শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (৬)

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

————————-

১ ।।  ২ ।। ৩ ।। ৪ ।। ৫ ।।

————————-

 

পায়ের ছাপ

কাছ দিয়া হেঁটে গিয়া একটু দূরে দাঁড়াইলো শি। হেঁটে হেঁটে আবার চলে যায়। দরোজার পাশে কিছু কি ছিল? জানালায়? আকাশে? এই হেঁটে যাওয়া ভালোলাগে আমার। শরীরে মেঘের গন্ধ নিয়া শে ভেসে গেলো। একটা বৃষ্টির আশংকা। একটা অনুচ্চারিত কথা। একটা ছোট্ট মেঘ। একলা আর বেশিদূর যাইতে পারে না। শে আসে আর নেমে যায় ঘাসের শরীরে। আমার বুক কাঁপে। মরে-যাওয়া এত নরমাল। এতোটাই যে, বললাম আর আমরা মরে যাইতে পারলাম। দূর থেকে কাছে আর কাছ থেকে দূরে, কেঁপে উঠা শব্দগুলাই থাকে খালি। বলে, আমরা ত গেলাম। মিনিংয়ের ভিতর এখন ঘুরপাক খাইতে থাকো তুমি। আমি ভাবি শি’র কথা; বলি, কি হয় না গেলে, দুনিয়া ত যাইতেই আছে, থাকবে; তার ভিতর আমরার যাওয়া, কি দরকার! অথচ দিন, বিরাট অজগরের মত গিলে খাইলো আমাদের। ভ্যানিশ কইরা দিলো একদম। পায়ের ছাপও নাই।

 

ইরেজ হেড

শি চলে যাওয়ার আগে থিকাই শি’রে দেখি না আমি আর। তার মানে ওর চলে যাওয়া ঘটছে বেশ আগেই। আর আমি ত নাই-ই। যেহেতু আমার থাকা-ই নাই ওর কাছে, না-থাকা আর কেমনে হয়? এর শোধ নিতেই আমি ইরেজ করতে থাকি ওরে। আর ইরেজ করতে গেলে যা হয়, শাদা কাগজটা ময়লা হইতে থাকে। ঘষতে ঘষতে আমি পাতাটাই ছিঁড়া ফেলি। শি যে আছিলো, সেইটাই নাই করতে চাই আমি। তারপরেও শে আসে। কয়, মুছে ফেলতে পারতেছো তুমি ঠিকঠাক মতো? যা যা কিছু তুমি বলো নাই? আমি কই, চেষ্টার ভিতর আছি, পাইরা যাবো; এইটা নিয়া তুমি চিন্তা কইরো না! শি কয়, না, না, তুমি পারবা, আমি জানি ত! আমরা দুইজনেই দুইজনের কাছ থিকা মুছে যাইতে থাকি। ময়লা শাদা একটা পাতার ভিতর। না-থাকার।  

 

রাই

রাইয়ের অভিসারে আমি প্যানিকড কালা; বইসা আছি। কখোন আসবে শে। কার কুঞ্জ থিকা। আমার মনোপ্রাণে কাদা লাইগা থাকে। ময়লা সরে না। আমি ত একলা না। আরো আরো কালা ওঁত পাইতা থাকে। ওদের নজর থিকা শি’র নজর সরে না। এই আর্লি দুপুরবেলা খাটের কিনারায়, বইসা থাকি। জানলার পর্দা উড়ে। কারেন্টের তারে দুইটা পাখি, গু-খাওয়া হালিক মনেহয়। নড়েচড়ে না। বারান্দায় মানুষ দেইখাও সরে না। মনেহয় দুইটা ক্যামেরা ফিট করা আছে; জানালার ভিতর দিয়া যদ্দূর দেখা যায়, যট্টুকই দেখা যায়; তাদের জীবন এদ্দূরই। এইরকম চুপচাপ। এরবেশি আর কোথাও নাই শি। হয়তো গেছিলো যমুনার ঘাটে, পানি আনতে আর ফিরা আসতেছে শে। আমি ভাবি, ওর শরীর খালি শরীর-ই ত না; একটা ইমেজও, কাঁপতে থাকার। ট্রান্সমিট হইতে থাকতেছে দেখতে-থাকা ক্যামেরাগুলার চোখে। ক্যামেরা এইটাও দেখতেছে যে, একলা বেকুব কালা বইসা আছে রাইয়ের ঘরে। ঘরে নাই কেউ।  তোমার না-থাকার ভিতর শি, বসে আছি আমি। অ্যাকচুয়ালি তোমার না-থাকাই আছে; আমি, সাপ্লিমেন্টারি একটা বিষয়।

 

আমি

আমি যা না আমি নিজেরে তা-ই ভাবতে শুরু করলাম। এতে কইরা আরেকটা আমি চইলা আসলো। যে আমি না আর ভাবতে-থাকা আমিও না। শি পাজলড হয়া যায়। বলে, তাইলে তোমার আমি’রে নিয়া এখন কি করবো? আসলেই কি পজলড হয় শে? মনেহয় না। কারণ বাঁইচা থাকতে হইলে ত সবসময়ই ডিসিশান নিতে হয়, নিতে পারতে হয়। শেও পারে। কেউ কি আটকাইয়া থাকে জীবনে, মারা যাইবো বইলা। এইভাবে বাঁইচা থাকারে খুবই হার্টলেস একটা জিনিস মনে হইতে পারে। মনে হইতে পারে, এই যে কান্দা-কাটি রাতে আর দিনেরবেলায় সামনাসামিন ভুইলা-যাওয়া, এইসবকিছুই মিনিংলেস; আমাদের বাঁইচা থাকা আমরা এনজয় করি নেগেটিভ আবেগগুলা দিয়া। আসলে কি সেইটাই ঘটতে থাকে? শি জানে। পুরাটাই না হইলেও অনেকটাই। যট্টুক জানে না তার লাইগা নামাজ পড়ে, মাফ চায় আল্লার কাছে। আমাদের জানাজানি’রে তুমি পুরা কইরা দিও না! না-জানার স্পেইস রাইখো মনে, যাতে প্রেমের কথাও ভাবতে পারি আমরা। বিনিময়-প্রথার কথা মনে কইরা বিক্রয়যোগ্য পণ্যের তালিকায় আমাদের নাম লিখাইতে পারি! কিছুটা সংস্কৃত, ইউনির্ভাসালিটি, চিনা ও অ-চিনা নিয়া শব্দের অসমানতা ত থাকা লাগে, কবিতা লিখতে গেলে যেমন একটু একটু আটকাইয়া যাওয়া। তারপরও চলে যাইতে পারা।

একটু দূরে দাঁড়াইয়া শি দেখতেছিল। এইসব শব্দের পাখিরা কেমন ছটফট করতেছে। ভাবলো শে, যে পিছন থিকা দুইহাত দিয়া আমার মাথাটা জড়াইয়া ধরবে, কপালে হাত দিয়া ঘঁষে ঘঁষে মুছে দিবে; বলবে, যাও উড়াইয়া দিলাম তোমার শব্দ-ভঙ্গিমা! আমি মাথানিচু বইসাই থাকি। দেখি শি দাঁড়াইয়া আছে আগের জায়গাতেই। হাত নাড়াইয়া কি কি জানি বলে। আমি দেখি। শুনতে পাই না।

 

এই যে চুল

এই যে চুল, উড়লো হাওয়ায়। এই যে ভুল থাকতে থাকতে এস্টাবলিশ হইলো ভাষায়। দূর কি আরো লম্বা হইলো এইকারণে? ছায়ারা বাড়তে থাকলো। আমি লুকাইয়া পড়তে চাইলাম। অন্ধকারে, লোডশেডিংয়ে। আর শি তার ইমেজ থিকা বাইর হয়া আসলো। দাঁড়ায়া কইলো, এতকিছু হয় দুনিয়ায়, তোমার কথা-বলা কেন বন্ধ হয় না? বোবা হইতে পারো না তুমি অথবা ধরো পাগলই ভাবলা নিজেরে; তোমার চোখের ইশারাই কাফি, ঘাড় ঘুরাইলা আর ট্রাফিক সিগন্যালে লালবাত্তি জ্বইলা ওঠলো বা স্টার্ট না দিয়াই প্রাইভেট কারগুলা একটা আরেকটার গায়ে ধাক্কা লাগাইলো; তুমি ভাবলা, অঙ্গুলিহেলন ব্যতীত; এইরকম, হইতে পারো না তুমি? আমি কই, পাগল হইলেই ভালো। তখন আমার কথার ত আর কোন মানে থাকবো না। তুমি কইতে পারবা, এইগুলা শুইনা আর কি হইবো! অথবা তুমি না কইলেও, এইগুলা ত এমনি এমনি কথা, মিনিং নাই কোন। তারপরও তোমার কনফার্ম করা লাগে। কোন কিছু থাইকা যায় নাই ত, ভিতরে ভিতরে? যা কিছু আমি কইলাম, যা কিছু তুমি শুনলা, কথাগুলি তার বেশি কিছু কখনো বলতে পারে কিনা – এই সন্দেহ থাইকাই গেলো। ব্যাপারটা এইরকমই। যা আপেল, সেইটা গোল গোল লাল লাল অবজেক্ট খালি না; কল্পনায় একটা আপেল জন্মাইলো আর বাস্তবের আপেলে কালা স্পট পড়লো, শুকাইতে থাকলো, পইচা গেলো, ফরমালিন দিলেও। এই যে চুল উড়লো হাওয়ায়। উড়তেই থাকলো। কত বাতাস আইলো গেলো। আউলা চুলে খোঁপা হইলো। শিও চইলা গেলো। ভাষায় আটকাইয়া থাকলাম আমরাই। তারপরও।

 

কুড়ি বছর পরে ৩

আমি ভাবি, এইদিন, কোনদিন কি আসবে না – যেইখানে আমি বসে আছি কাঠের বারান্দায়, একটা চেয়ারে। আর শি, আমার পাশে, আরেকটা চেয়ারে বইসা কাপড় সেলাই করতে করতে বলতেছে, ‘শীত ত আসলো আবার!’ আর তখনই শীতের বাতাস পড়িমড়ি কইরা উঠে আসলো আমাদের বারান্দায়। ওর তাড়াহুড়া দেইখা হাসি আমরা; ভাবি, জীবন ত এইরকমই, হঠাৎ কইরাই ঘটনারা ঘটে। একটা কাঠের বারান্দা দূর থিকা আমাদের দেখতেছে। আমরা আসতেছি তার কাছে, আরো কুড়ি বছর পরে।

সামনে খালি মাঠ। ধূলা-বালি উড়ে। গ্লুমি দিনের আলো আরো ফ্যাকাশে, মলিন ধরণের। বাতাসে জড়ো হইতেছে কুয়াশা। আমাদের দিনগুলির কোন তাড়াহুড়া নাই। সকালের ভিতরেই দুপুর, বিকাল, এমনকি সন্ধ্যাও আটকাইয়া আছে। শি কারেক্ট করে, আমারে; যে, আমাদের বইলা কিছু নাই, যা আছে সেইটা তোমার মনে-ই। আর দেখো, সেও বইসা আছে আরো বছর কুড়ি পরে, কাঠের বারান্দায়, চেয়ারে।

ঠান্ডা লাগবো না তখন! গলায় মাফলার। আমাদের শরীর তারপরও আমাদেরই শরীর। কুড়ি বছর পরে যা যা হইতে পারতো তা তা-ই যদি হইতেছে তাইলে। এইখানে আমাদের বইসা থাকা, রইদের অপেক্ষা, শীত না-আসা… এইসবকিছু আর কী কী নিয়া আসতে পারে? সেই লিস্ট করা হয় না। দেখা এবং না-দেখার ভিতর আমাদের ইমাজিশেনরে আমরা পথ হারাইতে দেই। শি’রে আমি বলি, কুড়ি বছরের পরে আরো আরো কুড়ি বছর থাকতে পারে ত! তখন মনও নাই আমার, শরীর নাই যেহেতু।

 

শি’রে দেখার পরে

শি’রে দেখার পরে মনেহয় আমার, হায় হায় কতোদিন তোমারে আমি দেখি নাই! কতোদিন মন-খারাপ হয় না আমার, মন-খারাপের ভিতর থাকতে থাকতে মনেহয় নাই এইটাই জীবন। না-দেখাটাই। আর যখন দেখা হইলো, তখনই টের পাই জীবনের মানে আসলে পাল্টাইয়া যায়। দেখা-হওয়া এমন একটা অভিজ্ঞতা যেইটা আর না-দেখারে কনটেইন করতে পারে না। আমি যতই চাই ইগনোর করতে, সেইটা পারা যায় না। আমার দেখতে-পাওয়া আমারে আটকাইয়া ফেলে। আমি দেখতে থাকি শি’রে। একটা আনরিয়েল ঘটনা। দেখার ভিতরে নাই আর শে। তারপরও দেখা যায়। কেমনে?

শি-ও দেখে মনেহয় আমারে। কয়, আমার স্বপ্ন তুমি দেইখা দিও না, তোমার চোখ দিয়া; আমি বাঁইচা আছি ত! আমি ভাবি, আমাদের এই বাঁইচা থাকা আর কতদিন কনটিনিউ করবো আমরা। আমরা-ই ত  নাই কোথাও। আমি মারা যাইতেছে শি’র স্মৃতি’র ভিতরে অথবা ফিউচার ইমাজিনেশনে। তারপরও কইলাম আমি, তোমারে দেখতেছি আমি তোমার না-দেখার ভিতরে। যেই তুমি’রে দেখি আমি সেই তুমি ত নাই আসলে!

শি কয়, আমার না-থাকা শেষ পর্যন্ত আমার থাইকা যাওয়াই। তুমি জানো সেইটা। নিজেরে লুকাইয়ো না আর তুমি। আমি কই, যদি আমিও থাইকা যাইতে পারতাম, তোমারে দেখতে-পাওয়ার ভিতরে। তোমার মতো বাইর হয়া আসতে পারতাম আর তুমি কইতা, ওগো আনরিয়েল, আপনি এখন কই থিকা আসছেন, আমার রিয়ালিটিতে?

আমরা দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকাইয়া থাকি। দেখার ভিতর না-দেখায়, আমরা আমরা’রে ভুইলা যাই।

 

ইমেইল

কথা ত হয়। হইতে পারে। যেহেতু বাঁইচা আছি আমরা। মিনিংলেস কথা-বার্তাই আমরা কইতে পারি ত আরো কিছুদিন।

– হেই, আসো আমরা কথা কই। আমাদের লাইফে আমরা সবকিছুই করছি, খালি পাশাপাশি বসি নাই, আলাপ করি নাই, কোন বিকালবেলায়!

– এখন, শুয়োরে বাচ্চা, তু-ই-ই-ই-ই কথা কইতে চাস! তুই ফিল করিস যে আমরা’র কথা কওয়ার দরকার, এখন!

আমি-ই শি’র কথা বলি। শি বলে, ননসেন্স একটা অ্যাটিচুড’রে আমি বলার কোন মানে নাই। এরচে ভালো, ইমেইল পাঠান!

 

তুমি খাচ্ছো পানি

তুমি খাচ্ছো পানি। আর চোয়ালে জমতেছে বিষণ্নতা। একটু পরে পরে হাই-ও কি উঠতে পারে? এখন দুপুরবেলা। হইতে পারে রাত অন্য কোথাও, গ্লোবের অন্য জায়গায়; সূর্য তো কনসটেন্ট থাকে না, নাই আমাদেরও দুনিয়া। অনেক অনেক দিন পরে তোমারে দেখলাম আবার। শি বলে। আমি বলি, একটু দূর থিকা আমি তো দেখতেছি আমরারে। একটু দূর-ই তো মনেহয় ভালো তাইলে! শে হাসতে গিয়াও হাসে না। দিনগুলি আমাদের গড়াইয়া গড়াইয়া চলে যাইতেছে। রাতগুলি আবারো দিনের দিকে। শীতের দিনেও দেখো শীত নাই আর। আমাদের কথাগুলি আসলেই ফুরাইয়া যাইতেছে? শি ভাবে। নাকি ড্রাইভার, যে চুপ করে আছে, কথা বলে না, কিন্তু শোনে; যার লাইগা কথাগুলি আমরা আর বলতে চাই না। সবকিছুই উল্টা-পাল্টা। অথচ ঠিকঠাক, স্পিড মাইনা চলে যাইতে পারতেছে সবাই। আমরাও দেখো, শেষমেশ আমরাই।

 

 

Leave a Reply