কবিতা: মার্চ, ২০২০

নতুন বসন্ত

কি সুন্দর বিকাল!

ঘুম থিকা উইঠা
গা-ঝাড়া দিয়া
নতুন একটা হাড়ের খোঁজে
বাঘের মতন
হাঁইটা যাইতেছে

একটা রাস্তার কুকুর…

 

নিউ বসন্ত

প্রেমে-পড়া পাখিটা
জানালার গ্রিলে বইসা
টবের ফুল-গাছটারে বলতেছে,
“তুমি একটু আমার প্রেমে তো পড়তে পারতা!”

এই কথা শুইনা,
ফুল-গাছটা শরীর দোলায়া, বসন্ত-বাতাসে
হাইসা উঠলো তখন;
আর পাখি’টা থতমত, উইড়া গেল

সকালের সুন্দর রইদের ভিতর।

 

তুমি, আমি

মাগি-পাড়াগুলা আমার, আর পাহাড়-পোকরিতি তোমার
লাইফের ফাইনার ফিলিংগুলা তোমার আর শরীরের ঘাম-ময়লাগুলা আমার;
টবের সুন্দর ফুল, রাস্তার সুন্দর গাছ, রইদ আর বাতাস – অরাও তোমার;
অহেতুক বিল্ডিংগুলা আমার, থতমত ইট-ক্রংকিটগুলা – আমার;
ভাঙ্গা রাস্তাগুলা আর শীতের কনকনা বাতাস,
চৈত্রমাসের আজাইরা ঝড়, রিকশার পলিথিন,
সিএনজি’র হর্ণ – আমার;
কাম অ্যান্ড কোয়াইট, পাখির ডাক
এক শব্দ দিয়া আদর কইরা নাম ধইরা ডাকার প্রেম,
সংসার-সংসার খেলা, পারসোনাল টুথব্রাশ,
বিয়ারের ক্যান – তোমার;

এই দুনিয়ার পুরাটা, অই চান্দ, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রেম – তোমার;
চুদার পরে মুড়ি খাওয়াও তোমারই,

মোদী আর শেখ হাসিনা,
আর তাদের অসহায় জনগণও তুমি
বিপ্লব, রেভিউলেশন; টিয়ারশেল ছুঁইড়া মারা পুলিশ
আর তার সামনে দাঁড়ায়া থাকা সাহসী মানুশ – দুইটাই তুমি;
ছাত্রলীগের ম্যাসকুলিন পোলা’রা আর ছাত্র ফেডারেশনের ফেমিনিস্ট মাইয়ারাও – তুমি;
তুমি গোলাম ফারুক অভি, তুমি মোশরেফা মিশু;
তুমি কফিল আহমেদের পোতিবাদি গান

লিরিকস আর সুর, পুরা মিউজিক – কাওয়ালি, রক, রেপ সং, ফোক, গজল…
সবকিছু, সবকিছু
তোমার

আমি শুয়োরের গোৎ গোৎ
আমি গরুর মুত, ভেড়ার লোম
আমি ছাগলের চুপচাপ চোখ
আমি বিসিএস ক্যাডার হইতে চাওয়া অ্যাভারেজ স্টুডেন্ট
কর্পোরেট স্লেভ, মদ খাওয়ার পরে উগারায়া দেয়া বমি;
তুমি জাস্ট-ফ্রেন্ড, সেক্সুয়াল ফ্রিডম
আমি বদ্রিয়াঁ’র সিডাকশন না-বুঝতে পারা ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট,
আমি কনটেক্সট দিয়া কনজিউজম হয়া যাওয়া মানুশ
আমি ক্যাপিটালিজমের সাপ

আমি অ্যাভারেজ ফিকশন,
আমি পাপ।

তুমি যিশু, তুমি লিলিথ,
তুমি অহল্যা, তাপসী রাবেয়া
তুমি পার্বতী ও শিব,
আর মুহাম্মদের স্পিরিটও

আমি
একটা
না হইতে পারা শয়তান

এই দুনিয়ার,
আর যত যত দুনিয়া আছে
ভিজিবল আর ইনভিজিবল
সবকিছুর ভিলেন

একটা নন-এগজিসটেন্স,
একটা থুতু, মুখ থিকা বাইর না হইতে পারা’র

যত কিছুই হোক, আর
যা কিছুই থাক

তুমি একটা পাহাড়ের নিরবতা, একটা সত্যিকারের পেরেম

আমি একটা সন্ধ্যাবেলায় মাগি-পাাড়ার ক্যাওস,
একটা ইল্যুশন, তোমার থাকার বা
না-থাকার

 

আবার, আবার অম্বিকাপুর

আরেকটু দূরে গিয়া
দুপুরের রইদ
বইসা আছে
আম গাছের নিচে,
বাতাসে গুঁড়া গুঁড়া
কান্দার মতন ক্রোধ
উগরায়া দিতেছে
একটু পরে পরে

ঝিমাইতেছে, রেলস্টেশন
গাল-ফোলা মুদির দোকানগুলা
আবার, আবার অম্বিকাপুরে

কবির ঘরের সাইডে
রাস্তাটা চলে যাইতে থাকতেছে
সেলাইয়ের ফোঁড়ের মতন
ধীরে…

 

মেটাফর

মেটাফরগুলা ঘুরে,
ঘুইরা ঘুইরা তারা নিয়া নিতে চায়
আমাদেরকে তার কোলে

মেটাফরগুলা ওৎ পাইতা থাকে
কথার ভিতরে, উচ্চারণে
টোনে;
খপ কইরা ধইরা ফেলে
পুরান পুরান সব মিনিংগুলা
আটকায় নতুন জালে

আমাদের বাঁইচা থাকা,
ছোট ছোট মাছের মতন
হাঁফফাঁস করে, চিক চিক করে রইদে;
মেটাফরের মা কয় মেটাফরের পোলা’রে
“দেখ, মাছগুলা কি বেকুব! আমাদের জালে পইড়া
ভাবে, তারা আমরারে ধরতেছে!”

 

সন্ধ্যা

সূর্য ডুবে যাইতেছে।
তোমার মুখে একটু একটু রইদ, ছায়া আর অন্ধকার;
কি যে সুন্দর একটা মায়া!

‘তোমার মায়ার পাশে আমারেও রাখো!’
বলতেছে সূর্যটা, বলতেছে মেঘগুলা,
নিইভা যাওয়া রাস্তাটার ধূলা আর ময়লা’রা

তুমি বললা, “অথচ, দেখো, কিছুই তো থাকে না!”
আর একটা না-থাকার মতন দুলতেছিলো তখন,
উল্টা-পাল্টা বাতাস নিয়া এই একটা সন্ধ্যাবেলা…

 

পুরান দিনের গান

একটা স্টিমুলেটর আসে, আরেকটা স্টিমুলেটর’রে কয়,
“আমরা যে রিয়েল, তুমি কি জানো?”
স্টিমুলেটরটা তখন সুন্দর কইরা হাসে, অরা
পাখিদের মতন উড়ে, স্টিমুলেশনের একটা আকাশে

স্ক্রীণ থিকা স্ক্রীণে উইড়া যায় অরা,
আরো আরো স্টিমুলেটর’রা দেখে,
আরো আরো কাউয়া, চড়ুই, কোকিল, হালিক, মাছরাঙা…

“কি রকম সুন্দর রিয়েল অরা!”
হাইপার-রিয়েলরাও খুশি হয়, কান্দে অদের লাইগা
আর নিয়া নেয় অদেরকে নিজেদের ক্ল্যানে;

অমর প্রেম শেষ হইলে পরে,
স্টিমুলেশনগুলা নিজেরাই নিজেদেরকে কয়,
“কি রকম সুন্দর রিয়েল ছিলাম আমরা, তাই না?”

প্লাস্টিকের বড় একটা চাঁন উঠে আকাশে,
বাতাস আসতে থাকে বোহেমিয়ান রেপসডি’র

স্টিমুলেশনগুলা ঝিমাইতে ঝিমাইতে শেষ হয়া যাইতেছে

একটা ইলেকট্রিকের জোনাক-পোকা কইতে থাকে তখন, আমারে,
“দেখো, আমার পুটকির বাল্ব আমি জ্বালায়াই যাইতেছি তবু…”

 

এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম

হাতি’টা চলে আসছে ঘরের ভিতরে, ঘুরতেছে

পর্দাগুলা কেমনে যে সইরা যাবে! ভাবতেছি
আমরা

অন্ধকার একটা ঘরের ভিতর
একটা হাতি ঢুকে গেছে

হাতি’টা হাঁটতেছে, আওয়াজ
শুনতেছি আমরা

বাইরে, মেশিনগানের মতন রইদ

আমাদের ঘরে আমরা যাইতে পারতেছি না,
গেলেই মনেহয়, একটা হাতি
হাঁটতেছে আমাদের ঘরের ভিতরে

 

সন্ধ্যা হওয়ার পর

বাতাসে, উইড়া আসতেছে ধূলা-বালি

হলুদ দুনিয়াটা গ্রে হয়া আসতেছে

নিরব রাস্তাগুলা আরো নিরব,
যেন অনেক দিন আগের কোন মেমোরি
বেড়াইতে আসছে আমাদের কাছে,
আর বলতে পারতেছে না কোন কিছুই…

একটা অন্ধকার, ফুটবলের মতন
আগায়া আসতে আসতে ঢেকে দিতেছে
বারান্দাটা তোমার;

একটা শ্বাসের শব্দের ভিতর দুলতেছে,
আমাদের এই একটা ঘর

 

মাছরাঙা, দুপুরবেলা

একটা ধারণার ভিতর থিকা
একটা মাছরাঙা গোত্তা খায়া পড়লো
লেকের পানিতে, দুপুরবেলায়

মাছ তো সেও পাইলো না!

দুপুর’টা ঝিমাইতেছে, গাছের পাতায়
একটা ফড়িং উড়তে উড়তে বাতাসে
ব্যালেন্স রাখতে পারতেছে না আর

রাস্তা দিয়া একটু পরে পরে একটা দৃশ্যের মতন
রিকশা চলে যাইতেছে

‘পর্দাটা টাইনা দিবো আমরা,
একটা অন্ধকার আইসা নিয়া যাবে
আমাদের সব ধারণাগুলা আর মাথা-ব্যথাও
সাইরা যাবে তোমার’ – তুমি বললা।

মাছরাঙা’টা এর পরেরবার পায়া যাবে,
একটা মাছ; আমি ভাবলাম, আমার ধারণার ভিতর,
বললাম না তোমারেও কিছু আর

ঘুমের মতন কইরা একটা অন্ধকার আসবে
আর সাইরা যাবে মাথা-ব্যথা’টা আমার

মাছরাঙা’টা তাকায়া তাকায়া দেখতেছে
পানির ভিতরে ঘুরতেছে, কতো যে মাছ!

 

রইদ আর গাছের পাতা

একটা জীবন নিয়া বইসা আছি
আরেকটা জীবনের কাছে;

“দেখো, মরবো তো আমরা একটু পরেই…”
রইদ’টা বলতেছে, গাছের পাতাগুলারে

গাছের পাতাগুলা যেন শুনতেছেই না কোন কথা
একটু পরে পরে বাতাসে দুলতেছে, হাসতেছে

“এই একটা জীবন নিয়া আমরা বইসা আছি,
আরো অনেক জীবনের সাথে”

উড়ে যাইতেছে কতো যে জীবন, জীবাণু, ধূলা-বালি-মায়ার এই দুনিয়াতে…

 

Leave a Reply