসে থার্ড বা ফোর্থ বইলা কাউরে খুঁইজা পাওয়া ছিল আরো মুশকিল। কিন্তু যথারীতি আমি ফার্স্ট হইতে ব্যর্থ হই, প্রথম সাময়িকী পরীক্ষায়। কারণ তখন উত্থান ঘটে নারীবাদের। দুই দুইজন নারী আমার সাথে ফার্স্ট  হওয়ার লড়াইয়ে চইলা আসেন। একজন ফার্স্ট এবং একজন থার্ড হন। তারা কম্পিটিশন জাগায়ে তোলেন। যেহেতু তারা মেয়ে, আমি খুব একটা মাইন্ড করি না, কিন্তু একটু একটু খারাপ লাগে যখন লোকজন বলে যে, শেষ পর্যন্ত মেয়েদের তলে পড়লি! সম্ভবত তখন থিকাই আমার মধ্যে নারীবাদের প্রতি সহানুভূতি জাগতে শুরু করে, পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়া যে, মেয়েরা কী ছাত্র না! ওরা ফার্স্ট হইতে পারবে না কেন? কিন্তু এই যুক্তি আমাকে শান্তি বা স্বস্তি কোনোটাই দিতে পারে না। এর পরিত্রাণ হিসাবে পড়াশোনার চিন্তা খানিকটা বাদ দিয়া আমি খেলাধুলায় মন দিতে শুরু করি। মোটা দাগে, পরিস্থিতিটা এইরকম। আর তখনই খবর আসে যে, ইন্টারস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে, উপজেলায়। এই প্রতিযোগিতাকে সামনে রাইখা আমি দুইটা খেলায় পারদর্শিতা অর্জনের চেষ্টা করি। একটা হইতেছে একশ মিটার লম্বা দৌড় আর সেকেন্ডটা হইতেছে অংক দৌড়। প্রথমটা ব্যাখ্যা করার কিছু নাই। কিন্তু দ্বিতীয়টার নিয়মগুলি সর্ম্পকে একটু বলি। প্রত্যেক প্রতিযোগীর হাতে একটা খাতা এবং কলম থাকবে। মাঠের মাঝখানটাতে ব্ল্যাক বোর্ডে একটা অংক দেয়া থাকবে। বাঁশি ফু দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে দৌড় শুরু করতে হবে। ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে গিয়ে অংকটা দেখে, তার সমাধান করার পরে বাকি মাঠ দৌড় দিয়া শেষ করতে হবে। যে অংকটা ঠিকভাবে কইরা সবচেয়ে আগে দৌড়ে শেষ মাথায় পৌঁছতে পারবে,  সে ফার্স্ট হবে। মানে, কেউ আগে দৌড় শেষ করতে পারে, কিন্তু অংক ভুল হইলে কোনো লাভ নাই। প্রতিযোগিতায় ভালো করার মূল শর্ত দুইটা, ভালো দৌড়াইতে পারতে হবে আর দ্রুত অংক করতে জানতে হবে। আমি যেহেতু একটু দৌড়াতেও পারি এবং সেকেন্ড হওয়ার অভ্যাস আছে, আমার জন্য এই খেলায় ভালো করার সব সম্ভাবনাই ছিল। আর সত্যি সত্যি সেটা হইছিলোও। স্কুলের মধ্যে প্রাকটিস করার সময় দৌড়ে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতে শুরু করি; আর অংক দৌড়ে স্কুলে ফার্স্ট তো আমি হই-ই, কিন্তু সেকেন্ড আর খুঁইজাই পাওয়া যায় না। দেখা যায়, আমি অংক-দৌড় শেষ কইরা, কল থিকা পানি খাইয়া ফিরা আসার পরেও যারা দৌড় শেষ কইরা আসছে, তাদের অংক পরীক্ষা কইরা সেকেন্ড বাইর করার প্রক্রিয়া চলতেছে। প্রতিটি খেলায় প্রতি স্কুল থেকে দুইজন করে অংশ নিতে পারবে। আমি একশ মিটার লম্বা দৌড় এবং অংক দৌড়-এর প্লেয়ার। কিন্তু আমাদের স্কুল থেকে অংক দৌড়-এর জন্য সেকেন্ড আর কাউকে পাওয়াই গেলো না। তাই আমিই একমাত্র। আমি খুবই খুশি হয়ে উঠি আমার নিজের কিছু করার মতো এই জায়গাটা পাইয়া। ভবিষ্যত সাফল্যের স্বপ্ন দিনে এবং রাতে সবসময় দেখতে শুরু করি। পরিকল্পনা করতে থাকি কী কইরা আমি আরো দ্রুত দৌড়াইতে পারি, দৌড়টা কীভাবে শুরু করবো, অংক করার সময় কোন ভঙ্গিতে বসতে হবে, ইত্যাদি। আর অংক তো আমি পারিই। ফার্স্ট হই বা সেকেন্ড হই অংক পরীক্ষায় হায়েস্ট মার্কস আমার থাকেই। মেয়েরা এতটা ভালো অংক করা তখনও শেখে নাই। দেখতে দেখতে একসময় প্রতিযোগিতার দিন চলে আসলো। প্রথমে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে, তারপর উপজেলা পর্যায়ের খেলা। আমরা জানতাম যে, পৌরসভার প্রতিযোগিতাটা আমাদের স্কুলেই অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর ঘটলো না। কারণ আমাদের স্কুলের মাঠটা আবার ঈদগারও মাঠ। খেলাধুলার প্রতিযোগিতা করে সেই মাঠ নষ্ট করা যাবে না। তাই অন্য আরেকটা স্কুল ঠিক করা হইলো। যদিও সেই মাঠটা ছোট। আমরা সকাল নয়টার মধ্যে সেখানে পৌঁছে গেলাম। সব মিলিয়ে আট দশটা খেলা হবে হয়তো। কিন্তু আমার অন্য কোনো বিষয়েই মনোযোগ নাই। শুধুমাত্র আমার নিজের দুইটা খেলা ছাড়া। Continue reading

গল্পের বই: ২০৪৬

“Everyone who goes to 2046 has the same intention, they want to recapture lost memories. Because in 2046 nothing ever changes. But, nobody knows if that is true or not because no-one has ever come back.”

  • 2046, Wonk kar wai.

—————————————-

১.
বেশিরভাগ গল্প ২০৪৬’র টাইমটারে প্রজেক্ট কইরা লেখা। দুয়েকটা গল্প বাদ দিয়া। তো, ২০৪৬-তে বাঁইচা থাকবো না আমরা, যাদের বয়স ৪০ ক্রস করছে; আর বাঁইচা থাকলেও ওইরকম বোধ-বুদ্ধি থাকার কথা না। বা এখনকার ২০৪৬’র যেই কল্পনা ওইটা ততদিনে আর ভ্যালিডও থাকার কথা না। মানে, ফিউচার বলতেছি না আমি কোন। নিয়ার ফিউচার নিয়া গল্পই লিখছি। আর সেইটা সবসময় অন্য একটা ঘটনাই। যখন ২০৪৬ অ্যাপিয়ার করবে, ২০৪৬-এর গল্প ইনভ্যালিড হইতে পারার কথা।

২.
একটা তো হইলো যে, এইভাবে টাইম’রে জানা যায় না। টাইম ব্যাপারটা এগজিস্ট করে মনেহয় এইরকম পিছলায়া যাওয়ার ভিতরেই। আমি ভাবতেছি আর আমার ভাবনাটা জেন্ডার বায়াসডই। এখন যেমন একটা ব্যাপার হইতেছে যে, ছলা-কলা (সিডাকশন) না জানলে ফিমেইল হওয়া যায় না বা দেখো, ছলা-কলা থাকার পরেও আমি ফিমেইল হইতে পারি! আছে কিনা জানি না, আমি ভাবতে পারি আর কি! মানে, এইটার থাকার দরকার নাই। প্রজেক্ট কইরা কইরাই তো রিয়ালিটি বানায়া ফেলতে পারি আমরা। তো, তখন হ্যাভিং ছলা-কলা বিকামস একটা ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট অফ বিয়ং অ্যা ফিমেইল। এইরকম ছলা-কলা’র জায়গায় একটা বেদনা না থাকলে বেটা হওয়াটাও টাফ হওয়ার কথা এখন বা ইন ২০৪৬-এ এইটা আরো ভিজিবল হয়া উঠার কথা। বা না হইলো, আমি যেহেতু স্যাড হইতে চাই, স্যাডিস্ট হওয়াটা পসিবল না আর। ভাবলাম একটু এইরকম।

৩.
এলিট কমলকুমার কইছিলেন, ‘ঘটনা ইজ নট গল্প।’ উনার মাড়-ভাতে আঙুলও ডুবতো না। এই গল্পগুলির ঘটনাগুলি এতোটা যুইতের হইলো না – এই আক্ষেপ মনেহয় আমার থাইকাই যাবে।

—————————————–

১. জয়-বাংলা
২. দুইটা মিথ্যা গল্প
৩. আমি আর আমার ছোট বইন
৪. ২০৪৬
৫. স্বপ্নের গরুগুলি
৬. ডার্বিলানস
৭. আন-নোন
৮. মেমোরি
৯. বিবাহিত

—————————————-

Continue reading

আন-নোন

দেয়ার ওয়্যার টাইমস যখন আন-নোন হওয়াটাই ছিল অ্যাট্রাকশনের মূল উপায়া। আমি তো তোমারে জানি না – এইটা হৃদয়ে বিরাট সক্রেটিস হাহাকার ক্রিয়েট করতো, সেইরকম টাইমের গল্প এইটা।

আমরা ফিরতেছিলাম। রিকশায়। মনিকা, মানিক আর আমি। রিকশাটা রাখা হইছে আসলে একটা এনশিয়েন্ট ফিলিংস দেয়ার লাইগা। রিকশাওলারাও মানুষ, থ্রি-ডাইমেনশনাল দুনিয়ায়। তবে নিয়েনডার্থাল টাইপ, ফিলিংসের কমপ্লিকেসি নাই, টাইমের নন-লিনিয়ারিটি নাই; লোকাল ইমপ্যাক্টগুলি আছে, ইমোশনালি সাপ্রেসড থাকতে পারে… কমপ্লিকেটেট রোবটগুলির চাইতে অনেক বেটার। আর ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির মান-ইজ্জত থাকলেও রিকশাওলা ছাড়া তো রিকশার কোন বেইলই নাই, ইন ফ্যাক্ট রিকশাওলাই মেইন এইখানে, রিকশার চাইতে। আর মানিকের অনেক টাইম-মানি আছে, চাইলেই এনক্যাশ করতে পারে। সো, এইটুক লাক্সারি আমরা এর্ফোড করতেই পারি। রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে একটু বাতাস খাইলাম।…

মানিক আমার চাইতে একটু মোটা, এর লাইগা আমি উপ্রের সিটে বসছিলাম রিকশার। মনিকা আর মানিক কাপল। অরা সারাদিন একলগেই আছিল। ফিরার সময় কাভার লাগে তো একটা, আমি এইজন্যে লগে আছিলাম। বা আন-নোন হওয়ার প্লেজারে আমিও পার্টিসিপেট করতে চা্ইতেছিলাম মনেহয়। মনেহয় এই কারণেই ঝামেলাটা বাঁধলো।

বাসার কাছাকাছি আইসাই দেখি, বাসাটা নাই আর। দোতলা ছিল দালানটা, একটা রেললাইনের পাশে। হলুদ কালারের। এখন অন্য কোন ড্রিমের ভিতর অকুপাই হয়া আছে। এমনো হইতে পারে, পথ ভুল করতে চাইতেছিলাম আমরা। অন্য কোন গলিতে ঢুইকা পড়লাম তখন। একটা শেল্টার সেন্টারের সামনে আইসা দাঁড়াইলাম। বুঝতেছিলাম বাঁইচা থাকতে হইলে, কন্টিনিউ করতে হইলে যেকোন একটা বিল্ডিংয়ে ঢুইকা পড়তে হবে আমাদেরকে।

শাদা একটা তিনতলা বিল্ডিং। শিখাদের বাড়ির আশেপাশের কোন দালান। শিখা হঠাৎ কইরা একবার ফার্স্ট হয়া গেলো স্কুলে, তখন ওরে চিনছিলাম। এমনিতে অ্যাভারেজ গার্ল, ঢং ঢাং করতে রাজি আছিলো না কোনসময়ই, শে যে মেয়ে – এই ধারণাটার ভিতরেই মলিন হইয়া গেছিলো। অদের দোতলা দালান, সামনে একটু উঠান। শিখাদের বাড়িতে যাই নাই, কিন্তু বাইরে থিকাই চিনতাম। ধুমকেতু রেইন আসার টাইম হয়া গেছিলো, এর লাইগা আমরা তাড়াতাড়ি কইরা বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুইকা পড়তেছিলাম। সাইডের গ্যারাজে দেখলাম হেব্বি একটা মোটর সাইকেল, সাইডে দুইটা উইংস আছে, বডির সাথে মিশানো, ইচ্ছা হইলে একটু দূর উইড়াও যাইতে পারে, এইরকম। দেখলেই লোভ লাগে।   Continue reading

ইবুক: পুরির গল্প

২০১৬-তে এই গল্পের বইটা ছাপানো হইছিল। ছাপা বইয়ে ১২টা গল্প আছে। এই ই-বুকে আরো দুইটা গল্প (দুর্গতিনাশিনী আর আমার ফ্রেন্ডের বউ) অ্যাড করা হইছে।

অনলাইনে পড়তে পারেন বা পিডিএফ-এ ডাউনলোড কইরাও পড়া যাইতে পারে।

purir-golpo

পুরির গল্প, ফ্লিপিং ইবুক পড়তে ছবিতে ক্লিক করতে হবে।

 

ক্লিক: ডাউনলোড পিডিএফ

ডাবলিনার্স

শান্তনু’র লাস্ট লাইনটা আছিলো এইরকম – আমি তো ভালো কাস্টমার সার্ভিস দিতে জানি, সো এতো প্যারা নেয়ার তো দরকার নাই; গর্ভমেন্ট জব’টা আমি ছাইড়াই দিতে পারি। শেষে, সে দিছিলো কিনা আমি শিওর না। শান্তনুরে আমি আর জিগাই নাই। ইন ফ্যাক্ট, দেখাও হয় নাই, এরপরে। এর আগেই কেওটিক জিনিসগুলি শুরু হইয়া গেলো। সিনেমার মতো সিনগুলি ঢুইকা গেলো ঘটনার ভিতরে। তখন ঘটনাগুলিরে মনে হইতেছিল কোন আর্ট-ফিল্ম বা টিভি-নাটক। মানে, একসাইটমেন্ট কম আর ঘটনাগুলিও বেশ স্লো।

মেইন শহরের বাইরে একটা জেলা শহরে থাকি আমি তখন। একটা অষুধ আনতে যাইতে হয় শহরের বাইরের রিসার্চ সেন্টারে। রিসার্চ সেন্টার ইউনির্ভাসিটির মতোন। পাবলিকদের কাছেও অষুধ বেচে, প্রপার রিকমেন্ডশন থাকলে। আমি কিনতে যাই, কয়দিন পরে পরে। একদিন গিয়া শুনি নতুন অ্যাডমিনস্ট্রেশন ম্যানেজার আসছেন। ওইটাই শান্তনু। দেইখা চিনলো সে আমারে। ফ্যাসিলিটি দিতে চাইলো। আমি কইলাম থাক, থাক। তেমন কোন কিছু তো দরকার নাই। মাঝে-মধ্যে অষুধই তো নিতে আসি। কিন্তু শান্তনু কোনকিছু কইরা দেখাইতে চাইতেছিল। ঠিকাছে সেইটা। সে কদ্দূর পর্যন্ত কি করতে পারে সেইটা না কইরা দেখাইলে আমিও তো বিশ্বাস করবো না আসলে। তো, কইলাম, কোন হেল্প লাগলে জানা্বো নে। কিন্তু এইরকম অজ পাড়া-গাঁ টাইপ রিসার্চ সেন্টারে সে কেমনে থাকে? আমার জেলা শহরের প্রাইড দিয়া আমি জিগাইলাম। সে কইলো, স্পেশাল সার্ভিস আছে, ওইটা দিয়া সরাসরি মেইন শহরে চইলা যায় সে উইকএন্ডে। তারপরও তো, ঝামেলাই। জেলা শহরের প্রাইড ধইরা রাখতে চাইলাম আমি। পুরান পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হইলে এইরকমই তো হয়।

এরপরে দূর থিকা কয়েকবার দেখা হইছে। শান্তনু’র সিরিয়াস প্রফেশনাল চেহারা নিয়া কারে কারে কি কি যেন ইন্সট্রাকশন দিতেছে। অষুধ নিয়া চইলা আসছি আমি। একবার সন্ধ্যাবেলা গেছি। ওদের ডরমেটরি’তে সন্ধ্যাবেলার স্ন্যাকস খাইয়া ফেরত আসতেছি। একলা একটা বোরাক নিয়া আসা তো কস্টলি, এইজন্য শেয়ারে আসতেছি। এইরকম রিমোট জায়গাগুলিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বইলাও কিছু নাই। নরমালি লগের প্যাসেঞ্জারদের সাথে কথা কই না। অন্যরাও কয় না। কিন্তু অন্যরা একই গ্রুপের; শান্তনু স্যার’রে নিয়া কথা কইতেছিল। মেইন শহরে যাওয়া নিয়া কি নাকি ঝামেলা হইছে। ভিসি বা সিইও যাইতে দিতে চায় না, কইছে,মাসে একবার যান উইকলি না গিয়া। শান্তনু আরো ইরেগুলার হইয়া গেছে এরপরে, ফ্রাইডে দুপুরেই চইলা যায় মানডে’তে বারোটার আগে আসে না। এইসবকিছু। আমি ভাবলাম পরেরবার আসলে শান্তনুর লগে দেখা করবো নে। বেচারা ঝামেলায় আছে। আমি কোন উপকার তো করতে পারবো না, কিন্তু শুইনা দেখি কি অবস্থা; ও তো চাইলে জেলা শহরেও আইসা থাকতে পারে! নাকি আমি থাকি বইলা, আমারে হেল্প করবো বলছিলো বইলা জেলা শহরে আইসা থাকাটা ওর জন্য ঝামেলার হইতেছে?

পরেরবার দুপুরের দিকে আসছি রিসার্চ সেন্টারে। একটু দূরে শুনি যে শান্তনু এক কলিগের লগে কইতেছে, সে তো চাকরিটা ছাইড়াই দিতে পারে।… Continue reading