ইমেজের এই দুনিয়াদারি…

এইরকম ঘটনা তো ঘটে; যা পড়তেছেন, দেখতেছেন আপনার আশে-পাশেও কাছাকাছি রকমের ঘটনা ঘটতেছে বা রিলেট করা যাইতেছে… বা উল্টাটাও হয় যা কিছু আমাদের চারপাশে ঘটতেছে সিমিলার জিনিস পাওয়া যায় গল্প-কবিতা-নাটক-সিনেমা-নভেলে। তো, এইরকমের জিনিস হইলো, দুয়েকদিন আগে।

যেই নভেল’টা পড়তেছি (Those Who Leave and Those Who Stay), সেইটা’তে মেইন কারেক্টার হইতেছে লিলা। আর ন্যারেটর হইতেছে তার ফ্রেন্ড লিনু; যার একটা নভেল ছাপা হইছে, বিয়া করতে যাইতেছে এক প্রফেসর’রে। আর অন্যদিকে লিলা প্রাইমারি স্কুলের পরে আর পড়াশোনা করে নাই, এখন একটা সসেজ ফ্যাক্টরি’তে লেবার হিসাবে কাজ করে, একটা বাচ্চা আছে (তার এক্স-লাভার নিনো’র, যে আবার লিনু’রও অ্যাডমায়ারার), হাজবেন্ডের লগে থাকে। লিনু যখন লিলা’র লগে দেখা করতে যায়, তখন লিলা লিনু’রে তাঁর কথা কইতে থাকে… এই জায়গাটা আমি পড়তেছিলাম।

লিলা’র হাজবেন্ড কমিউনিস্ট পার্টি করে; হাজবেন্ডের লগে তার ছোটবেলার প্রেমিক তাঁদের বাসায় আসে যে হইতেছে স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি; এবং লিলা বুঝতে পারে যে সে আসলে ভালো লোক-ই, আগের রিলেশনের হ্যাং-ওভার নিয়া ঝামেলা করবে না। তো, একদিন কমিউনিস্ট পার্টির একটা মিটিংয়ে অরে নিয়া যায়, অর পুরান প্রেমিক আর হাজব্যান্ড; সেইখানে স্টুডেন্টদের ফ্লাওয়ারি কথা-বার্তা শুইনা লিলা’র তো যায় মেজাজ খারাপ হয়া; কয়, একটা সসেজ ফ্যাক্টরি’তে একজন নারী-শ্রমিক’রে কি কি ফেইস করা লাগে, তোমাদের তো কোন আইডিয়াই নাই! শে তাঁর এক্সপেরিয়েন্সের কথাগুলা কয়। শুইনা কমিউনিস্ট পার্টির লিডার, কর্মী, স্টুডেন্ট’রা তো খুবই সিম্প্যাথি জানায়, স্পেশালি একটা মেয়ে, নাদিয়া (যে নিনো’র লগে রিলেশনে ছিল একটা সময়)। কিন্তু কমিউনিস্ট’রা যেইটা করে, অইসব ঘটনার ফিরিস্তি দিয়া লিফলেট ছাপায়া লিলা’র ফ্যাক্টরি’র সামনে বিলি করতে শুরু করে, কয়দিন পরে। লিলা তো অবাক! এই কথা শে অদেরকে বলছে মানে তো এই না যে, এইটা নিয়া লিফলেট বানানোর পারমিশন শে দিছে! তাঁর কথারেই এখন তাঁর কমিউনিস্ট ফ্রেন্ডরা ইউজ করতেছে তাদের ‘শ্রমিক-বিপ্লব’ সফল করার লাইগা! খুবই বিরক্ত হয় শে। এমন না যে শে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে; কিন্তু তাঁর চাকরি নিয়া টানাটানি হবে, ফ্যাসিস্ট-কমিউনিস্ট’রা আইসা ফ্যাক্টরির সামনে মারামারি করবে, এই ‘বিপ্লব’ তো শে চায় নাই!

মুশকিল’টা কোন জায়গা’টাতে হইতেছে, দেখেন; লিলা’র কমিউনিস্ট ফ্রেন্ডরা তো ভাবতেছে, লিলা খুব কষ্টে আছে, কতো অত্যাচার, নিযার্তন তারে সহ্য করতে হইতেছে; তারা তো তারে বাঁচাইতে চাইতেছে! লিলা’র যেহেতু বুদ্ধি-বিবেচনা আছে, শে জানে, এইটা ‘বাঁচাইতে চাওয়া’ না, বরং এই বাঁচাইতে চাওয়ার ভিতর দিয়া তারা নিজেদের এগজিসটেন্সটারে ‘মহান’ বইলা ভাবতে পারতেছে; যে ‘সমাজের জন্য, সভ্যতার জন্য ইর্ম্পটেন্ট কিছু’ করতেছে। (২০১৬ সালের এই ছোট লেখাটার কথা মনে হইলো: https://bit.ly/302MQrY )

আরেকটা ঘটনার কথা এইখানে বলা যাইতে পারে এইখানে, লিনু’র। একবার অর বইয়ের একটা প্রোগ্রাম শেষে শহরে একটা বাসাতে অন্য ফ্রেন্ডদের সাথে শে থাকতে গেছে। অইখানে আড্ড-টাড্ডা দিয়া যখন শে ঘুমাইতে গেছে; মাঝরাতে দেখে অই বাসারই ডাচ এক আর্টিস্ট তার বিছনায় আইসা বইসা রইছে! কি ঘটনা? সে তাঁর সাথে ঘুমাইতে চায়। লিনু তো খুবই অবাক হয়, কেন শে এই কাজ করবে! আর্টিস্টও অবাক হয়, কয়, আরে তুমি না রাইটার? তোমার লাভার আছে, আমারও আছে; কিন্তু আমার তো ইচ্ছা করতেছে, দোষের তো কিছু নাই; আর এই এক্সপেরিয়েন্সটা তোমার ক্রিয়েটিভ জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউটও করবে… লিনু তো আরো খেইপা যায়, কি ধরণের আবদার এইটা! পরে শে যখন চেঁচানোর হুমকি দেয় তখন আর্টিস্ট’টা মন-খারাপ কইরা চইলা যায়, যাওয়ার সময় লিনু’রে হিপোক্র্যাট বইলা গাইল দেয়। লিনু ভাবে, নিনো’র বাপ যে তারে সেক্সুয়ালি মলেস্ট করতে নিছিলো, এর সাথে ডিফরেন্সটা কোন জায়গায়? বা নিনো যে এইরকম একটার পরে একটা এফেয়ার কইরা যাইতেছে, তার বাপের চাইতে সে কোন জায়গাটায় আলাদা? (অই বাসায় যে ইয়াং মেয়েটা একটা বাচ্চা নিয়া থাকে, এই বাচ্চাটাও নিনো’র ‘প্রেমের ফসল’ 🙂 )

তো, নভেলের বেটার পার্ট হইলো, কোন কারেক্টারই লাইফ নিয়া কোন জাজমেন্টে যায় না; মানে লাইফ তো কোন জাজমেন্টে আটকায়া থাকে না… কিন্তু অ্যাজ অ্যা রিডার কিছু জিনিস অবজার্ভ করতে পারেন তো আপনি। আমার অবজার্ভেশন’টা হইলো, নিনো’র বাপের (যে ওমেনাইজার) আর নিনো’র ডিফরেন্সটা হইতেছে – তাদের ইমেজের। নিনো’র বাপ হইতেছে পুরান আমলের ইন্টেলেকচুয়াল (পত্রিকায় আর্টিকেল ছাপায়, কবিতা লেখে… এইরকম) আর নিনো হইতেছে বর্তমান সময়ের বিপ্লবী, ইন্টেলেকচুয়াল, ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস করতে পারে, এইরকম। নিনো’র বাপ যে তার ইমেজ’টারে ইউজ করতেছে, তার পজিশনের ফায়দা’টা নিতেছে, সেইটা টের পাওয়া যায়… বা তার ইমেজের পাওয়ারটা আর কাজে লাগে না, তখন তার জোর-জবরদস্তি করা লাগে। নিনো’র বরং উল্টা ঘটনা, সে যে ওমেনাইজার না – তা না; কিন্তু মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে; দে হ্যাভ অ্যা গুড টাইম, তারপরে বুঝতে পারে যে, তারা একজন আরেকজনের জন্য না; অ্যান্ড দে কুইট! অভিযোগের কিছু নাই এইখানে। নিনো এবং তার প্রেমিকারা একটা ‘বিপ্লবী’ বিশ্বাসের (আমি বলবো, ইমেজের) ভিতর দিয়া এই কাজ করতে পারে।

একই ধরণের ঘটনা দেখবেন, ‘আসল পীর’ আর ‘ভন্ড-পীর’ এর ব্যাপারগুলাতেও থাকে। ব্যাপারটা সবসময় এইরকম না যে, ভন্ড-পীরদের কেরামতি ফাঁস হয়া যায়; বরং বেশিরভাগ সময় তাদের ইমেজটা আর কাজ করে না, একটা সময়ে গিয়া। একবার একটা অডিও ক্লিপ লিক হইছিল, গ্রামের দুইজন মহিলার। একজন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলার কাছে সাজেশন চাইতেছেন আরেকজন ইয়াং ওয়াইফ; যে, পীর সাহেব যখন তাঁদের বাড়িতে আসে, তখন শে ফিজিক্যাল ডিজায়ারটা ফিল করতে পারে, কিন্তু কি করবে বুঝতেছে না… তখন বয়স্ক মহিলা বলে যে, তার কিছু করা লাগবে না, যখন পীর সাহেব মনে করবে শে রেডি, উনি তাঁরে ডাক পাঠাইবেন।… মানে, মনে হইতে পারে, একটা ‘ভন্ড পীর’ ধইরা ফেললেন এইখানে! কিন্তু এইটা মহিলারও তো ডিজায়ার আছেই; পীর বইলা আপনি মানতে পারতেছেন না, কিন্তু ‘বিপ্লবী’ বা ‘রেভিউলেশনারি’ কেউ একজনের জায়গায় মাইনা নিতে পারতেছেন! আমি বলবো, এই ছোট্ট ডিফরেন্সের জায়গাটারে খেয়াল করেন, তাইলে ইমেজের পাওয়ারটারে দেখতে পাইবেন।…

তো, কয়দিন আগে সিপিবি’র একজন নারী-কর্মী (জলি তালুকদার) উনার দলের একজন নেতার (ব্যাপার’টা খেয়াল করেন, তার নাম নাই এতোটা…) নামে যে সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্টের অভিযোগ’টা আনলেন – সেইটারে এই ইমেজের জায়গাটা থিকা আমি দেখতে চাই। সিপিবি দল হিসাবে কোনভাবেই আর তার ‘বিপ্লবী’ ইমেজটাতে নাই, বরং হাস্যকর একটা ব্যাপারই হয়া গেছে এখন। এখন সিপিবি কইরা যদি কেউ মহিলা-কর্মীদের কাছে ‘বিপ্লবী’ হইতে চান, সেইটা তো হইতে পারবেন না! কিন্তু এইটা সিপিবি’র নেতারা মাইনা নিতে রাজি আছেন বইলা মনেহয় না। উনারা তো নিজেদের কাছে এখনো ‘বিপ্লবী’! যেমন ধরেন, ইন্ডিয়াতে ২/৩ বছর আগে একজন ‘সাধু’র (রাম-রহিম?) যে জেল হইলো রেইপের মামলায়, সেইখানে যেই নারী জবানবন্দি দিছিলেন আদালতে, তিনি বলতেছিলেন, অই সাধু রেইপ করার আগে বলতেছিলেন, সে হইতেছে কৃষ্ণ, তার তো অনেক গোপী থাকবেই!… মানে, অই নারী যদি নিজেরে ‘রাধা’ বা ‘গোপী’ ভাবতে রাজি থাকতেন, রেইপ হইতে পারতো না সেইটা, সাবমিশন হইতো; কিন্তু উনি সেই ‘কৃষ্ণ’ ইমেজটাতে সাবস্ক্রাইব করেন নাই। মানে, যিনি ‘পীর’ বা ‘বিপ্লবী’, তিনি যে নিয়ম বা আইন মানতে চান না – তা-ই না, নিয়ম বা আইন তো উনার ব্যাপারে খাটে না! এইটা খালি উনি বিশ্বাস করেন না, উনার এই বিশ্বাসে বা ইমেজে যখন অন্যরা সাবস্ক্রাইব করেন, ব্যাপারটা ক্রাইম পর্যন্ত যাইতে পারে না! আর এইরকম একটা পারস্পরিক ‘বিশ্বাস’ বা ইমেজে সাবস্ক্রাইব করার ভিতর দিয়া রিলেশনটা ফাংশন করতে পারে। মানে, রাম-রহিমের (অই ডাচ আর্টিস্টের মতন) অবাক হওয়ার জায়গাটা হইতেছে মেয়েটা যদি ‘সেবিকা’ হইতে রাজি না থাকতো, শে আসলো কেন! (লিনু যদি রাইটার না হইতো, তাইলে আর্টিস্ট’টা তো তারে এপ্রোচ করতো না, যেইরকম নিনো’র বাপও লিনু’রে করছিলো, শে লেখালেখি করে বইলাই…) মানে, কেউ যদি ‘বিপ্লবী’ আচরণে (ইমেজে) ‘বিশ্বাস’ না রাখে তাইলে শে কি পার্টির মেম্বার হইতে পারবে আসলে? (রিয়েল কোশ্চেনই এইটা, বিস্ময়চিহ্ন টাইপ না আর কি 🙁 ) মানে, জলি তালুকদার বলতেছেন বইলা এইটাই পয়লা ঘটনা না; এইরকম ঘটনা অন্য পার্টিগুলাতে, অফিসগুলাতে ঘটে, কিন্তু নেতাদের ‘সম্মানের কারণে’ হোক, ‘পার্টির ইমেজের কারণে’ হোক, ‘ভালোবাসা বা বিপ্লবের কারণে’ হোক কখনোই খুব একটা বলা হয় না; এইটা তখনই বলাবলির জায়গাটাতে আসে যখন এই ইমেজের জায়গাটা আর কাজ করে না।

মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, এইখানে একটা সত্যি’রে অস্বীকার করা হইতেছে! বরং একটা ‘সত্যি’ যা ইমেজ হিসাবে আমাদের সামনে ছিল, এখন ভাইঙ্গা পড়তেছে। একটা গ্রুপ বিশ্বাস করতেছে ইমেজটাতে, আর আরেকটা গ্রুপ বুঝতেছে, এইটা ভুয়া। তার মানে এই না যে, এইখানে কোন ক্রাইম হইতেছে না, প্রতারণা হইতেছে না; কিন্তু এইটারে যদি আমরা অ্যাপিয়েরেন্স প্যাটার্ন দিয়া, ইমেজের জায়গা থিকা দেখতে না পারি, এর টোটালিটি’টারে মিস কইরা যাইতে পারি। (এতো কথা বলার পরে মনে হইলো বলি,) এই আর কি… 🙂

Leave a Reply