কুরবানি ঈদের গান

বাংলাদেশে কুরবানি’র গান কোনটা? (সেইটা পরে বলতেছি, কিন্তু) তার চাইতে জরুরি প্রশ্ন হইতেছে, বাংলাদেশে কোন কুরবানির গান নাই কেন?

কিছু ‘গরু’ অবশ্যই ইউটিউব সার্চ দিয়া ১৫/২০টা গান বাইর কইরা এবং লিংক দিয়া বলবেন, কই আছে তো!
মানে, এখন কেমনে বুঝাই, ‘গান নাই’ বলতে আমি কি বুঝাইছি? 🙁

(আনুমানিক) ৯০ বছর আগে কাজী নজরুল ইসলাম রমজানের ঈদ নিয়া একটা লেখছিলেন বইলা এবং আব্বাসউদ্দিন সেই গান রেকর্ড করছিলেন বইলা, সেই গানটা রমজানের ঈদের আগের দিন আমরা বাজাইতে পারি (নাচতে না পারলেও)। এইরকম কোন ‘সিগনেচার সং’ বাদ দেন, ধরেন আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলে ৫/৭ জন একলগে বইসা গাইতে পারেন, এইরকম কোন কুরবানির ঈদের গান নাই।
কালচারাল নিডের কথা বাদ-ই দেন, এর একটা বাজারও তো আছে! কিন্তু আমাদের আর্ট-কালচার করা লোকজন এইটা নিয়া ‘সাহিত্য’ আসলে করতে পারেন নাই।

এক হইলো, এই ‘ট্রাডিশন’টা নাই। যেমন ধরেন, প্রেমের কবিতা লাখ লাখ পাইবেন; যে কেউ ভাবলে, বসলে, দুই-চাইরটা লেইখা ফেলতে পারবেন, কারণ এই ভাইব’টা বাংলা-ভাষার ভিতরে, বাংলা-সাহিত্যের ভিতরে আছে, যার ফলে লেখাটা সহজ (আবার একইভাবে, কঠিনও); দেশপ্রেমের কবিতাও লেখা যায়। কিন্তু নতুন কোন সাবজেক্ট নিয়া লেখাটা কঠিন, কারণ তখন সেইটা ‘হয় না’ আসলে। একটা সাবজেক্টরে সাবজেক্ট কইরা তোলাটা কালচারের বাইরেও একটা আর্টিস্টিক ক্ষমতারও ঘটনা। আর সেইটা কম-বেশি একটা কালচারাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েরও মামলা…

আরেকটা জিনিস একটু ইরিলিভেন্ট হইলেও বইলা রাখতে চাই, ব্রাহ্মণবাদী টেক্সট-রিডিংয়ে এই জিনিসটা পাইবেন, টেক্সট’টারেই মুখ্য কইরা তোলা হয়, যেন যা কিছু বলা হইলো না, তা আর বাস্তবে নাই! কনটেক্সট’টারে কন্সিডার করা হয় না। কিন্তু ভাষাতে অই না-থাকা জিনিসগুলাও থাকে। যেমন একটা সময়ে আইসা ফিল করার কথা, আরে, কুরবানির গান নাই ক্যান!

কলকাতার হিন্দুদের দুর্গাপূজা যেমন ইংরেজ আমলের একটা ঘটনা, কুরবানি জিনিসটা ১৯৫০-৬০’দিকেও সামাজিক ঘটনা হয়া উঠার কথা না, ৮০’দশকে একটা কমন জিনিস হয়া উঠতে পারছে মনেহয়। (কেউ কোন লেখার কথা জানা থাকলে রেফার কইরেন।)

২.
টাইমের হিসাবে, ইউটিউবে (অবশ্যই অথেনটিক সোর্স না) বাংলাদেশের ফার্স্ট কুরবানি’র গান পাইছি ২০১২ সালের। এর আগেরও থাকতে পারে। মোবাইল কোম্পানি রবি মনেহয় দুয়েক্টা জিনিস ট্রাই করছিল ২০১৩/১৪’র দিকে, কিন্তু জমাইতে পারে নাই।

প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লবের একটা গান আছে, ২০১৬ সালের, যেইটা আমার ধারণা একটা কাল্ট সং হয়া উঠতে পারে।

এর বাইরে যেই গানগুলা আছে, বেশিরভাগই ফান, হিউমার 🙂 গরুর বাজার নিয়া, বেপারি-কাস্টমার নিয়া। গত দুই-তিন বছর ধইরা প্রতি বছরই একটা/দুইটা গান রিলিজ হয়। ‘ডিমান্ড’ তো আছে আসলে। কিন্তু ফেমাস বা সেলিব্রেটি সিঙ্গার-লিরিসিস্ট না উনারা কেউ।
প্যারোডি গানও আছে কিছু; মানে, কুরবানি যে দিতেছি আমরা, লজ্জার ব্যাপার তো কিছুটা! কলার ছুলকায় পা পিছলায়া পড়ার পরে নিজে নিজে হাইসা দিতে পারার মতো।…

তবে ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার হইতেছে, যারাই এই ট্রাই-ট্রুইগুলা করতেছেন, তাদের সবাই-ই ইয়াং। এইটা এনকারেজিং একটা জিনিস। আমি হোপফুল যে একটা বাংলাদেশি কুরবানির গান আমরা পাইতে পারবো হয়তো, রিসেন্ট ফিউচারেই। কারণ কালচারাল স্টিগমাটাও কমতেছে মনেহয় কিছুটা।…

৩.
তো, এর আগ পর্যন্ত, বাংলাদেশে কুরবানির ঈদের গান হইতেছে আসলে হিন্দি কুরবানি (১৯৮০) সিনেমার “কুরবানি, কুরবানি…” গানটা। (বিপ্লবের গানের শুরুতেও গানটার একটু আছে।)

আমার ধারণা, অনেকেই চিনবেন গান’টা। কমেন্টে লিংক দিতেছি, দেখেন তো, মনে করতে পারেন কিনা!