কমেন্টস অন উৎপলকুমার বসু

আমার ধারণা, উৎপলকুমার বসু ডিডাক্টিভ পদ্ধতিতে কবিতা লিখতেন; মানে, অনেককিছু বাদ দিয়াই তো আমরা লিখি; কিন্তু পদ্ধতি হিসাবে উনি এইটা বেশ স্মুথলি ইউজ করতেন; এই জায়গাটা* – “বাতাস শান্ত, নীল।” – দেইখা জিনিসটা আরেকবার মনে হইলো; যিনি পড়বেন তিনি কিন্তু বুঝবেন যে, না-থাকা শব্দটা হইতেছে ‘আকাশ’ যেইটা নীল। এই যে বাদ দেয়াগুলি বাদ-ই দেয়া যাইতেছে এবং তারপরে ফিল করা যাইতেছে, এই আনন্দ উনার কবিতা পড়লে পাওয়া যায়।

আরেকটা লাইনের কথা অ্যাড করা যায় এইখানে, ওই যে ‘বাদাম পাহাড়’… “তোমার ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি হারিয়েছ বাদাম পাহাড়ে”। মানে, পাহাড় তো বাদাম রংয়ের হইতেই পারে, খাগড়াছড়িতে দেখছি এইরকম, ঘাস এবং গাছ-গাছালির ছাল উইঠা যাওয়া পাহাড়। কিন্তু যদি লিখা হইতো, “ব্যক্তিগত বসন্তদিনের চটি আমি হারিয়েছি বাদাম রঙের পাহাড়ে”… কবিতা তো কমতোই, উৎপলকুমার বসু’রেও কি আর তেমন একটা কিছু মনে হইতে পারতো? মানে, আমি ডাউটফুল আর কি। Continue reading

কমলা দাসের কবিতার বাংলা অনুবাদ নিয়া।

কেবল আত্মাই জানে কিভাবে গান গাইতে হয়। নির্বাচিত কবিতা, কমলা দাস। অনুবাদ, উৎপলকুমার বসু। সাহিত্য অকাদেমি, নতুন দিল্লী। ২০১২। পৃষ্টা: ১৯২। মূল্য: ১২০ রূপি।  প্রচ্ছদ: অপরূপ উকিল।

 

কমলা দাস ত কবি। এইকথা বুঝতে পারলাম উৎপলকুমার বসু’র করা তার নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ পইড়া। যিনি অন্তঃত দশটা কবিতা লিখতে পারছেন, তারে কবি বইলা মাইনা নেয়া যায়। উনার নির্বাচিত কবিতার বাংলা অনুবাদের নাম – কেবল আত্মাই জানে কিভাবে গান গাইতে হয়; ওইখানের একশ তিপান্নটা কবিতা থিকা বিশটার মতো কবিতা পাওয়া গেলো। বইটা বাইর করছে ইন্ডিয়ার সাহিত্য অকাদেমি, ২০১২-তে। আমি দুইবছর পরে পড়তেছি।

আমার ধারণা, এইটা কোন প্রজেক্ট-বেইজড কাজ, এক ভাষার কবিতা আরেক ভাষাতে ট্রান্সফার করার লাইগা; এইরকম আরো কবিতার বই অনুবাদ হইছে মনেহয় ইন্ডিয়ার অনেক ভাষায়। প্রজেক্ট হিসাবে এইটা ভালো, বাংলাদেশে চলতে-থাকা মীনা প্রজেক্ট যেইরকম (যদিও এইটার স্কোপ এবং ইমপ্যাক্ট অনেকবেশি)। হইতে পারে, এই প্রজেক্টের লক্ষ্য ইন্ডিয়ান স্টেইটগুলার মধ্যে রিজিওনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়ানো বা এইরকম একটাকিছু; কিন্তু এইখানে, ইন্ডিয়ারে বুঝতে হইলে খালি বঙ্গ দিয়া যে বোঝা যাইবো না এই মেসেজটা বাংলাদেশের লাইগা ইর্ম্পটেন্ট। আর উৎপলকুমার বসু যে আইয়াপ্পা পানিকর-এর কবিতাও অনুবাদ করছেন, এইটা দেইখাও ভাল্লাগলো। বঙ্গের হিন্দু ও মুসলমানরা যে সিটিজেন হিসাবে ইন্ডিয়ান, এই পরিচয়টা তারা মাইনা নিতে পারতেছেন ত তাইলে! আগেও নিতেন হয়তো, এবং এখনো নেন, কিন্তু বাংলাদেশের কথা মনেহইলে উনাদের চোখের জল পানি হইতে হইতে যে আবার জল হয়া যায়, এইরকম একটা ব্যাপারই বেশিবেশি দেখান। যা-ই হোক, বঙ্গ যদি এইরকম সরকারিভাবে হইলেও তার ইন্ডিয়াননেস বাড়াইতে পারে, এতে বাংলা-সাহিত্যের ভ্যারিয়েশনই বাড়ার কথা। Continue reading

পশ্চিমবঙ্গের তিনজন কবি’র কাব্য-সমালোচনা

 

‘পৃথিবীতে আজ আর হয় নাই কোনো ভাত রান্না’

এই কথা শুইনাই বিনয় মজুমদার কইলেন,
ফাইজলামি করো, মিয়া!

আর আমারে নিয়া কেন এত টানাটানি?
আমি ত কারো লগে নাই, তথাপি গণিতজ্ঞ
এবং গায়ত্রীরে ভালবাসি, এবং ভালবাসি বলেই
আমি রেললাইনের ধার দিয়া হাঁটি
চা’য়ের দোকানে গিয়া চা খাই;
গোপনে মাওবাদীদের বাসনা’রে উজ্জীবিত করি Continue reading

‘দু-চার বসন্ত আমি ঘোরালাম সামান্য লেখাকে’: উৎপলকুমার বসু’র কবিতা নিয়া

উৎপল-এর কবিতা পড়ছি, ভাবছিও অনেক। একজন কবি আসলে কি নিয়া কবিতা লিখবো – এইটা ঠিক করার পর কবিতা লিখতে বসেন না, কিন্তু কবিতা লেখার পর থিকাই আসলে এই প্রশ্নটা আসতেই থাকে যে, কেন লেখা হইলো কবিতাটা? কেন লিখতেই হইলো?

আমরা এইভাবেই অভ্যস্থ আসলে, কবিতা পড়তে। কিন্তু একটা কবিতার মূল উদ্দেশ্য তো আসলে প্রথমে কবিতা হয়া উঠা। একটা কবিতা কিভাবে কবিতা হয়া উঠলো কিংবা হইতে পারলো না, সেইটাও হইতে পারে কবিতারই বিচার; কবিতার সামাজিকতা, রাজনৈতিকতা, দার্শনিকতা নিয়া কথা-বার্তা তো হইতেই পারে, কিন্তু কবিতা’টা কেমনে কবিতা হয়া উঠলো, সেইটাও দেখাটা দরকার।

অথচ ধইরা নেয়া হয় যে, কবিতা হইছে বইলাই ত কবিতা নিয়া কথা; কিন্তু কিভাবে এইটা কবিতা হইলো, সেইটা সবসময়ই বাদ থাকে। কবিতার আলোচনায় এইটারেই বরং মুখ্য কইরা তোলাটা বেশি জরুরি বইলা আমি মনে করি।     Continue reading