“মুসলিম স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন বেঙ্গল” এর একটা কথা নিয়া

মুঈন উদ-দীন আহমদ খান উনার “মুসলিম স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন বেঙ্গল” বইয়ে ১৮৫৭ সালের যুদ্ধ নিয়া বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ইনফরমেশন দিছেন।
 
“…তারা শাহ নিয়ামত উল্লাহ… রচিত এক ভবিষ্যৎবাণীকে সামনে নিয়ে আসে, যেটার আলোকে প্রচার করা হয়… মুসলিমরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে।… অনেক মুসলিম তার ভবিষ্যৎবাণীকে ধর্মীয় মর্যাদায় দেখতো… ১৮৫৭ সালের বসন্তে… এক প্রচারপত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়… নাসারারা… একশত বছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করবে এবং তারপরে বিতাড়িত হবে। শাহ নিয়ামত উল্লাহর সেসব ভবিষ্যৎবাণী সুন্দর ফার্সী কবিতার আকারে বাংলার বনেদী পরিবারগুলোর কাছে পাওয়া যায়, যা পরবর্তীতে সারা বাংলায় বাংলা ও উর্দুতে ছড়িয়ে দেয়া হয়।” (পেইজ ৩১)
 
পইড়া মনে হইতেছে না যে, আরে, লোকজন গুজবে বিশ্বাস করতো! কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটা প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল না, সেইটাও মেবি টের পাওয়ার কথা। মানে, একটা ‘ভবিষ্যতবাণী’, এইটার একটা পাওয়ার আছে, এই জিনিসটা ফুয়েল দিছে, মোটিভেট করছে ১৮৫৭ সালের যুদ্ধটারে; একটা হিস্ট্রিক্যাল ফ্যাক্ট হিসাবে এই জিনিসটার উল্লেখ আগে কোথাও দেখি নাই; কিন্তু ইর্ম্পটেন্ট একটা ইনফরমেশন তো! মানে, ভবিষ্যতবাণী হিসাবে ভ্যালিড না বইলা এর যে কোন ইমপ্যাক্ট ছিল না, তা তো না! উমবের্তো একো বলতেছিলেন এইরকমের কথা যে, ‘সত্যি’ জিনিস দিয়া হিস্ট্রি যতো না চেইঞ্জ হইছে, ‘অ-সত্যি’ জিনিসগুলার এফেক্ট বরং তার চাইতে অনেক বেশি। মানে, উনি না কইলেও, এই জিনিসগুলারে কন্সিডার করতে পারাটা দরকার আমাদের, হিস্ট্রির আলাপগুলাতে।…

 
এমনিতে, মঈন উদ-দীন খানের লেখা বা বইগুলা পড়লে টের পাওয়া যায়, এই বিষয়গুলাতে উনার জানা-শোনার জায়গাটা খুবই ওয়াইড; ছোট-খাট অনেক ঘটনার সিগনিফিকেন্স উনি মেনশন করছেন। তবে, আমার অস্বস্তি উনার ন্যারেটিভের জায়গাটা নিয়াই। ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’র জায়গায় যেইভাবে একটা ‘চিরায়ত মুসলিম আইডেন্টিটি’রে আমরা আবিষ্কার করতেছি; সেইটা একই রকমের ট্রাপ কিনা?…
হিস্ট্রি রিডিংয়ের ব্যাপারে আমার একটা অনুমান হইলো, সবসময় বর্তমানের বেসিসেই আমরা একটা অতীত’রে আবিষ্কার করতে থাকি; বা অতীত’টা রিলিভেন্ট হইতে থাকে, আমাদের কাছে। অতীত যে নাই – তা না; বরং অতীতটা ‘বর্তমান’টার একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের বেসিসেই উইঠা আসতেছে আমাদের কাছে। যেই কারণে, যে কোন হিস্ট্রির আলাপ একটা বর্তমানেরই আলাপ। তো, বইটার বাংলা অনুবাদ ২০১৯ সালে ছাপা হইছে; কিন্তু মূল ইংরেজি’টা কতো সালের লেখা, সেইটা বলা হয় নাই। আমার ধারণা, লেখার সাল’টা জানা গেলে, অই ‘বর্তমান’টা নিয়া কিছু জিনিস অনুমান করা যাইতো। আমার ধারণা, এখনকার সময়ে একই জিনিস বলতে গেলে উনি হয়তো কিছু জিনিস অ্যাড/ডিলিট করতেন।… যেমন, যেহেতু বেঙ্গল এর কথা; জিন্নাহ যতোটা আসছেন মুসলিম লিডার হিসাবে, এ কে ফজলুল হক ততোটা আসেন নাই; মানে, উনি ‘মুসলিম’ এবং ‘বেঙলি’ এই আইডেন্টিটি দুইটারে কিভাবে ডিল করছেন… সেইটা একটা আলাপ হইতে পারতো।
 
এমনিতে বইটা পড়তে গিয়া মনে হইছে, রেফারেন্সের জায়গাগুলা কমপ্লিটলি মিসিং; মানে, উনি রেফারেন্স দিয়াই কথা বলতেছেন, কোটেশন দিয়া, কিন্তু সেই সোর্সগুলা নাই; সেইটা বইয়ে থাকাটা দরকার ছিল।
 
বইটার ছাপানো-টাপানো ভালো হইছে, কিন্তু বানাম ভুল’টা একটু বেশিই মানে, পড়তে গেলে মাঝে-মধ্যে চোখে লাগার মতো। মাঝখানের একটা ফর্মাতে বেশি ঝামেলা হইছে মনেহয়।
 
[আর লোকজন তো আমার ‘বাংলা’ নিয়া টিটকারি মারে; তো, আমিও কই একটু, যদি এইটা মঈন উদ-দীন খান সাহেবের বই না হইতো, এই ‘শুদ্ধ’ বাংলা পড়ার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না; আমার ধারণা, এর চাইতে উনার লেখা ইংরেজি’তে পড়াটাই বেটার!
 
চিনোয়া আচেবে’রে একবার একজন জিগাইছিল উনি উনার ভাষায় না লেইখা ইংলিশে কেন লেখেন? বা এখন কেন উনি নিজের ভাষাতে লেখেন না? তখন উনি কইছিলেন, ইংলিশ মিশনারী’রা উনাদের ওরাল ল্যাঙ্গুয়েজটারে এমন একটা লিখিত ল্যাঙ্গুয়েজ বানাইছে যে, অইটা আর উনার ভাষা নাই; উনার ভাষার লোকজন এই লিখিত ভাষা’টা বুঝে না। তো, বাংলা’তে এই অবস্থা হইছে যে, যেইটা লোকজন বুঝে না, সেইটারে আমরা আরো ভালো ‘বাংলা’ মনে করি! তো, এই ধারণা’টা থিকা সইরা আসতে পারাটা দরকার।]

Leave a Reply