শি, অ্যান্ড দ্য রিটার্ন অফ শি (৭)

 

এই সিরিজটার নাম হইতে পারতো – পুরুষের প্রেম বা অন্য আরো অনেককিছুই। এই টানাগদ্যের ফর্মটাও অনেক কমন একটা ন্যারেটিভ ফর্ম আর সাবজেক্টটাও – না-পাওয়া প্রেম [প্রেম পাওয়া যায়, এই ব্যাপারটাই কি রকম না! এইখানে গরুর (ইদানিং অ্যাট একচুয়াল লিখতে গিয়া লিখে – গাভী’র) দুধের চা পাওয়া যায়’র মতোন]।

তো, আমি হয়তো ভাবছিলাম যে, একটাকিছু ইনসার্ট করতে পারবো, কিছু একটা কি হবে না? – আমি লিখলে? হয় নাই আসলে। এই রায় আমি-ই দিতে চাই। কমপ্লিটও হয় নাই পুরা সার্কেলটা, লেখার। সিরিয়ালটাও হয়তো ঠিক করা লাগবে। কিন্তু অনেক তো হইছে আসলে। ২০১৩-তে শুরু করছিলাম, ২০১৪-তেই লেখা মোস্টলি, তারপরে ২০১৫ আর ২০১৬-তেও লিখা হইছে কয়েকটা। তো, লিখছি যেহেতু থাকলো, একটা জায়গায়। এর বেশি কোনকিছু না।

————————-

১ ।।  ২ ।। ৩ ।। ৪ ।। ৫ ।। ৬ ।। 

————————-

 

 

ট্রাভেলগ

পৃথিবী যে একটা নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে আছে, আমিও ঘুরতে থাকি তার ভিতরে। বব মার্লি যেমন গান গাওয়ার সময় প্রতিটা মুহূর্তের ভিতরেই ট্রাভেল করতে থাকেন; তুমি ফিল করবা তার পুরা শরীরটাই দুলতেছে, একটা নির্দিষ্ট রিদমে, শ্বাসে আর শব্দে, সে মিউজিকের ভিতর ট্রাভেল করতেছে। যে কোনভাবেই হোক স্থির আর নাই সে, তার শরীর, গান। এইরকম আমার আত্মা কত দেশে যে গেলো, কত জায়গায় গিয়া বইসা থাকলো তোমার সাথে। একবার একটা রাস্তায়, বিদেশের; হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়া গেলো, ফুটপাতের উপর বইসা শি জিগাইতেছিল নিজেরেই, ভূত মনেহয় আছে দুনিয়াতে, তাই না? তারপর নিজেই শরম পাইছে। খামখাই, কত কথা মনেহয় আমাদের। আর এর লাইগা ভুলে-যাওয়াটাই জরুরি সবচে। রাতে যখন ঘুম আসে না, চোখ বন্ধ, কিছুই দেখা যায় না, জানালার পর্দার ফাঁকে দূরের দালানের আলোগুলা যখন জাগতেছে, তখনও মনেহয় কেউ কি জাগতেছে না এই রাতে, না-ঘুমাইয়া, খামাখাই? শরীর ত মরে যাবে, আত্মাও মরে যায়; তার আগে সে ত খালি ঘুরতেই আছে শি’র সাথে সাথে, পিছন পিছন, সারা দুনিয়ায়।

 

সূর্য চলে আসছে শীতকালে

আমি দেখি আর ভুলে যাই। একজোড়া চোখ দেখে আরেকজোড়া চোখ। রিফ্লেক্ট করে নিজেদের দেখাদেখিরে। এইরকম জায়গায় আমরা আটকাইয়া থাকি। নাইমা আসি তারপর। থাকি না ত আর। যদি আমি না আসতাম। যদি সময়, সময়ের ডানা গেল পুইড়া; উড়তে পারলো না সে, এইরকম এইরকম যদি যদি দিয়া যদি ফিল-আপ করা গেলো সময়। একদম শেষে আইসা তখন জীবন কী রকম? এইরকমই মাথানিচু কইরা চলে-যাওয়া আর না-দেখতে-পারা আর দেখার ভিতর আটকাইয়া থাকা?

সূর্য চলে আসছে শীতকালে। প্রখর আর সংক্ষিপ্ত দিনে। দিনের ভিতর ডুবে যাইতেছে সময়। একজোড়া জুতার একটা পড়ে আছে দরজার এইপাশে। আরেকপাশে কেউ কি দেখতেছে দিন যে এমন, যাইতেছে চলে। রাস্তায় রিকশাওলা বলতেছে, ভাই, সাইডে যান! সিএনজি-স্কুটারওলা, তাও দেখে না। পারলে ত রে ভাই শরীরের উপ্রে দিয়াই যায়। বামে কাইত হয়া বাস যাইতেছে একটা। আমরা কই যাই? বইসা থাকি গ্লু-মাখা চেয়ারে। কচ্ছপের মাথা। পাথর শরীরের পিঠে লুকাইয়া থাকি, রোদ পোহাই।

শীত ত আসবে আরো। আর চলে যাবে দেখতে দেখতেই। আমাদের দিন; পরে, পরে, আরো পরে; বলতে বলতে হারাইয়া যাবে। সাগরের পাড়ের ঢেউ। জোয়ার ও ভাটাতে। শামুকের স্মৃতি নিয়া বইসা থাকবে। একজোড়া চোখ দেখবে আরেকজোড়া চোখ ভেসে আসতেছে এর্ন্টাটিকা থিকা কুয়াকাটায়। আটকাইছে আন্দামানে আইসা। দূর থিকা দেখি। দেখি আর ভুলে যাই। আমার ভুলের ভিতর শি আসে। চলে যায়। এতদূর এর্ন্টাটিকায়, কোন পেঙ্গুইনের পাশে, বরফে মিশে যাইতে যাইতে মনে পড়তেছে; হায়, কই যাওয়ার কথা ছিল আমরার; আর কই যে চইলা আসছি! শুকনা কোন ফলের বীজ হয়া বাতাসে ঘুইরা বেড়াই।

শি দেখে, সূর্য চলে আসছে শীতকালে। বাতাস ভারী হয়া আসতেছে। একটা কচ্ছপ তার মাথা গুঁজে নিতেছে শক্ত খোলের ভিতরে।

 

পাবলিক প্রেম

আমার চোখের সামনে প্রেম করতেছিলো ওরা। প্রেম এমন একটা জিনিস যে কওয়া লাগে না, আপনি টের পাইবেন। আমিও টের পাইতেছিলাম আর আমার বুকটা পুড়ে যাইতেছিল। দেবদাস হয়া ভাবতেছিলাম; শালা, চু্ন্নিলাল বাংলা-মদের জায়গায় স্পিরিট খাওইয়া দিতেছে আমারে। গলার ভিতর দিয়া খালি মদ-ই না, রক্তও নামতেছে। মদের কালার ছিল শাদা আর এখন সেইটা লাল হইতেছে। ওদের প্রেম বেশ সাচ্চা ধরণের। ওরা জানে ওদের লিমিট, কদ্দূর যাওয়া যায়; কোন কথা বলা যায় আর কোনটা চোখের দিকে তাকাইলেই বলা হয়া যায়। ওরা এইরকম কথা বলতেছিল আর আমি আমার চোখ নামাইয়া নিতেছিলাম। শি দেখতেছিলো যে আমি দেখতেছি; এই কারণে শে তার প্রেম কনটিনিউ করতে পারতেছিল। আমি ভাবলাম যে চলে যাই আমি। তাইলে হয়তো ওরা ওদের লিমিটগুলার ভিতর নিজেদেরকে আটকাইয়া রাখবে। আমি একটা হাড্ডি হিসাবে থাকার কারণে প্রেম কাবাবরে কাব্যময় করা যাইতেছে না মনেহয়। আবার ভাবলাম, আমি যে আছি সামনে এই অবসটেকলই কি ওদের প্রেমরে আকুল কইরা তুলতেছে না আরো?

 

একলা একটা দুনিয়া

তুমি যে আসো। আর চলে যাও। যাওয়ার সময় হয়তো একটু দেখো। আমার আর ভাল্লাগে না। ইচ্ছা করে, কোন একটা ঘরে, একটাই কোন ঘর, দূরে; উপ্রে ছাদে, নিচে একটাই বিছানা; শুয়া থাকি আমরা। এই দুপুরবেলা। কী রকম লম্বা। সময়টা যাইতে যাইতে আর যায় না। আকাশে মেঘগুলা ওড়ে। আমরা জানালা দিয়া দেখি। আমাদের শরীরের মেঘ আমরা আতি-পাতি কইরা খুঁজি। কই গেলো এই দুপুরে তারা? একটা কাশফুলের পাতার পালক ঢুকে যায় ঘরে আমাদের। শি ওইঠা পড়ে বিছানা ছাইড়া। ওর পা-গুলা নাচতে থাকে তখন। শরীরটা ঘুরে, দুনিয়ার আলো বাতাসে, আমার হা-হুতাশে। পালকটা ধইরা নিয়া শে কয়, নাও, পাইছি তোমার মেঘ। মিশাইয়া দেয় গালে আমার; ওর গাল দিয়া। পাঁজরের হাড়ে হাত রাখি আমি। পিঠে ছড়াইয়া আছে নিরবতা। আমি কই, মেঘরে যে তুমি নামাইয়া আনলা, বৃষ্টি তো নামতে পা্রে; ভিজবো না আমরা? শি’র চোখে কোন ভাবনা নাই। দুপুরবেলার পুকুর-পাড় একটা, নিস্তরঙ্গ। দূরে, অন্য কোথাও তাকায়া আছে। পুকুরের পানিতে কোন ছায়া নাই। মেঘগুলা ভেসে যাইতেছে খালি। আমিও নাই। নাই কেউই। এইরকম একলা একটা দুনিয়া, তোমার খারাপ লাগে না, শি?

 

সন্ধ্যায়

দিন কি শুরু হয় তোমার দিনশেষের ভাবনায়? সময় মসৃণ, সে ত উড়ে যায়। একটাই দিন, দিনের ভাবনায়। উড়াউড়ি করি আমরাও – কাক ও চিল। ডানায় রইদের ঘ্রাণ আমাদের ক্লান্ত করে। আমরা সরে আসি আমাদের নিজেদের কাছাকাছি। একটু আলাদা। বসে থাকি কার্ণিশে। কবুতরগুলা নিজেদের খোপে বসে থেকে থেকে আমাদের দেখে। হবিগঞ্জ থিকা আসছিল ওদের মা-নানিরা। এখন ওদের নিজেদের অবসরের ভিতরেই নিজেদেরকে আটকাইছে ওরা। আমরা পারি না এইরকম। ওড়তে ওড়তে কই যে যাই! দিনের শুরু যেইরকম মনেহয় শেষে তার কোন চিহ্নই নাই। শি কয়; এইটাই ত ভালো, গড়াইয়া যাওয়া পাথর তুমি, আমার কাছে কেন আটকাইয়া থাকতে চাও? ‘আমি ত থাকি না তোমার কাছে, খালি আমার আত্মা পড়ে থাকে।‘ এইকথা বলি না আমি আর। শি দেখে করুণ চোখের ভিতর আমার নিরবতা নিজেই নিজের সাথে কথা কয়। তারপর, তারপর কি আমরা মরে যাই? এইরকম একটা সন্ধ্যায় এরচে বেশি কি আর করতে পারি আমরা। নিজেদেরকে জিগাই। কাক ও চিল। বসে থাকি। আর উড়ে যাই। কোন এক অন্ধকারেই আবার।

 

তোমার কথা

তোমার কথা শুনতে যে পাই এখনো, এইটা ধরো ওই বাংলাদেশে আর্টফিল্ম বানায় না বড়লোকের পোলা আর পোলার বউ’য়ে বা মাইয়া আর মাইয়ার জামাই’রা পুরষ্কার টুরষ্কার পাওয়ার লাইগা, এইগুলার চাইতে ডেফিনেটলি বেটার। আগে ত বিদেশি বিয়া করা লাগতো। এখনো হয়তো লাগে। ওইটাও ভালো। ফিউশন হয়। এইগুলা ইস্যু না আসলে। মনে হইলো আর কি। তাই বইলা তুমি ত জানো, আমি নিউটনের মত আপেলগাছের তলায় গিয়া বইসা থাকি না; বলি না যে, আপেল তুমি ঝইরা পড়ো, আমি আম নিয়া কবিতা লেখবো। আমি ওয়েট করতে থাকি। কথাগুলি আসে। ঝরে পড়ে। কুয়াশার মতো। সরে যায় না। অনেকসময় ধইরা তারা ঘুরতে থাকে। একই কথা। বারবার। রিপিট হইতে থাকে। ক্যাসেট প্লেয়ারে আমি তাদের তুলে রাখি। শেষ হইলে, রিউইন্ড করি। আবার শুনি। শুনতেই থাকি। তোমার কথা ফিতার ভিতর আটকাইয়া যাইতেছে। মিররে তুমি নিজেরে দেখো। ছোট্ট একটা আয়না। কথা কইলো এমনিতেই। ভয় হয়, চুপ হয়া যাবে কোনদিন। ভয়ে ভয়ে শি’র কথাগুলি আমি শুনি।

 

শি’র চোখ

শি’র চোখ ত দেখে যে আমি দেখি। তারপরও আমরা ত খেজুরের কাঁটা হাতে নিয়া বসি নাই, শীতকাল বইলা। যশোরেও যাই নাই। কথা কই, জানি দেখলাম না। কথাটাই মেইন। এইখানে দেখাদেখির কিছু নাই। চাইলে টেপরেকর্ডারও ইউজ করা যাইতে পারে। চোখগুলা সইরা সইরা আসে। শব্দে কনসানট্রেট করে। উচ্চারণে। চোখের কাজ হইলো মিনিংগুলা খুঁইজা বাইর করা। আর কি দেখবে তারা? কিন্তু চোখগুলার ঝামেলা আছে, মাঝে মইধ্যেই একটা জায়গাতে চইলা আসে; তখন, মনেহয় একটাকিছু দেখা যাইতে পারে; বা দেখা যে গেলো সেইটা ভুইলা থাকতে হয়। কথার ভিতর। এইকারণে কথাবলাটা জরুরি। দেখার সময়। আমরা যে দেখলাম আমরারে এইটা যে রিয়েল না এই রিমাইন্ডারটা থাকতে হয়। শি জানে এইটা। আমি আজকে ওর কাছ থিকা শিখলাম। দেখলাম ওর চোখ দেখতেছে আমার দেখা। নিয়ম ভাইঙা।

 

আমি দেখি

আমি দেখি শি’র হাঁইটা যাওয়া। আর শি চোখের কোণা দিয়া দেখে, কেউ একজন যে দেখতেছে আর ভাবে সে কেন নিজেরে দেখাইতে চায় না যে সে দেখে। এইখানে কি এমন গোপন? আর কি কি সে হাইড করে? আমি দেখি, শে যে দেখতে পারে এইটা আমারে আরো সরাইয়া ফেলে। আমার এগজিসটেন্স খালি সিনেমা-দর্শকের গেইজ। কিন্তু শি কখনোই নায়িকা হইতে চায় না। যদিও শে জানে যে সিনেমার নায়িকারাই হইলো সত্যিকারের নায়িকা। ওর যাওয়া-আসা নিয়া ও আরো চিন্তায় পইড়া যায়। আমার যাওয়াটা কি ঠিক হইবো, ওই পথ দিয়া? যদি সে দেখে আবার? দেখবোই ত। যদি তার গোপন আবার আমার চোখে পড়ে, আমি কি জিগাবো তারে; কেন এই দেখা আমারে আমার কাছ থিকা আরো দূরের কোন এক টিলার উপ্রে পোর্টেট করে, বিকালবেলায়? সূর্য ডুবে যাইতেছে। অথবা দুপুর। রোদের রং মরে নাই তখনো। অথচ মরে যাবে। এইরকম।

আমি দেখি শি’র হাঁইটা যাওয়া। শি দেখে আমার দেখা স্টিল ভ্যালিড, চইলা যাওয়ার পরেও। থাইকা যাইতেছে।

একটা চোখের কোণায়, দ্যুতি জ্বলে, নিভে-যাওয়ার।

 

চোখে কাজোল

চোখে কি কাজোল? তারা ত পিট পিট করে। দিনে-দুপুরে দেখে রাতের তারা। গুনতেছে? একশ পর্যন্ত। তারপর থাইমা যায়। এনাফ। দড়ি-লাফানি বন্ধ কইরা প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসছে শি। আজ দিন নরমাল। আজাইরা অনেক কথা বলা যায়। মানে খুব কাজেরই জিনিস, কাজ ছাড়া যাদের আর কোন মিনিং নাই। তারপর আবার ফেরত আসা। আবার প্রিপারেশন। যেই দিন গেছে তারা ত আর ফেরত আসবে না। তাদের কথা তখন আমাদের মনে। চোখে কাজোল। মেইল গেইজের বাইরে আর কি কিছু আছে? এইখানে। দেখা ও না-দেখায়। মিলি সেকেন্ডের ভিতর?

 

Leave a Reply