কেন আমি কন্সপিরেসি থিওরি’র সার্পোটার না

ব্যাপারটা এইরকম না যে, দুনিয়াতে কোন কন্সপিরেসি বা ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটে না। কিন্তু এইভাবে দেখার যে তরিকা তারে আমি সার্পোট করি না।

মানে, দুনিয়াতে ষড়যন্ত্র হয়, ষড়যন্ত্র কইরা একজন আরেকজনের প্রেমিক/প্রেমিকা ভাগায়া নিয়া যায়, ব্যবসার ডিল, চাকরির প্রমোশন নিয়া নেয়া, একজন আরেকজনরে মার্ডার করে, পলিটিক্যাল দলগুলা ক্ষমতা দখল করে, গর্ভমেন্ট বদলায়। এইগুলা হয়। কিন্তু ব্যাপারটারে যদি খালি কন্সপিরেসির জায়গা থিকা দেখা হয়, তাইলে যা ঘটে অই জায়গাটারে আন্ডারমাইন করা হয় আসলে যে, কন্সপিরেসি কেন করে? কিভাবে পসিবল হয়া উঠে?

কন্সপিরেসি তো ধরা হয় সেইটারে, যেইটা একটা গোপন উদ্দেশ্য থিকা একজন বা কয়েকজন মিইলা করে। তো, এই মিল যে হয়, কেমনে হয়? সেইটা কি কোন আলাদা ঘটনা, হঠাৎ কইরা ঘটে, এমনিতেই? তা তো না! এর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড তো আছে বা থাকে। কন্সপিরেসি থিওরি সেই জায়গাগুলারে আন-ইর্ম্পটেন্ট কইরা তোলে। (বা সেইটারেও আরেকটা কন্সপিরেসিই কইরা তোলে।)

যেমন ধরেন, অনেকেই তো চায়, ভোট-ডাকাতি কইরা ক্ষমতায় আসা এই গর্ভমেন্টের শেষ হোক, মিলিটারি শাসন দিয়া না, মিনিমাম একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের ভিতর দিয়া। এখন এইটার জন্য কয়েকটা পলিটিক্যাল পার্টি যদি মিটিং করে, সেইটা কি কন্সপিরেসি হবে? মানে, পলিটিক্যাল পার্টির মিটিং-টিটিং তো গোপনেই হয়, ইলেকশনের আগে বা পরে অ্যালায়েন্স ক্রিয়েট করার লাইগাও এইরকম মিটিং হয়; কিন্তু এখনকার রিয়ালিটিতে, মিডিয়া-ট্রায়ালের যুগে, বাংলাদেশে কি এইটারে কন্সপিরেসি হিসাবে আইডেন্টিফাই করবে না? করছেও তো মনেহয় গত ইলেকশনের আগে, এইরকম দুয়েকটা মিটিং।… মানে, দেখেন, কন্সপিরেসি করতেছে – এইটা পাওয়ারের জায়গা থিকা এমন একটা পজিশনও যে, পাওয়ার’রে আপনি চ্যালেঞ্জও করতে পারবেন না! করতে গেলে, সেইটা ষড়যন্ত্র!

বা ধরেন, ইন্ডিয়া যে এতো বেনিফিট নিতেছে, হাজার হাজার ইন্ডিয়ান বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া চাকরি করতেছে, কোনরকম ফি ছাড়া ট্রানজিট নিছে – এইগুলাও কোন রকম ‘গোপন’ আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছাড়া হয়া গেছে – এইটা ভাবাটাও তো মুশকিলই। কিন্তু এই কন্সপিরেসিটা কেমনে পসিবল হইতেছে? পসিবল হইতেছে কারণ, গর্ভমেন্ট জানে কোন রিস্ক নাই, মিডিয়া এইগুলা নিয়া কথা বলবে না, পাবলিকের কাছেও কোনভাবে উত্তর দেয়া লাগবে না।… মানে, কন্সপিরেসিটা ‘সফল’ হইতে পারার কিছু গ্রাউন্ড এইখানে আছে। কন্সপিরেসি ভাবলে মনে হবে, কিছু ‘খারাপ’ লোক এই কাজটা করতেছে; অরা ‘ভালো’ লোক হইলে এইটা করতো না! কিন্তু ঘটনাটা তো এইটা না। কন্সপিরেসি করার গ্রাউন্ডটা যতোদিন থাকতেছে, ততদিন এইটা কম-বেশি ঘটতেই থাকার কথা।

তো, আমার কথা হইলো, ঘটনাগুলা সবসময়ই কম-বেশি কানেক্টেড; কন্সপিরেসি থিওরি এই কানেকশনের জায়গাটাতে বা একটা কানেকশন যে আছে – এইটা নিয়াই একসাইটেড থাকে; কিন্তু কন্সপিরেসিগুলা ঘটার যেই হিস্ট্রিক্যাল কন্ডিশনগুলা অ্যাক্টিভ আছে, সেই জায়গাটাতে নজর দিতে পারলে ব্যাপারগুলা আরো বেশি ক্লিয়ার হইতে পারার কথা।

যখন আপনি একটা কন্সপিরেসি থিওরির সাপোর্টার হইবেন, সেই জায়গাতে খেয়াল করার কোন তাগিদ আর থাকে বইলা আমার মনেহয় না। আমার ধারণা, আমাদের হিস্ট্রিক্যাল কন্ডিশনগুলাই নানান ধরণের কন্সপিরেসিগুলারে পসিবল কইরা তোলে। যখন আমরা এই জায়গাগুলারে লোকেট করতে পারি না, তখনই হয়তো ভাবতে পারার দরকার পড়ে যে, আরে এইটা তো একটা কন্সপিরেসি!

 

২.

ও, কন্সপিরেসি থিওরি নিয়া আরেকটা কথা বলা হয় নাই; যে, এইটা কি কাজে লাগে? আপনি যখন ভাবতে পারবেন এইটা একটা ষড়যন্ত্র, তখন নিজেরে ‘অভাগা’ ভাবতে পারবেন বা ‘আমার তো কিছু করার নাই’ – এইরকম জায়গাতে চইলা যাইতে পারবেন, বা নিজেই একটা কন্সপিরেসি শুরু কইরা দিলেন তখন। 🙂 মানে, যখন আপনি ষড়যন্ত্রের ভিতর দিয়া ভাববেন, একজন ব্যক্তি’রে খুব ছোট বা বড় বইলা ভাবতে পারতে হবে; এমনিতেও সব গরুর দর-ও তো এক না কোরবানির বাজারে, মানুশে মানুশেও ডিফরেন্স আছে; কিন্তু সেইটারে বেইজ ধরতে গেলে সমস্যাই, কারণ এইটা হয় ব্যক্তিরে একটা হিস্ট্রিক্যাল পজিশনের বাইরে গিয়া ব্যক্তি হিসাবে আলাদা করে, যেন সে ‘গড’, এতো ব ড়; তা নাইলে যেন একজন মানুশ মানুশ না তেমন, হিস্ট্রির একটা এলিমেন্টই, এইরকম জায়গাতে রিডিউস করে। মানে, যে কোনভাবেই হোক ব্যক্তির অ্যাক্টের জায়গাটারে বেইজ হিসাবে নেয় না, নেয় একটা পজিশন হিসাবে। এই পজিশন যে ইর্ম্পটেন্ট না – তা না, কিন্তু এই পজিশন যে একজন মানুশের অ্যাক্ট দিয়া তৈরি হইতে থাকে, একটা সময়ে একটা জায়গাত, তারে এক রকমের অদরকারি হিসাবে পারসিভড হওয়ার রাস্তাটা তৈরি করে। মনে করাইতে পারে, আমি একলা কথা বললে কি হবে!

 

Leave a Reply