কবিতা: সেপ্টেম্বর, ২০২১

প্রেম
(বুক অফ থটস)

যে কোন প্রেম হইতেছে একটা নতুন জন্মের মতন ঘটনা। কিন্তু যে মনে করে যে, শে তার প্রেম পাইয়া গেছে আর যে মনে করে শে তার প্রেম কোনদিনই পাবে না, তারা দুই ধরণের প্রাণী। প্রেমের পারপাস এইটা না যে, এই জিনিস আপনারে সুখী করবে, ভালো-মানুশ বানাবে বা হায়ার-গ্রাউন্ডে নিয়া যাবে। যে কোন ফিলিংসের তীব্রতাই এই কাজ করতে পারে। এইটা আপনারে অস্থির কইরা ফেলবে না বা স্থিরতায় নিয়া আসবে না। এই জিনিসগুলা হইতেছে প্রেমের লক্ষণ। এইরকম অনেক লক্ষণ এবং এক্সপ্রেশন আছে, থাকে। প্রেমের অনেক প্রমাণ আছে, কিন্তু প্রেম হইতেছে যা আছে কিন্তু নাই এবং যা নাই কিন্তু আছে, একসাথে দুইটাই। যা আছে বইলা হারায়া যায় এবং হারায়া যায় বইলা পাওয়া যায়। কিন্তু এইটা কোন পাজল না। যে জানে শে জানে, যে জানে না শে জানে না। কেউ পাথর’রে দেবতা মানে, কেউ কাবা’র দিকে সিজদা করে।

বৃষ্টি

মাছগুলা উড়তেছে
পাখিগুলা সাঁতরাইতেছে

শব্দগুলা বলতেছে আর
মিনিংগুলা পিছলায়া যাইতেছে

বৃষ্টিতে নদীর পানি ঝাপসা হয়া আসতেছে

তোমার বুকের ভিতরের ছোট্ট পাখি’টা

তুমি মারা যাইতেছো…
তোমার বুকের ভিতরের ছোট্ট পাখি’টা
আমার নাম ধইরা ডাকতেছে

তুমি বাঁইচা উঠলা,
তোমার বুকের ভিতরের ছোট্ট পাখি’টা
ভুইলা গেলো আমার নাম

হাজার হাজার কবিতা

সত্যি সত্যি
হাজার হাজার
কবিতা আমি
লিখতেছি

কিন্তু কেন?
অরা কি
আমারে বাঁচায়া রাখবে?
অরা কি
আমারে ফেইম দিবে?
অনেক অনেক প্রেম আর ভালোবাসা?

কবিতাগুলা হাসে,
যেন একটা বাচ্চারে
আদর করে দিতেছে
তার আম্মা

হাতি আর ঘোড়াগুলি

হাতিগুলা সব যাইতেছে কই?
ঘোড়াগুলা সব যাইতেছে কই?
শরত মেঘের দিনে, ডাউন ইন দ্য মেমোরি লেইন…

ভাবমূর্তি

পাথর দিয়া মূর্তিটা বানাইলো অরা,
মূর্তিটা কইলো, আমারে কবে ভাঙবা তোমরা?

জীবনের ঘটনা

কানাদেরকে দেখাইলাম আমি আমার শরীর,
কালা (বধির)দের কাছে কইলাম সব কথা

অরা তো খুবই ভালো-মানুশ এমনিতে,
কইলো আমারে, লাইফ তো এইরকম মিনিংলেস জিনিস,
কি আর করবা!

পিংক ফ্লয়েড

প্রেম হইতেছে
এমন একটা ফিশ বৌল
যেইখানে দুইটা মাছ
একজন আরেকজনের
উল্টাদিকে সাঁতরাইতেছে
এই ভাইবা যে
কোনদিন
মিইলা যাবে
তারা দুইজন

কিন্তু
এইটা যে
আল্টিমেট ট্রাজেডি
সেইটা
না-জাইনাই

বাবা-সং

পার্টিগার্ল ইজ ড্যান্সিং,
পার্টিগার্ল ইজ সিঙ্গিং,
ওহ, লাইফ ইজ বিউটিফুল!

বিউটিফুল বিউটিফুল হইতে হইতে
কই যে যাই – বুঝতেই পারতেছে না কেউ!
ওহ, এই মিউজিক যেন কোনদিন থাইমা না যায়!
ওহ, এই নাচতে থাকার মোমেন্ট যেন কোনদিন না ফুরায়!

পার্টি পার্টি পার্টি সং
ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স মাদারচোদ
পোলাটা চিল্লাইতেছে, পোলাটা টাল
অন্য পোলাগুলা হাসতেছে,
শালা, এখনো বাচ্চা পোলাপাইন!

লাইফ ইজ বিউটিফুল,
ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স
তা নাইলে মারা যাবো আমরা সবাই!

পুরান বন্ধুরা আমার কবিতা পড়তেছিল

ছিলো
অনেকেই
অনেক হাওয়া-
বাতাস
অন্তমিলের দোকান
ধীরে ধীরে
ঝাপসা
হয়া উঠলো

কবিতা,
নিরব একটা কুত্তার মতো
আমার পায়ের কাছে
আইসা দাঁড়াইলো,
বললো, বাড়ি চলো!

অবনী, বাড়ি আছো?
পুরান
বন্ধুরা আমার
কবিতা পড়তেছিল

আমি ল্যাংড়া পা নিয়া
হাঁটতেছিলাম

আমার হাঁটার শব্দে
অদের
ডির্স্টাব
হইতেছিল

বিকাল

ছায়াগুলা
লম্বা হয়া
উঠতে থাকলে
টের
পাওয়া যায়,
এখন
বিকাল।

কাম ও কাজ

উই ইট, তারপরে উই প্রে
আর তারপরে উই লাভ

আমরা খাই, তারপরে আমাদের
মনের কথা মনে হয়, আর তারপরে
আমরা শরীরের কাছে ফিরা যাই

আমরা বাঁইচা থাকার সময়টাতে
যে কোনভাবে বাঁইচাই থাকতে চাই

কি করুণ এরা!
বইলা ধীরে ধীরে মেঘের ভিতর ডুইবা যায় চাঁদ

মেটাফোর ৮

একটা ঢেউ
অনেক দূর
থিকা
ঘুরতে ঘুরতে
চলে আসছে
কিনারার কাছে

জীবন,
এইরকম
মরণের কাছাকাছি
সবসময়

একেকটা ঢেউ
তার পাড়ের লগে
মিশতেছে


রাত

একটা মরা
কড়ইগাছের
কালা একটা ডাল
ভাইঙ্গা পড়লো
অন্ধকারেই
আবার

“ফ্রম ডার্কনেস
ইনটু দ্য ডার্কনেস”
মায়া এঞ্জেলো’র

একটা তালগাছ

সারাক্ষণ জিততে যাওয়ার ইচ্ছাটা
তাঁর মধ্যে এমনভাবে রইয়া গেলো যে,
শে আর জিততেই পারলো না,
কইলো, সব দোষ আমার!

একটু দূরে, একটা তালগাছ
সবসময় দাঁড়ায়া রইলো তাঁর,
হেমন্তের গান শুনাইলো, “তবুও তুমি আমার…”

তাঁর জিততে চাওয়ার ভিতরেই বন্দী হয়া ছিল শে,
ঝড়ে, বৃষ্টিতে মাথা নাড়াইলো আর কইলো,
“আমিই তালগাছ!”

যে কিনা মেঘ, যে কিনা বৃষ্টি, যে কিনা পানি
যে কিনা জলোচ্ছ্বাস,
একটা তালগাছই হয়া রইলো শে,
যেকোন একটা ঠাডা পড়ার অপেক্ষায়, তার মাথায়

নাশতা

ভালো কইরা
তেল দিয়া
কড়া ভাজা
একটা পরোটা
খাইতে খাইতে
একটা লোক
ভাবতেছে,
পেটের খিদা
আর কট্টুক!
সব তো আসলে
চোখের খিদা,
মনের খিদা-ই

এই বইয়ের শেষ কবিতা

কোন একটাকিছু
মরে যাইতেছে
আমার মনের ভিতরে,
আমি টের পাই

এমন না যে
আমি তারে
বাঁচায়া
রাখতে পারি, বা
আমি তারে
মাইরা ফেলতেছি

এইটা ছিল
আমার ভিতরে,
আর অনেকদিন ধইরাই
বলতেছিল, যাইগা, যাইগা

আর ছিল, তারপরও

কিন্তু এখন
চুপ হয়া আসতেছে

পাতাগুলা যেমন
গাছটারে ছাইড়া যাবে
কয়দিন পরে, হেমন্তে

অথবা
গাছটাই যেমন আরো
চুপ হয়া যাবে
শীতের বাতাসে

বসন্তে,
আবার
জাইগা উঠবে কিনা
আমি তা জানি না

একটাকিছু
মরে যাইতেছে
আমার মনের ভিতরে,
আমি তার
হাত
ধরে আছি

একটা
আত্মা
ভেসে যাইতেছে
যেন
তার
শরীর ছাইড়া

ভাষা হইতেছে রামপুরা-বাড্ডা রোডের বাসগুলার মতো

আমাদের কথা,
সন্ধ্যাবেলায়
রামপুরা-বাড্ডা রোডে
বাসগুলার মতো,
তেড়াবেঁকা
একটু,
মদ না খাইয়াই টাল,
‘হয় যদি বদনাম…’ এর
রাজ্জাক যেন

কোন লোক সবচে বেশি সাহসী?
(বুক অফ থটস)

যেই লোক সবসময় জিততে পারে, সেই লোক সবচে সাহসী না। এমনকি যেই লোক হাইরা গিয়া জিইতা যাইতে পারে, সেই লোকও সাহসী না। বরং সেই লোক হইতেছে সবচে বেশি সাহসী, যে জানে সে হাইরা যাইতে পারে, হাইরা যাওয়ার পরে তারে মাইনা নিতে পারে; আর বলতে পারে যে, ঠিকাছে, আমি পারি নাই। না-পারাটারে গ্লোরিফাই না কইরা মাইনা নিতে পারার মতো সাহস খুব কম লোকেরই আছে।

এমনকি তারা নিজেরাও নিজেদেরকে সাহসী বইলা দাবি করার সাহস করতে পারার কথা না। আমরাও ফেইলওর বইলাই চিনি উনাদেরকে। কিন্তু হাইরা যাওয়া আর তারে গ্লানির কোন জিনিস মনে না করা – এইটা সবচে কঠিন যুদ্ধটা। অনেকে এই যুদ্ধটা করতেই রাজি না।

জিততে পারার প্রাইড অনেকে ইগনোর করতে পারেন, কিন্তু হাইরা যাওয়ার গ্লানি না নিতে পারাটা তার চাইতেও কঠিন। নিজের ভুলরে ভুল ভাবতে পারে, কোন প্রেজুডিস ছাড়া মাইনা নিতে পারে – এইরকম সাহসী লোক খুববেশি আপনি দেখতে পাইবেন না। এইরকম সাহসী লোক আসলেই কম। কিন্তু এইটারে সাহসের ঘটনা বইলা ভাবতে পারা লোকের সংখ্যা মেবি তার চাইতেও কম।

আমি জানি

আমি জানি!
এই কারণে
আমি
কিছু জানতে
পারতেছি
না
আর!

‘আমি জানি’র
জঙ্গলে
পড়ে থাকতেছে
তোমার
না-জানার
এক জোড়া
জুতা

টক্সিক রিলেশন

মুখোশটা কানতেছে,
বলতেছে, আমি তো মুখটারেই ভালোবাসছিলাম

মুখটা কইলো, তোর সাথে আমার কি রিলেশন!
আমি তো অরিজিনাল!

আপন-পর

একটা গাছ বলতেছে তার ছায়া’রে
তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে!
ছায়া’টা তার নিভে যাইতেছে, সন্ধ্যার অন্ধকারে…

বিকাল

বিকাল
ভালো

তখন
গাছের ছায়া
গাছটার
চাইতে
বড়

সেলফ-এসেসমেন্ট

আমি তোমার মতো কইরা
আমারে দেখতে গিয়া দেখি
আমারে তো একটু বাটপারের মতোই দেখায়
যে নিজেরে খুবএকটা বাটপার বইলা
মনে করে না আর কি

আফটার বুদ্ধ

অবসেসড হইও না,
যদি সেইটা হয়
মাঘী-পূর্ণিমার চাঁদ, তাইলেও

আশ্বিনের সন্ধ্যায়

আশ্বিনের সন্ধ্যায়
ঠান্ডা বাতাসের ভিতর
টের পাওয়া যায়
হেমন্ত আসতেছে,
পৃথিবীর কোন খোলা মাঠে
কুয়াশার মতো জমতেছে শিশির

খুদ খেয়ে ভরা পেটে
ইঁদুরের ছোটাছুটি
থেমে আসতেছে
আর
তাদের গর্তের ভিতরে
উঁকি দিতেছে
টর্চের আলোর মতো চাঁদ

অরা জানে
এই আলো অন্ধকারেরই মতো
হাত বাড়াইলেই
ছুঁইতে পারা যাবে না

এইরকম
জাইনা যাওয়ার মতো

আশ্বিনের সন্ধ্যায়
হেমন্ত আসার আগেই
নেমে আসতেছে
আমাদের মইরা যাওয়া হৃদয়ে
দুনিয়ার সব দুঃখ আর বিষাদ

আমার কথাগুলা

যেই কথাগুলা আমি বলছি,
সেই কথাগুলা আমি বলতে চাই নাই

যেই কথাগুলা আমি বলি নাই,
সেই কথাগুলা আমি আর কোনদিনই বলতে পারবো না

সময়গুলা ঘুইরা ঘুইরা ফিরা আসে
কিন্তু কথাগুলা মারা যায়

যেই কথাগুলা আমরা বলি না
সেই কথাগুলা নরোম, শান্ত বাতাসের মতন
আমাদের কবরের ঘাসের উপর দিয়া যাইতে যাইতে বলে,
‘ঘুমাও, তোমার অশান্ত হৃদয়, মারা গেছে অনেকদিন আগে
তার জানাজা কোনদিনই আর পড়া হবে না’

যেই কথাগুলা আমি তোমারে বলি নাই
সেই কথাগুলা কোনদিনই হারায়া যাবে না

কপি-পেস্ট

যেন
পাতা’টা
বাতাসের প্রেমে
পইড়া
পাখি হয়া
উড়ে যাইতেছে
না

যেন
গাছ’টা
বাঁইচা থাকার জন্য
তারে
ছেড়ে দিতেছে
না

যেন
কোন নিয়তি
নাই
আমরাই
নিয়তি হয়া
ভেসে যাইতেছি
হেমন্তের

কবি

কবি অই লোকটাই না, যার লাভার তারে ছাইড়া গেছে
কবি অই লোকটাই না, যার লাভার তারে অনেক্কানেক ভালোবাসে

কবি অই লোকটা না, যার পাছায় অনেক কারেন্ট আছে
কবি অই লোকটা না, যার পাছা শুকায়া গেছে

কবি হইতেছে অই লোক, যার মনে অকারণেই অনেক কান্দা আসে
কবি হইতেছে অই লোক, যার মনে এতো আনন্দ যে বাতাসও হাসে

কবি হইতেছে অই লোক, যার কোন চিন্তা নাই মনে
কবি হইতেছে অই লোক, যার সবকিছুই চিন্তা করা লাগে

কবি হইতেছে অই মেয়েটা যে মনে মনে কবি’রে ঘৃণা করে

অধঃপতন

এই একটা জীবন
কতগুলা অধঃপতনের হাত থিকা যে
আমারে বাঁচায়া রাখবে

হুদাই প্যাক প্যাক করতে থাকবে,
বলবে, এই ট্রাপে পইড়ো না,
অই দিকে যাইও না
ধ্বংস হয়া যাবা তুমি!
অপমানের শেষ হবা!

আর আমি অইসব অপশনের ভিতরে
তাউরাইতেই থাকবো,
তাউরাইতেই থাকবো
আরো যে কতোদিন,
আল্লা মালুম!

ভালো ও খারাপ
(বুক অফ থটস)

ভালোর শত্রু কখনোই খারাপ না। ভালোর শত্রু হইতেছে নকল-ভালো। খারপের শত্রুও ভালো না। খারাপের শত্রু হইতেছে নকল-খারাপ। এই কথাটা মনে রাখবেন।

ন্যাশনাল বার্ড

ওয়াচ টাওয়ারের মাথায় বইসা
একটা দোয়েল গান গাইতেছে,
“মন, কেন তুমি সিসি-ক্যামেরা হইলা না?”

ম্যানিকুইন ৩

“হু আর ইউ?”
শে জিগাইলো আমারে।

আমি কইলাম, আমি হইতেছি
মরণ, কিন্তু আমি মোড়ানো
ভালোবাসার পোশাকে
তোমার।

Leave a Reply