স্ট্রাগল অফ মিনিং

তপনরায় চৌধুরী’র অরিয়েন্টালিজম রিডিংটা নিয়া লিখবো বইলা ভাবছি অনেক আগেই। কিন্তু লেখা হইতেছে না, তাই ভাবলাম যদ্দূর পারি আরেকবার আরেকটু নোট নিয়া রাখি, পরে পারলে আবার লিখবো নে।

অরিয়েন্টালিজমের ক্লেইম এইটা যে, ইউরোপ তার কলোনি হিসাবে ইন্ডিয়া বা অন্যান্য জায়গা দখল করতে পারছে তার নলেজের সুপিয়রিটি প্রুফ করার ভিতর দিয়া। প্রাচীন ইন্ডিয়া বা আদি ভারত-মাতা আসলে ইউরোপেরই আবিষ্কার করা নলেজ। এই নলেজ’রে অ্যাকসেপ্ট করার ভিতর দিয়া ইন্ডিয়ান ইন্টেলকচুয়ালরা আসলে খাল কাইটা ইউরোপিয়ান কুমিরদেরকে নিয়া আসেন। এই জায়গায় তপনরায় চৌধুরী’র ক্লেইমটা অনেকটা নিচে থাইকা তলঠাপ দেয়ার মতো। উনি বলতেছেন যে, ইন্ডিয়ান এলিটরা এই নলেজরে খালি নেন-ই নাই, যাচাইও করছেন। এই যাচাইয়ের জায়গা নিয়াই উনি ডিটেইল বই লিখছেন একটা। এর বিপরীতে হাবিলার-গোষ্ঠীরে নিয়াও উনি হাসি-ঠাট্টা করছেন এইকারণে যে উনাদের থিওরেটিক্যাল বেইস ওই অরিয়েন্টালিজমই। Continue reading

আজম খান নামের ঘটনারে আমার সালাম

১.
বাংলাদেশ মানে যে ঢাকা শহর – এই কালচারাল পরিচয় বানানোটাই আজম খান-এর আসল ক্রেডিট। আজম খানের আগে (তার সময় এবং এখনো প্রায়) আসলে বাংলা-সংস্কৃতি ছিল (বা আছে) কলকাতা-কেন্দ্রিক হয়া। বাংলাভাষার পপুলার গানগুলা উৎপাদিত হইছে অইখানেই: শচীন, হেমন্ত, মান্নাদে ইত্যাদি। এর বাইরে যদি কাজী নজরুল ইসলাম বা আব্বাসউদ্দীনের কথাও বলেন, উনাদের স্বীকৃতিটা ওই কলকাতা থিকাই আসছে। রবীন্দ্রনাথের কথা আর কইলাম না, যেহেতু উনি নিজেই কলকাতা! আজম খানের গানই প্রথম ব্যতিক্রম, যা কলকাতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় নাই, বা অই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিটারে গুরুত্বপূর্ণ কইরা তোলে নাই। তাই উনারে আমার সালাম জানাই।

২.
তো, এইটার প্রতিক্রিয়া বা এফেক্টটাই বা কেমন হইলো? আমার ধারণা অনেকেরই তথ্য আকারে জানা আছে যে, উনার গানরে একসেপ্ট করা হয় নাই, শুরুতে। কিন্তু সময় যত পার হইছে, ‘বাংলাদেশ’ ধারণাটা যতটা প্রতিষ্ঠিত হইছে, আজম খানের গানও তার স্পেস কইরা নিতে পারছে।

তখন (এবং এখনো) তার গানের বিরোধিতাটা ছিল দুইটা জায়গা থিকা: কলকাতা-কেন্দ্রিকতা এবং গ্রাম-বাংলার অনুসারীরা – এই দুইটা ধারণার লোকজনই তার গানরে নিতে পারে নাই। আসলে গ্রাম-বাংলা বইলা তো কিছু নাই! যা আছে সেইটা পুরানা একটা মিথ, যেইখানে ধারণা করা হইতো যে আছে সহজ-সরল-স্বাভাবিকতা। আজম খান ‘নগর’ নিয়াই চিন্তিত হইছেন, ঢাকা শহরের গানই তিনি গাইছেন মেইনলি। এইভাবে গ্রাম-বাংলার বাংলাদেশরে তিনি ঢাকা শহর দিয়া রিপ্লেইস কইরা ফেলছেন। এইটা একটা ঘটনা, যেইটাতে গ্রাম-বাংলার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হইছেন, মানে চেতছেন। কিন্তু তাদের চেতাচেতির কোন মেরিট আসলে কিছু নাই। কারণ গ্রাম-বাংলা’র কোন কালচার তারা নিজেরাও তৈরি করতে পারেন নাই। আসলে গ্রাম-বাংলা’র নাম দিয়া তারা কলকাতার সফিশটিকেশনরেই সার্পোট করছেন এবং করতেছেন। এর বাইরে এক ধরণের বোকা বোকা গ্রামও উৎপাদিত হইতেছে এখন, টিভি নাটকে।

Continue reading

গৌতম ভদ্রের আইকন: আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ

মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আত্মসত্তার রাজনীতি।। গৌতম ভদ্র।। প্রচ্ছদ: অমল আকাশ।। সংহতি।। সেপ্টেম্বর, ২০০৭।। পৃষ্টা: ৮৮।। দাম: একশত টাকা।।

 

“জাতি বলুন আর সমাজই বলুন, তাহাকে জাতীয় ভাষার সাহিত্য হইতে জীবনীশক্তি ও উহার আদর্শ খুঁজিয়া লইতে হইবে, জাতীয় ভাষার সাহিত্য হইতে রসাকর্ষণ করিতে হইবে, নচেৎ তাহার উন্নতি অসম্ভব। কেবল দুই-চারি জন শিক্ষিত ব্যক্তি লইয়া কিছু জাতি বা সমাজ হয় না, আপামর সাধারণ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলকে লইয়াই জাতি বা সমাজ গঠিত হয়। জাতীয় বা সমাজ দেহের অণুতে পরমাণুতে পর্য্যন্ত প্রবাহ সৃষ্টি করিবার একমাত্র উপায় মাতৃভাষা।”

“দেশপ্রচলিত আপামরসাধারণের বোধ্য ও নিত্য-ব্যবহৃত জীবন্ত ভাষাই সকল জাতির জাতীয় ভাষা হওয়া উচিত। তাহা হইলেই সেই জাতি সেই ভাষার সাহায্যে উন্নতির দিকে অগ্রসর হইতে পারে।”

“একমাত্র জাতীয় সাহিত্যের অভাবেই বঙ্গীয় মুসলমান-সমাজ আজও ‘যে তিমিরে সে তিমিরে’ রহিয়া গিয়াছে, এবং আরও বহুদিন এভাবে থাকিবে, তাহাতে আর সন্দেহ হইতে পারে না।”

 –  মুনশী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, বাংলার মুসলমানগণের মাতৃভাষা।

 

১. বইয়ের কথা

মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ নিয়া আলাপ করছেন গৌতম ভদ্র। কি এর কারণ? এই প্রশ্ন নিয়াই দেখলাম, বইটা আসলে গৌতম ভদ্রের একটা লেকচার, কিছু এডিট কইরা  ছাপাইছেন। লেকচারটা উনি দিছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ-অধ্যয়ন কেন্দ্রের একটা প্রোগ্রামে ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সালে। এরপরে আরো দুই-একটা জায়গায় উনি এইটা পড়ছেন আর ছাপাও হইছে কয়েকটা পত্রিকায়। বইটাতে উনার  লেখাটার পরে আবদুল করিমের একটা লেখাও রাখা হইছে ।

Continue reading