চিঠিগুলি

নিস্তরঙ্গ ঘুমের ভিতর চিঠি-লিখার দিনগুলি ফুরায়ে গেলে আবার, মৃদু পায়ে কারা উঠে আসে?
ডাকঘরের বাক্স থেকে ঘরে ঘরে বিলীয়মান শব্দে, আবারো মুছে যায়;
অস্ফুট আলো আসে জানালা দিয়ে, শীতের নরোম দিন, বানর নাচছে সকালে…

*********

সেলাই মেশিনে করা ফুল-তোলা রুমাল পাঠিয়েছো
(সিঙ্গার কোম্পানীর মেশিনে করা, ১০,০০০ টাকা দাম)

বারান্দায় বসে বসে করা, তাই তাতে নানান আকৃতি, বিক্ষিপ্ত ও চঞ্চল-মন
ফুল আছে ৩টা, লাল রঙের; পাতাগুলা সবুজ আর হলুদ সুতায় তোলা;

সেলাইমেশিনে হাত রেখে অনেক সময় কাটলো তোমার
মেঘনাব্রীজ পার হয়ে ট্রেন চলে গেলো ভৈরব জংশনের দিকে

গাঢ় সেন্টের গন্ধ-মাখা তোমার রুমাল, পোষ্টম্যান দিয়ে গেলো
কি লিখবো এর উত্তর? ‘আর কবিতা না,
তুমি লিখ অনেক দীর্ঘ, দি-ই-র-ঘ আমার চিঠি’

প্রত্যাভিক্ষা তোমার!

*********

জবাব লিখছি তোমার চিঠির
ঘর-সংসারের আরো কতো কথা তুমি জানতে চেয়েছো
আর আমিও এখন বলতে পারি অনেককিছু

যেমন ধরো, এখনো মেঘনা নদী ছড়ায় নাই তার আঁচল খাড়ি অব্দি,
সবুজ ধানের ক্ষেত সোনালি হয় নাই এখনো আর
নতুন রাস্তায় মাটি জমা করার পর ইট ফেলা হচ্ছে মাত্র
ঢালাইয়ের কাজ শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি চলে আসবে
তোমার রিকশা খানা-খন্দে আটকে বারবার ঢেঁকুর তুলবে
ওর বারোটা বাজবেই, যদি ওই পথে তোমার চিঠি না এসে, তুমিই চলে আসো

দেখবে মলিন, হাওয়ারা পাল্টাচ্ছে ডানা;
কতকিছু থেমে আছে, থেমে নাই

পোষ্টকার্ড পাঠাও আরো, সম্ভব হলে;
চিঠি লিখার দিনগুলি শেষ হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত…

 

অগাস্ট, ১৯৯৯

 

Leave a Reply