বার্থডে নিয়া…

খালেদা জিয়ার নাকি ৩টা বার্থডে আছে। আমার ২টা। তার মধ্যে একটা ছিল গতকালকে, ২৫ শে জুন। এইটা আমার এনআইডি’তে আছে, সার্টিফিকেটে, পাসপোর্টে, আরো নানান হাবিজাবি কাগজপত্রে। এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় এই জন্মতারিখ জন্ম নিছে। সরকারি সবকিছু যেহেতু জুলাই টু জুন সেশন, জুন জুলাইয়ের দিকে বার্থডে’টা থাকলে বয়স হিসাব করতে সুবিধা হইবো। – এইরকম একটা ধারণা থিকা আমার বাপে এইটা করে দিছিলেন।

আরেকটা বার্থডে, যেইটারে আমি ‘অরিজিনাল’ দাবি করি সেইটাও আমার বাপের বা মা’র কাছ থিকাই জানি আমি, প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় লেখা হইছিল মনেহয়। সেইটা মনেও ছিল না আসলে। যখন এই বার্থডে বানানো হইতেছিল তখন মনেহয় জিগাইছিলাম, ‘আসল’ বার্থডে তাইলে কোনটা? তখন মেবি জানছিলাম যে, আমার ‘আসল’ বার্থডে হইতেছে, ২৫ শে সেপ্টেম্বর। (দেখেন, ফেইক করতে গিয়া আমার জানা লাগলো, কোনটা আসল। এমনিতে ‘আসল’ তো আছে আসলেই, কোন না কোন বা থাকেই। মানে, আমি জন্মাইছিই। এইটা নিয়া ডাউট করাটা ঠিক হবে না আর কি!)

তো, আমাদের জেনারেশনে এইরকম দুইটা বার্থডেওলা মানুষের সংখ্যা কম হওয়ার কথা না। আমাদের যারা বাচ্চা-কাচ্চা, তাদের ব্যাপারে আমরা বাপ-মা হইয়া এইরকম ‘ঝামেলা’ করি নাই আর। আমরা বুঝতে পারছি যে, এইটা একটা ঝামেলা। দুই নাম্বারি। এইগুলার চাইতেও আরো বড় সমস্যা হইতেছে, লোকজন তো হাসে, বুইঝা ফেলে, আরে এইটা তো আগের পুরান জেনারেশনের লোক! যাদের বার্থডে দুইটা!

আবার আমাদের যারা আগের জেনারেশন, উনাদের সমস্যাটা আরো জটিল, কারণ ‘আসল’ কোন বার্থডে’র কথা-ই উনারা জানেন না। আমরাও তো তাও জাইনা নিছি, কিছু রেফারেন্সও দিতে পারি, জানার; কিছু কারণের কথাও কইতে পারি, এইসব হাবিজাবি আছে। কিন্তু দেখবেন উনাদের বার্থডে একটা সার্টেন ডেইটের – ১লা জানুয়ারি, ৩১ শে ডিসেম্বর, ৩০শে জুন… এইরকম আর এর এগেনেস্টে তেমন কোন ‘আসল’ বার্থডেও নাই। মানে, অফিসিয়াল বার্থডে জিনিসটা তো অফিসের কাজকামের লাইগা; সুতরাং যেইটা সুবিধা হয়, সেইটা দিতে পারাটাই তো বেটার, তাই না! ‘অরিজিনাল’ হওয়ার কোন প্রেশারই উনাদের ছিল না।

মানে, বার্থডে জিনিসটা পাবলিক থিকা ধীরে ধীরে পারসোনাল একটা ঘটনা হইছে আসলে আমাদের কালচারে।
এমনিতেও, তারিখের কথা বাদ-ই দেন, সনের ব্যাপারও ‘আগে’ ছিল না এতোটা। মানুষ মনে রাখতো আশেপাশের কোন না কোন ঘটনা দিয়াই; যেমন, যেই বছর বন্যা হইল খুব বা ফসল খুব ভালো হইছিল বা বাড়ি বানানো হইছিল, এইরকম। যদুনাথ সরকার বলতেছিলেন, মুসলমান’রা (আসলে হবে আরব’রা বা পার্সিয়ানরা) ইন্ডিয়াতে আসার পরে সন-তারিখের ব্যাপারগুলা শুরু হইছে। আরব-পার্সিয়ান কালচারে কোনকিছু লেখা শুরু করার আগে সন-তারিখ লেখা লাগে; ইন্ডিয়াতে, হিন্দু-কালচারে এই জিনিস নাই। এই কারণে দেখবেন, ইন্ডিয়ান মিথগুলা (বা গ্রীকও হয়তো) ওভার-ল্যাপ করে খুব। এক হাজার বছর আগের-পরের ঘটনাগুলা একই সাথে ঘটতে থাকে, অনেকসময়। মানে, টাইম ইজ অ্যান ইল্যুশন, এইরকম।…

তো, হিস্ট্রি’র রিডিং আমরা কেমনে করবো, ইভেন পারসোনাল ঘটনাগুলারও, সেই তরিকা তো চেইঞ্জ হইছে, হইতেছে। আমার যে একটা ‘ফেইক’ বা ‘অফিসিয়াল’ (টুইস্ট’টা খেয়াল কইরেন, এইরকম এখনো বলে তো মনেহয় অনেকে) বার্থডে আছে, আমার আগের বা পরের জেনারেশনে নাই তো এইরকম।

নামের বানানেও দেখবেন, ‘অরিজিনাল’ বা ‘সঠিক’ বইলা একটা ব্যাপার আছে। যেই কারণে সরকারি বা অফিসিয়াল (এইখানে আর ফেইক বলতেছি না) কাজকর্মে ঝামেলায় পড়তে হয়। (কোনটা ‘আসল’ বা কোনটা ‘সঠিক’ – মোঃ, মোহা., মুহাম্মদ নাকি মোহাম্মদ? হাসানে কি দুইটা এস হবে নাকি একটা?… এইরকম)  তো, এই ‘অরিজিনাল’ বা ‘আসল’ জিনিসটা নিয়া আমাদের মনেহয় আরেকটু ভাবতে পারাটা দরকার।…

Leave a Reply