ঈদ-ভ্যাকেশন, ২০১৪।

‪‎সকলবকুলফুল

মানুষ কতো কিছু জানে, বুঝে, বলে, করে। আমি ঘুমাই। এইটাও একটা কাজ। দিনগুলা পার হয়; দিনগুলা জানে, বুঝে, বলে, করে এবং ঘুমায়। আমি জাইগা থাকতে থাকতে ঘুমের কথা ভাবি। আমি ঘুম থেকে জাইগা ওঠে দেখি, সকলবকুলফুল ঘুম ভেঙ্গে পড়ে আছে, সিঁড়িতে।

 

বাসস্ট্যান্ডে

একটা ঈদের মৌসুম যাইতেছে অথচ বাসস্টান্ডে ভীড় নাই, রাস্তায় জ্যাম নাই; বাসের কন্ডাক্টারের মনে হইলো ব্যাপক মন খারাপ। উদাস কিছুটা, নরমাল জার্নির মতোন। ভীড়-বাট্টা নাই, ট্রুলি উনাদের ঈদের আনন্দই নাই কোন!

 

বাদশা পরিবহন

বি. আর. টি. সি.’র এসি বাস আসতে দেরি হইতেছিল; বাদশা পরিবহনেই ওইঠা পড়লাম । মোবাইলে আপনা দিল তো আওয়ারা’র ফিমেইল ভারশনটা শুনতেছিলাম। দুইজনের সিটে তিনজন বসতে হইছে ; বইসা থাকা একজন মহিলা দাঁড়াইয়া থাকা একজন মহিলার সাথে গারমেন্টসে উনাদের সমস্যা নিয়া কথা বলতেছেন। টঙ্গি এলাকায় থাকেন দুইজন। একজনের জামাই আছে লগে, আরেকজন ফোনে জামাইরে কইলেন তোমার লাইগাই ত দেরি হইলো। উনি ছেলেরে নিয়া যাইতেছেন, জামাই ঈদের পরে ছুটি নিবে এইকথাও কইলেন। ইফতারির আগেই আমরা ভৈরব পৌঁছাইয়া যাইতে পারবো মনেহয়।

 

 

লুঙ্গি পড়া চাচাতো-ভাইয়ের ফ্রেন্ড

টেম্পোতে ওঠার আগে চাচাতো ভাইয়ের ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছিল শে। ঘাড়ে পাউডার মাইখাও ঘামতেছিল। লুঙ্গি পইড়া চইলা আসাতে সেও যাই যাই করতেছিল। কলেজ কি আজকে এতো দেরি কইরা ছুটি দিলো? না, না আমি ত আরেকটা কাজে আসছিলাম! এইটুক কথার পরে মেয়েটা টেম্পুতে ওইঠা যায়। ওর হাসি হাসি মুখ শে আর লুকাইয়াই রাখতে পারে না। ‘অতো হাসিস না লো ছেড়ি,’ পাশে বইসা থাকা পাশের বাড়ির খালা কয়, মুখ টিইপা হাসতে হাসতে।

 

বিকাল আসছে ধীরে

বিকাল আসছে ধীরে, মেঘনার পাড়ে। বৃষ্টি আইসা ছুঁইলো তারে। বেড়ার হোটেলে, চায়ের কাপে সেও মিলতে চায়। মিলন হবে কতোদিনে! পুনম ধীলন কানতেছে; তেরে মেহেরবানিয়া‘তে। কুত্তাটা ভিজতেছে বাইরে। ইয়াং কবির মতো সাহসে। মারা-যাওয়া নায়কের কবরটাও নিশ্চয় আশেপাশেই আছে অথবা নতুন ব্রীজের প্ল্যানে অ্যাকোমোডেড করা যায় নাই আর, বাদ পইড়া গেছে।

 

তেরে মেহেরবানিয়া সিনেমার পোস্টার

তেরে মেহেরবানিয়া সিনেমার পোস্টার

 

জ্ঞান

‘জ্ঞান অতি উচ্চ, আদরের জিনিস, তাহার জন্য চীন পর্যন্ত যাইও।’ অবশ্য এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এখন এতোটাই ইজি হইছে যে, কোন একটা কুয়া বানাইতে পারলেই নাকি হয়, ইভেন বাথরুমের বালতিতে একটুখানি জল রাইখা দিলেও, মুরাকামির গল্প থিকা ডাইরেক্ট আইসা হাজির হন ব্যাঙ, যিনি টোকিও শহররে বাঁচাইছিলেন। প্রাকটিক্যাল রুমে নিয়া আটকাইবার লাইগা লগে সেফটিপিন রাখতে পারলে আরো ভালো হয়!

 

দ্য মামি রিটার্নস

দ্য মামি রিটার্নস সিনেমায়, মমিগুলা যখন জাইগা ওঠে, তখন ওরা ত নিজেদেরকে জীবিতই ভাবে, তাই না? এইখানে, এইরকম জীবিত থাকার মানে হইলো, মরা-কবিতাগুলা বারবার লিইখা যাইতে পারার ঘটনা বা লিখতে পারার ঘটনাগুলারে মনে করতে পারা। এতো এতো দিন পার হয়া গেলো তারপরও এরা ফ্রেশ; দেখো, এমনকি ফরমালিনও দেয়া হয় নাই কোনো (এই ‘কোনো’ মিনিংলেস আবেগের এক্সপোজার, অক্সিলিয়ারি হইলেও, জরুরি); জৈবসারেই উৎপাদিত। যার ফলে, অর্গানিক ষ্টোরগুলাতেই পাওয়া যায়। বেচা কম, দাম বেশি। যদিও পাবলিক এখন এইসবের ভ্যালু টের পাওয়া শুরু করছে। এইসবকিছুর পরে হইলো. পুরষ্কার-টুরষ্কারের কথা; দুই-একটা যদি পাওয়াই যায়, ওইটা ত ফাও! এই ঈর্ষাতেও বন্দী করা গেলো নাহয় কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের!

 

ট্রানজিসনাল সময়

কোথাও এসে বসে থাকি। বসে থাকার মতো সময় আছে কোথাও। শব্দ-জর্জরিত; ছন্দ-বেষ্টিত। একটা বিকাল। যাচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। এইখানে বইসা থাকা যায়। গোধূলি সন্ধ্যায়। ফুটবল খেলার পরে নদীতে পা ধুইতে যাচ্ছে যারা তাদের দিকে তাকায়ে থাকতে থাকতে পার করা যায় এই ট্রানজিসনাল সময়।

 

মহাকালের দিকে

মহাকালের দিকে তাকায়ে তাকায়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যাথা হয়া গেলো; এখন ডাক্তার দেখাইতে হইবো। চোখের ডাক্তার, কানের ডাক্তার, বুকের ডাক্তার; ডাক্তার-রাই যদি এই জীবনটা নিয়া বাঁইচা থাকতো। আলাদা আলাদাভাবে। চোখের জীবন, কানের জীবন, হাঁটু-ব্যাথা নিয়া পা’দের জীবন। যেমন, ইন্টেলেকচুয়াল এবং বিপ্লবীর জীবন, মনোটনি আইসা গেলে পরে কবি’র জীবন। এইসব জীবন নিয়া আরো কিছুদিন কি বাঁইচা থাকা যাবে না, আর?

 

জুলাই ২৭-৩১, ২০১৪।

 

Leave a Reply