নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ৩]

(শিরক না,) শরিক বাড়ান

এইবারের কুরবানি’র হাটে এবং রাস্তা-ঘাটে অনেক ছোট ছোট গরু চোখে পড়লো। অনেকে বলাবলিও করতেছিল, লাখ টাকার নিচে গরু নাই।

কিন্তু যেই জিনিসটা কমছে মেবি, সেইটা হইতেছে, শরিকে কুরবানি দেয়া। (দেয়া যায় কি যায় না – অই আলাপে আমি নাই; যেহেতু চালু ছিল রীতি’টা, ধরে নিতেছি, যায়।) ১৯৮০’র দশকে ছোট শহরগুলাতে মধ্যবিত্ত (তখন মধ্যবিত্ত মানেই নিন্ম-মধ্যবিত্ত) ফ্যামিলিগুলাতে এই জিনিসটা চালু ছিল কিছুদিন। মাংস নিয়া মন-কষাকষি যে হইতো না – তা না, কিন্তু কুরবানি দিতে পারার আনন্দ’টা সেইখানে ছিল।

কয়দিন আগে দেখতেছিলাম, রাজহাঁস কুরবানি দেয়া যাবে কিনা – এই নিয়াও আলাপ হইতেছে; মানে, ইন্ডিভিজ্যুয়ালের জায়গা থিকা আমরা কেউ সরতে রাজি না।

অথচ আমার ধারণা, শরিকে কুরবানি দেয়া যদি সমস্যা না হয়, কোন এসোসিয়েশন/অথরিটি যদি ১০ হাজার টাকা দিয়া কুরবানি’র “শরিক” কেনার একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন, সেইটা একটা ভালো ওয়ে-আউট হইতে পারে। (প্রাকটিস হিসাবে সাত শরিক পর্যন্ত মনেহয় পারা যায়। কমেন্টে একজন জানাইলেন।..) এইভাবে বাংলাদেশের ‘কুরবানি-অর্থনীতি’ সারভাইবই করতে পারবে না খালি, আরো এক্সপান্ড করতে পারবে আসলে।

লোকজন যতো যা-ই বলুক, লোক-দেখানি ব্যাপার কিছু থাকেই। যারা লোক-দেখানি’র লাইগা কুরবানি দিতেন, তারা এইবার শরমের কারণেই সেইটা করতে পারার কথা না। (কারণ, সমাজের মানুশ হিসাবে তারা জানেন, মানুশের দুর্দিনে উৎসব করা যায় না।) আবার যারা কিনছেন, নিজেদের প্রেফারেবল সাইজের গরু কিনতে স্ট্রাগল করার কথা। যারা কিনতে পারেন নাই, তাদের কথা আর বললাম না।…

মানে, কুরবানি’র ব্যাপারটা শরিকের ভিতর দিয়া ইনক্লুসিভ করতে পারলে ভালো। যাদের ‘সামর্থ্য’ আছে, তারাও এই ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে পারেন, বা শুরু করতে পারেন।

জাস্ট মনে হইলো ব্যাপার’টা…

সমাজ-ভাবনা

একটা সমাজের মানুশ-জন যদি সমাজের অন্যসব মানুশদেরকে নিয়া চিন্তা করে, কাজ করে সমাজের জন্য সেইটা ভালো না হওয়ার কোন কারণ নাই। মানে, ফিলোসফিক্যালি খুব ঠিকঠাকভাবে চিন্তাও করা লাগবে না আসলে, কারো ক্ষতি না হইলেই হইছে।

কিন্তু এই জিনিসটাই, আমার ধারণা, করতে দেয়া হয় না, একটা জুলুমের সমাজে। আমার এই চিন্তার পক্ষে একটা ‘প্রমাণ’ পাইলাম খুলনার একটা ঘটনায়। হসপিটালে অক্সিজেন শেষ হয়া গেছিল, ভলেন্টিয়ার’রা অক্সিজেন নিয়া গেলে হাসপাতালের লোকজন ঝামেলা করতেছিল। (কমেন্টে দিতেছি পোস্টের লিংক’টা।) তো, এইটাই ফার্স্ট ঘটনা না, রোজার সময় বরিশালে ইফতার দেয়ার সময়ও আওয়ামী লীগের কোন নেতা ধরছিল, তাদেরকে না-জানায়া, তাদের অনুমতি না নিয়া ইফতার দেয়া হইতেছে কেনো! মানে, আপনি চাইলেই সমাজের জন্য কাজ করতে পারবেন না। অবস্টেকলগুলা সবসময়ই কম-বেশি ছিল, কিন্তু এখন এইটা পলিটিক্যালি আরো কঠিন কাজ।

সেকেন্ড হইতেছে, আইনি বাধাও আছে। যে, এইগুলা করার জন্য তো সরকার আছে! কোন খালি মাঠ-ই খালি মাঠ না, সরকারের কোন না কোন অথরিটির সম্পত্তি – রেলওয়ের, সিটি করপোরেশনের, পৌরসভার। নিউইয়র্কের উপর ছোট একটা ভিডিও দেখতেছিলাম, অইখানে পইড়া থাকা জায়গাগুলাতে গ্রীন মুভমেন্টের লোকজন চাষ-বাস করতেছে, সিটি করপোরেশনের কাছ থিকা লিজ নিয়া। এক তেজগাঁ’তে যেই পরিমাণ জমি/প্লট খালি আছে, অই সবগুলাতে এই কাজ করলে রমনা, সরোয়ার্দি’র চাইতে কম কিছু হবে না। কিন্তু, কোনদিন কি সম্ভব হবে? (দখলদারির নতুন রাস্তা শিখায়া দিলাম না তো? 🙁 )

থার্ড, বা, আরো ক্রুশিয়াল জিনিস হইতেছে, এইগুলা নিয়া আমি কেন ভাববো? 🙂 চিন্তা-ভাবনা করার লোক আছে না! কাজ করার লোক আছে না! আমাদেরকে কেনো ভাবতে হবে!

এইখানে, আমার ফার্স্ট প্যারার কথাটারে রিভার্স কইরা বলি, যেই সমাজের লোকজন নিজের সমাজের অন্য লোকজনের কথা ভাবে না, অন্যদের কথা ভাইবা কাজ করে না, সেই সমাজের ভালো কিছু হওয়া কঠিন আসলে। গাছ যেমন বীজের ভিতর থিকা তৈরি হয়, সমাজও তার ভিতরের মানুশ-জনের কাজকাম, চিন্তা-ভাবনা দিয়াই তৈরি হয়। অবভিয়াসলি এনভায়রনমেন্ট’টা ক্রুশিয়াল – মাটি থাকতে হয়, রইদ-বৃষ্টি-আলো-বাতাসও জরুরি; কিন্তু গাছটারে নিজে নিজে বাড়তে হয়। এইটা তার ইচ্ছা ও কাজের মধ্যে থাকতে হয়।

ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন?

একটা সময় যে কোন এলাকার সব ডিশ-ব্যবসায়ীরা ছিলেন এলাকার সব মাস্তানরা; মানে, এলাকায় পাওয়ারফুল মাস্তান না হইলে ডিশের ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না। এর একটা অবভিয়াস কারণ তো অবশ্যই একটা মনোপলি এস্টাবিশ করা লাগতো, মনোপলি ক্রিয়েট না করতে পারলে ব্যবসা করা সম্ভব না। বড়জোর দুইটা পার্টি থাকতে পারে, একটা এলাকায়, এর বেশি হইলে ঝামেলা। কিছু কিলিং-ও হইতো ডিশ-ব্যবসার “আধিপত্য” এস্টাবলিশ করা নিয়া। যা-ই হোক, অইটা একটা যুগ ছিল।

আমার ধারণা, চামড়া ব্যবসার সিন্ডিকেটও এইরকম পলিটিক্যাল পাওয়ারের ঘটনা। এলাকায় যারা চামড়া নিয়া যাইতো, এদের মধ্যে মেইন ছিল মাদরাসাগুলা; অনেকে বেচতো, অনেকে দান কইরা দিতো। কিছুদিন পরে দেখলাম এলাকার পলিটিক্স করা ‘ছোট ভাই’রাও কালেক্ট করতো। কিন্তু সব গিয়া জমা হইতো, পলিটিক্যালি পাওয়ারফুল লোকজনের রাস্তার পাশের অস্থায়ী গুদামেই। পরে শুনলাম এই সিজনাল সিন্ডিকেট বিজনেসে নাকি শান্তি নাই, ফ্যাক্টরিগুলা চামড়া নেয় না, দাম কমায়া কয়, আগেরবারের টাকা বাকি, এইরকম…। মানে, কেউ যদি চামড়া না কিনে, কপালে পিস্তল ঠেকায়া চামড়া তো কিনাইতে পারেন না আপনি!

এখন ব্যবসা থাকুক বা না-থাকুক, চামড়া ঠিকমতো প্রসেস করা হোক বা না-হোক, অই পলিটিক্যাল সিন্ডিকেটের কাছেই চামড়া বেচতে হবে আপনার, কিনতেও হবে অদের কাছ থিকাই। গত কয়েক বছরে শুনছি, কাঁচা চামড়া ইন্ডিয়াতে পাচার করার লাইগা নাকি দেশে এই অবস্থা কইরা রাখা হয়। প্রতি বছর কতো কাঁচা পাট ইন্ডিয়াতে রফতানি/পাচার হইতেছে সেইটার ডেটা থাকলেও আমার ধারণা কাঁচা চামড়ার হিসাব পাওয়াটা কঠিনই হবে।…

বাংলাদেশের পলিটিক্যাল-ইকনোমি’তে এই সিন্ডিকেট বা মিডলম্যান’রা যতোটা না স্ট্রাকচারাল কারণে এগজিস্ট করেন, তার চাইতে অনেক বেশি এগজিস্ট করেন পলিটিক্যাল কারণে। এই গ্রুপ’টার আগে বিজনেসগুলা দখল করা লাগতো। সরকারি টেন্ডার, নানান রকমের লাইসেন্স, সিজনাল বিজনেস, এইরকমের এরিয়াগুলা। যেই কারণে বড় বড় সরকারি আসলে যতোটা না “অর্থনৈতিক উন্নয়ন” তার চাইতে অনেকবেশি পলিটিক্যাল ফিডিং’য়ের কাজ করে।

এরশাদ সরকারের আমলে যমুনা সেতু এই সার্পোট দিতে পারছিল; এই সরকারের পদ্মাসেতু মেইনলি এইরকম পলিটিক্যাল ফিডিংয়েরই ঘটনা, ইকনোমিক্যালি ভায়াবল কোন প্রজেক্ট হওয়াটা কঠিনই হওয়ার কথা (সোশিও-কালচারাল প্যারামিটারগুলা কন্সিডার কইরাও।) পদ্মা-সেতু করা যাবে না – তা না, বরং এর ইকনোমিক কস্ট মেইন কন্সিডারেশনের জায়গা না।

এখন এবসুলেট পলিটিক্যাল পাওয়ারের কারণে, বড় বড় অপারচুনেটির কারণে এইসব টুকিটাকি বিজনেসের গুরুত্ব কমে গেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, বরং বিজনেসের জায়গাগুলা আরো পলিটিক্যাল হয়া উঠতে গিয়া বিজনেসগুলাই কল্পাস করতেছে। মানে, এইটা আমার একটা জেনারেল অনুমান। অনেক ডিটেইল দিয়া এই অনুমানরে আরো উইক বা স্ট্রং প্রমাণ করা যাইতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির আলাপে এইরকমের জায়গাটা কন্সিডার করা দরকার বইলা আমি মনে করি।

গত বছর কোন একটা অকেশনে এই কথাটা বলতেছিলাম, এখন আবার এই প্রসঙ্গে রিপিট করতে পারি, ডাকাতিই যদি করতে পারেন আপনি, বিজনেস কেন করবেন? 🙂

Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ২]

ইংলিশ-ওয়ার্ড নিয়া

মাদরাসা’তে পইড়াও আপনি ইংলিশ ওয়ার্ড কইতে পারেন কিন্তু! ইংলিশ মিডিয়ামে পইড়াও আরবী-ফার্সি লবজ ইউজ করতে পারেন! বাংলা-ভাষা ‘সংস্কৃত-শব্দের’ বাইরে এই দুইভাগে (এবং আরো কয়েকটা ভাগে) ভাগ করা না, ডিয়ার বইন ও ভাইয়েরা!

আমি বুঝি, আমার সো-কল্ড ইংলিশ ওয়ার্ডে কেন কিছু লোকজন চেইতা যায়, অরা ভাবে, আরে এই লোক তো আসলে বাংলা-মিডিয়াম, ইংলিশ ওয়ার্ড কেন ইউজ করবে! মানে, আমার লজ্জা-শরম নাই কেন, ইংলিশ-ল্যাঙ্গুয়েজ না জাইনাও কেন ইংলিশ ওয়ার্ড ইউজ করি আমি! আমি করতে পারি, কারণ আমি শব্দের পাছায় সিল মারতে শিখি নাই, এই ‘চালাকি’ আমি শিখবোও না।

আগেও বলছি, আবারো বলি, শব্দের কোন বাংলা-ইংলিশ-পর্তুগিজ নাই, যা আপনি বলতে পারেন, আপনার আশেপাশের লোকজনরে বুঝাইতে পারেন, অইগুলাই বাংলা-শব্দ, অইটাই বাংলা-ভাষা। কথা কইতে গেলে শব্দ লাগে, কিন্তু শব্দগুলাই ভাষা না; ভাষার ভিতরে নতুন শব্দেরা আসে, বাতিল হয়, মারাও যায়।

নদীর পানিতে যেমন মাছ থাকে অনেক। তাই বইলা মাছগুলাই নদী না। নদীতে পানি থাকলে অনেক মাছ থাকে, যায়, আসে; কিন্তু নদী না থাকলে কোন মাছ থাকে না, ভাষা না থাকলে কোন শব্দ থাকে না, অন্য নদীতে চইলা যায়। নতুন শব্দ বানানি মাছ-চাষের কোন ঘটনা না, বানানি তো যায়-ই, কিন্তু কোন আত্মা থাকে না। (উপমা’রে বাস্তবতা ধইরা নিলে হবে না।)

আমি বলতে চাইতেছি, আপনার ইংলিশ-ওয়ার্ডের চিন্তাটা ছাড়েন, নাক দিয়া পানি ঢুকাইলে শ্বাস নিতে পারবেন না। যখন ভাষার নদীতে সাঁতরাইবেন, শ্বাস নিতে পারাটা জরুরি ঘটনা। এই কারণে দেখবেন, অনেকে খালি হাত-পা নাড়াইতেছেন, কিন্তু সাঁতরাইতে পারতেছেন না। নিজেরে ভাষার ভিতরে ছাইড়া দেন। এইটা আমার রিকোয়েস্ট। তখন আর যা-ই হোক, ইংলিশ ওয়ার্ড আইসা আপনাদেরকে এতো প্যারা দিবে না।

নয়া বাকশাল কি ফ্যাসিস্ট?

নয়া বাকশাল অবশ্যই একটা totalitarian শাসনের অবস্থা, যেইখানে একজন মানুশ রাষ্ট্রের এবং তার ডমিনেন্ট আইডিওলজি’রে মাইনা নিতে বাধ্য, এর বাইরে যাইতে পারবে না। এইটার শুরু হইছে মানুশের ভোটের অধিকার’রে বাতিল করার ভিতর দিয়া, পার্লামেন্টরে একটা চিড়িয়াখানা বানানোর ভিতর দিয়া। কিন্তু এইটারে কি ফ্যাসিস্ট বলবো আমরা?

ফ্যাসিস্ট মানে খালি এইটা না যে, এইখানে কোন বিরুদ্ধ-মত থাকতে পারবে না। বরং একটা লেভেলের ‘ভিন্নমত’ না থাকলে সেইটা ‘ফ্যাসিস্ট’ হওয়াটাই সম্ভব না। এইখানে ‘ধর্মান্ধ মৌলিবাদীরা’ যেমন থাকবে ‘অতি বিপ্লবী বামপন্থী’রাও থাকবে এবং এইরকমের ‘ভিন্নমত’গুলা এমন একটা ঘোঁট পাকাবে যে, আর কোন অপশনই থাকবে না! মানে, ফ্যাসিস্ট হইতেছে এমন একটা অবস্থা যেইখানে কমিউনিস্ট বিপ্লব, ধর্মীয় বিপ্লব, জাতীয়তাবাদী বিপ্লবসহ যে কোন কিছু করার অধিকার খালি একটা গ্রুপের হাতে থাকে। ফ্যাসিজমের ফিক্সড কোন আইডিওলজি নাই। ফ্যাসিজম হইতেছে একটা ফ্যাশন। (ইন ইটস কোর।) রেটরিকটাই বাস্তব হয়া উঠে। বাস্তব বইলা কিছু থাকে না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট বলতে এইটারে মিন করি না আমরা, বাংলাদেশে।

ফ্যাসিস্ট বলতে আমরা বুঝি হিটলারের জার্মানিরে। আর অই সংজ্ঞার ভিতরে যখন নয়া বাকশালরে আমরা ফেলতে যাই, তখন খেয়াল করতে পারার কথা যে, আরে, এইটা এইটা তো মিলে না! যেমন ধরেন, নাজী জার্মানির তো রেসিয়াল প্রাইড ছিল একটা, নয়া বাকশালের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এ এই জিনিস তো নাই-ই, উল্টা ‘বাঙালি’ মানে হইতেছে ‘বাংলা-মদ’ টাইপের ইনফিরিয়র, মিডিওকার, অচ্ছুৎ টাইপের জিনিস। এইরকম আরো উদাহারণ দেয়া সম্ভব, যেইটা ‘ফ্যাসিজম’র প্রেস্কাইবড (“আসল” না) সংজ্ঞার লগে মিলাইতে পারবেন না।

তারপরেও দেখবেন নয়া বাকশাল’রে ফ্যাসিস্ট বলার প্রাকটিস চালু আছে। আমি মনে করি, এইটা এক ধরণের ইনডেমনিটি দেয়ার ঘটনা, নয়া বাকশালরে। যে যা না, তারে তা বইলা, সেইটা থিকা তারে বাঁচানোর ঘটনা। যে, নয়া বাকশাল তো খারাপ, কিন্তু ফ্যাসিস্ট তো না!

কিন্তু আলাপ কখনোই এইটা না যে, নয়া বাকশাল ফ্যাসিস্ট কিনা, বরং নয়া বাকশাল হইতেছে একটা totalitarian শাসন, ফ্যাসিজমের একটা বাংলাদেশি ভার্সন। যেইটা ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশে শুরু হইছিল, স্ট্যানিলিজমের মতন, নাজীজমের মতন আর যার থ্রেট’টারে লোকেট করতে, থিওরাইজ করতে ব্যর্থ হইছি আমরা। ১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পরে একটা ডেমোক্রেটিক বেইজ তৈরি করতে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে পিপলস এজেন্সি তৈরি করতেও ব্যর্থ হইছি আমরা বাংলাদেশে, যেই ফেইলওরগুলার ভিতর দিয়া, (২০০৭ সালের) ১/১১’র পরে এই নয়া বাকশালি শাসন পাইছি আমরা। পলিটিক্যালি, এইটা এখন একটা পিক মোমেন্টে আছে।…

যে কোন অবস্থার ভিতর দিয়াই, এই নয়া বাকশালি শাসনের শেষ হইলেও, এর অভ্যাসগুলারে, রীতি-নীতিগুলারে যদি আমরা আইডেন্টিফাই করতে রাজি না হই, এইটা ফিরা ফিরা আসতে থাকবে নতুন নতুন ফরম্যাটে। আর এই কারণে আমাদেরকে ফার্স্টে মানতে রাজি হইতে হবে যে, এইটা কমন কোন ফ্যাসিস্ট রিজিম না, এইটা নয়া বাকশালের আমল। একটা ইউরোপিয়ান লিবারালিজমের জায়গা থিকা এর মোকাবেলা সম্ভব হবে না, যদি এর স্পেশালিটিগুলারে আমরা নজরে নিতে রাজি না হই।

নয়া বাকশালরে যারা ফ্যাসিস্ট বলতে চান, তারা আসলে এর সিগনিফিকেন্সটারে মানতে রাজি না, এরে থিওরাইজ করার রিস্কটারেই এড়াইতে চান।


সামাজিক পিপাসা’র ঘটনাটা নিয়া

কেউ আমারে ‘ভালো’ বললেই আমি ভালো হইয়া যাই না। কেউ আমারে খারাপ বললেই আমি খারাপ হইয়া উঠি না। এমনকি কেউ আমারে নিয়া কথা বলতেছে না মানে আমি বাতিল – তা যেমন না, কেউ আমারে নিয়া হাউকাউ করলেই আমি ইম্পর্টেন্ট হয়া পড়ি না। এইগুলা হইতেছে সামাজিক ঘটনা।

এখন ‘সোশ্যাল’ বইলা কিছু নাই – এইটা যেমন ঠিক না, সবকিছু সোশ্যাল টার্মে বুঝতে চাওয়াটা এর চে কম ঝামেলার জিনিস না। এখন মুশকিল হইতেছে, এইটা যে কেউ বুঝেন না, তা না; বরং এই জিনিসগুলা বুইঝা ফেললে ‘সোশ্যাল’ জিনিসটার ফর্মেশনের দিকে যে তাকাইতে হয় – সেইখানে তাকাইতে অনেকে রাজি হইতে পারেন না। মানে, এইটুক মাফ আমি উনাদেরকে করতে রাজি আছি। কিন্তু ব্যাপারটা যতোটা না পারেন না, তার চাইতে বেশি হইতেছে, চান না।

এই না-চাওয়াটা খালি ইন্টেলেকচুয়াল ব্যর্থতা না, বেশিরভাগ সময় একটা নৈতিক (এবং একইভাবে এসথেটিক্যাল) বাউন্ডারি’র ঘটনা। গরু-গাধা-ঘোড়া’রে টাইনা পানির কাছে নিয়া যাইতে পারবেন আপনি, কিন্তু পানি খাওয়াইতে পারবেন না। কারণ পানি খাইলেই মাছ হয়া যাওয়ার ডরে থাকে অরা!

Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২১ [পার্ট ১]

বাংলাদেশের কোন ভার্সিটিতে কি কার্ল মার্কসের কোন লেখা বা বই কোন কোর্সে পড়ানো হয়?

২০/২৫ বছর আগে আমরা যখন ঢাকা ভার্সিটিতে ইকনোমিকসে পড়তাম তখন মার্কসিস্ট ইকনোমিকস বইলা একটা কোর্স ছিল, অপশনাল। অই কোর্সেও মার্কসের কোন টেক্সট ছিল না মনেহয়। উনার ইকনোমিক থিওরিগুলা নিয়া অন্য বই পড়ানো হইতো, আবু মাহমুদের বইও ছিল। এখন মনেহয় অই কোর্স পড়ানো হয় না আর। এইরকম সোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, মিডিয়া স্টাডিজ, বা অন্য কোন সাবজেক্টে কোন কোর্স কি আছে যেইখানে মার্কসের লেখা রেফারেন্স হিসাবে পড়ানো হয়? মার্কসিস্ট লিটারেচার তো থাকতেই পারে, কিন্তু আমি একটু ডাউটফুলও যে, উনার লেখা অইরকম ‘পাঠ্য’ হিসাবে নাই মনেহয়। ছিলো কি কখনো, সিক্সটিইজেও? (জানতেই চাইতেছি আসলে…)

আমাদের সময় যা দেখছি, মেইনস্ট্রিম একাডেমিয়া’তে, টেক্সটবুকগুলাতে মার্কসের চিন্তার কোন রেফারেন্স নাই, বা খুব কম। আমার ধারণা, প্যাটার্নের দিক দিয়া মার্কস্টিট চিন্তা একাডেমিয়াতে যেই ধরণের পড়াশোনা চালু আছে, তার লগে ফিট-ইন করে না, খুববেশি। উনার বই-পত্র, লেখালেখি মেবি সবসময়ই কম-বেশি আউটকাস্ট জিনিসই ছিল। যদিও বেশিরভাগ ভার্সিটির টিচারদেরই নিজেদেরকে মার্কসিস্ট দাবি করার একটা ব্যাপার আছে। ইভেন যারা শিল্প-সাহিত্য করেন ইন্টেলেকচুয়াল-এক্টিভিস্ট তাদের সবাইও কম-বেশি মার্কসিস্ট। কার্ল মার্কসের চিন্তারে অপোজ করা, সাবস্ক্রাইব করার বা মডিফাই করার একটা ঘটনা এখনো চালু আছে। মানে, উনার চিন্তা-ভাবনা তো এখনো একটা স্ট্রং রেফারেন্স পয়েন্ট।
তো, আমার একটা অনুমান হইতেছে যে, উনার লেখা-পত্র একাডেমিক প্রসেস মাইনা, ডিসিপ্লিন মাইনা তো লেখা হয় নাই এতোটা, যার ফলে অইভাবে শেইপ-আপ কইরা নেয়াটাও মুশকিলের, যার ফলে একাডেমিক জায়গাগুলাতে মোস্টলি মিসিং।… হাউএভার, ব্যাপারটা এইরকম না-ও হইতে পারে। আমি জাস্ট ভাবলাম, মেবি হইতে পারে…

রবার্ট ফ্রস্ট

একজন ক্রিটিক রবার্ট ফ্রস্টের প্রশংসা করতেছিলেন এই জায়গা থিকা যে, এলিয়ট, এজরা পাউন্ড উনাদের কবিতা ‘মর্ডান’ এবং এই কারণে ডিফিকাল্ট, কিন্তু ফ্রস্টের কবিতা এইরকম না। তো, রবার্ট ফ্রস্ট কইতেছিলেন, উনি কঠিন বা সহজ কবিতা লেখেন – ঘটনা’টা এইরকম না।

(আমার মনে হইতেছিল, এলিয়ট, এজরা পাউন্ডরা কি করতেছিলেন আসলে? উনারা খালি কবিতা-ই লেখেন নাই, কনটেক্সট’টারেও বানাইতেছিলেন যে, কবিতারে কই থিকা পড়তে হবে। শ’য়ে শ’য়ে রিভিউ, ক্রিটিক লেখতেছিলেন। অইগুলা একটা বেইজ তৈরি করতেছিল। এর বিপরীতে, রবার্ট ফ্রস্ট কবিতা নিয়া তেমন কোনকিছুই লেখেন নাই। উনি ধরে নিছেন, কবিতা নিজেই তার কনটেক্সট’টা তৈরি কইরা নিবে, বা কনটেক্সটরর লগে কানেকশনটা তৈরি কইরা নিবে। মেবি এইরকম।)

ফ্রস্ট বরং বলতেছিলেন যে, দুইটা জিনিস কবিতার ব্যাপারে ইর্ম্পটেন্ট। একটা হইতেছে, পারফর্মেন্সের ঘটনা থাকতে হবে, স্কোর’টা করতে পারতে হবে। আপনি যতো কিছুই করেন, যদি কানেকশন’টা ক্রিয়েট না করা যায়, পারফর্মেন্সটা না থাকে তাইলে জিনিস হবে না। (মানে, পারফর্মেন্স জিনিসটা ঠিক পারফর্ম অর্থে না, ভিজিবল হইতে পারার মতো একটা জিনিস।)

সেকেন্ড হইলো, উনি বলতেছিলেন, পোয়েটিক থট হোক বা যে কোন একটা থট যা করে তা হইতেছে, এদের “feat of association” থাকে, একটা জিনিস আরেকটা জিনিসরে জড়ায়া ধরতে পারে, কানেক্ট করতে পারে। আর এইভাবে নতুন কিছু ক্রিয়েট হয়।

তো, এইটা কবিতা নিয়া উনার ভাবনা, বা কবিতার কাছে উনার এক্সপেক্টশন, বা কবিতারে উনি এইভাবে দেখেন। এই জিনিসগুলারে কবিতা বইলা ধইরা নিলে আরেকটা ঝামেলাই হবে আসলে। 🙂

একজন কবি’র কবিরা গুনাহ হইতেছে মানুশ তারে ভালোবাসে

একটা জিনিস খেয়াল করছি, যেইসব ইন্টেলেকচুয়াল’রা কবিতা লেখতে পারেন না (বা লেখেন না), উনারা কবি’দেরকে (আমি বলবো) ভালো-রকমেরই হেইট করেন।* মানে, বাটে পাইলে ভালো রকমের মশকরাই করেন। যুগে যুগে কবি’রা এইরকম হেইট্রেটের শিকার হইছেন, হইতেছেন 🙂 (কবি’রাও তো আর “ধোয়া তুলসী পাতা” না….)

আবার যারা পাওয়ারফুল লোক (কুস্তরিকা’র “আন্ডারগ্রাউন্ড” সিনেমা দেখতে গিয়া খেয়াল করছিলাম, বা অন্য অনেক উদাহারণও পাইবেন) উনারাও দেখবেন অনেক সময় কবিতা লেখতে চান বা কবি হইতে চান। কেন?

কয়েক বছর আগে বলছিলাম, একজন কবি আর একজন ইন্টেলেকচুয়ালের ডিফরেন্সটা কোন জায়গাটায়? কবি হইতেছেন মানুশের কাছের লোক, আপনা মানুশ, ভালোবাসার ধন, এইসব কিছু। মানে, সে খারাপ, ফাউল, কোনকিছু বুঝে না, আজাইরা কথা কয়, কারেক্টার ভালো না… এইসবকিছু কইয়া বা বানায়া (মানে, মানুশ হিসাবে আমরা নিজেরাও তো কম-বেশি এইরকমই) খুব একটা লাভ হয় না। মানে, কবি হিসাবে আপনার যারে ভালোলাগে তারে আপনি ভালোইবাসেন, তার লগে অন্য কোন রিলেশন আসলে হইতে পারে না।

এখন একজন ইন্টেলেকচুয়ালরে যে আপনি ভালোবাসতে পারেন না – তা না, অনেক ক্ষমতাবান মানুশও আছেন বা থাকতে পারেন যারা ক্ষমতার কারণে ভচকায়া যান নাই, তাদেরকেও ভালোবাসতে পারেন আপনি। কিন্তু অইটা সমানে-সমানে হয় না সবসময়। বা অইটা বেইজটা না একজনরে ইন্টেলেকচুয়াল বা মহান ভাবার। কিন্তু একজন কবি’রে যদি আপনি ভালো না বাসেন, সে তো তখন কবি-ই না কোন আপনার কাছে!

তো, আমার ধারণা, কবি’রে যে মানুশ ভালোবাসে, আদর কইরা গাইল্লায়, কাছের লোক ভাবে, এই কারণে ‘কবি’ হওয়ার একটা তাগিদ থাকে, বা কেউ “কবি” বইলাই যে জরুরি কিছু না, অই জিনিসটাও প্রমাণ করা লাগে, অনেক সময় 😛

মানে, এইটা সুপিরিয়র কোন জিনিস না, কিন্তু অন্য সব সামাজিক পরিচয়ের চাইতে তো আলাদা জিনিসই, সবসময়।

…….
*আমার অবজারভেশন ভুলও হইতে পারে, কিন্তু আপনারা ভাইবা দেইখেন ব্যাপার’টা।
Continue reading

মালিকানার ঘটনা’টা…

সমাজে পাওয়ার বা ক্ষমতা জিনিসটা তো অনেকবেশি ডিপেন্ড করে সম্পত্তির মালিকানার জায়গাটাতে; যে আপনার যতো টাকা-পয়সা, জমি-জিরাত, ফ্ল্যাট-বাড়ি-কোম্পানি আছে, তার বেসিসেই তো সমাজের অন্য লোকজন আপনারে ততো পাওয়ারফুল পারসন হিসাবে ট্রিট করে। (অন্য আরো কিছু ক্যাটাগরি তো আছেই।) তো এই যে সম্পত্তি, এইটা এমন না যে, আপনি নিজে নিজে বানাইতে পারেন সবসময়; মানে, আম্রিকান ড্রিমের ঘটনা তো খুব কমই ঘটে; বেশিরভাগ সময়ই বাপ-দাদার কাছ থিকা পাওয়া জিনিস দিয়া শুরু হয়। নতুন কইরা যে কেউ টাকা-পয়সা কামাইতে পারে না – তা না; কিন্তু ইনহেরিয়েট করার একটা ব্যাপার থাকে, বেশিরভাগ কেইসেই। চাইলে কেউ এইরকম ডেটা এনালাইসিস কইরাও দেখতে পারেন, দুনিয়াতে যতো নতুন এসেট তৈরি হয়, তার কতোটা সেইম এসেট লাইন থিকা আসতেছে, আর কতোটা একদম ‘জিরো’ জায়গা থিকা তৈরি হইতেছে? মানে, ইনহেরিটেন্স বা উত্তরাধিকার – বড় একটা সোর্স হওয়ার কথা।

তো, মেয়ে’রা যে আমাদের সোসাইটিতে কম পাওয়ারফুল, অন্য অনেক কারণের পাশাপাশি এইটা তো মেজর একটা কারণ। দুনিয়ার সব দেশে একই অবস্থা না হইলেও বেশিরভাগ দেশেই একই রকম অবস্থা থাকার কথা; আফ্রিকার কয়েকটা দেশে মনেহয় মেয়েদের সম্পত্তির মালিকানার অবস্থা ভালো; বা জেনারেশন টু জেনারেশন দেখলেও ইউরোপ-আম্রিকাতে এইটা হয়তো কিছুটা বাড়তেছে। মানে, ১৯৫০ সালে মেয়েদের মালিকানায় যতো এসেট বা সম্পত্তি ছিলো, ২০০০ সালে আইসা আমার ধারণা, বাড়ছে কিছুটা। এডুকেশন, চাকরি, বিজনেস… এইসব সোশ্যাল জিনিসগুলারই কিছু ইমপ্যাক্ট থাকতে পারে। তবে সম্পত্তির উপর এই বাড়তে থাকা মালিকানার পাওয়ার মেয়েরা কালচারালি প্রাকটিস করতে পারতেছেন – সেইখানে এখনো একটা কোশ্চেনমার্ক থাকার কথা। মানে, জেন্ডার স্টাডিজ নিয়া যারা কাজ করেন, উনারা দুইটা জায়গাতে খেয়াল করতে পারেন –

১. সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা জিনিসটা ফরমালি শুরু হওয়ার পরে, অ্যাক্রস দ্য সোসাইটি (মানে, এটলিস্ট ৫/৭টা দেশে) পুরুষ আর নারী’র মালিকানা’র প্যাটার্নটা চেইঞ্জ হইছে কিনা গত ২০০ বছরে? চেইঞ্জ হইলে কতোটা হইছে, কেমনে হইছে?

২. হিস্ট্রিক্যালি যেইসব সোসাইটিতে বা দেশে নারীদের সম্পত্তির মালিকানা পুরুষের চাইতে বেশি বা সমান (আফ্রিকার কিছু দেশে এইরকম থাকার কথা) সেই সোসাইটিগুলার সাথে কম্পেয়ার করলে যেইখানে মেয়েদের সম্পত্তির মালিকানা পুরুষের চাইতে কম, সেইখানে ‘নারী’র প্রতি ভায়োলেন্স’, রেইপ… এইরকম ক্রাইমগুলার সংখ্যা কম না বেশি? বা রিলেশনগুলা কি রকম?

(বা এইরকম কোন স্টাডি’র কথা যদি কারো জানা থাকে, জানাইয়েন আমারে; আমি দেখতে ইন্টারেস্টেড রেজাল্টগুলি।)

এমনিতে খোলা চোখেই দেখা যায়, আমাদের সোসাইটি’তে পুরুষের যতো টাকা-পয়সা, জমি-জিরাত-ফ্ল্যাট-বাড়ি আছে, নারীদের মালিকানা’তে তা নাই। নাই, কারণ যেই “উত্তরাধিকার আইন” দেশে চালু আছে, সেইখানে উনারা কম সম্পত্তি পান; বা আইনে পাওনা হইলেও, বাস্তবে পান না; পাইলেও সেইটার মালিকানা নিতে পারেন না। মানে, আইন করলেই ব্যাপারটার সমাধান হয়া যাবে – এইরকম না পুরা কাহিনিটা।

Continue reading

ইমেজের এই দুনিয়াদারি…

এইরকম ঘটনা তো ঘটে; যা পড়তেছেন, দেখতেছেন আপনার আশে-পাশেও কাছাকাছি রকমের ঘটনা ঘটতেছে বা রিলেট করা যাইতেছে… বা উল্টাটাও হয় যা কিছু আমাদের চারপাশে ঘটতেছে সিমিলার জিনিস পাওয়া যায় গল্প-কবিতা-নাটক-সিনেমা-নভেলে। তো, এইরকমের জিনিস হইলো, দুয়েকদিন আগে।

যেই নভেল’টা পড়তেছি (Those Who Leave and Those Who Stay), সেইটা’তে মেইন কারেক্টার হইতেছে লিলা। আর ন্যারেটর হইতেছে তার ফ্রেন্ড লিনু; যার একটা নভেল ছাপা হইছে, বিয়া করতে যাইতেছে এক প্রফেসর’রে। আর অন্যদিকে লিলা প্রাইমারি স্কুলের পরে আর পড়াশোনা করে নাই, এখন একটা সসেজ ফ্যাক্টরি’তে লেবার হিসাবে কাজ করে, একটা বাচ্চা আছে (তার এক্স-লাভার নিনো’র, যে আবার লিনু’রও অ্যাডমায়ারার), হাজবেন্ডের লগে থাকে। লিনু যখন লিলা’র লগে দেখা করতে যায়, তখন লিলা লিনু’রে তাঁর কথা কইতে থাকে… এই জায়গাটা আমি পড়তেছিলাম।

লিলা’র হাজবেন্ড কমিউনিস্ট পার্টি করে; হাজবেন্ডের লগে তার ছোটবেলার প্রেমিক তাঁদের বাসায় আসে যে হইতেছে স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি; এবং লিলা বুঝতে পারে যে সে আসলে ভালো লোক-ই, আগের রিলেশনের হ্যাং-ওভার নিয়া ঝামেলা করবে না। তো, একদিন কমিউনিস্ট পার্টির একটা মিটিংয়ে অরে নিয়া যায়, অর পুরান প্রেমিক আর হাজব্যান্ড; সেইখানে স্টুডেন্টদের ফ্লাওয়ারি কথা-বার্তা শুইনা লিলা’র তো যায় মেজাজ খারাপ হয়া; কয়, একটা সসেজ ফ্যাক্টরি’তে একজন নারী-শ্রমিক’রে কি কি ফেইস করা লাগে, তোমাদের তো কোন আইডিয়াই নাই! শে তাঁর এক্সপেরিয়েন্সের কথাগুলা কয়। শুইনা কমিউনিস্ট পার্টির লিডার, কর্মী, স্টুডেন্ট’রা তো খুবই সিম্প্যাথি জানায়, স্পেশালি একটা মেয়ে, নাদিয়া (যে নিনো’র লগে রিলেশনে ছিল একটা সময়)। কিন্তু কমিউনিস্ট’রা যেইটা করে, অইসব ঘটনার ফিরিস্তি দিয়া লিফলেট ছাপায়া লিলা’র ফ্যাক্টরি’র সামনে বিলি করতে শুরু করে, কয়দিন পরে। লিলা তো অবাক! এই কথা শে অদেরকে বলছে মানে তো এই না যে, এইটা নিয়া লিফলেট বানানোর পারমিশন শে দিছে! তাঁর কথারেই এখন তাঁর কমিউনিস্ট ফ্রেন্ডরা ইউজ করতেছে তাদের ‘শ্রমিক-বিপ্লব’ সফল করার লাইগা! খুবই বিরক্ত হয় শে। এমন না যে শে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে; কিন্তু তাঁর চাকরি নিয়া টানাটানি হবে, ফ্যাসিস্ট-কমিউনিস্ট’রা আইসা ফ্যাক্টরির সামনে মারামারি করবে, এই ‘বিপ্লব’ তো শে চায় নাই!

মুশকিল’টা কোন জায়গা’টাতে হইতেছে, দেখেন; লিলা’র কমিউনিস্ট ফ্রেন্ডরা তো ভাবতেছে, লিলা খুব কষ্টে আছে, কতো অত্যাচার, নিযার্তন তারে সহ্য করতে হইতেছে; তারা তো তারে বাঁচাইতে চাইতেছে! লিলা’র যেহেতু বুদ্ধি-বিবেচনা আছে, শে জানে, এইটা ‘বাঁচাইতে চাওয়া’ না, বরং এই বাঁচাইতে চাওয়ার ভিতর দিয়া তারা নিজেদের এগজিসটেন্সটারে ‘মহান’ বইলা ভাবতে পারতেছে; যে ‘সমাজের জন্য, সভ্যতার জন্য ইর্ম্পটেন্ট কিছু’ করতেছে। (২০১৬ সালের এই ছোট লেখাটার কথা মনে হইলো: https://bit.ly/302MQrY )

আরেকটা ঘটনার কথা এইখানে বলা যাইতে পারে এইখানে, লিনু’র। একবার অর বইয়ের একটা প্রোগ্রাম শেষে শহরে একটা বাসাতে অন্য ফ্রেন্ডদের সাথে শে থাকতে গেছে। অইখানে আড্ড-টাড্ডা দিয়া যখন শে ঘুমাইতে গেছে; মাঝরাতে দেখে অই বাসারই ডাচ এক আর্টিস্ট তার বিছনায় আইসা বইসা রইছে! কি ঘটনা? সে তাঁর সাথে ঘুমাইতে চায়। লিনু তো খুবই অবাক হয়, কেন শে এই কাজ করবে! আর্টিস্টও অবাক হয়, কয়, আরে তুমি না রাইটার? তোমার লাভার আছে, আমারও আছে; কিন্তু আমার তো ইচ্ছা করতেছে, দোষের তো কিছু নাই; আর এই এক্সপেরিয়েন্সটা তোমার ক্রিয়েটিভ জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউটও করবে… লিনু তো আরো খেইপা যায়, কি ধরণের আবদার এইটা! পরে শে যখন চেঁচানোর হুমকি দেয় তখন আর্টিস্ট’টা মন-খারাপ কইরা চইলা যায়, যাওয়ার সময় লিনু’রে হিপোক্র্যাট বইলা গাইল দেয়। লিনু ভাবে, নিনো’র বাপ যে তারে সেক্সুয়ালি মলেস্ট করতে নিছিলো, এর সাথে ডিফরেন্সটা কোন জায়গায়? বা নিনো যে এইরকম একটার পরে একটা এফেয়ার কইরা যাইতেছে, তার বাপের চাইতে সে কোন জায়গাটায় আলাদা? (অই বাসায় যে ইয়াং মেয়েটা একটা বাচ্চা নিয়া থাকে, এই বাচ্চাটাও নিনো’র ‘প্রেমের ফসল’ 🙂 )

তো, নভেলের বেটার পার্ট হইলো, কোন কারেক্টারই লাইফ নিয়া কোন জাজমেন্টে যায় না; মানে লাইফ তো কোন জাজমেন্টে আটকায়া থাকে না… কিন্তু অ্যাজ অ্যা রিডার কিছু জিনিস অবজার্ভ করতে পারেন তো আপনি। আমার অবজার্ভেশন’টা হইলো, নিনো’র বাপের (যে ওমেনাইজার) আর নিনো’র ডিফরেন্সটা হইতেছে – তাদের ইমেজের। নিনো’র বাপ হইতেছে পুরান আমলের ইন্টেলেকচুয়াল (পত্রিকায় আর্টিকেল ছাপায়, কবিতা লেখে… এইরকম) আর নিনো হইতেছে বর্তমান সময়ের বিপ্লবী, ইন্টেলেকচুয়াল, ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস করতে পারে, এইরকম। নিনো’র বাপ যে তার ইমেজ’টারে ইউজ করতেছে, তার পজিশনের ফায়দা’টা নিতেছে, সেইটা টের পাওয়া যায়… বা তার ইমেজের পাওয়ারটা আর কাজে লাগে না, তখন তার জোর-জবরদস্তি করা লাগে। নিনো’র বরং উল্টা ঘটনা, সে যে ওমেনাইজার না – তা না; কিন্তু মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে; দে হ্যাভ অ্যা গুড টাইম, তারপরে বুঝতে পারে যে, তারা একজন আরেকজনের জন্য না; অ্যান্ড দে কুইট! অভিযোগের কিছু নাই এইখানে। নিনো এবং তার প্রেমিকারা একটা ‘বিপ্লবী’ বিশ্বাসের (আমি বলবো, ইমেজের) ভিতর দিয়া এই কাজ করতে পারে।

একই ধরণের ঘটনা দেখবেন, ‘আসল পীর’ আর ‘ভন্ড-পীর’ এর ব্যাপারগুলাতেও থাকে। ব্যাপারটা সবসময় এইরকম না যে, ভন্ড-পীরদের কেরামতি ফাঁস হয়া যায়; বরং বেশিরভাগ সময় তাদের ইমেজটা আর কাজ করে না, একটা সময়ে গিয়া। একবার একটা অডিও ক্লিপ লিক হইছিল, গ্রামের দুইজন মহিলার। একজন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলার কাছে সাজেশন চাইতেছেন আরেকজন ইয়াং ওয়াইফ; যে, পীর সাহেব যখন তাঁদের বাড়িতে আসে, তখন শে ফিজিক্যাল ডিজায়ারটা ফিল করতে পারে, কিন্তু কি করবে বুঝতেছে না… তখন বয়স্ক মহিলা বলে যে, তার কিছু করা লাগবে না, যখন পীর সাহেব মনে করবে শে রেডি, উনি তাঁরে ডাক পাঠাইবেন।… মানে, মনে হইতে পারে, একটা ‘ভন্ড পীর’ ধইরা ফেললেন এইখানে! কিন্তু এইটা মহিলারও তো ডিজায়ার আছেই; পীর বইলা আপনি মানতে পারতেছেন না, কিন্তু ‘বিপ্লবী’ বা ‘রেভিউলেশনারি’ কেউ একজনের জায়গায় মাইনা নিতে পারতেছেন! আমি বলবো, এই ছোট্ট ডিফরেন্সের জায়গাটারে খেয়াল করেন, তাইলে ইমেজের পাওয়ারটারে দেখতে পাইবেন।… Continue reading