এ-কার আর আ-কার

ছোট একটা টেকনিকের জিনিস এইটা, অনেকেই খেয়াল করার কথা, কিন্তু খোলাখুলিভাবে খুব কম কথা-ই হইছে মনেহয়, এই এ-কার আর আ-কার নিয়া।

বাংলায় কাজ-কাম বুঝাইতে যেই ওয়ার্ডগুলা আছে, সেইগুলা খেয়াল করলে দেখবেন এ-কার দিয়া লেখলে একরকম লাগে, আর আ-কার দিয়া লেখলে পুরা অন্যরকম লাগে; মনে হবে যেন আরেকটা দুনিয়াই ক্রিয়েট কইরা ফেলছেন! যেমন, বললে/বললা, দেখলে/দেখলা, বলবে/বলবা, শেখালে/শিখাইলা… এইরকম শ’য়ে শ’য়ে পাইবেন। লেখার টোন’টাই পুরা চেইঞ্জ হয়া যায়।

তো, ব্যাপার’টা মোর বাংলা হয়া উঠবো – তা না, কিন্তু আমরা বাংলাদেশে বলার সময় তো আ-কার’টাই বেশি ইউজ করি। কিন্তু বাংলা লেখা ব্যাপারটা যেহেতু কলকাতা-সেন্ট্রিক ছিল, এই কারণে অইখানের ডায়ালেক্টে যেহেতু ‘এ-কার’ এর চল’টা বেশি, অইটারে বেশি ‘কারেক্ট’ মনে করার মতো একটা ভুল ধারণা এখনো আছে। ভাষা থিকা ডায়ালেক্টগুলারে মুইছা ফেলতে হবে বা ‘আঞ্চলিক ভাষা’ হিসাবে বাঁচায়া রাখতে হবে – এইটা খুবই ভুল একটা প্রিমাইজ, আলাপ করার। মানে, ‘বললে’ লিখলেই জিনিসটা ‘শুদ্ধ’ – তা না, কিন্তু ‘বললা’ ইউজ করলে দেখবেন বাংলাদেশের অডিয়েন্সরে বেশি কানেক্ট করতে পারার কথা। Continue reading

মোহাম্মদ আজমের ‘বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার’ বই নিয়া আলাপ

(২০১৯ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর এই আলাপটা করা হইছিল।)

মোহাম্মদ আজমের বইটা আমি কিনছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসে যখন পাবলিশড হয়। তারপরে বইটা আসলে খুব বেশি দূর পড়া হয় নাই। ভূমিকাটা আমি একটা নাড়াচাড়া করছিলাম। তো, একটা বইয়ের ভূমিকার জায়গা দেখলে তো আসলে বুঝা যায় কোন জায়গা থিকা উনি কথাগুলা বলতেছেন। তো, ভূমিকাটা পইড়া আমি আসলে খুব বেশি আগ্রহী হই নাই বইটার ব্যাপারে। এখন এইটা নিয়া যেহেতু কথা বলতে হবে তখন মনে হইছে বইটা একটু পড়া দরকার। তখন বইটা একটু ব্রাউজ করছি। ব্রাউজ করতে গিয়া যেই কয়টা জিনিস মনে হইছে, সেইগুলা নিয়াই বলি।

মোহাম্মদ আজম তো বেটার বলতে পারবেন উনি কি বলতে চাইছেন, কোন জায়গা থিকা বলতে চাইছেন। কিন্তু আমি আমার রিডিংটাই বলতে চাইতেছি। আমার মনে হইছে, উনি ব্যাকরণের কথা বলছেন যে, বাংলা ভাষার একটা নিজস্ব ব্যাকরণ দরকার। এখন যে ব্যাকরণ আছে সেইটা আসলে অনেকটাই সংস্কৃত বেইজড। আর এই কথাগুলা যে উনি নতুন বলতেছেন – তা না, শ্যামাচরণ গাঙ্গুলি বলছেন, রবীন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীরাও বলছেন। ব্যাকরণটা কেন দরকার? কারণ স্কুল-কলেজে পড়াইতে হয়, রাষ্ট্র চালাইতে হয়, আইন-আদালত চালাইতে হয়। তো, এইগুলা করতে গেলে একটা মান-ভাষা দরকার। এইগুলা হইতেছে উনার কথা। তো, মানভাষাটা কেমনে হবে? মানভাষাটা হবে এক ধরণের গণতন্ত্রায়ণের মধ্যে দিয়া। বেশিরভাগ মানুশ যেই ভাষা ইউজ করে, যেইভাবে ইউজ করে – সেইটার বেসিসে হইতে হবে।…

তো, এইসব জায়গা নিয়া বিতর্কের স্পেইসটা অনেক কম। বিতর্কের স্পেইসটা হইতেছে আসলে কে কোন জায়গা থিকা দেখতেছি। যেমন ধরেন, একজন বলতেছিলেন গণতন্ত্র মানে হইতেছে বেশিরভাগ মানুশ যেইভাবে কথা বলে। তো, আমার কাছে মনেহয় যে, পারসপেক্টিভগুলা হইতেছে ঝামেলার, যে, কোন জায়গা থিকা দেখতেছি। তো, গণতন্ত্র মানে এইটা না যে বেশিরভাগ মানুশের জিনিস। যেমন এইখানে আমরা একশজনের মতো লোক আছি, এখন একশজনের মধ্যে সত্তুর জনই যদি সিগ্রেট খাইতে পছন্দ করেন, তার মানে এই না যে সিগ্রেট খাওয়াটা এইখানে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র বরং হইতেছে, এইখানে যদি পাঁচজন লোকের শ্বাসকষ্ট থাকে, আর আমরা যদি একজন লোকও সিগ্রেট ধরাই তাইলে এই পাঁচজন লোকের সমস্যা হইতে পারে, এইটা মানতে পারাটা হইতেছে আমার কাছে গণতন্ত্র। তো, এইরকমের ঝামেলাগুলা আছে।

ধরেন, এই মান-ভাষাটার কথাই। মান-ভাষাটার দরকার হইতেছে রাষ্ট্রের কাজে, কিন্তু আমি মান-ভাষাটারে এইভাবে দেখি না। বা যেইটা প্রমিত ভাষা। প্রমিত ভাষা মানেই হইতেছে একটা ট্রাপ। ট্রাপ হইতেছে কি রকম, যেমন ধরেন, বাংলা একাডেমি প্রমিত ভাষার একটা ব্যাকরণ বাইর করলো, ডিকশনারি বাইর করলো। বাইর কইরা বললো যে, না, এইটা হইতেছে একটা ভালো জিনিস, এইটা ফলো করেন, করতেই হবে – এইরকম কোন কথা নাই। কিন্তু যখনই আপনি এইটার বাইরে যাবেন, তখন আপনারে আইসা ধরবে। মান-ভাষা মানে একটা স্ট্যান্ডার্ডাটাইজেশন না, স্ট্যান্ডার্ড বানানোর মানেই হইতেছে এক ধরণের ট্রাপ ক্রিয়েট করা। তো, সেইম জিনিসটা হইতেছে ভাষার ব্যাপারেও, ব্যাকরণের দরকার আছে কি নাই সেইটা পরের কথা, কিন্তু ভাষার আলাপ মানেই ব্যাকরণের আলাপ না। বরং ভাষার কথা যদি আমরা বলতে চাই, ভাষা ইন ইটস কোর তার ব্যাকরণরে কোন না কোনভাবে এড়াইতে না পারে, এইটারে ক্রস কইরা না যাইতে পারে, সেই ভাষার লাইভ থাকতে পারার কথা না।

তো, মুশকিল হইতেছে এই জায়গাগুলা। হিস্ট্রিগুলা কমবেশি আমাদের জানা, ফোর্ট উইলিয়ামের পরে বাংলার মানুশ হঠাৎ কইরা সংস্কৃত বেইজড ভাষায় কথা বলতে শুরু করে নাই। যেমনে বলতো অমনেই বলতেছে। আমরা যেইভাবে বলি, এইভাবেই বলতেছি। কিন্তু আমাদের ফোকাসটা চইলা গেছে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে। যে, ভাষা এইভাবে লিখতে হবে!

এখন তাইলে আমার প্রস্তাবটা কি? একটা অ্যানার্কি ক্রিয়েট হবে? না। বরং আমার তিনটা পয়েন্ট আছে। Continue reading

ইংরেজি শব্দ, বাংলা ওয়ার্ড…

তখন মনেহয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, একটা গল্প বা রম্য-রচনা পইড়া পুরা বোকচোদ হয়া গেছিলাম, কারণ কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না; পারতেছিলাম না একটা শব্দের কারণে। লিখছিলেন মনেহয় আলী ইমাম, শাহরিয়ার কবির বা এইরকমের কেউ, যারা অই আমলে কিশোর, মানে টিনএইজদের জন্য লিখতেন। শব্দটা ছিল, ডিক্টেটর। একজন ডিক্টেটর কি করেন, কেমনে ঘুমান, কেমনে খাওয়া-দাওয়া করেন, এইসব নিয়া ফান করা। তো, ডিক্টেটর কি জিনিস সেইটাই তো জানি না আমি! আর ইংলিশে স্পেলিংটা লেখাও নাই যে ডিকশনারিতে খুঁজতে পারবো। তখন যেহেতু গোয়েন্দাদের বই পড়ি কিছু, ডিটেকটিভ শব্দটা জানি। কিন্তু ডিটেকটিভরে নিয়া এতো ফান করার কি আছে! পরে যখন জানতে পারলাম ডিক্টেটর মানে স্বৈরাচার তখন বুঝতে পারলাম যে, ও, আচ্ছা, এরশাদরে নিয়া লিখছে! তো, লেখাটা যতোটা না ফান, তার চাইতে জেলাসিই বেশি ছিল মনেহয়, এই কারণে ফানটা জমে নাই তেমন। আর আমার ধারণা, রাইটার ইচ্ছা কইরা স্বৈরাচার না লেইখা ডিক্টেটর লিখছিলেন, কারণ নিউজপেপারে সবসময় স্বৈরাচার লেখা হইতো (চিন্তা করেন, কি রকম ফ্রি একটা টাইম ছিল তখন!), শব্দটা পরিচিত ছিল, তো অইটা লিখলে সাথে সাথে কানেক্ট করা যাইতো যে, এরশাদরে নিয়া লেখছে, এই কারণে মেবি এই শব্দটা লিখছিলেন।…

এখন ব্যাপারটা যে খালি ইংরেজি শব্দ – তা তো না, যেই জিনিসটারে বুঝাইতে চাইতেছে, সেই ব্যাপারটাই তো ‘ইংলিশ’! মানে, ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার টার্মটা বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিক্যাল রেফারেন্সে তো নাই, কি থাকতে পারে… জালিম?… বা অন্য আরো কিছু… কিন্তু সেইটা কোনভাবেই স্বৈরাচার না। মানে, কাছাকাছি রকমের জিনিসই, কিন্তু একই জিনিস না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বৈরাচারের ইংলিশ হইতেছে ডিক্টেটর, বরং স্বৈরাচার হইতেছে ডিক্টেটরের বাংলা। দুইটা একই ঘটনা না। তো, আমার ধারণা হাজার হাজার না হইলেও শ’য়ে শ’য়ে এইরকম ইংরেজি শব্দ থাকার কথা, বাংলা ভাষায়; যেইটার রেফারেন্স (বা সূত্র) হইতেছে ইংরেজি ভাষায়। এক সময় হয়তো ফার্সি ভাষাতে ছিল এই রেফারেন্সগুলা।

মানে, আমি যেই পয়েন্টটা মেইক করতে চাইতেছি, সেইটা হইতেছে, যে কোন শব্দই একটা কালচারাল রেফারেন্সের ঘটনা। উইথইন দ্য কালচারও। যেমন ধরেন, খোয়াব কইলে দাদি-নানীদের কথা মনে হইতে পারে, বা ‘গ্রাম-বাংলা’র কথা 🙂 (যদিও গান আছে, “আমি স্বপ্ন দেখি, মধুমালার মুখ রে…”), স্বপ্ন রিলেটিভলি ‘আধুনিক বাংলা’, ‘বাংলা মিডিয়াম’-ও কিছুটা; এর পাশাপাশি ড্রিমও কিন্তু বাংলায় এখন অনেকটা, কারণ আমরা যারা ‘শিক্ষিত’ তারা সবাই ড্রিম বুঝি তো! কিন্তু তাই বইলা ইংরেজি ভাষায় ড্রিম যেইরকম অ্যাসপায়ার, উইশ, হোপ নানান রকমের আছে, বাংলার ড্রিম অইরকম জায়গাতে খুব কমই যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, কথাটা খালি এইটা না যে, ইংরেজি শব্দগুলাও বাংলা-ই অনেক সময় – এইটা তো আছেই (বা বাংলা অনেক শব্দও ইংলিশে বাংলাতেই কইতে হবে আসলে, যেমন ধরেন, খিচুরিরে মাসালা রাইস কইলে খিচুরি বুঝানো যাবে না আসলে, বা ম্যাশ পটেটো দিয়া আলু-ভর্তা… মানে, একই জিনিস হবে না); বরং শব্দ জিনিসটারে ইংরেজি, ফার্সি, পর্তুগিজ, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু… এইভাবে দেখার যে তরিকা সেইটাই ঝামেলার জিনিস মনেহয়। এমন না যে, এইভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় না, কিন্তু এইরকম দাগানোটা বরং স্বৈরাচার ও ডিক্টেটর টাইপের ঝামেলা তৈরি করে, যেইরকম করে লেবার ও শ্রমিক; মানে, লেবার তো আসলে ‘বেশি বাংলা’; যেইরকম ‘সাইডে, সাইডে…’ বেশি বাংলা ‘সরে যান’ থিকা। তো, এইরকম ইংরেজি শব্দগুলা ‘বাংলা’ বইলা ‘ডিক্টেটর’ বাংলা না, বা এর এগেনেস্টে ‘স্বৈরাচার’-ও। এখন তাই বইলা ইংরেজি শব্দের বাংলা কি করা যাবে না? এইখানে আমার কথা হইতেছে, কি বাংলা বানাইতেছেন, সেইটা খেয়াল করাটা দরকার। এইখানে ডিক্টেটরের বাংলা স্বৈরাচারই করতেছেন না খালি, জালিম’রেও যে রিপ্লেইস করতেছেন, এই বুঝ থাকাটা দরকার মনেহয়।… Continue reading

ফিকশন: উদকুম্ভ

একটা পুরান কুয়ার কাছে গিয়া একটা শব্দ খুঁইজা পাইলো শহরের একদল ট্রাভেলার’রা। এমনিতেই পুরান, তার উপরে বাড়ি-ঘর থিকাও অনেক দূরে। অনেকদিন কেউ আসে না মনেহয়। ট্রাভেলার’রা ঘুরতে ঘুরতে চইলা আসছে। ৫টা মাইয়া আর ৪টা পোলা।

অরা বাইর হইছে, অ-জানা’রে জানতে। গুগুল দেইখা তো সবকিছু জাইনা ফেলা যায়। অ-জানা নাই কিছু আর। সবাই-ই জানে সবকিছু। এমনকিছু নাই যে, কাউরে জানানো যায়। সবকিছু’র জাইনা ফেলার যে বোরডোম – এর থিকা বাইর হওয়ার আর যেন কোন রাস্তা নাই, এক মরলেই শান্তি! এইরকমের হাঁসফাঁস সিচুয়েশন। তো, তখন মনে হইলো, আছে তো আরেকটা পথ! ট্রাভেলিং! ঘুইরা ঘুইরা আমরা নিজেরা নিজেরা দেখলাম! আর এমন একটা জায়গাতে গেলাম, যেইখানে সহজে যায় না কেউ। মানে, হিমালয়ের ভীড়ে না বা সাহারা’র ডেজার্ট ট্রিপে না; যেইখানে গিজগিজ করতে থাকে দুনিয়ার সব সেনসেশন।

তো, কই যাওয়া যায় তাইলে?

দিলীপকুমার প্রপোজ করলো, ইসলামপুর! কই এইটা? সবাই গুগুল সার্চ করার আগেই, চিমটিকুমার কইলো, আমার দাদাবাড়ি; প্রত্যন্ত (অনেক জোর দিয়া দাঁতে জিহ্বার বাড়ি দিয়া উচ্চারণ করলো সে, শুনছে, বাংলা-কবিতা নাকি এইরকম…) অঞ্চল! মীনাকুমারী তো শুইনাই প্রেমে পইড়া গেলো। শে লগে লগে রাজি! কিন্তু অপোজ করলো, টম ক্রুজ। কয়, দাদাবাড়ি ঠিকাছে, কিন্তু গিয়া থাকবো কই? টয়লেট করবো কই? বিশুদ্ধ পানি কি আছে? এই-সেই…। নিকোল কিডম্যান তারে একরকম ইশারা দিয়া বুঝাইলো, আরে, একসাইটমেন্ট তো এইটাই! কই থাকবো, কেমনে যাবো – এইগুলা ফিক্সড কইরা ফেললে তো মুশকিল। দেখো, হোটেল.কম এখনই অফার পাঠায়া দিতে শুরু করবো! জাফর ইকবাল, ববিতা’র তেমন কোন সে নাই। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কইলো, ব্যাপারটা অ্যাডভেঞ্জারাস হইলে তার কোন প্রব্লেম নাই। অন্য’রা জানা-অজানা ধুইয়া পানি খাক! তার অ্যাডভেঞ্জার হইলেই হয়!

তারপরও গুগুল ম্যাপ ছাড়া তো আর চলা সম্ভব না। মেট্রোপলিটন সিটি থিকা জেলা শহর, জেলা শহর থিকা মফস্বল, মফস্বল থিকা গ্রাম। মনেহয়, ‘মনেহয় কতো অজস্র মৃত্যু’রে পার হয়ে আসিলাম…’ জাফর ইকবাল কয়, জোকসের মতোন। আর সবাই হাসে।

কিন্তু গ্রামে আইসা অরা তো অবাক। দেখে, সবাই তো স্মার্টফোনই চালায়। টারানটিনোর সিনেমাই দেখে। গ্রেটা’রেই প্রেইজ করে। আর রিপন ভিডিও’রে নিয়াই হাসে! তখন মন-খারাপ হয়। যদিও থাকা-খাওয়া, চলাফেরা’র কোন প্রব্লেম নাই। কিন্তু অরা তো অদের আরেকটা প্রটো-টাইপ দেখতে আসে নাই! আসছিলো, কোন অ-জানা’রে ইনভেন্ট করা’র লাইগা। খুব মন-খারাপ হয়, অরা’র।

হাঁটতে হাঁটতে অরা একলা একলা এইদিক-অইদিক যায়। দুইদিন, চাইরদিন পার হয়া যায়।

তখন একটু প্রাইভেসি খুঁজতে গিয়া জাফর ইকবাল আর ববিতা দেখে, দূরে একটু জঙ্গলের মতোন। দিলীপকুমার’রে আইসা জিগায়, অইটা কি? দিলীপকুমারও তো গ্রামে নতুন। কইতে পারে না কিছু। গ্রামের মানুষজন’রে জিগায়। অরাও কেউ ঠিক কইরা কিছু কইতে পারে না। কয়, কোন ঝামেলা আছে মনেহয়। কাউরে আমরা যাইতে দেখি নাই। আমরা যাই নাই, দরকার পড়ে নাই তাই। এইসব!

এইসব শুইনা ট্রাভেলারদের চোখ চকচক করে। অ-জানা’রে আমরা পাইতে যাইতেছি মনেহয়। গুগুল ম্যাপে সার্চ কইরা দেখে, আরে, কোন এন্ট্রি তো নাই!

নতুন আম্রিকা খুঁইজা পাইতে যাইতেছি আমরা! আমরা নতুন কলম্বাস!

প্ল্যান করে, পরেরদিন সকালে যাবে অরা, ঘুম থিকা উঠার পরে।

সারারাত টেনশন। Continue reading

ভাষা’র জেলখানা

।। কারাগারের রোজনামচা ।। শেখ মুজিবর রহমান ।। বাংলা একাডেমি ।। মার্চ, ২০১৭ ।।

বইটা কিনার পরে পড়া হয় নাই। এরপরে কয়েক পেইজ পড়ছিলাম। পড়ার ইচ্ছা হয় নাই আর। কিন্তু কয়েকটা পেইজ পড়ার সময় কিছু জিনিস চোখে পড়ছিলো, দাগ দিয়া রাখছিলাম। তো, আরেকবার পড়া শুরু করার আগে ভাবলাম জিনিসগুলি বইলা রাখি।

—————–

“জেলখানায় পাগলা গারদ আছে তার কাছেরই সেলে তাঁকে বন্দি রাখা হয়েছিল।” (শেখ হাসিনা, পেইজ – ১৪)

পাগলদেরকে যে পছন্দ করতেন উনার বাপ সেইটা নিয়াই ভূমিকাতে বলতেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এইটার পলিটিক্যাল জায়গাটা নিয়া কনশাস হন নাই যে, কেন তারে পাগলদের কাছের সেলে রাখা হইলো? এইটা একটা থ্রেট তো অবশ্যই। ফুকো’র কারণে সোসাইটির পাওয়ার স্ট্রাকচারের লেবেলিংয়ের মধ্যে ক্রিমিনাল আর পাগল’রা যে কাছাকাছি রকমের জিনিস – এইটা তো আমরা জানি-ই এখন। তখনো, থিওরি জানার আগেই, এইটা প্রাকটিসের ভিতর আছিলো। যে, পাগল বানায়া জেলখানায় রাইখা দিতে পারে উনারে। বা পাগলদের সাথে রাখতে রাখতে পাগল বানায়া দেয়া যাইতে পারে। এইরকম কাছাকাছি রকমের পসিবিলিটিগুলিরে পলিটিক্যালি যে ট্রাই করা হয় নাই – তা তো না! one bird flew over the cuckoo’s nest সিনেমাটা তো আছেই। মানে, ক্রিমিনালিটি আর পাগলামি – খুবই কাছাকাছি রকমের জিনিস। এইটারে পলিটক্যালি মার্ক না করলে মুশকিল।… তো, এর বাইরে জেলখানায় গিয়া পাগল হইছেন তো অনেকে। আবার অনেকে ‘পাগল’ হওয়ার কারণে জেলখানা থিকা ছাড়াও পাইছেন। লুইস আলথুসারেরই এইরকম হইছে।

“সাবজেল দুইতিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত লোক ছাড়া রাখে না। ডিস্ট্রিক্ট জেলে পাঠিয়ে দেয়। প্রায় তিন বছরের উপর জেল হলে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠাইয়া দেয়।” (পেইজ ২৭)

খুবই নিরীহ বাক্য। কিন্তু ‘পাঠিয়ে’ আর ‘পাঠাইয়া’ শব্দ দুইটা খেয়াল করেন, আরেকবার পইড়া। এডিটরদের ‘ভুল’ এইরকম মনেহয় না আমার। মানে, হইলে হইতেই পারে, কিন্তু যদি দুইবার ‘পাঠিয়ে’ বা দুইবারই ‘পাঠাইয়া’ হইতো তাইলে কথাটা হইতো না ওইরকম। এইরকম ‘ভুল’ যে কতো দরকারি জিনিস! এইরকম ভালো একটা ‘প্রমাণ’ পাইয়া ভাল্লাগছে অনেক। মানে, আপনি ‘পাঠিয়ে’ লিখলে সারাজীবন একই কাজ কইরা যাইতে হবে – এইটা খুবই ভুল জিনিস আসলে। Continue reading