অন জোকস (১)

মিলান কুন্ডেরা’র ‘ঠাট্টা’ [এই নামেই অনুবাদ হইছিল বাংলায়, কলকাতার ভাষায়] যখন পড়ি তখন জোকস জিনিসটা বুঝার মতোন বয়স হয় নাই হয়তো, কলেজে ভর্তি হইছি বা পড়ি – এইরকম সময়ের কথা; মানে, বয়স ১৮ হয় নাই পুরাপুরি। এখনো যে সব জোকস বুঝতে পারি – তাও না; বেশিরভাগ সময়ই টাইম লাগে বুঝতে [সত্যি কথা, ফান না এইটা] ।

নভেলের মেইন কাহিনি’র শুরুটা এইরকম, প্রেমিকার কাছে লেখা চিঠি’তে জোকস করতে গিয়া ধরা খায় নায়ক। এইটা যে জোকস, সেইটা কমিউনিস্ট গর্ভমেন্টের গোয়েন্দারা বুঝতে পারে না (এমনই বেক্কল 🙂 ) অথবা জোকস’রে সিরিয়াস অফেন্স হিসাবে ভাবতে পারে অরা। লাভ লেটারে ফ্লার্ট করতে গিয়া ধরা খায় নায়ক-নায়িকা।* তো, জিজেক একটা লেকচারে জোক কইরাই কইতেছিলেন, এই যে মাইনষে হাসি-ঠাট্টা করে কমিউনিস্ট গর্ভমেন্টরে নিয়া এইটা পলিটব্যুরো’র লোকজন জানতোই, এমনকি নিজেরাও নিজেদের নিয়া জোকস বানায়া পাবলিকের কাছে ছড়াইয়া দিতো। [জোকসই হইতে পারে এইটা… এইরকম একটা পাতলা পর্দাই তো, ব্যাপারটা, জানা আর না-জানার।] তো, কমিউনিস্ট গর্ভমেন্টের লোকজনের এইসব জোকস শুনতে খারাপ লাগতো এবং পাওয়ারে থাকলে যে একটু ‘সহনশীল’ হইতে হয় – এইভাবে মাইনা নিতে পারতেন না উনারা [কুন্ডেরা’র নভেল অনুযায়ী]। এমনকি পারসোনাল জায়গাতেও পাওয়ার দেখাইতেন! কুন্ডেরার ক্লেইম মনেহয় এইটাই। অথচ আপনি যদি পারসোনাল জায়গাতে পাওয়ার না দেখান, দেখাইবেন কই?

এইটা একটা ব্যাপার। আরেকটা হইলো, পাওয়ারে থাকার মানেই হইতেছে আপনারে জোকস পছন্দ করতে হয় আসলে, করতেও পারতে হয়। [শেখ হাসিনা এখন মাঝে-মধ্যে করেন, দেখবেন… খালেদা জিয়া আর পারেন না এখন, ঠিকঠাক মতোন। জোকস ব্যাপারটা পলিটিক্যাল তো অবশ্যই।] তো, আপনি যে জোকস করতে পারেন, এইটা পাওয়ারের একটা ব্যাপার, কিন্তু জোকস করার সময় আপনি ভাইবা নিতে পারবেন যে আপনি আর পাওয়ারে নাই! [আছেন বইলাই নাই, না থাকলে তো আর ভাবতেই পারবেন না।] নিজেরে নিয়া যখন জোকস করতেছেন তখন আপনি তো আসলে অন্য কেউ। এইভাবে চিন্তার মধ্যে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পসিবল। 🙁[পদ্ধতি হিসাবে বাজে জিনিসই এইটা…] আর যিনি ধরেন, পাওয়ারে না থাইকাই জোকস করতে পারলেন উনি তো মিলান কুন্ডেরা, একটা পলিটিক্যাল রেসপন্সিবিলি ফুলফিল করতে পারলেন তখন।

আমি মিলান কুন্ডেরা’রে ভালোবাসি, মিলান কুন্ডেরাদেরও ভালোবাসি; তবে গর্ভমেন্টরে ভালোবাসাটা একটু কঠিন ব্যাপারই, উনারা ভালো বাইসা ফেললে বিপদে পড়তে পারি। এইজন্য জোকস-টোকস ভালোই। [শুরুতেই কইছিলাম, জোকস আমি পারি না, এইবার প্রমাণও কইরা ফেললাম। মানে, ‘ভালোই’-এর ‘ই’ বলতে ‘খারাপ’ না, মোস্টলি বাতিল একটা ফর্ম’রে ইন্ডিকেট করা-ই, এইখানে, যেইটা বুইঝা ফেলছি। 🙁 ] থ্রু দ্য রেজিসটেন্স অফ ক্রিয়েটিং জোকস, কনফ্রন্টই করা হয় না খালি, ব্রেথিং স্পেইসটাও ক্রিয়েট হয়; একস্ট্রিম মোমেন্ট হিসাবে আপনি যেইটা ধইরা নিতেছেন যে, শ্বাসটা তো নিতে পারতে হইবো! ওইটুক ব্রেথ দিয়াই আপনে বাঁইচা থাকতেছেন! কিন্তু একইসাথে ব্রেথিং-স্পেসের ব্যাপারটা যতোটাই লম্বা হইতে পারতেছে, একস্ট্রিম ব্যাপারটা আরো টাইনা টাইনা লম্বা হইতে পারতেছে, একইসাথে। লাইফে এইজন্য দেখবেন, জোকস করতে পারতে হয়।…

এমনিতে, হিউমার বা জোকস অ্যাজ অ্যা ফর্ম সারভাইবালের উপায় না খালি, অ্যাডজাসমেন্টের উইপেনও উইথ দ্য আন-প্লিজেন্ট অথরিটি। নানি-দাদি’রা অনেকবেশি ফান করতে পারতো নানা-দাদা’দের চাইতে; মা-খালারাও, মানে, ব্যাপারটা এতোটা দূরের জিনিসও না, আমার পরিচিত মেয়েরা পরিচিত ছেলেদের চাইতে জোকস ভালো করতে পারেন। মানে, রিপ্রেসড একটা সিচুয়েশেনে জোকস ইমার্জ করে এইটা যেমন হয়, একটা সার্টেন লেভেল পর্যন্ত জোকস করতে পারাটাও পাওয়ার’রে অপারেট করার স্পেইসটা দিতে পারে বা পাওয়ার স্ট্রাকচার নিজেরে ছাড় দিতে রাজি থাকতে পারে মনেহয়। একটা পাওয়ার স্ট্রাকচার বা রিলেশনশীপ জোকস’রে কতোটা অ্যাকোমোডেড করতে পারতেছে সেইটা তার স্ট্যাবিলিটি’র প্যারামিটার না হইলেও ফ্ল্যাক্সিবিলিটি’টারে তো শো করে অবশ্যই।

২.
দিল চাহতা হ্যায়’তে অক্ষয় খান্না যে খেপে আমির খান-এর উপর, ওইটা একটা জোকসের ঘটনাই। ডিম্পল তো তার মা’র বয়সী, কিন্তু অক্ষয় খান্না সিরিয়াস প্রেমে পড়ে আর আমির খান ঠাট্টা করে ওইটা নিয়া। ওইটা অক্ষয় খান্না নিতে পারে না। হোয়াট ইফ, অক্ষয় খান্না যদি ওই জোকস নিতে পারতো বা কুন্ডেরার কমিউনিস্ট গর্ভমেন্ট? উনারা (অক্ষয় খান্না এবং কমিউনিস্ট গর্ভমেন্ট) বেশি সিরিয়াস আছিলেন। নট অনলি ডিম্পল কাপাডিয়া বা কমিউনিস্ট আদর্শের ব্যাপারে, বরং আমির খান এবং ইন্ডিভিজ্যুয়াল নাগরিকদের নিয়া সিরিয়াসও উনারা। মানে, আমির খান’রে বা প্রত্যেকটা নাগরিক’রে পাত্তা না দিলে এইরকম সিরিয়াস হওয়াটার মেবি দরকার পড়তো না অক্ষয় খান্নার এবং কমিউনিস্ট গর্ভমেন্টের।

গ্যাংগস অফ ওয়াসিপুর সিনেমা’তে ফয়সাল (মাইকেল কর্লিয়নি যে) তো খালি গাঞ্জা খায়, ফর্মে আসে তার ইলেকশনে জিতা ফ্রেন্ডরে খুন কইরা তার কল্লা বাড়ির সামনে ঝুলাইয়া রাইখা; তো, এরপর খালি গাঞ্জা-ই খায় সে, আর খুন-টুন করে না নিজে তেমন একটা; তখন তার এক ফ্রেন্ড আমির খানের মতো ফাইজলামি করে, কয়, ফয়সাল ভাই তো এমনেই মাইরা ফেলছিল, উনি তো খুন-টুন করতে পারে না; তো, ফয়সাল তখন কোন কথা না কইয়া, গাঞ্জায় টান দিয়া আইসা ওরে গুলি কইরা মাইরা ফেলে। জোকস’রে পাত্তা দেয়ার কিছু নাই। আপনার লগে তো আমার জোকসের রিলেশন না, পাওয়ারের।

কিন্তু অনেক সময় পাত্তা দিতে হয় কারণ একজন আমির খান যদি না থাকেন বা ইন্ডিভিজ্যুয়াল নাগরিক’রা না থাকলে প্রেম বা পাওয়ার অপারেট করবে কোন স্পেইসে তখন!

৩.
ইন ফ্যাক্ট পাওয়ার একটা জোকসের ফর্মেই ভিজিবল হইতে পারে সবচে বেশি। যে, উনার লগে তো হাসি-ঠাট্টাই করা যায়, যিনি করতে পারেন, পাওয়ারফুল উনি। বা উনার লগে আমি হাসি-ঠাট্টা যে করতে পারি এইটা একটা পাওয়ারের ঘটনাই। জোকস সবসময় রেজিসট্যান্সের একটা টুল – তা না; পাওয়ার শো করার উইপেনও। দেখবেন, আড্ডায়, তর্কে, কথা-বলা বা লেখায় যিনি ফান করতে পারেন, তারে পাওয়ারফুল লাগে তো অনেক। হুমায়ূন আহমেদও অনেক ফান করতে পারতেন, শুনছি।…

৪.
তো, জোকস’রে ফেইস করার উপায় আসলে পাল্টা জোকস করা, সিরিয়াস জোকস করাও হইতে পারে। :p প্রেমের রিভেঞ্জ যেমন আরেকটা প্রেম করা। কিন্তু পাওয়ার’রে ফেইস করার উপায় উল্টা পাওয়ার শো করা বা জোকস করা না; একটা পাওয়ার কিভাবে পাওয়ার হিসাবে নিজেরে হাইড করে সেইটারে রিভিল করা। অবভিয়াসলি জোকস কইরাও এইটা করা যাইতে পারে। কিন্তু খালি জোকস করতে পারলেই এইটা করা যায় – সেইটা যে না, ওই কথাটাই কইতে চাইলাম, এতোক্ষণ ধইরা।

………………………………………….

*টু সাম এক্সটেন্ড ফ্লার্ট করতে পারাটাই তো প্রেম, গম্ভীর প্রেমিকা প্রেমিকা বা কাপল ইমাজিন করাও তো পসিবল না। সার্ত্র আর বেভোয়ারও প্রেম প্রেম ভাব দেখানোর লাইগা ফ্লার্টই করার কথা, তা নাইলে জিনিসটারে ‘প্রেম‘ কওয়াটা মুশকিলেরই হওয়ার কথা।

Leave a Reply