‘আলোচনায় প্রবৃত্ত’ হওয়া বিষয়ে

একটা স্ট্যাটাসে (http://web.facebook.com/imrul.hassan/posts/10150227887597093) আলাপ করতে গিয়া মজনু শাহ ‘আলোচনায় প্রবৃত্ত’ হওয়া/না-হওয়া বিষয়ে উনার অবস্থান জানাইছেন আর আমার কাছেও আমার অবস্থানটা জানতে চাইছেন। আমার মনে হইছে, আরেকটা কমেন্ট না কইরা একটু গুছাইয়া উত্তর করতে পারলে ভালো হয়। নিজের অবস্থানটা হয়তো আরো বিস্তারিত করা যাইবো, ফরম্যাটের কারণেই।

মজনু শাহ’র কমেন্ট থিকাই মনে হইতে পারে যে, ‘আলোচনায় প্রবৃত্ত’ হওয়া বিষয়ে আমাদের পরস্পর-বিরোধী অবস্থান আছে। ‘বিরোধ’ একটা আছে, কিন্তু সেইটা যতোটা না ‘আলোচনা’র জায়গাতে, তার চাইতে ‘আলোচনা’ থিকা আমরা কি ‘প্রত্যাশা’ করি, সেই জায়গাটাতে।

 

‘আলোচনা’ কেন করতে চাই?

মজনু শাহ’র মূল যে অ্যাজামশন সেইটা হইলো: আলোচনা আমরা করি জানার জন্য, কিন্তু এইভাবে জানতে গেলে সময় নষ্ট হয়, এর চাইতে এই বিষয়ে পড়াশোনা কইরা আরো ভালোভাবে জানতে পারি। এই ভাবনার সাথে আমার দ্বিমতটা হইলো, শুধুমাত্র জানার জন্যই ‘আলোচনায় প্রবৃত্ত’ হই না আমি। পলিমিকস বিষয়ে ফুকো’র একটা মতামত অনেক আগে থিকাই আমি সাবস্ক্রাইব করি। মানে, জানার জন্য আলোচনা কোন পজিটিভ উপায় কিনা সেই জায়গাটাতে আমার সন্দেহ আছে। তাইলে কেন আমি আলোচনা করি বা করতে চাই?

বেশ কয়েকটা বিষয় আছে এইখানে। প্রথমত, ‘আলোচনা’গুলা মূলতঃ হয় ‘জানা’ বিষয়গুলারেই যাচাই করার জন্য। (এইভাবে অ-জানা’র দিকেও যাওয়া যায়।)ধরেন, একটা বই বা গল্প/কবিতা/গদ্য পড়লাম, সিনেমা দেখলাম; পড়ার পরে বা দেখার পরে আমার কিছু জিনিস মনে হইলো, সেইটা শেয়ার কইরা বুঝতে চাই সেইটা কিরকম। মানে, আমার একটা ‘ধারণা’ আছে সেইটা কতোটা ‘যৌক্তিক’ বা ‘প্রাসঙ্গিক’, সেইটা বুঝতে চাই আমি। আবার, কেউ কোন ‘ধারণা’র প্রকাশ করলেন বা হয়তো প্রচলিত একটা ধারনা আছে, সেইটার সাথে আমার ‘অন্যমত’-এর জায়গাটাও স্পষ্ট করতে চাই আমি। এইভাবে নিজের অস্পষ্ট ধারণাগুলারেও একটা স্পষ্টতার ভিতর নিয়া যাওয়া সম্ভব হইতে পারে। কারণ, চিন্তার জন্য ইন্টার-অ্যাকশনটা জরুরি।

তবে এইটা ‘কিভাবে’ করা হয়, সেইটাও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। একটা সময় আড্ডার ভিতর ছিলাম, তখন কথা হইতো; একটা সময় ‘কবিসভা’তে হইতো, এখন ‘ফেসবুকে’ হয়, আবার পরবর্তী সময়ে হয়তো অন্য কোন একটা স্পেসে হইবো… এইটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। তবে প্রাইভেট স্পেসের চাইতে পাবলিক স্পেসে হইলে ভালো যে, বিষয়টারে ছড়ানো যায়। তখন যে সোস্যাশ ইমপ্যাক্টটা তৈরি হয়, সেইটার স্কোপটা বাড়ে।

তবে সব বিষয়ের সাথে ত জড়িত হইতে চাই না। ২/১টা বিষয়েই আমার আগ্রহ আছে এবং সেইগুলাতেই ‘আলোচনায় প্রবৃত্ত’ হই আমি, যেইখানে আমার কিছু ‘ধারণা’ তৈরি হইছে বা হইতেছে। কিছু জিনিস গুরুত্বপূর্ণ মনে হইলে, সেইটার সাথেও এক ধরণের ইন্টার-অ্যাকশনে যাইতে চাই।

আরেকটা জিনিস মনে হয়, ‘আলোচনা’ করতে গেলে, মানে চিন্তার ভিতরে অস্বীকারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ; আপনি কেন এবং কিভাবে ‘অস্বীকার’টা করতেছেন, সেইটা দিয়াই আসলে চিন্তাটারে বোঝা যায়। বিপরীতভাবে, আমার যারা কবিতা লিখি তাদের জন্য এই প্রাকটিসটা কিছুটা অস্বস্ত্বির, কারণ কবিতার কাজই হইতেছে ‘গ্রহণ’ করা। প্রসেসের দিক থিকা একটা বৈপরীত্য আছে, চিন্তার এবং কবিতার; যার ফলে একজন, যিনি কবিতা লিখতেছেন এবং চিন্তার ‘আলোচনায়’ আসতেছেন, সেইখানে এই দুইটারে ‘এক’ না করার একটা জায়গা আছে। এইটা আমার ‘ধারণা’, অন্যভাবেও হয়তো ডিল করা যাইতে পারে।

 

‘সময়’ বিষয়ে

যা-ই হোক, সময় বিষয়ে মজনু শাহ’র কর্নসানটার সাথেও আমার কিছুদূর পর্যন্ত একমত আছে। এমন হইছে যে, যা বলার ছিল, বলা হয়া গেছে, কিন্তু ‘শেষ’ করা যাইতেছে না, শুধুই প্যাঁচাইয়া যাইতছে… ‘আলোচনা’র ভিতর যেহেতু ব্যক্তি জড়িত, ‘জয়/পরাজয়’ বিষয়টাও জড়িত থাকে… এইসব ক্ষেত্রে ‘পরাজিত’ হওয়াটার দরকার আছে, একটা উইড্র করারও ব্যাপার থাকে; সময় সময় ‘নিরব’ থাকাটাও জরুরি, পরেও ত ক্লিয়ার করা যায়… এই জিনিসগুলা শেখার চেষ্টা আমি করতেছি, তাইলে হয়তো টাইম ম্যানেজমেন্টটা ভালোভাবে করা করতে পারবো…

এইটা ছাড়া, জীবন যেমন আছে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য, সময়ও ত আছে নষ্ট করার জন্যই… ‘আলোচনা’র চাইতে গুরুত্বপূর্ণ যদি কিছু করি, তখন ত আর এইটা করি না… অথবা হয়তো এইটা করার ভিতর দিয়াও অন্যকিছু করার দিকে যাইতে চাই, একভাবে…

তবে বেশিরভাগক্ষেত্রে আমি মনে করি, কথা-বার্তা ‘বলা’টা জরুরি, ‘নিরব’ থাকার চাইতে। কি নিয়া, কার সাথে, কোথায় বলবো, সেইসবক্ষেত্রে একটা বাছাই রাখতে পারলে হয়তো ভালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘বলা’ বিষয়ে যে অস্বস্ত্বি আমার থাকে, সেইটা হইলো যে, হয়তো কথাগুলা আরো ভালোভাবে বলা যাইতো।

——————

“বেশিভাগ ক্ষেত্রে আলোচনায় প্রবৃত্ত না হবার আরও কিছু ফায়দা আছে।

যেমন এই যে কথাগুলো আপ্নারা বললেন, এগুলো পাচ মিনিটে ফোনে সারা যেত, লিখে করতে গিয়ে সেটা হয়ত ঘন্টা দুয়েক খেয়ে ফেলেছে জীবনের। অনেক সময় দেখা যায় কয়েকটা দিন-রাত খেয়ে নিচ্ছে!

এসব দেখে আমি… ভয় পেয়ে গেছি, যে, কী করছি! এ তো জানবার কোনো রাস্তা নয়

যা কিছুই আজ ধন্দ জাগে আমাদের, গাদা গাদা বইপত্র আছে,বন্ধুদের সহায়তায়, সেসবের স্মরন নিয়ে, আরও গভীরে যেতে পারি বিষয়ের।

উপায়টি কেমন, জানাবেন এ বিষয়ে।অর্থাত, মহার্ঘ হয়ে ওঠা সময়ের কী করে আরও কার্যকরী ব্যবহার করা যায়।”

– মজনু শাহ।

 

Leave a Reply