সিমন দ্য বেভোয়া

মেয়েদের হার মেয়েদের জিত।  সিমন দ্য বেভোয়া। সংকলন ও ভাষান্তর: সন্দীপন ভটাচার্য। জুলাই ২০০৮। মন ফকিরা।

প্রচারের ফলে ‘নারীমুক্তি’ শব্দটা এখন পুরুষের মুখে-মুখে, সে তারা মেয়েদের ওপর যৌন পীড়নের ব্যাপারে সচেতন হোক বা না-হোক। পুরুষের এখন মনোভাবটা যেন এই যে, ‘বেশ, তুমি যখন ফ্রি, চলো, বিছানায় যাই।’ অন্য কথায়, ছেলেরা এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক, কদর্য, হিংস্র। আমার যৌবনে আমরা মঁপারনাস ধরে হাঁটতে-হাঁটতে কোন কাফেতে গিয়ে বসতাম, নিপীড়নের কোন ভয় ছিল না। হ্যাঁ, আমরা হাসতাম, চোখ টিপতাম, কটাক্ষ করে তাকাতাম। আর এখন কোন কাফেতে বসে কোন মেয়ের পক্ষে একা বই পড়া প্রায় অসম্ভব। পুরুষেরা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এলেও সে যদি একা থাকার ব্যাপারে দৃঢ় হয়, তো তারা তাকে ‘কুত্তি’ বা ‘খানকি’ বলে চলে যায়। ধর্ষণের ঘটনা এখন অনেক বেড়ে গেছে। সাধারণ ভাবে পুরুষ-আগ্রাসন ও বিদ্বেষ এখন এত স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শহরে কোন মেয়ে আর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।”

(পৃষ্টা ২২)

মন ফকিরা পাবলিকেশন্সের বইগুলা আমার পছন্দ। অনেকসময়ই উনারা পরিচিত লেখকের অপরিচিত টেক্সটগুলা ছাপান। এই কথাটা আমার মনে হইলো অসীম রায়-এর ‘লেখকের জবান’ বইটার কথা মনে কইরা। এমনিতে বইগুলার সাইজগুলা ভালো, ১০০/১৫০ পৃষ্টা; অল্পদিনে পড়া যায়, খুব বেশি দিন ধইরা রাখার উপায় নাই, মানে, ভালো ত ভালোই। আমার পছন্দ মাইনর টেক্সট, যা কিছু লেখক না লিখলেও পারতেন, কিন্তু যখন লিখলেন, তখন আর তারে ইগনোর করা গেলো না, এইরকম টাইপের। [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote] 

ত, সিমন দ্য বোভেয়া’র দুইটা ইন্টারভিউরে অনুবাদ কইরা বই আকারে উনারা ছাপাইছিলেন ২০০৮ সালে। পড়ছিলাম মাস ছয়েক আগে (এখন ত প্রায় ১বছর হইতে চললো), তখন ২/১টা কথা মনে হইছিলো, সিমন দ্য বোভেয়া সর্ম্পকে।

সিমন দ্য বোভেয়া’র লেখা আমি খুব একটা পড়ি নাই। হুমায়ূন আজাদের ‘নারী’ নামের বইটা এই অনাগ্রহের একটা কারণ হইতে পারে, ওইটা পইড়া বোভেয়া সর্ম্পকে বেশ খুব ভালো ধারণা হয় নাই; কারণ উনি নারী বিষয়ে অভিজ্ঞতাগুলারে বলতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু যখনই একটা ‘তত্ত্ব’-এর ভিতর ফেলতে যাইতেছিলেন, তখন আর ব্যাপারটা পিছলাইয়া যাইতেছিল। মানে, ব্যাপারটারে একটা ‘তত্ত্ব’-এর ভিতর নিয়া আসা যায় না, সেইটা না; বরং একটা ‘তত্ত্ব’-এর ভিতর তারে রিডিউস করা হইতেছিল… একটা জায়গায় উনিও বলতেছিলেন যে,

“… এর শিকড় থাকা উচিত অনুশীলনে, তত্ত্বে নয়। ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ গিয়েছিল উলটো পথে। সেটা আর এখন বহাল নেই।“

(পৃষ্টা ২৬)

(সর্তকীকরণ বিজ্ঞপ্তি 🙂 ) এইটা আবশ্যিকভাবেই উনার তত্ত্ব-প্রবণতারে বাতিল করে না, আমার সন্দেহটারেই আরো রিলিভেন্ট করে।

আমার সন্দেহটা এইরকম যে, নারী-ভাবনা নারী-সত্তা’রে রিডিউস করে; জরুরি হইতাছে ভাবনার যে ইমেজগুলা আছে তাদেরকে যাচাই করা বরং, এই কাজটাই বেভোয়া করছেন বা করতে চাইছেন, কিন্তু তত্ত্বরে ইমাজিনেশন পর্যন্ত একটেন্ড করেন নাই, কিন্তু তত্ত্ব ত গ্রেটার এক্সটেন্ডে কল্পনারেই ফলো করে। যারা দেখতেছে তারা আসলে তাদের কল্পনারেই ভিজ্যুয়ালাইজ করতেছে, এই কল্পনা’র হিস্ট্রিটাতে উনার ফোকাস আছে, কিন্তু সেইটারে ব্যাখ্যা করতে গিয়া তিনি ছড়াইয়া ফেলছেন এমনভাবে যে তারে আর ব্যবহারযোগ্য কইরা তোলা যায় নাই। তবে, নারী কল্পনা-ই যে নারীদেরকে/ফিমেইলদেরকে/মাইয়াদেরকে আরো বেশি নারী কইরা তোলে – এই শিক্ষা আমি উনার কাছ থিকা পাইয়া থাকতে পারি।

যা-ই হোক, পরবর্তীতে উনার লেখা-পত্র আর মনোযোগ দিয়া পড়া হয় নাই; তবে উনার কথা-বার্তা সর্ম্পকে আগ্রহ আসছে, কারণ একটা সময়ের চিন্তার প্রবণতা উনার লেখার ভিতর দেখতে পাইলাম। এই বইটাই খালি পড়লাম। এই ইন্টারভিউ দুইটা উনার ‘সেকেন্ড সেক্স’ বইটা লেখার বেশ কিছু পরের সময়ের কথা।

আমার মনে হইছে যে, উনার অভিজ্ঞতাটা ক্লাস কনশাসনেসের সাথে সর্ম্পকের কারণে এখন সম্ভবত অনেকবেশি রিলেভেন্ট হইতে পারে:

 “ব্যক্তি হিশেবে, যাদের সাধ বা সঙ্গতি আছে, তার কারণ যা-ই হোক না কেন, তারা একটু মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পারে।”

(পৃষ্টা ২৩)

যদিও এই ঘটনাগুলা এমনই মলিন যে, এইটা আরো একটু খারাপ-ই লাগাইতে পারে খালি!

 

Leave a Reply