অসম্পূর্ণ বুক রিভিউ…

অসমাপ্ত আত্মজীবনী। শেখ মুজিবুর রহমান। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ২০১২।

 

 “আমি অনেকের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি, কোন কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। অনেক সময় করব কি করব না, এইভাবে সময় নষ্ট করে এবং জীবনে কোন কাজই করতে পারে না। আমি চিন্তাভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নেই। কারণ, যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।” (প.  ৮০)

 

সম্পাদনা বিষয়ে

প্রথমত, বইটা আরো ভালোভাবে এডিটেড হইতে পারতো, টেক্সটটা ঠিক রাইখাই। যেমন চ্যাপ্টারগুলার এক একটা নাম হইতে পারতো, পর্ব থাকতে পারতো – বংশ-পরিচয়, প্রথমদিকের রাজনীতি, কলকাতায়, জেল-জীবন… এইরকমের। মানে, তাইলে বইয়ের যে স্ট্রাকচার, সেইটা আরো রিডেবল হইতে পারতো পাঠকের কাছে। সেইটা না হওয়ার একটা কারণ হইতে পারে যে, যে বা যারা সম্পাদনা করছেন তারা হয়তো ভাবছেন যে, এইরকম করলে সেইটা লেখকের টেক্সটের উপর ‘হাত দেয়া’ হইতে পারে। কিন্তু এইটা ভাবতে গিয়া উনার এইরকম একটা টেক্সটরে আরো ভালোভাবে হাজির করার সুযোগটারে নষ্ট করছেন। কারণ এডিটর হিসাবে টেক্সটটারে চেইঞ্জ না কইরাই গোছানোর দায়িত্বটা এডিটর নিতে পারতেন, কিন্তু নেন নাই।

আরেকটা সেনসেটিভ জিনিস হইলো, মূল পান্ডুলিপি’র সাথে বইয়ের টেক্সট’টা কতটুক, কেমনে সম্পাদনা করা হইছে এইটা নিয়াও কোন বাতচিত নাই। পলিটিক্যালি এই জিনিসটা ট্রান্সপারেন্ট রাখতে পারাটা দরকার আছিলো, তা নাইলে সন্দেহ আসলে থাইকাই যাবে।

 

পাকিস্তানের সময়

এই বইয়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব ত আছেই। বইয়ের সময় মোটামুটি ১৯৪০ থিকা ১৯৫৪ পর্যন্ত (শেখ মুজিবুর রহমানের ২০ থিকা ৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত), মানে যখন পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয় এবং যখন শেষ হইতে শুরু করে, পলিটিক্যালি – সেই সময়টার কথা। কিন্তু এর পুরাটাই যে আছে, তা না; এইটা শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তিরই দেখা, যিনি অনেকদূর পর্যন্ত ইনভল্ভড ছিলেন। যার ফলে ঘটনাগুলা বাদ যায় নাই, যেমন, রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডের যে জেল-হত্যা সেইটা সত্যেন সেনের লেখায় খবুই বড় ঘটনা হিসাবে আমরা পাইছি, কিন্তু এই ঘটনা তিনি কিছুটা দূর থিকাই দেখছেন এবং বর্ণনা করছেন। কিন্তু ঘটনার যে বর্ণনা সেইটা উনার রাজনৈতিক যে বিবেচনা, সেইটা দিয়া বায়াসড। আর সেইটাই সম্ভবত মেইন পয়েণ্ট বইটার।  

 

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন

আমরা যদি টেক্সটারেই আলটিমেট ধরি, দেখবো যে, উনি সবসময় চাইছেন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গইড়া তুলতে এবং তা করার জন্যই উনার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিস্তার ঘটাইছিলেন। ১৯৪৭ এর আগে উনি হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সংগঠন করছেন, পরে ঢাকায় আইসা মুসলিম ছাত্রলীগ, শেষে আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং সব জায়গাতে উনার কনসার্ন ছিল, সংগঠনটা দাঁড়াইতেছে কিনা, এর বিস্তার ঘটতেছে কিনা। মানে, রাজনৈতিক সংগঠনের একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করার উপর উনার ফোকাস ছিল।

কিন্তু সংগঠন কেমনে ব্যক্তিরে ডিল করবে – এইটার আলাদা কোন নজির উনি রাখতে পারেন নাই। মানুষ দিয়াই সংগঠন দাঁড়া করাইতে হবে, এই মানুষরে উনি গুরুত্ব দিছেন, কোন রাজনৈতিক আইডিওলজি যে ছিল না, তা না; রাজনীতিতে আইডিয়ার চাইতে ব্যক্তি-মানুষ যে বেশি ইর্ম্পটেন্ট এইটা উনি বুঝতে পারছেন, এই কারণে উনার সংগঠন ব্যক্তি-কেন্দ্রিকই হইয়া রইছে । এই ব্যক্তি-কেন্দ্রিক রাজনীতি’র বা বিবেচনার সমস্যাটা হইলো যে, এইটা ষড়যন্ত্র’রে মাস্ট কইরা তোলে।

উনার লোক চিনতে যে ভুল হয়, সেইটারও একটা স্বীকারোক্তি উনি করছেন, যখন ছাত্রলীগের কমিটি হয় তখন তিনি ছাইড়া দেয়ার সময় কয়েকজনরে রিকমেন্ড করেন কমিটিতে নেয়ার জন্য এবং বলেন যে, পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন, উনার সিলেকশনটা ঠিক হয় নাই।

এই যে ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতার রাজনীতি, এইটার মূল ভাবনা আমাদের সার্বিক সাবজেক্টিভ চিন্তা-ভাবনার রেজাল্ট; ফিলসফিক্যাল গ্রাউন্ডেই আমরা ব্যক্তি ছাড়া ভাবনাটা শুরু করতে পারি না। চিন্তার ভিতরে, ব্যক্তি-ই প্রধান আমাদের। এই যে গুরু বিনে সাধন হবে না, রাজনৈতিক সংগঠনের ভিতরেও সেই চিন্তারই এক্সটেনশন।

 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

সোহরাওয়ার্দী যে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন, এইটা জানা বিষয়। কিন্তু কিভাবে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন হয়া পড়ছিলেন, সেইটা জানা ছিলো না আমার; উনার রাজনীতি ছিল কলকাতা-কেন্দ্রিক এবং কলকাতা পাকিস্তানের অর্ন্তভূক্ত না-হওয়াটা উনার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ডুম হওয়ার জন্য এনাফ ছিল।

“সোহরাওয়ার্দী সাহেব কলকাতা ত্যাগ করে করাচি চলে গিয়েছেন।… সোহরাওয়ার্দী সাহেব সামান্য কিছু কাপড় ছাড়া আর কিছু নিয়ে আসতে পারেন নাই। ভারত সরকার তাঁর সর্বস্ব ক্রোক করে রেখেছে।… তিনি করাচিতে তাঁর ভাইয়ের কাছে উঠলেন, কারণ তাঁর খাবার পয়সাও ছিল না।” (পৃষ্টা – ১২৯)

 

এই যে কলকাতা থিকা ঢাকা, এইটাতে উনার কোন ভূমিকাই ছিলো না, বরং এক ধরণের নিরবতা ছিল। বেশ অনেকদিন পরে উনি পাকিস্তানে আসছেন। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, একরকম শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগিতাতেই তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে অনেকবেশি প্রাসঙ্গিক হয়া উঠেন।

তবে গুরুর সাথে ২/৩বার উনার বনিবনা হয় নাই, শেষবার যখন পাকিস্তানের আইন মন্ত্রী হইতে রাজি হইলেন সোহরাওয়ার্দী, তখন। এর আগে, একটা সময় কৌশলী হইতে যখন অস্বীকৃতি জানান সোহরাওয়ার্দী তখনো শেখ মুজিবুর রহমানরেই পলিটিক্যালি বেটার মনে হইছে। মানে, সোহরাওয়ার্দীর তুলনায় রাজনীতিরে তিনি নৈতিকতা দিয়া ইনফিরিয়র কইরা তোলেন নাই। পরবর্তীতে আবদুর রাজ্জাক সাহেবরা এই ধরণের নৈতিকতার চর্চা দিয়া রাজনীতিরে ব্যাখ্যা করতে চাইছেন, ধারণা করি, সেই রাজনৈতিক দুর্বলতা শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটু কমই ছিল।

তবে সবচে’ যেইটা সিগনিফিকেন্ট সেইটা হইলো, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী’র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ধরণটা, শেখ মুজিবুর রহমান সেইটা শুধু নিজে ফলোই করেন নাই, বরং এইটাই যে একমাত্র ‘ধরণ’ সেইটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এস্টাবলিশ করছেন বা লোকজন পরবর্তীতে এই প্যার্টানটারেই ফলো করছে। প্যার্টানটা হইলো একজন রাজনৈতিক গুরু’র প্রতি সৎ থাকা এবং নিজের একটা অবস্থান বা সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করা। এইটা এতোটা মাইক্রো-লেভেলে পৌঁছাইছে যে, এইবার ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার সময় কিছু ব্যানার দেখলাম, যার ক্রমটা অনেকটা এইরকম:

জিয়া > খালেদা জিয়া > তারেক জিয়া > ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা > জেলা কমিটির নেতা > ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা > সমর্থকের নাম

শেখ মুজিবুর রহমান > শেখ হাসিনা > জয় > স্থানীয় এমপি > জেলা কমিটির নেতা > ছাত্রলীগ নেতা…

এই ছবিটা যেই টাইমে তোলা, তখন জয়'রে এতোটা পাত্তা দিতেন না মনেহয়, ছাত্রলীগের নেতারা

এই ছবিটা যেই টাইমে তোলা, তখন জয়’রে এতোটা পাত্তা দিতেন না মনেহয়, ছাত্রলীগের নেতারা

 

মানে, রাজনীতি করতে হইলে যে, নেতা ধরতে হবে, এই শিক্ষা শেখ মুজিবুর রহমানই হয়তো প্রথম দেন নাই, কিন্তু আমার মনে হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে উনার সাফল্য এই ব্যাপারটারে পরবর্তীতে মাস্ট কইরা তুলছে।

 

মওলানা ভাসানী

এই বইয়ে, মওলানা ভাসানী সিনে আসেন পাকিস্তান ঘোষণার পর, এর আগে উনার সর্ম্পকে তেমন কিছু আমরা জানতে পারি না। তবে বিভিন্ন সময়ে মওলানা ভাসানী সর্ম্পকে শেখ মুজিবুর রহমান কিছু কমেন্ট করছেন, সেইটা উল্লেখ করলেই আমার ধারণা, শেখ মুজিব উনারে কি রকম ভাবে ভাবতেন, তার একটা পোট্রেট দাঁড়ায়:

“মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন সদ্য আসাম থেকে চলে এসেছেন। তাঁকে পূর্ব বাংলার জনসসাধারণ তেমন জানত না শুধু ময়মনসিংহ, পাবনা ও রংপুরের কিছু কিছু লোক তাঁর নাম জানত। কারণ তিনি আসামেই কাটিয়েছেন। তবে শিক্ষিত সমাজের কাছে কিছুটা পরিচিত ছিলেন।” (প. ১১৪)

 

“দুই একবার শামসুল হক সাহেবের সাথে ভাসানী সাহেবের একটু গরম গরম আলোচনা হয়েছিল। একদিন শামসুল হক সাহেব ক্ষেপে গিয়ে মওলানা সাহেবকে বলে বসলেন, “এ সমস্ত আপনি বুঝবেন না। কারণ, এ সমস্ত জানতে হলে অনেক শিক্ষার প্রয়োজন, তা আপনার নাই।” মওলানা সাহেব ক্ষেপে মিটিং স্থান ত্যাগ করলেন। আমি শামসুল হক সাহেবকে বুঝিয়ে বললে তিনি বুঝতে পারলেন, কথাটা সত্য হলেও বলা উচিত হয় নাই।“ (প. ১২৭)

মওলানা ভাসানীর লগে শেখ মুজিবুর রহমান।

মওলানা ভাসানীর লগে শেখ মুজিবুর রহমান।

“রাতে এক বাড়িতে খেতে গেলেন মওলানা সাহেব। রাগ, খাবেন না। তিনি থাকতে কেন শামসুল হক সাহেবের নাম প্রস্তাব করা হল সভাপতিত্ব করার জন্য। এক মহাবিপদে পড়ে গেলাম। মওলানা সাহেবকে আমি বুঝাতে চেষ্টা করলাম, লোকে কি বলবে? তিনি কি আর বুঝতে চান? তাকে নাকি অপমান করা হয়েছে! শামসুল হক সাহেবও রাগ হয়ে বলেছেন, মওলানা সাহেব সকলের সামনে একথা বলছেন কেন? এই দিন আমি বুঝতে পারলাম মওলানা ভাসানীর উদারতার অভাব, তবুও তাঁকে আমি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতাম। কারণ তিনি জনগণের জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত। যে কোন মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তারা জীবনে কোন ভাল কাজ করতে পারে নাই – এ বিশ্বাস আমার ছিল।” (প. ১২৮)

 

“এই সময় (১৯৫২-৫৩) শহীদ সাহেব মওলানা ভাসানী ও অন্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রবল জনমত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মওলানা ভাসানীও এই সময় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সারা পূর্ব পাকিস্তানে।” (প. ২৩৬)

 

“মওলানা ভাসানীর দরকারের সময় এই আত্মগোপনের মনোভাব কোনোদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যতে অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।” (প.২৫৫)

 

ঢাকা/কলকাতা

আনটিল ফরটি সেভেন ঢাকা রাজনৈতিকভাবে কোন ঘটনাই না। এই পতন মনেহয় সিপাহী বিপ্লবের পরে থিকাই শুরু হইছিল, ইংরেজদের ঢাকা-ভীতি শেষদিন পর্যন্তও যায় নাই। যার ফলে ঢাকা ইংরেজ আমলে পুরাটাই ভীতিকর একটা জায়গা ছিলো। সো, মুজিব বা সোহরাওয়ার্দী কারোরই ঢাকা চিনার কোন দরকার ছিলো না, ইভেন শেখ মুজিব ত বলতেছিলেন যে, পূর্ববাংলায় টাকায় গইড়া উঠা কলকাতার উপর দাবি আমরা কেন ছাইড়া দিবো। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই প্রায় শেষ হইয়া যাইতে নিছিলো, কলকাতা ইন্ডিয়ার ভিতর চইলা যাওয়াতে। এর আগে, ঢাকা যা-ই থাক, ১৯৪৭ এর পর আসলে নতুনভাবে শুরু হইছে, ঘটনার বনর্ণায় তখনো মফস্বলের গন্ধ পাওয়া যায় ঢাকায়।

 

মুসলিম লীগ/আওয়ামী লীগ

সংগঠন হিসাবে মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে বাংলাদেশের উঠতি মধ্যবিত্তের সংগঠন (দুইটা ভিন্ন সময়ের এবং বাস্তবতার) এই দ্বিমত সম্ভবত উনার বইয়েও পাওয়া যাইবো না। দুই পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে ডিফারেন্স তা প্রায় এস্টাবলিশ একটা ধারণা, আমাদের ইতিহাসের বইগুলাতে; উনার ইন্টারপ্রেটশনও একই:

“পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরাট প্রভেদ রয়েছে। সেখানে রাজনীতি করে সময় নষ্ট করার জন্য জমিদার, জায়গিরদার ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আর পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতি করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। পশ্চিম পাকিস্তানে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত না থাকার জন্য জনগণ রাজনীতি সম্বন্ধে বা দেশ সম্বন্ধে কোনো চিন্তাও করে না। জমিদার বা জায়গিরদার অথবা তাদের পীর সাহেবরা যা বলেন, সাধারণ মানুষ তাই বিশ্বাস করে।” (প. ২৩৯)

 

 

জেল-জীবন

নেলসন ম্যান্ডেলা’র অটোবায়োগ্রাফি যারা পড়ছেন, তারা সম্ভবত আরো বেশি এনজয় করতে পারবেন… কি যে মনোটনাস! জেল মানে ত হইলো আপনারে সরাইয়া রাখা, অ্যাক্টিভিটি থিকা বাইর কইরা দেয়া, ক্রমশ ইন-এফেক্টিভ কইরা তোলা। অথচ দেখেন, জেলখানার বাইরে, আমরা এক একটা জেলের ভিতরই বইসা আছি!

তবে জেলের ভিতর অনেকজনের সাথে থাকাটা উনার জন্য এফেক্টিভ ছিল। কিছুদিন যখন একলা থাকছেন, তখন অ্যাক্টিভিটি’র বাইরে থাকার পেইনটা খেয়াল করা যায়।

 

বানান বিষয়ে

শেখ মুজিবুর রহমান যেই ভাষায় কথা বলতেন, তার লেখার ভাষা তার চাইতে ডিফারেন্ট; মানে, আমার ধারণা, উনি আব্বা, আম্মা ই বলতেন, কিন্তু লিখছেন বাবা মা। (মেইন টেক্সট আর এডিটিং কি কোনদিন দেখতে পারবো আমরা? দেখলে বুঝা যাবে, উনার কথার কতটুক ‘প্রমিতকরণ’ করা হইছে…) কিন্তু উনি হাছিনা লিখেন নাই, লিখছেন – হাচিনা, এইটা ইন্টারেস্টিং! আমার ধারণা, উনি লেখা কন্টিনিউ করলে এবং সাহিত্যিকদের খপ্পরে না পড়লে বাংলা শব্দ এবং বানান বিষয়ে আরো কিছু ইনফিয়রিটি আমরা আরো আগে থিকাই বাদ দিতে পারতাম।

 

প্রায় অপ্রাসঙ্গিক একটা ঘটনা

একটা জায়গা পড়তে গিয়া খুব অস্তত্বি লাগছে, সেইটারে আক্ষরিক অর্থে না নিলেই ভালো; কিন্তু একটা খচখচানি লাগছে আমার, হয়তো এইটা এমন কিছু না, কিন্তু গোপন করারও হয়তো কিছু নাই:

“আমি বক্তৃতা করতে উঠে যা বলার বলে জনগণকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম, “যদি কোন লোককে কেউ হত্যা করে, তার বিচার কি হবে?” জনগণ উত্তর দিল, “ফাঁসি হবে।” আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “যারা হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর কারণ, তাদের কি হবে?” জনগণ উত্তর দিল, “তাদেরও ফাঁসি হওয়া উচিত।” আমি বললাম, “না, তাদের গুলি করে হত্যা করা উচিত।” কথাগুলি আজও আমার পরিষ্কার মনে আছে।” (প. ১৩২)

 

শেষ কথা

এই বইটার একটা ভালো রিভিউ হওয়া দরকার, কারণ এই বইটার সাহিত্যিক ভ্যালু না খালি বরং পলিটিক্যালি লোকেট করার ভিতর দিয়া কিছু জিনিস সিগনিফাই করা সম্ভব (বইটারে একটা টেম্পারড টেক্সট ধইরা নিয়াও)। এইখানে আমি দ্রুত কিছু কমেন্ট করার চেষ্টা করলাম। এই জিনিসগুলার আরো ব্যাপকভাবে মোকাবিলা করা যায় বা করাটা দরকারি।

 

অগাস্ট, ২০১২।

 

Leave a Reply